প্রত্যেক শিশুই তার প্রথম শিক্ষা পরিবার থেকেই শিখে থাকে। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশু তার চারপাশে যা কিছু দেখতে বা শুনতে পায় সেটাই শিখতে থাকে। সাধারনত শিশুদের মানসিক বিকাশ ৫ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে।
শিশুর নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার ও তার চারপাশের মানুষরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাদের আচার-আচরণ ও বেড়ে ওঠা সবই নিকটজনদের কাছ থেকে শিখে।
কাছের মানুষ গুলোই ঠিক করে দেয় তাদের শিশুর মানসিক বিকাশ কিভাবে ঘটবে। পরিবারের জন্য শিশুকে ইনফ্লুয়েন্স করা খুবই সহজ।
শিশুদের মানসিক বিকাশ বিভিন্নভাবে ঘটেতে পারে। যেটা সে তার চারপাশে দেখবে, তেমন ভাবেই তার মানসিক বিকাশ ঘটবে।
পরিবারের ভালো গুণগুলো শিশুর ভালো হয়ে বেড়ে ওঠার জন্য সাহায্য করে এবং খারাপ আচার-ব্যবহার শিশুর খারাপ মানসিকতা তৈরিতে সাহায্য করে।
আজকের শিশু ভবিষ্যতে কোন পথ (খারাপ নাকি ভালো) বেছে নিবে, তা নির্ভর করে সঠিক প্যারেন্টিং ও ছোটবেলায় পাওয়া পারিবারিক শিক্ষার উপর। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিৎ।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা
ছোট থেকেই সঠিক নৈতিক শিক্ষা দানের মাধ্যমে বাচ্চাকে যেভাবে গড়ে তুলতে চান সেভাবেই গড়ে তোলা সম্ভব।
আসুন জেনে নেয়া যাক, ভালো বা খারাপ আচরণ কিভাবে একটি শিশুর মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে এবং কিভাবে পরিবার থেকে শিশুর নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করে ভবিষ্যতের একজন সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
1. আত্মবিশ্বাসী হওয়ার শিক্ষা
যে সকল শিশুরা পরিবার থেকে উৎসাহ পেয়ে বড় হয়, তারা সাধারণভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে।
প্রত্যেক শিশুকে তাদের সকল কাজে উৎসাহ প্রদান করুন, যাতে সে কোনো কাজে সাহস না হারায়। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারে।
2. সদাচারণ শিক্ষা
পরিবার থেকেই শিশুরা আচার-আচারণ শিখে। যে ধরনের আচার-ব্যবহার শিশুরা দেখে, তা থেকেই তারা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সেভাবেই তাদের মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে।
যদি শিশুদের সাথে সদাচরণ করা হয় তাহলে তারা সেটাই শিখবে। এজন্য শিশুদের সামনে সর্বদা ভাল আচরন করা এবং খারাপ আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
3. সুবিবেচক হওয়ার শিক্ষা
শিশু যদি পরিবার থেকেই সত্যের মধ্যে বড় হয় এবং মা-বাবা ভাই-বোনের মধ্যে কোন কিছু ভাগ করে খাওয়াই অভ্যস্ত হয়, সেই সকল শিশু সাধারণভাবেই সুবিবেচক হিসেবে বেড়ে ওঠে।
ছোট থেকেই যদি ভাই-বোন সহ সকলের মাঝে শিশুদের খাদ্য অভ্যাস বা কোন জিনিস ভাগাভাগি করার শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে শিশু সুবিবেচক হতে শিখবে।
শিশুরা যাতে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে না ওঠে সে দিকে প্রত্যেক পরিবারের খেয়াল রাখা কর্তব্য।
4. ভালোবাসা ও সৌন্দর্য শিক্ষা
শিশুরা সাধারণত কোমল হৃদয়ের হয়ে থাকে। ছোট থেকে শিশুদের যেভাবে গড়ে তোলা হয় তারা সেভাবেই বেড়ে ওঠে।
শিশু যদি সুখী পরিবেশে এবং পরিবার থেকে স্নেহের মধ্যে বড় হয়, তাহলে তারা ভালবাসতে শিখবে এবং সৌন্দর্য কি সেটা জানবে।
সুখী পরিবেশ শিশুর সুস্থ্য মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।
5. অন্যের গুণ ধারণ
শিশুরা বরাবরই অনুকরণ প্রিয়। মা-বাবা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা যা করে থাকে শিশুও সেটা করতে পছন্দ করে, তাদের অনুরূপ কাজ করে।
শিশু যদি পরিবার থেকে প্রশংসা নিয়ে বড় হতে থাকে তাহলে সে পরিবারের অন্য সদস্য গুন ধারণ করতে সহজভাবে সক্ষম হয়।
ছোটখাটো সকল কাজে শিশুর প্রশংসা করুন। তাহলে সে ভাল গুণের অধিকারী হয়ে গড়ে উঠবে।
6. শিশুর সহনশীলতার শিক্ষা
ছোট থেকেই শিশুকে সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিক্ষা দিন। যে সকল শিশু পরিবার থেকেই ধৈর্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে, সে সাধারণভাবে সহনশীল হতে শিখে।
সকল প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। পরিবার থেকেই সেই মানসিক শক্তি শিশুর মধ্যে তৈরি হয়।
7. ভীরু ও নিন্দার মানসিকতা
শিশুরা পরিবার থেকেই সকল শিক্ষা পায়। যদি কোন শিশু ছোট থেকে কারো কাছে উপহাসের পাত্র হয়, তাহলে সে ভীরু হয়ে বেড়ে ওঠে। নিজের মন মানসিকতা সংকোচিত হয়ে যায়।
অন্যের থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয়। কোন কাজেই সাহস পায় না। আর যে সকল শিশু সমালোচনার মধ্যে বড় হয়, তারা অন্যের নিন্দা করতে শিখে। তাদের মন-মানসিকতা সেভাবেই গড়ে ওঠে।
8. প্রতারণা ও শত্রুতার মানসিকতা
যেসব শিশু পরিবারে সন্দেহের মধ্যে বেড়ে ওঠে তারা প্রতারণা করতে শিখে। শিশুরা সাধারণভাবে যেটা দেখবে সেটাই শিখবে। তাদের মানসিক বিকাশ সেভাবে ঘটবে।
যদি কোনো শিশু বিরোধিতার মধ্যে বড় হয় তাহলে সে শত্রুতা করতে শিখবে। শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে তার সামনে ঘটে যাওয়া সকল বিষয়ের মাধ্যমে, সেটা ভাল কিংবা খারাপ দুই ভাবেই হতে পারে।
9. মিথ্যা বলতে শেখা
অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। শিশুর সামনে কখনোই মিথ্যা বলা উচিত নয়। সেটা মিথ্যা গল্প বলে হোক বা অন্য কোন বিষয় হোক।
পরিবারের লোকদের কাছ থেকেই শিশু মিথ্যা বলতে শিখে এবং মানসিকভাবে সে সেইভাবে গড়ে ওঠে। শিশুদের সামনে সব সময় সত্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করা উচিত। যাতে শিশুর নৈতিক বিকাশ ভালোভাবে ঘটতে পারে।
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা নিয়ে শেষ কথা
ভালো পরিবেশ ও সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি শিশু সুস্থ ও সুন্দর মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি এবং তার পারিবারিক শিক্ষাই পরবর্তীতে সামাজিক ও কর্ম জীবনে প্রতিফলিত হবে।
নেতিবাচক কোন মন্তব্য শিশুদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ইতিবাচক সকল মন্তব্য শিশুর সুষ্ঠু মানসিকতা বিকাশ ঘটাতে সক্ষম। শিশুর মানসিকভাবে বিকাশের জন্য প্রত্যেক পরিবারের উপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরী।