প্রতিটি নারীর জীবনে স্বপ্নের একটি সময় হচ্ছে তার গর্ভাবস্থা। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা নিয়ে একটু বেশি সচেতন হওয়া জরুরী। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সঠিক খাবার তালিকা মায়ের স্বাস্থ্য ও মানসিকভাবে ঠিক রাখার পাশাপাশি সুস্থ্য সবল সন্তান জন্মদানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া এই সময়টাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। যার কারণে চিকিৎসকগণ মায়ের ও সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও অন্যান্য বিষয়ে এই সময়টাতে মায়ের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে বলেন।
প্রতিটি মা তার প্রেগনেন্সির সময়টাতে অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা এড়িয়ে সুস্থ্য ও সুন্দর থাকতে চান। অনেকে মনে করেন যে গর্ভাবস্থাটা একজন মেয়ের সিকনেস। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি মেয়েদের জীবনের একটি পর্যায়। এটি কখনও সিকনেস এর পর্যায় পড়েনা।
একটি মেয়ে যখন তার প্রথম গর্ভবস্থায় যায় এই সময়টা আসলে নানা ধরনের চিন্তা কাজ করে। যেমন, বাচ্চা সঠিক নিউট্রিশন পাচ্ছে কিনা, বাচ্চা সঠিক ভাবে বেড়ে উঠছে কিনা, দেখতে কেমন হবে ইত্যাদি এই সবকিছুই একজন মায়ের চিন্তার মধ্যেই থাকে। এর পাশাপাশি কিছু হ্যাপিনেসও কাজ করে।
বাচ্চার স্বাস্থ্য ও সুস্থ্যতা নির্ভর করে মায়ের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উপর। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। সব মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য এক রকম থাকে না। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার পর পরই যে সমস্যা গুলো দেখা দেয়:
- খেতে না পারা
- গন্ধ না পাওয়া
- মাথা ঘুরানো
- খুব দুর্বল লাগা
- বমি ভাব হওয়া
প্রথম স্টেপে একজন গর্ভবতী মায়ের এই উপসর্গ ও সমস্যা দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু সময় অস্বাভাবিক হতেও দেখা যায়। যেমন, অনেকের খুব ঘন ঘন বমি হওয়ার একটা টেন্ডেন্সি থাকে। তখন গর্ভবতী মা অনেক বেশি ডিহাইড্রেড হয়ে যান। এজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে যথেষ্ঠ মনযোগী হওয়া দরকার।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
বাচ্চার ডেভেলপমেন্টের জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ওমেগা-৩ যেন শরীরে এগুলোর অভাব তৈরি না হয়।এছাড়াও ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সুষম খাদ্য বেশি বেশি রাখতে হবে।
আসুন, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা কেমন হবে, পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিত, কোন খাবার বেশি খাবেন এবং কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই;
১। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়েরা প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন। ভিটামিন সি গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ভিটামিন সি পাওয়া যায় যেসব খাবারে-
১. মালটা অথবা কমলা
মাল্টা বা কলমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। এই দুটি রঙিন ফল ভিটামিন সি’র ভালো একটি উৎস। চিকিৎসকগণ গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে দুটি রঙিন ফল রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার মধ্যে মালটা বা কমলাকে বেশি প্রেফার করে থাকেন।
প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাসে অনেক মায়েদের ভমিটিং বা বমি বমি ভাবটা বেশি থাকে। যার কারনে সেই সকল গর্ভবতী মায়েরা মালটা কমলা ফলটি সহজে খেতে পারেন। মালটা ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়। যার কারণে এটি গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
২. কাঁচা মরিচ
কাঁচা মরিচ থেকেও আপনি ভিটামিন সি নিতে পারেন। প্রতিদিনের খাবারের সাথে একটি করে কাঁচা মরিচ খেতে পারেন। তবে প্রেগনেন্সির সময় খাবার খেতে অনেকের সমস্যা হয়ে থাকে, তাই আপনি নিজেই ঠিক করে নিবেন কোন খাবারটা খেলে আপনার জন্য ভালো হয়।
৩. আমড়া ও পেয়ারা
গর্ভবতী মায়েরো টক খেতে এমনিতেও পছন্দ করেন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় যেকোনো টকজাতীয় ফল রাখলে ভিটামিন সি চাহিদা পূরণ হবে। আমড়া ও পেয়ারা থেকেও পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমড়া সিজনাল ফল হলেও পেয়ারা কমবেশি সারা বছরই পাওয়া যায়।
তবে প্রেগনেন্সির সময় সিজনাল যে ফলই পাবেন সেটি বেশি করে খেতে পারেন। সিজনাল সব ফল থেকে আপনি পরিপূর্ণ পুষ্টি নিতে পারবেন।
এছাড়াও ফুলকপি ও ক্যাপসিকাম থেকে ভিটামিন-সি পাবেন। বিভিন্ন কালারের সবজি মিক্স করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে যাতে ভিটামিন-সি টা বাদ না পড়ে।
২। ফলিক এসিড
গর্ভবতী মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য ফলে অ্যাসিড বা ভিটামিন বি৯ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জন্মগত ত্রুটি এড়াতে এর ভূমিকা অনেক।
তাই গর্ভধারণের তিনমাস আগে থেকে দৈনিক ৪০০ মাইক্রো গ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা জরুরি। তবে এটি প্রাকৃতিক খাবার থেকে গ্রহণ করা বেশি ভালো। যেসকল খাবারে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায় সেগুলো হলো:
১. মালটা
মালটাতে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক এসিড পাওয়া যায়। এই ফলটি প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি সুস্বাদু ও সহজলভ্য একটি ফল। গর্ভবতী মায়েরা চাইলে এটি জুস তৈরি করেও খেতে পারেন।
১০০ গ্রামের একটি মাল্টাতে ৫৫ মাইক্রো গ্রাম ফলিক এসিড রয়েছে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করে।
এছাড়াও এতে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
২. পাকা কলা
কলা একটি সহজলভ্য ফল এবং এটি সারা বছরই পাওয়া যায়। কলায় রয়েছে পটাসিয়াম, ভিটামিন বি৬। পাকা কলাতে প্রায় সকল প্রকার ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। অন্যান্য ফলের থেকে পাকা কলাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফলিক এসিড। যা গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে থাকে।
১০০ গ্রাম পাকা কলাতে ২৩.৬ মাইক্রো গ্রাম ফলিক এসিড রয়েছে। এছাড়াও দুধ, মধু, সবুজ শাক-সবজি ও রঙিন, ডাল ও বিভিন্ন বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড পাবেন।
৩। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়েদের জন্য আয়রন অনেক বেশি প্রয়োজন। এই সময়টা আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন, দৈনিক খাবারের তালিকা থেকে যাতে কোনভাবে আয়রন বাদ না পড়ে।
আয়রন আপনার গর্ভের শিশুর বিকাশে সাহায্য করবে এবং প্রসবকালে আপনার রক্তপাতের পরিমাণ কম পড়বে। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে যথেষ্ট অক্সিজেন পাবেনা।
অনেক খাবার থেকে আয়রন পেতে পারে যেমন খেজুর, কিসমিস, কচুশাক, সামুদ্রিক মাছ, পালং শাক, ডাল, ডার্ক চকলেট, বাদাম, আপেল ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত আয়রন পাবেন।
তাছড়া, গর্ভবতী মায়েরা প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় প্রতিদিনের খাবারের সাথে দুই থেকে তিনটি খেজুর ও কিছু কিসমিস খেতে পারেন। এটি আপনার আয়রনের চাহিদা পূরণ করবে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামও রয়েছে।
এছাড়া কচু শাক, ডাল, ডার্ক চকলেট, মুরগী, মাছ, ডিম এগুলোও আপনার দৈনিক খাবারের রাখতে পারেন। সারাদিনে অথবা রাতে একটি করে আপেল খেলে আপনার আয়রনের চাহিদা পূরণ হবে।
৪। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণের জন্য রঙিন শাকসবজি ও ফল বেশি খেতে বলা হয়। বিভিন্ন রকমের রঙিন সবজি যদি একসাথে মিক্স করে খাওয়া যায় তাহলে এটি থেকে ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হয়। এর পাশাপাশি রঙিন ফল খেতে হবে। এছাড়াও কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন এ থাকে।
তবে প্রেগনেন্সির সময় কলিজাতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকার কারণে এটি খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ ভিটামিন এর পরিমাণ বেশি হলেও প্রেগনেন্সিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রথম তিন মাসের গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাবার তালিকায় দেশি মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, ডাল অবশ্যই রাখবেন।
যারা মাছ মাংস কম খেতে পারেন তারা চেষ্টা করবেন কমপক্ষে একটি ডিম খেতে। যদি সম্ভব হয় দৈনিক ২ টি করে ডিম খাবেন। যারা এ সময় ডিম সিদ্ধ খেতে পারেন না, তারা এদিকে ফর্টিফাইড করে খেতে পারেন। যেমন ডিমের সাথে আলু মিক্স করে, ভর্তা করে খেতে পারেন বা ডিমটাকে ভেজে খেতে পারেন। অথবা ডিমের হালুয়া তৈরি করেও খেতে পারবেন।
এই সময়ে বেশি বেশি ছোট মাছ খাবেন। ছোট মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কম খাবারে বেশি ক্যালরি পেতে আলু, ডিম, ডাল অল্প করে মিক্স করে খাবেন।
মাছ অথবা মাংসের সাথে দুই তিন কালারের সবজি অল্প করে মিক্স করে খেতে পারেন। এই মিক্স খাবারটাকে বলা হয় হোক ফর্টিফিকেশন।
৬। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়েরা প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় অবশ্যই ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে এমন খাবার রাখতে হবে। দুধ, দই, পনির ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর দাঁত হাড় ও মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। যদি দুধ খেতে সমস্যা হয় তাহলে দই বা দুধের তৈরি অন্য খাবার খেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন। ক্যালসিয়াম ছাড়াও দুগ্ধজাত খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন থাকে, যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
অন্য সময়ের তুলনায় গর্ভ অবস্থায় একজন মায়ের বেশি ক্যালোরি ও পুষ্টির দরকার হয়। এজন্য গর্ভবতী মায়েদের খাবার গ্রহণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, যখনই ক্ষুধাবোধ হবে তখনই খাওয়া এবং কম কম করে বারবার খাবেন।
৭। স্টার্চ জাতীয় খাবার
আলু, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, পাস্তা ইত্যাদি এই খাবারগুলো স্টার্চ সমৃদ্ধ। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় এই খাবার গুলো রাখতে হবে।
আপনি চাইলে লাল আটার রুটি, পাস্তা, আলু সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন। লাল চালের ভাতের সাথে বেশি পরিমাণ সবজি নিয়ে খেলে মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে।
গর্ভকালীন এই সময়ে নিজের টেস্ট অনুযায়ী নিজেই খাদ্য চার্ট তৈরি করে নিবেন। নিজের খাবারগুলো সাধ্য অনুযায়ী নিজে তৈরি করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৮। তরল খাদ্য গ্রহণ
তরল খাবারের মধ্যে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরী। বেশি পানি পান করতে সমস্যা হলে সাথে ডাবের পানি ও স্যালাইন যোগ করে খেতে পারেন।
এছাড়াও, ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ভেজিটেবল স্যুপ, চিকেন স্যুপ এই জাতীয় তরল খাবার গুলো রাখবেন। একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক ১৮ থেকে ২০ গ্লাস পানি খেতে বলা হয়। এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং তার হরমোনকে ব্যালেন্স করার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।
৯। ভিটামিন ডি গ্রহণ
গর্ভাবস্থার পুরোটা সময় জুড়েই সন্তানের জন্য ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-ডি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থা প্রথম থেকেই ভিটামিন ডি গ্রহণ করা জরুরি।
ভিটামিন ডি এর প্রধান সূর্যের আলো। আমরা সূর্যের আলো থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভিটামিন ডি পায়। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পেতে গর্ভাবস্থায় মায়েরা কমপক্ষে ৩০ মিনিট সরাসরি যতটুকু সম্ভব হয় স্ক্রিনে সূর্যের আলো লাগাবেন।
তাছাড়া খাবার তালিকায় ছানা, দই, পনির, মাখন রাখুন। ভিটামিন ডি বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশের পাশাপাশি শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করবে।
একনজরে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা |
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার | মালটা, কমলা, কাঁচা মরিচ, আমড়া ও পেয়ারা |
ফলিক এসিড | মালটা, পাকা কলা |
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার | খেজুর, কিসমিস, কচুশাক, সামুদ্রিক মাছ, পালং শাক, ডাল, ডার্ক চকলেট, বাদাম, আপেল ইত্যাদি |
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার | রঙিন সবজি, রঙিন ফল, কলিজা |
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার | দেশি ছোট মাছ, মাংস, ডিম, মুরগি, ডাল |
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার | দুধ, দই, পনির, ইত্যাদি |
স্টার্চ জাতীয় খাবার | আলু, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, পাস্তা |
তরল খাদ্য | পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন, ভেজিটেবল স্যুপ ও চিকেন স্যুপ |
ভিটামিন ডি | ছানা, দই, পনির, মাখন ইত্যাদি |
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় | গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা মেনে খাদ্য গ্রহণ করা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই, গর্ভবতী মায়েরা সুষম খাদ্য বেশি বেশি খাবেন। আপনার শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।
তবে এমন কিছু খাবার আছে যা গর্ভবতী মায়েদের খাওয়া নিরাপদ নয়। যেহেতু প্রেগনেসির প্রথম তিন মাস অনেক ঝুঁকিপূর্ণ তাই খাবারের দিকটা নিজেই খেয়াল রাখবেন। গর্ভাবস্থায় ভুল খাদ্য গ্রহণের কারণে এ সময় বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক সমস্যার পাশাপাশি মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যেসব খাবার রাখা যাবে না বা খাওয়া যাবে না সেগুলো দেখে নিন:
১। কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে রাখা বিপদজনক হতে পারে। তাই এটি খেতে নিষেধ করা হয়। কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খেলে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। যার কারণে এই ফলটি অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন।
২। আনারস ও আঙ্গুর
গর্ভাবস্থায় আনারস খাবেন না। এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। বেশি পরিমাণ আঙ্গুর ফল খেলে হজমের সমস্যা হয়। যা গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
৩। ক্যাফেইন
একজন গর্ভবতী মা ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন খেতে পারবেন না। এর বেশি খেলে মা এবং শিশু উভয়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে অনেকের মতে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ক্যাফেইন থাকা উচিৎ নয়।
মূলত ২০০ গ্রাম ক্যাফেইন ধরা হয় দিনে দুই কাপ চা বা এক কাপ কফি কে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
৪। অপাস্তুরিত দুধ
অপাস্তুরিত দুধে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা গর্ভকালীন সময়ে মায়ের ও সন্তানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য অবশ্যই এটিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে পান করবেন।
৫। কাঁচা ডিম ও অর্ধসিদ্ধ মাংস
অনেকের কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম খাওয়ার অভ্যাস আছে। কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা গর্ভের শিশুর জন্য ভাল না। এজন্য প্রেগনেন্সির সময় মায়েরা ডিম ভাল করে সিদ্ধ করে তারপর খাবেন। এবং মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।
৬। কলিজা ও সামুদ্রিক মাছ
কলিজাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। যার কারণে প্রথম তিন মাসে মায়েদের এটি খেতে নিষেধ করা হয়।
সামুদ্রিক মাছে আয়রন ও ওমেগা-থ্রি বেশি পাওয়া যায় কিন্তু সামুদ্রিক মাছে পারদ এর মাত্রা বেশি থাকে। যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। এজন্য গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছের পরিবর্তে দেশীয় মাছ বেশি খেতে বলা হয়। সামুদ্রিক অন্য মাছের মধ্যে ইলিশ মাছ খেতে পারবেন।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা নিয়ে শেষ কথা
গর্ভাবস্থায় আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য, প্রেগনেন্সি প্লানিং অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা বেশি উত্তম। কারণ, গর্ভাবস্থার তিনমাস আগে থেকে চিকিৎসকগণ ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টারি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সুস্থ সুন্দর বাচ্চা পেতে গর্ভাবস্থায় মায়েদের পরিপূর্ণ পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যা সবসময় সাপ্লিমেন্টারি না নিয়ে সবুজ শাকসবজি ফলমূল ইত্যাদি থেকে নেওয়া বেশি ভালো। এজন্য, গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সবসময় সিজনাল ফল ও শাকসবজি বেশি রাখবেন।
গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
- প্রথম তিন মাস কে ফাস্ট ট্রাইমেস্টার বলা হয়
- এরপর দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার ও
- তৃতীয় ট্রাইমেস্টার
মায়ের খাবার থেকে যেহেতু বাচ্চা পুষ্টি গ্রহণ করে, সেজন্য ফাস্ট ট্রাইমেস্টারে যে পরিমাণ খাবার আপনি খাবেন, এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে থেকে আরো একটু বেশি পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রেগনেন্সির পুরো ৯ মাসে গর্ভবতী মায়ের ওজন অন্তত ৯ থেকে ১১ কেজি বাড়াতে হবে। এজন্য খাদ্য তালিকাটি সঠিক হওয়া প্রয়োজন।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনায় একজন মা কি খাবেন এবং কি খাবেন না, এই সম্পর্কে এতক্ষণে কিছুটা হলেও আপনারা ধারণা নিতে পেরেছেন।
যে সকল মায়েরা কোন খাবার থেকে কতটুকু ক্যালরি বা পুষ্টি গ্রহণ করবেন বুঝতে পারেন না, বা গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা তৈরি করতে পারছেন না, তারা অবশ্যই একজন ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিবেন।