ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি | ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস কোন ব্যাধিই নয়, শরীরের ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন জনিত একধরনের সমস্যা যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি প্রতিবন্ধকতাও বটে।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস বলে একটি অঙ্গ আছে। এর অন্যতম একটি কাজ হল ইনসুলিন নামক একটি প্রোটিনজাত হরমোন নিঃসরণ করা।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ভাঙা-গড়ার নিত্যনতুন আয়োজনে খাদ্যকণা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে, যা শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বিবেচিত। এখন প্যানক্রিয়াস কর্তৃক নিঃসরিত এই ইনসুলিন আমাদের শরীরে উৎপাদিত গ্লুকোজকে কোষে কোষে পৌছে দেয়ার কাজটি পালন করে।

কিন্তু কখনো কখনো আমাদের শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা, যার ফলে গ্লুকোজ রক্তেই থেকে যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ বা হার বেড়ে যায় অর্থাৎ, ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

ডায়াবেটিস সমস্যা একবার দেখা দিলে তা থেকে মুক্তির উপায় এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে আমাদের সকলেরই ডায়াবেটিস কেন হয়, ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি, ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানা উচিৎ।

ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি

ডায়াবেটিস প্রধানত ২ প্রকার, যথা:

  1. টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস, এবং
  2. টাইপ টু ডায়াবেটিস

তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ গর্ভকালীন বা জেস্টেশনাল (gestational) ডায়াবেটিস বলে আরেকটি ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ উল্লেখ করেছেন।

১। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস | Type one diabetes

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বা ইমিউন সিস্টেম (immune system) ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে কখনো কখনো অগ্ন্যাশয় গাত্রে অবস্থিত বেটা সেল বা কোষগুলোকে (beta cell) ধ্বংস করে দেয়।

এ কোষগুলোই মূলত ইনসুলিন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে করে অগ্ন্যাশয় চিরজীবনের মত ইনসুলিন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়। আর এর ফলেই টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

এছাড়াও বাহ্যিক আরো বিষয়াবলিও এই টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের কারণ হিসেবে বিবেচ্য যেমন বয়স, বংশগত কারণ, পরিবেশগত কারণ ইত্যাদি।

বংশগত কারণের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বংশে যদি কারো টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস থেকে থাকে যেমন বাবা-মা, ভাইবোন ইত্যাদি, তাহলে সেই সদস্যেরও ৬% ঝুঁকি থাকে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার।

এছাড়াও যাদের বয়স ২০ এর কম, তারাও এই টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ঝুঁকিমুক্ত নন। গবেষণামতে জানা গিয়েছে যে, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস মূলত শিশু-কিশোর এবং যুবক বয়সের দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই হওয়ার একটি চান্স আছে।

তাছাড়া পরিবেশগত কারণ অনুযায়ী প্রকৃতিতে বেশকিছু ক্ষতিকর ভাইরাস রয়েছে যা দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে আমাদের শরীরের সংস্পর্শে এসে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে আক্রান্ত করে দেয় ও টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেল যে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের দেহে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না বললেই চলে। তাই বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনই তাদের ইনসুলিন নিতে হয়।

আরো পড়ুন:  গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা : ফিট থাকতে গ্রিন টি

আধুনিক জরিপে দেখা গিয়েছে, এ ধরণের মানুষ পৃথিবীতে আছে প্রায় ১০ শতাংশেরও বেশি।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা উপসর্গ

  1. অস্বাভাবিক ও ক্রমাগত ওজন হ্রাস
  2. অস্পষ্ট/আবছা দৃষ্টি
  3. ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
  4. অকারণ অবসাদ ও ক্লান্তি
  5. ঘন ঘন তৃষ্ণার্ত অনুভব করা ও প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়া

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত লক্ষণসমূহ এক সপ্তাহ বা তারও কম সময়ের মাঝেই পরিলক্ষিত হয়, এবং লক্ষণগুলো প্রকট মাত্রা ধারণ করলে কখনো কখনো তা জীবন সংশয়ের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

এমনই একটি জীবন সংশয়ের কারণকে চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় Diabetic KetoAcidosis (DKA) বলা হয়ে থাকে।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

১। চিকিৎসকরা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে মূলত বেশ কয়েকরকমের টেস্ট দিয়ে থাকেন, যার মাঝে র‍্যান্ডম প্লাজমা গ্লুকোজ (random plasma glucose) বা RPG test এবং A1C blood test উল্লেখযোগ্য।

দুটো টেস্টই মূলত এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে যে রোগী আসলেও টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত কিনা এবং রক্তে ঠিক কত সময় পর্যন্ত গ্লুকোজ বিদ্যমান আছে।

২। প্রথম ধাপে রোগীর টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পরে পরবর্তী ধাপে চিকিৎসকরা আরেকটি টেস্ট করান, যাতে রোগীর শরীরে রক্তে থাকা অটোঅ্যান্টিবডির (autoantibody) পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়।

অটো-অ্যান্টিবডি মূলত এক প্রকার অ্যান্টিবডি যা ভুলবশত শরীরের বিভিন্ন উপকারী কোষকে আক্রান্ত করে ফেলে। শুধু রোগীই নন, প্রয়োজনভেদে তার পরিবারের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত অন্যান্য সদস্যদের জন্যেও অটোঅ্যান্টিবডি টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৩। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসধারী রোগীদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার ফলে তাদের আজীবন কৃত্তিমভাবে শরীরে ইনসুলিন নিয়ে যেতে হয়; কখনো সিরিঞ্জ আবার কখনোবা ইনসুলিন পেন/পাম্পের মাধ্যমে।

৪। ইনসুলিন ছাড়াও কখনো কখনো রোগীকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে অন্যান্য ঔষধও খেতে হয়, যার মাঝে মেটফরমিন (metformin), প্রামলিনটাইড (pramlintide) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

যদিও টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের বেশিরভাগ কারণ এবং প্রতিকার-উভয়ই এখনো অজানা, বিশেষজ্ঞরা এবং চিকিৎসাবিদগণ এর অনুসন্ধানে দিনরাত নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন।

তবে কারণ যাই হোকনা কেন, উপসর্গগুলো দেখা দেয়ামাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী, বিশেষ করে Diabetic KetoAcidosis এর ক্ষেত্রে কখনো কখনো রোগীকে ইমার্জেন্সি রুমে অবজারভেশনে রাখা উচিত।

এছাড়াও যখন ইনসুলিন গ্রহণের মাত্রা রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কর্মকান্ডের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনা, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে।

একে ইংরেজিতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে Diabetic KetoAcidosis এর মতই হাইপোগ্লাইসেমিয়াও একটি প্রাণঘাতক বলে বিবেচিত।

২। টাইপ টু ডায়াবেটিস | Type two diabetes

টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেছনে দুরকম কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, যখন অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়না, এবং দ্বিতীয়ত, ইনসুলিন উৎপন্ন হলেও সেই ইনসুলিন যখন ঠিকমত রক্ত থেকে কোষে কোষে গ্লুকোজ পৌছে দিতে পারেনা।

এখন, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের গবেষণা ও জরিপের মাঝে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় যে, টাইপ টু ডায়াবেটিস তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষের হয়ে থাকে। এর নিয়ন্ত্রণক্ষমতাও বেশ সহজলভ্য বটে।

টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেছনেও বয়স, জেনেটিক বা বংশীয় কারণ, শারীরিক স্থুলকায়তা এবং জীবনযাত্রার মান ও ধরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের মত টাইপ টু ডায়াবেটিস একটি নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের নয় বরং যেকোন বয়সের মানুষই, এমনকি সদ্যজাত শিশুরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরো পড়ুন:  স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ঠিক রাখার টিপস

বিশেষ করে ৪৫ বছরের প্রাক্কালে বা পরবর্তী সময়কালটিই টাইপ টু ডায়াবেটিসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এছাড়াও বংশে বা পরিবারে টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে বয়স কোন ফ্যাক্টর নয়, বরং এই ডায়াবেটিস আপনাকে ঝুঁকির মুখে রাখতে পারে।

টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেছনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করে আধুনিক লাইফস্টাইল বা জীবনযাত্রার মান ও ধরণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কর্মসূত্রেই হোক বা অন্য কারণেই হোক, অফিসে বা বাসায় বসেই সারতে হচ্ছে বিভিন্ন কাজ, ছুটতে হচ্ছে রেস্টুরেন্টে।

ফলশ্রুতিতে পরিপূর্ণ ডায়েট ও এক্সারসাইজের অভাব দেখা দিচ্ছে আমাদের জীবনে, শরীরে মেটাবলিজম বুস্ট করার ক্ষমতা বা সময়-দুটোই হারাতে বসছি আমরা। এর ফলে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাড়ছে নানান রোগের আনাগোনা।

দৈনন্দিন জীবনযাপনের এই হালই টাইপ টু ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ বলে ধারণা করছেন চিকিৎসাবিদরা। বর্তমান গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জরিপ অনুযায়ী, উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোর প্রায় ৭৯% মানুষই টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বা উপসর্গ

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোই টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে আরো যে দুটো অতিরিক্ত লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে হাতে পায়ের পেশীতে অবশতা বা চলৎশক্তিহীনতা এবং ক্ষতস্থান সহজে না শুকানো।

ডায়াবেটিস কত প্রকার

টাইপ টু ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ এতই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় যে বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও রোগী অনেকসময় টের পায়না যে সে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কেউ একজন। লক্ষণগুলো অতি প্রচ্ছন্নরূপে দেহে প্রকাশ পেতে থাকে।

পরিশেষে যখন রোগীকে ডায়াবেটিক সংক্রান্ত অন্যান্য রোগ যেমন হৃদরোগ, চক্ষুরোগ বা কিডনি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালাইজড হতে হয়, তখন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই অবশেষে রোগী বুঝতে পারেন যে তার শরীরে টাইপ টু ডায়াবেটিস নামক কালব্যাধি বাসা বেঁধেছে।

টাইপ টু ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

১। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা র‍্যান্ডম প্লাজমা গ্লুকোজ (random plasma glucose) বা RPG test, ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ (Fasting plasma glucose) বা FPG test এবং A1C blood test প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

২। উপরিউক্ত টেস্টগুলো ছাড়াও রোগীকে তার শরীরে বিদ্যমান অন্যান্য জটিলতা যেমন উচ্চরক্তচাপ, রক্তে উচ্চমাত্রায় থাকা গ্লুকোজ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশকিছু ঔষধ দেয়া হয়।

৩। শুধু চিকিৎসাব্যবস্থাই নয়, পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম ও সুষম খাদ্যাভ্যাসও টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সেক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে যত দ্রুতসম্ভব একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে।

এছাড়াও তার উচিত বসে না থেকে শারীরিক আলস্যতা কাটিয়ে হাঁটাচলা সহ অন্যান্য শারীরিক কসরত তথা এক্সারসাইজে মনোনিবেশ করা।

৪। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে মুখ্য অন্তরায়। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষের একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল এই যে, শুধুমাত্র খাওয়া কমিয়ে দিলেই বা একেবারে না খেলেই হয়ত ওজন কমানো সম্ভব।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঠিক ভিন্ন কথা। টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীরা যদি একেবারেই না খেয়ে নিয়ম মেনে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন এবং পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন সক্রিয়তা জারি রাখেন, তাহলে অবশ্যই ওজন কমিয়ে এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

আরো পড়ুন:  মাইগ্রেন কি, মাইগ্রেন কেন হয় | প্রশমনে করণীয়

সুষম খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে লো ক্যালরিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার, শাকসবজি, ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি অন্তর্ভুক্ত।

৫। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি ধূমপানের বদঅভ্যাসও টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বড় শত্রু। কোন রোগী যদি নিয়মিত ধূমপানে অভ্যস্ত থাকেন, তাহলে তার উচিত অচিরেই এই অভ্যাস বাদ দেওয়া।

কেননা ধূমপান হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ফুসফুসের সমস্যাসহ দেহে আরো অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। এর ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে জীবনীশক্তি হ্রাস পেতে থাকে।

৩। গর্ভকালীন বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস

একজন নারী যখন তার গর্ভকালীন সময়ের মধ্য দিয়ে যান, তখন তার শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেয়; যার মাঝে অন্যতম হচ্ছে এই গর্ভকালীন বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস। পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৮৪ শতাংশ গর্ভবতী নারীই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বা উপসর্গ

  1. ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া
  2. প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
  3. ওজন বৃদ্ধির ফলে শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেয়া
  4. হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত লক্ষণসমূহ এত প্রকট না হলেও তা হেলাফেলা করার মোটেও কারণ নেই, কেননা এই ডায়াবেটিসে একজন মাই শুধু নন, তার সাথে আক্রান্ত হচ্ছে অনাগত শিশুটিও।

তাই সকল গর্ভবতী মায়েরই উচিত এই সময়ে কিছু পূর্ববর্তী সতর্কতাবিধি অবলম্বন করে চলা। চলুন একনজরে জেনে নেই এক্ষেত্রে কি কি সতর্কতাবিধি অবলম্বন করা উচিতঃ

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

১। গর্ভকালীন সময়ের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মাঝে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ওজিটিটি টেস্ট অর্থাৎ oral glucose tolerance test (OGTT) করানো উচিত, যার ফলাফলের ভিত্তিতে ডাক্তার এই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ডায়ালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
২। শারীরিক কর্মদক্ষতা ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৩। প্রেগন্যান্সির আগে যদি কোন নারী স্থুলকায়া কিংবা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারিণী হয়ে থাকেন, তবে যত দ্রুতসম্ভব ওজন কমিয়ে তাকে কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌছতে হবে, যাতে করে সে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খ্যাদ্যাভ্যাস/ডায়েট চার্ট

যা যা খাওয়া উচিত: ডায়াবেটিস খাদ্য তালিকা

  • সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে, যা টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু উভয় প্রকার ডায়াবেটিক রোগীদের হৃদরোগ নিরাময়ে উপকারী।
  • উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন চিয়া সিড, কাঠবাদাম, তিসি ইত্যাদি।
  • টকদই, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার, গ্রীন টি যা মেটাবলিজম বুস্ট করে ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।
  • পূর্ণ গমের আটা বা হোল হুইট (whole wheat) আটা বা লাল চাল খাওয়া
  • সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রোকলি, পালংশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও মিনারেল থাকে। এছাড়াও এই সবজিগুলো লো ক্যালরিসমৃদ্ধ হওয়ায় এগুলো সকল প্রকার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের যা খাওয়া উচিত নয়:

  • ভাজাপোড়া খাবার, হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট (high saturated fat)
  • মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন মধু, জ্যাম/জেলি বা অন্যান্য সুগার সিরাপ
  • রিফাইনড আটা, ময়দা বা সাদা চালের ভাত, পাস্তা
  • ড্রাই ফ্রুটস
  • আলু, ভুট্টাসহ অন্যান্য উচ্চ শর্করাবিশিষ্ট সবজি

ডায়াবেটিস নিয়ে শেষ কথা

আশা করি, আজকের আলোচনা থেকে ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি, ডায়াবেটিস এর লক্ষণ এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পেয়েছেন।

পরিশেষে এটুকুই বলব যে, শুধুমাত্র “ডায়াবেটিস” শব্দটি শুনতেই সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতের কথা মনে হলেও এতে ভয় পাবার কিছুই নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্থ্য থাকা সম্ভব।

একজন মানুষ হিসেবে নিজের প্রতি আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা, আত্মবিশ্বাস ও অগোছালো লাইফস্টাইল নিয়ন্ত্রণে আপনার কঠোর অধ্যবসায়ই পারে আপনাকে ডায়াবেটিস মোকাবিলা করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দিতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top