ইন্টারভিউ প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার টিপস

ইন্টারভিউ প্রস্তুতি

ইন্টারভিউ, অর্থাৎ সাক্ষাৎকার! আপনি যে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিবেন, তার জন্য আপনি কতটা উপযুক্ত তার প্রমাণ আপনাকে ইন্টারভিউতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময়ের মধ্যে দিতে হবে। তাই ইন্টারভিউ প্রস্তুতি চাকরি পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একটি ভালো ইন্টারভিউ প্রস্তুতি ( Interview Preparation) আপনাকে যেমন সাফল‌্য এনে দিতে পারে, তেমনি ইন্টারভিউতে করা কোন ভুলের কারণে আপনার সারাজীবন লালন করা কোন স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ইন্টারভিউ হলো সবচেয়ে উত্তম জায়গা নিজের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাকে অন্যের সামনে পেশ করার জন্য। আপনি যত বেশিই জানুন না কেন, আপনি যদি তা প্রকাশ করতে না পারেন তবে তা মূল্যহীন।

আমাদের দেশের ৮০ শতাংশের অধিক চাকুরী প্রত্যাশীরা নার্ভাসনেস এবং সঠিক ইন্টারভিউ প্রস্তুতি না নেওয়ায় ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বিভিন্ন ভুল করে ফেলেন এবং নিজেদেরকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে পারেন না, যেখানে তার যাওয়ার কথা ছিল।

আমরা ভাইভা বা ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় এমন সাধারণ কিছু ভুল করি যা সচরাচর আমাদের চোখে ভুল বলে মনেই হয় না। কিন্তু হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশীর মাঝে সঠিক কর্মীকে বেছে নিতে যারা আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে, আপনার প্রত্যেকটি ছোট ভুলও তাদের চোখে মোটা দাগে দেখা দেয়।

আপনি যে জবটির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন, সেখানে ওই একই পজিশনের জন্য হয়তো আপনার কয়েকজন বন্ধুও আপনার পাশে বসেই অপেক্ষা করছে! সত্যি কথা হলো এখন চাকরির অবস্থা এতই খারাপ যে ১টি পোস্টের জন্য কয়েক হাজার অ্যাপলিকেশন জমা পরে। তাই চাকরি পাওয়া বিষয়টা নিশ্চয়ই সহজ নয়, তবে সঠিক ইন্টারভিউ প্রস্তুতি থাকলে সফলতা ধরা দিবেই ইন-শা-আল্লাহ।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

ইন্টারভিউ কি? | What is Interview in Bangla

একটি চাকরির ইন্টারভিউ হলো এমন একটি সাক্ষাতৎকার যা কোনও চাকরীর আবেদনকারী এবং কোনও নিয়োগকর্তার প্রতিনিধির মধ্যে কথোপকথন ও আলোচনার জন্য হয়ে থাকে, আবেদনকারীকে চাকুরিতে নিয়োগ দেওয়া উচিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য সাক্ষাতৎকারটি পরিচালিত হয়।

ইন্টারভিউ প্রস্তুতি | interview preparation

একটি পোস্টের জন্য যখন হাজার হাজার চাকুরি প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয় তখন খুব ছোট ভুলও আপনার ভবিষ্যৎ খারাপ করে দিতে পারে। তাই জেনে নিন ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে আপনাকে কোন কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিষয়গুলো নোটপ্যাডে লিস্ট করে রাখুন।

১) ইন্টারভিউয়ের পূর্বে ক্লিন শেভ করা

যেকোন প্রতিষ্ঠান সবসময়ই একজন প্রাপ্ত বয়স্ক, ম্যাচিউরড ছেলে বা মেয়ে কে চায়, কিন্তু আমরা ক্লিনড শেভ করে বালক ছেলের চেষ্টা করি । তবে যদি আপনাকে ক্লিনড শেভ এ ভাল মানিয়ে যায় এবং ম্যানলি দেখায় তবে আপনি করতে পারেন।

তবে সবার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে যদি আপনি ইন্টারভিউ এর আগের দিন সকাল বা বিকেলে শেভ করেন। তাহলে আপনাকে ক্লিন লাগবে আর হালকা দাড়ির আভায় ম্যানলিও লাগবে।

২) ইন্টারভিউর পোশাক | Interview dress

আমরা অনেকেই ভাবি যে আমার দৈন্যদশা দেখে হয়তো আমাকে চাকরি দিবে! কিন্তু আসল কথা হলো তারা একজন উপস্থাপন যোগ্য, স্মার্ট, আর দক্ষ কর্মী খোঁজ করছেন, আপনার মাঝে তারা যা কোনভাবেই দেখতে পাবে না।

আপনি সেখানে চাকরি নিতে যাচ্ছেন কোন দাতব্যখানায় নয়।তাই কষ্ট হলেও একটু পরিপাটি হওয়ার চেষ্টা করুন।

ক) ভুল ড্রেস কোড বেছে নেওয়া

আমরা অনেকেই তীব্র গরমের মাঝেও ব্লেজার পরে ইন্টারভিউ দিতে বের হই। ফলশ্রুতিতে আপনি ইন্টারভিউ বোর্ড এ প্রবেশ করার পূর্বেই আপনার পরিপাটি চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং আপনার কনফিডেন্স লেভেল কমতে কমতে তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

আরো পড়ুন:  প্রেজেন্টেশন কি? প্রেজেন্টেশনের ভয় দূর করার উপায়

এমন অবস্থায় ইন্টারভিউ ভাল করা সত্যিই উদাহরণযোগ্য কাজ হবে। তাই এমন ড্রেস বাছাই করুন যেন একবার তৈরি হওয়ার পর আপনার ড্রেস নিয়ে আর কিছু ভাবতে না হয়। সবচেয়ে কমফোর্টেবল এবং হালকা রং বাছাই করুন।

খ) শার্ট-প্যান্ট

কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট কে অঘোষিত ফরমাল ড্রেস কোড বলা হয়। তাই চেষ্টা করুন সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট পরিধান করার। তবে যদি আপনার এমন রং না থাকে তবে কাজ চালানোর জন্য হালকা এক রং এর শার্ট পড়ার চেষ্টা করুন।

ভুল করেও গাঢ় রং পছন্দ করবেন না। প্রিন্টেড শার্ট আপনার এই কয়েক ঘন্টার জন্য হারাম। চেক শার্ট না পড়া উত্তম, তবে হালকা এবং ছোট চেক হলে বাছাই করতে পারেন।

প্যান্ট এর ক্ষেত্রে কালো ফুল ফর্মাল প্যান্ট এর কোন বিকল্প ভাবার চেষ্টাও করবেন না। টাই পরলে কালো, নীল এবং মেরুন এই তিন রঙ এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।

গ) জুতা এবং বেল্ট

ড্রেসকোডের এই জায়গায় আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল করে থাকি। সঠিক নিয়ম হলো আপনাকে জুতা এবং বেল্ট এর রং এক রাখতে হবে । দুটোই কালো রং হলে সবচেয়ে ভাল হয়, তাহলে যেকোম রং এর শার্টের সাথেই পরতে পারবেন । তবে চকলেট রং এর হলেও সমস্যা নেই।

মোজার রং সবসময় প্যান্টের রং এর সাথে মিলিয়ে পরবেন। শর্ট মোজা পরলে সবচেয়ে ভাল হবে, কেননা এটা আরামদায়ক আর প্যান্ট এর রং এর সাথে ১০০ ভাগ না মিললেও সমস্যা নেই।

৩) সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ রেখে যাওয়া

আপনি বনে কাঠ কাটতে যাবেন আর কুঠার নিয়ে যাবেন না!!এটার কোন কৈফিয়ত হতে পারে না। তাই ইন্টারভিউ আগের রাতে ঘুমানোর পূর্বেই সব কিছু চেক করে নিবেন, আপ্নার ইন্টারভিউ লেটার কিংবা যেখানে দিক-নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেখানে দেখে মিলিয়ে নিন।

কারণ তারা আপনার কাগজগুলো যতটা না ভেরিফিকেশন এর জন্য দেখতে চাইবে, তার চেয়ে বেশি আপনার কাজের প্রতি দায়িত্ব জ্ঞান পর্যবেক্ষণ করবে। তাই এ বিষয়ে ভুল করবেন না, আপনার সামান্য সতর্কতাই আপনার চাকরি ভাগ্য খুলে দিতে পারে।

৪) ইন্টারভিউ রিপোর্টিং টাইমের পরে/পূর্বে পৌঁছান

ইংরেজীতে একটা কথা আছে – “টাইম ইজ মানি”।

হ্যা, তারা আপনাকে এজন্যই চাকরি দিবে যে বিনিময়ে আপনি তাদের সময় দিবেন এবং তারা এটিকে টাকায় কনভার্ট করবে। এখন আপনি যদি প্রথম ইম্প্রেশনেই তাদের মূল চাহিদায় আঘাত করেন! তাহলে আপনি কি আশা করেন? নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন তো! কি উত্তর পান।

এখন আপনি যদি অনেক আগেই চলে যান, তাহলে তো ইম্প্রেশন আরো পজিটিভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু না আপনি ভুল ভেবেছেন। আগেই বলেছি, আপনার দায়িত্ববোধ এবং সময় তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু যখন আপনি নিজেই নিজের সময়ের মূল্য বুজেন না, তখন তাদের সময়ের মূল্য আপনি বুঝবেন, এ বিশ্বাস তারা কোথায় পাবে? বুঝতে পারছেন তো! যি আর কখনো রিপোর্টিং টাইম এর পূর্বেই রিপোর্ট করতে যাবেন না।

৫) ইন্টারভিউ ওয়েটিং রুমে ফোন ব্যবহার করা

অনেক সময় দেখবেন ইন্টারভিউ বোর্ড এ খুব কম প্রশ্ন করেই ছেড়ে দিচ্ছে। এবং আপনি খুব ভাল উত্তর দিয়েও যখন চাকরি পেলেন না, তখন হয়তো মনে মনে অনেক গালাগালি দিয়ে থাকবেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, তারা আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে নয়, ওয়েটিং রুম থেকে না করে দিয়েছে।

কোন মন্ত্রী যখন ভাষণ দিতে মঞ্চে ওঠেন, উনি কি ফোন নিয়ে ওঠেন? উনি যদি মঞ্চে ফোন ছাড়া থাকতে পারেন, তাহলে আপনি কেন একটা ঘণ্টা ফোন ছাড়া থাকতে পারবেন না?

আপনি নিশ্চয়ই উনার চেয়ে বেশি কাজ করেন না? আপনার ইন্টারভিউ যারা নেয় তারা কি আপনাকে বসিয়ে রেখে ফোনে কথা বলতে বা ফেসবুকিং করতে যায়? চাকরি হলে মোবাইল ব্যবহারের সময় পাবেন, কিন্তু চাকরি না পেলে সময় আর ভাল লাগবে না।

ওয়েটিং রুমে ফোন ব্যবহার তাদের কাছে আপনার ইম্প্রেশন এ বড় ধরনের আঘাত আনে। যদি আপনি সময় কাটাতে চান তবে সেরা উপায় হলো পত্রিকা/ ম্যাগাজিন পড়া। এটা আপনার ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে। সেই সাথে আপনার সামাজিকতার প্রমাণ দিতে পাশের জনের সাথে কথা বলতে পারেন।

৬) ইন্টারভিউ বোর্ডে ফোন নরমাল মোড এ রাখা

একজন স্মার্ট মানুষ জানে কখন তাকে কেমন আচরণ করতে হবে। কারণ মানুষ চেহারায় কখনো স্মার্ট হয় না, স্মার্টনেস আপনার কার্যাবলীতে প্রকাশ পায়।

আরো পড়ুন:  প্রেজেন্টেশন কি? প্রেজেন্টেশনের ভয় দূর করার উপায়

আপনি যতবিজ্ঞ মানুষই হোন, এটা খব সাধারণ ম্যানার যে যখন আপনি ফরমালি কারো সাথে কথা বলতে যাবেন, তখন পুরো সময়টা তার জন্যই রাখা উচিৎ।

তাই ফোন বন্ধ না করলেও একদম সাইলেন্ট করে দিন। যেন আপনার প্রতি তাদের মনোযোগ হারানোর মতো কোন অবস্থা আপনি নিজেই না তৈরি করেন।

৭) ইন্টারভিউ চলাকালীন সময় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা

আপনার আঞ্চলিকতা অবশ্যই আপনার জন্য গৌরবের বিষয়। এবং এটিকে ধরে রাখা আপনার কর্তব্য, সেই সাথে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা আপনার মধ্যে কতটুকু তার প্রমাণও আপনার বাচন কৌশল।

তাছাড়া, বোর্ডে যারা থাকেন, তারা হয়তো আপনার আঞ্চলিকতা টের পেয়ে ডাইভার্ট হয়ে আপনার অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনার চাকরি হবে না।

তাই, আপনার কথায় যদি এমন সমস্যা থাকে, তাহলে ইন্টারভিউ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলিত ভাষায় কথা বলার প্রাকটিস করে নিবেন।

৮) ইন্টারভিউতে বেশি/কম কথা বলা

আপনার কাছে তারা যে প্রশ্নটি করেছে, তার উত্তর কিন্তু তারা আপনার কাছে শিখবে না। বরং তারা জানতে চায় আপনি জানেন কি না? তারা ভেবে নিতে পারে যে, আপনার বেশি কথা বলার বদ অভ্যাস আছে।

তাই তাদের শুধু জানান দিন যে, হ্যা আপনি এ সম্পর্কে অবগত। তবে ভুল করেও এক কথায় উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে তারা মনে করবে যে আপনার হয়তো এই চাকরির প্রতি তেমন ইন্টারেস্ট নাই।

ইন্টারভিউতে গিয়ে আপনার প্রতিযোগীদের চেয়ে নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন, বো্র্ড মেম্বাররা আপনাকে নিয়ে অবশ্যই দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবে।

৯) পূর্ববর্তী চাকুরীকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা

আপনি যদি আপনার রিজিউমি/সিভি তে কোন চাকরির অভিজ্ঞার কথা উল্লেখ করে থাকেন, তবে আপনি ৯৯% নিশ্চিত থাকুন, আপনাকে তারা এই প্রশ্নটি অবশ্যই করবে কেন আপনি পূর্ববর্তী চাকরিটা ছাড়লেন/ছাড়তে চান?

আপনি তখন খুব সুন্দর করে নিজের ক্যারিয়ারকে সুগঠিত বা নিজের উন্নতি এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ইচ্ছার কথা বলবেন, কেন আপনি এই জবটি করতে চান সে সম্পর্কে বলুন। একটি উদাহরণ দিচ্ছি-

স্যার, আমার বর্তমান/পূর্বের চাকরি টি যথেষ্ট ভাল এবং সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু আমি আপনার এখানে কাজ করতে পারলে নিজেকে প্রমাণ করার আরো বেশি সুযোগ পাব বলে মনে করছি। আমার বর্তমান কর্মস্থলের চেয়ে এখানে উন্নতি করার অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে, এখানে আমি যে কাজের জন্য আপনার সামনে বসে আছি, সেটাই আমার প্যাশন স্যার, আর ভাল কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে তো হবেই।’

আপনি পারলে আরো ভাল কিছু গুছিয়ে নিন। কিন্তু কখনোই পূর্বের চাকরি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করবেন না। এমনকি যদি সত্যিই আপনার কাজের ক্ষেত্র ভাল না হয়েও থাকে।

কেননা তখন তারা ভাববে, অন্য কোন অপশন পেলে আপনি চলে যাবেন আর সেখানে গিয়ে তাদের নামেও খারাপ মন্তব্য করবেন। কে নিজের সুনাম বিক্রি করতে চাইবে বলুন!
 

১০) ইন্টারভিউতে প্রশ্ন না করা

আপনি যদি ইন্টারভিউ বোর্ড এ প্রশ্ন না করেন, তবে কয়েকটি বিষয় ভেবে নেওয়া যায়-
  • আপনি ভীত, এবং আত্মবিশ্বাস এর অভাব আছে   আপনার মধ্যে
  • এই চাকরি নিয়ে আপনার আগ্রহ নেই
  • এই কোম্পানি এবং তাদের কাজ সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই
  • আপনার নিজের মধ্যে কোন কৌতুহল (Curiosity) নেই, যা যেকোন কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

এখন আপনিই বলুন, এতগুলো সমস্যা নিয়ে কে আপনাকে চাকরি দেবে? তাই প্রশ্ন করুন আর নিজেকে এই চাকরির সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার হিসেবে প্রমাণ করুন।

১১) কোম্পানি সম্পর্কে রিসার্চ না করা

কোম্পানী সম্পর্কে রিসার্চ করা
বেশিরভাগ বোর্ডে এই প্রশ্নটি রাখা হয় – আপনাকে চাকরি দিলে আপনি আমাদের কি দিতে পারবেন? অথবা, আপনাকে কেন আমরা চাকরি টা দিব?এই প্রশ্নের উত্তর কেবল রিসার্চ করলেই পাওয়া যাবে। আপনি যদি সবার মতো আপনি এই পারেন, ওই পারেন বলে যান, তাহলে বাকি সবার মতো আপনাকেও বোর্ড থেকেই ফেরৎ যেতে হবে, জয়েন লেটার হাতে পাবেন না।তাই কোম্পানি সম্পর্কে, তাদের কাজ, প্রবৃদ্ধি, পূর্ব অবস্থা, বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন।

 

সবচেয়ে ভাল হয়, যদি আপনার চোখে কোন সমস্যা বের করতে পারেন।  প্রশ্নটি না করলেও কোন এক ফাঁকে অবশ্যই তাদের ত্রুটি সম্পর্কে অবগত করবেন।
এটা যদি করতে পারেন, তবে আপনার চাকরি বোর্ড এ পৌছানোর পূর্বেই কনফার্ম ভেবে নিতে পারেন।

ইন্টারভিউ বিল্ডিংয়ে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করুন

আমরা ইন্টারভিউতে যে ভুল টা আমরা সবচেয়ে বেশি করি তা হলো বোর্ড এর সামনে প্রশ্নোত্তর এর সময়টা কেই শুধু ইন্টারভিউ চিন্তা করি। যা আমাদের ইন্টারভিউতে করা ভুলগুলোর মধ‌্যে সবচেয়ে বড় ভুল। যেটা অনেক সময়ই আপনার চাকুরী না পাওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাড়ায়।

আরো পড়ুন:  প্রেজেন্টেশন কি? প্রেজেন্টেশনের ভয় দূর করার উপায়

সত্যি কথা হলো ভাল কোম্পানি মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করা থেকে আপনাকে অবজার্ভ করতে থাকে, আপনার ইন্টারভিউ নেয়। তাই প্রতিটি পদক্ষেপ খুব সতর্কতার সাথে ফেলবেন। ইন্টারভিউর ভুল জয় করুন, ইন্টারভিউতে নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে সাফল‌্য লাভ করুন।

আপনার উপস্থিতি জানান দিন

আপনি যখন কোন ইন্টারভিউ দিতে যান, যেখানে আপনার জব ইন্টারভিউ নেওয়া হবে সেই বিল্ডিং এ প্রবেশ করারপর আপনার নিশ্চয়ই রিসিপিশনিস্ট এর কাছে খোঁজ নিতে হয়। এখানে আমরা সাধারণত ইনফরমালি কথা বলি, কিন্তু এটা করবেন না। জানেনই তো “first impression is the last impression”।

আগে যাই বলে থাকুন, এখন থেকে ফরমালি জিঙ্গেস করবেন। অবশ্যই আপু বা ভাইয়া বলবেন না। চেষ্টা করবেন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করার। একটি উদাহরণ দিচ্ছি, এভাবে করার চেষ্টা করবেন। Hi, My name is Mr X. I’m here for a 12 p.m. job interview for the program manager role

আপনার এমন এন্ট্রি ওয়েটিং রুমে বসে থাকা বকি সবার চেয়ে আলাদাভাবে পরিচয় নিয়ে আসবে।

ওয়েটিং রুমে যা করবেন

<> এই সময়ে পাশের জনের সাথে ফরমাল কথা বলার চেষ্টা করতে পারেন, যদি তিনি বিরক্ত না হন। এতে আপনার সামাজিকতার প্রমাণ পাবে (যদি গোপন পর্যবেক্ষণ চলতে থাকে, বর্তমানে যা খুবই স্বাভাবিক একটি সিলেকশন প্রক্রিয়া (বিশেষ করে যেখানে লিখিত পরীক্ষা পূর্বে নেওয়া হয়)।

<> খেয়াল রাখবেন যেন উচু গলায় কথা বলে না ফেলেন, কিংবা হাসাহাসি না করে ফেলেন। মনে রাখবেন এটি একটি ফরমাল জায়গা, আপনার জন‌্য আরো বেশি ফরমাল। তাই সতর্ক থাকুন এবং বিল্ডিং এ অবস্থান করা পুরো সময়টা নিজের ব্যক্তিত্ত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।

<> যদি কথা বলতে না চান বা আপনি কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট হয়ে থাকেন তবে আপনার সময় কাটানোর জন্য পত্রিকা বা ম্যাগাজিন খুব সুন্দর আর্ট।

interview preparation
<> আপনি যখন ইন্টারভিউ এর জন‌্য অপেক্ষা করছেন, তখন আপনার সাথে যে কেউ পরিচিত হতে আসরে অবশ্যই উঠে দাড়াবেন এবং নিচের ধাপ গওলো অনুসরণ করবেন।
  • ছোট একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিন [ জোরে চাপ দিবেন না ]
  • আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে নিজের পুরো নাম বলুন
  • তিনি নিজের পরিচয় দিলে তাকে ধন্যবাদ দিন, বলতে পারেন – It is nice to meet you, thank you
  • চোখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে কথা বলুন।

ইন্টারভিউ বোর্ড কন্ট্রোল করুন

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার পর নিজের আসন এ বসে তাদের চোখের দিকে তাকাবেন। তারা যদি আপনাকে আপনার পরিচয় দিতে বলে (“Tell me about yourself”) তখন যতটা সম্ভব ক্যারিয়ার রিলেটেড কথা বলুন।

আমার নাম, বাড়ি এসব বলবেন না, এসব তাদের কোন দরকার নেই। তারা যেটা জানতে চাচ্ছে সেটিই শোনানোর চেষ্টা করুন। নিচে একটা উদাহরণ দিলাম এভাবে সাজানোর চেষ্টা করবেন।

‘I am a graphic designer with over two years of experience specializing in creating beautiful, unique website experience that make users time with a brand more enjoyable. I’m looking forward to growing my management skills to hopefully develop and inspire a team of my own”

আপনার এমন তথ্যবহুল সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে খুব সহজেই ইন্টারভিউ বোর্ড সদস্যরা আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ইন্টারেস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করবে।

বোর্ডে অবস্থানরত সময়ে কোন পরিস্থিতেই নিজের আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। বডি ল্যাংগুয়েজ তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তারা আপনার চাপ নেওয়ার ক্ষমতা দেখতে চেষ্টা করবে।

জব সাক্ষাৎকার

ইন্টারভিউ শেষে অবশ্যই নিজের ভাল লাগার কথা জানাবেন। এভাবে বলতে পারেন- “I am very glad to meet you, It’s a great meet with you to talk about the associate role on your team”

চাকরিদাতাদের কাছে ইন্টারভিউ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

বর্তমান সময়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিরও কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ইন্টারভিউর মাধ্যমে একই সঙ্গে আপনার ইংরেজি ভাষায় আপনার স্পিকিং এবং লিসেনিং-এ পারদর্শীতা কতটুকু, তা লক্ষ করা হয়।

সরকারী চাকুরী এবং বেসরকারি চাকুরী তে ইন্টারভিউ এর প্রাধান্য ভিন্ন হলেও গুরুত্ব কোথাও কম নয়। চাকুরিদাতাদের হাতে এখন অপশন বেশি এবং ইন্টারভিউ বোর্ড এ থাকা চোখগুলো আপনার ভিতরটাকে সার্চ করে টেনে আনার চেষ্টা করে।

তারা নিজেদের জন্য সবচেয়ে ভাল কর্মীকে খুঁজে পেত চায়। তাই জব ইন্টারভিউকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে জব সাক্ষাৎকারে যেসব ভুল আমরা করে থাকি, এবং চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কেীশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নিয়ে শেষ কথা

ইন্টারভিউতে সাধারণ ভুল গুলো আমাদের অনেকসময়ই নজরে পড়ে না। কিন্তু আপনার সামান্য সতর্কতা, স্মার্টনেসের সঠিক কম্বিনেশন ও সঠিক ইন্টারভিউ প্রস্তুতি আপনার স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে। স্মার্টলি জব প্রিপারেশন নিন এবং ইন্টারভিউ হ্যাক করুন, আর নিজেকে সবার মাঝে আলাদা প্রমাণ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top