আমরা যারা কিশোর কিশোরী স্বুল শিক্ষার্থী আছি এখন আমাদের দায়িত্ব আমাদের বাবা-মা বহন করেন। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী একটা সময় তাদের দায়িত্ব এই কিশোর কিশোরীদের উপর ই বর্তায়। শুধু তাই নই আজকের কিশোর কিশোরীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই কিশোর কিশোরীদের ভূমিকাই মূখ্য। তাদের দুর্দান্ত চিন্তা ভাবনা, শিক্ষা এবং সাহসিকতার মাধ্যেমে দেশেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সকলের সামনে মাথা উচু করে দাড় করাবে। এজন্য তাদের প্রয়োজন সকল দিক দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করা। কিন্তু নিজেকে তৈরি করার জন্য প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে কোন কিছুতেই মনোযোগী হতে পারবেনা, আমরা সবাই তো আর স্টিফেন হকিং নই। অন্যদিকে ফিটনেস না থাকলে আমাদের কনফিডেন্স লেভেল কমে যায়। তাই সফলতার জন্য স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ঠিক রাখার কৌশল
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে আমাদের জীবনে নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের স্কুলে যেতে হবে, পরীক্ষা, কোচিং, প্রাইভেট ইত্যাদির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং এই প্রতিদিনের রুটিন বজায় রাখতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্নটা কমে যায় এবং তৈরি হয় নানা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার।
এই কঠিন ব্যাস্ততার মাঝেও কিশোর কিশোরী স্কুল শিক্ষার্থীরা নিজেদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রেখে স্বাস্থ্যকর ও ফিট থাকা যায় সে বিষয়ে আজ আমি কিছু সহজ কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো। স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য অর্জনের জন্য আমাদের সকলকেই কিছু সহজ অভ্যস তৈরি করে নিতে হয়। যেমন:
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া :
সময় বদলানোর সাথে সাথে আমাদের ব্যাস্ততা বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে এবং এই কঠিন অবস্থায় আমরা স্বাস্থ্যকর বাড়ির খাবার না খেয়ে আমরা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছি। অনেক সময় খালি পেটে এইসব খোলা জায়গার খাবার বা জাংক ফুড খাওয়ায় সমস্যাটা আরও বেশি হয়।
তাই ভাল পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত যা প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। এটি শরীরের এনার্জি, প্রয়োজনীয় বৃদ্ধি, এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বিভিন্ন অসুস্থতা এবং ক্লান্তি প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডাল, ফল শাকসবজি ইত্যদি পুষ্টিকর খাবার সাস্থ্যকর শরীরের জন্য খাওয়া উচিত।
২. ব্যায়াম বা আউটডোর খেলাধুলা:
প্রতিদিন ব্যায়াম করাও জরুরি। বিভিন্ন আউটডোর খেলাধুলা করলেও শরীরের ফিটনেস বজায় থাকে। নিজেকে সতেজ রাখার পাশাপাশি ফিট থাকতে নিয়মিত সকালের হাঁটা বা দৌড়ানো উচিৎ। আমরা লিফ্টের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করে কিংবা মাঝেমাঝে যানবাহনের পরিবর্তে আশেপাশের নিকটবর্তী জায়গায় হেটে যেতে পারি, মাস শেষে শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি কিছু সেভিংসও হয়ে যাবে। এইভাবে আমাদের অবশ্যই নিজেকে সুস্থ রাখতে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
৩. ওজন হ্রাস :
যারা একটু স্বাস্থ্যবান তারা অনেকই তাদের নিজেদের শরীর নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। এজন্য তারা ওজন হ্রাস করার জন্য বেশিরভাগ লোকেরা প্রায়শই খাবার এড়িয়ে বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করে ভুল করেন। ওষুধ খাওয়া, এক কাপ স্যুপ বা দিনে মাত্র একটি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এই ভুল গুলো করার কারনে আপনি যেটা চাইছেন ঠিক তার উল্টোটা ঘটে, এটি আপনার বিপাক ক্রিয়াকে ধীর করবে এবং আরও ওজন বাড়িয়ে তুলবে, যা আপনাকে ক্লান্ত এবং স্ট্রেস অনুভব করাবে। স্থুলতা এবং শারীরিক সুস্থতার অভাবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে।
ওজন হ্রাস করতে চাইলে আপনি একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদদের সাহায্য নিতে পারেন যিনি আপনার প্রতিদিনের খাবার গ্রহণের রুটিন করতে সাহায্য করতে পারেন। তিনি প্রাথমিকভাবে আপনাকে বিভিন্ন মেডিকেল ডায়াগনোসিস করাবেন এবং তারপর পর্যালোচনা করে একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট ঠিক করে দিবেন। পরামর্শ মেনে চললে আমাদের শরীরের ফিটনেস এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
৪. প্রচুর শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে :
ভারসাম্যযুক্ত খাদ্য খাওয়া অত্যাবশ্যক। সঠিক পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত, এজন্য শাকসবজি খেতে হবে। ভাল স্বাস্থ্যকর খাবার আপনাকে ফিট এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। মৌসুমী যেকোন ফল, কলা, আপেল প্রতিদিনের রুটিনে থাকা অসুস্থ্যতা থেকে দূরে রাখতে পারে, বাইরের বার্গার, পিজ্জা খাওয়া কমিয়ে প্রতিদিন এসব ফলমূল খেতে হবে।
৫. নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম :
আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গঠনে সঠিক ঘুমের সময় বজায় রাখাও খুব জরুরি। স্কুল-বয়সী শিশু বা কিশোরদের কমপক্ষে ৯ ঘন্টা এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। সুস্থ, ফিট ও স্বাস্থ্যবান শরীর রাখার জন্য জল পান করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে।
৬. ধর্মীয় বিধি বিধান পালন করা :
আমাদের সকলের নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা উচিত।নামাজই একমাত্র ঔষুধ যা মানুষের মন এবং শরীর দুটোই সুস্থ রাখে। এজন্য নামাজ কায়েম করার চেষ্টা করা উচিত। আর যারা অন্য ধর্মের আছেন আপনারা আপনাদের ধর্মের বিধান গুলো মেনে চলুন। তাহলে নিজেকে মানসিক ভাবে ঠিকঠাক রাখতে পারবেন।
শেষ কথা:
স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস কঠিন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মূল মন্ত্র। প্রতিদিনের প্রেশার, রুটিন মেনে চলতে গিয়ে যদি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে না পারি, তবে ভবিষ্যতে আমাদের কঠিন পরিশ্রমের সফলতা উপভোগ করার সুযোগ হয়তো পাবো না।
কিশোর বয়সের অভ্যাস সারাজীবন থেকে যায়, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য অভ্যাস তৈরি করা কঠিন কাজ। কিন্তু স্কুলে থাকা অবস্থায় যদি আমরা এসকল ভাল অভ্যাস তৈরি করে ফেলতে পারি, তাহলে কর্ম জীবনে আমাদের অবশ্যই কিছু বেনিফিট দিবে, জীবনে সফলতা অর্জনে বহুদূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।