অনেকেই আছেন যারা উচ্চতা নিয়ে অসন্তুষ্ট। ফলস্বরুপ, তারা লম্বা হওয়ার উপায় খোঁজ করেন এবং সেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করে। উচ্চতা মূলত জেনেটিক্স দ্বারা নির্ধারিত হলেও লম্বা হওয়ার কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে যেগুলো কার্যকরী বলে প্রমাণিত।
একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা চলমান রাখলে আপনি প্রতিদিন আপনার মেরুদণ্ড প্রসারিত করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে উচ্চতা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।
লম্বা হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় যাওয়ার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা রাখা ভালো যে, উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য আপনি দুটো ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে পারেন। প্রথমত, উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দ্বিতীয়ত, উচ্চতা হ্রাস রোধ করা। এসব কিছুই আপনি আমাদের এই আর্টিকেলে পেতে যাচ্ছেন।
আমাদের এই আর্টিকেলটি মূলত অনেক গবেষণা ভিত্তিক লম্বা হওয়ার বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী উপায় নিয়ে সাজানো হয়েছে। তাই, কিভাবে লম্বা হওয়া যায় সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকলে আমাদের এখানে উল্লেখ করা লম্বা হওয়ার উপায়গুলো দেখে নিন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
লম্বা হওয়ার উপায় | কিভাবে লম্বা হওয়া যায়
উচ্চতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জেনেটিক্স দ্বারা নির্ধারিত হয়। তবে, লম্বা হওয়ার কিছু উপায় রয়েছে, যেগুলো প্রাকৃতিক এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত। সেসব উপায় অনুসরণ করলে আপনার উচ্চতাও বৃদ্ধির সম্ভাবণা রয়েছে।
কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে লম্বা হওয়া যায় সেসম্পর্কে জানতে লম্বা হওয়ার উপায়গুলো দেখে নেয়া যাক!
১। সুষম, পুষ্টিকর খাদ্য ডায়েট বজায় রাখা
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খাবার তালিকায় “সুষম খাদ্য” যোগ করা শুরু করুন। কেননা, আপনার দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে দেহে পুষ্টি ঘাটতি থেকে যাবে যার কারণে, শরীরের বৃদ্ধি তথা লম্বা হওয়া ব্যবহত হবে।
স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার আপনার শরীরের বৃদ্ধি তথা লম্বা হতে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিবে। তাই, লম্বা হওয়ার উপায় খোঁজার আগে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা নিশ্চিত করতে হবে।
লম্বা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান | খাবার তালিকা |
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য |
|
চর্বিহীন প্রোটিন |
|
জটিল কার্বোহাইড্রেট |
|
অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত অথবা এড়িয়ে চলা উচিত |
|
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলে কিংবা বয়স বৃদ্ধির জন্য হাড়ের ঘনত্ব প্রভাবিত হয় এবং ফলস্বরুপ উচ্চতা হ্রাস পায়। সেক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করতে হবে।
সাধারণত ডাক্তারগণ সুপারিশ করেন যে, ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলা এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের প্রতিদিন ১,২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। যেহেতু উচ্চতা বৃদ্ধি এবং হ্রাসের সাথে হাড়ের একটি সম্পর্ক রয়েছে, সেক্ষেত্রে হাড় এর পরিচর্যার জন্য ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধি খাবার যেমন: টুনা মাছ, স্যামন, ফোর্টিফাইড দুধ এবং ডিমের কুসুম, ইত্যাদি নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত।
২। লম্বা হওয়ার উপায় – নিয়মিত ব্যয়াম করুন
সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর একটি জীবন পরিচালনা করার জন্য নিয়মিত ব্যয়াম অপরিহার্য। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন যে, লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনি হয়তো জানেন যে পেশি ও হাড় উচ্চতা বৃদ্ধি এবং হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত। নিয়মিত ব্যয়াম পেশি এবং হাড় সুস্থ রাখে, যা কি না আপনাকে লম্বা হতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু সব ব্যয়াম লম্বা হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট ব্যয়াম রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার লম্বা হওয়ার জার্নি সফল করতে পারেন। লম্বা হওয়া ব্যায়ামগুলো নিয়ে আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইন-শা-আল্লাহ।
৩। লম্বা হতে পর্যাপ্ত ঘুমান
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের শরীর, ব্রেইন এবং শরীরের অন্যান্য অংশকে প্রচুর চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শরীরকে বিশ্রাম দিতে হয়। এজন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
কিন্তু আপনি কি জানেন যে লম্বা হওয়া বা না হওয়ার সাথেও ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে?
উল্লেখ্য যে, বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে না ঘুমালে, শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলস্বরুপ, আপনার শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
যাহোক, কোন বয়সের জন্য কতটুকু ঘুম প্রয়োজন তা যদি আপনি জেনে না থাকেন তবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
বয়স | প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ |
০ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত নবজাতক | ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা |
৪ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত শিশু | ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা |
১ থেকে ২ বছর | ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা |
৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু | ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা |
৬ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশু | ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা |
৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর | ৮ থেকে ১১ ঘণ্টা |
১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী | ৭.৫ থেকে ১০ ঘণ্টা |
১৮ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক | ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা |
উপরের চার্ট থেকে আপনার বয়স অনুযায়ী ঘুমের পরিমাণ বাছাই করে সেটা ধরের রাখার চেষ্টা করুন।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের বৃদ্ধি এবং বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লম্বা হওয়ার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কার্যকর রাখা প্রয়োজন।
নিয়মিত অসুস্থতা বা রোগের কারণে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: কমলালেবু, জাম্বুরা, লেবু ইত্যাদি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় যা প্রচুর পরিমাণে তে পাওয়া যায়।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন উপায়ে আপনি আপার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন! যেমন:
- স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা
- পর্যাপ্ত ঘুম
- ব্যয়াম
- ধূমপান এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
৫। লম্বা হতে সক্রিয় থাকুন
শারীরিক কার্যকলাপ হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে। আপনি বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে নিজেকে সক্রিয় রাখতে পারবেন, যেটা লম্বা হওয়ার উপায় হিসেবে আপনাকে ইতিবাচকভাবে সহযোগীতা করবে।
শারীরিক কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হাড়ের ভর বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাবে।
সক্রিয় থাকার মাধ্যমে পেশী এবং হাড় মজবুত হয় এবং প্রয়োজনীয় লম্বা হওয়া বা উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোন HGH (Human Growth Hormone) নিঃসরণকে উৎসাহিত করে।
সক্রিয়া থাকার উপায় সমূহ:
- পরিমিত খেলাধুলা
- হাঁটাহাঁটি
- বাসার বিভিন্ন কায়িক পরিশ্রমের কাজ করা
- রান্না করা
- ওয়ার্ক-আউট বা ব্যায়াম, ইত্যাদি
লম্বা হওয়ার ব্যয়াম | Best Exercises to Increase Height
১। লাফ দেওয়া
নির্দিষ্ট উচ্চতার কোনো বেঞ্চ বা বস্তুর সামনে দাঁড়িয়ে যথাযথ উপায়ে লাফ দিতে হবে। লাফ দেওয়ার অভ্যাস আগে থেকে না থাকলে শুরুতে একটু কষ্ট হতে পারে, কিন্তু অভ্যাস করে ফেলতে পারলে ধীরে ধীরে সহজ হয়ে উঠবে।
২। সাইকেল চালানো
লম্বা হওয়ার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর চেষ্টা করবেন। তবে ,অবশ্যই পা দ্বারা প্যাডেল চালিত সাইকেল বেছে নেবেন, যা আপনার পা লম্বা করতে সাহায্য করবে।
৩। জগিং
লম্বা হওয়ার ব্যয়ামগুলোর মধ্যে জগিং অন্যতম। আপনি যদি আপনার পা লম্বা করার দিকে অধিক ফোকাস করেন, এক্ষেত্রে দৈনন্দিন শিডিউলে জগিংকে আবশ্যক রাখতে পারেন।
কিন্তু, প্রশ্ন আসতে পারে যে, লম্বা হওয়ার জন্য জগিং কীভাবে অধিক কার্যকরী?
জগিং করার মাধ্যমে পায়ের হাড় বৃদ্ধি পায় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাছাড়াও, বয়ঃসন্ধিকাল কিংবা তার পরের সময়টাতে উচ্চতা বৃদ্ধিতে জগিং বেশ ভালো কাজে দেয়।
৪। লম্বা হওয়ার জন্য সাঁতার
পা, শরীর এবং বাহুকে প্রসারিতসহ পেশি শক্তি বিকাশ করার মধ্য দিয়ে সাঁতার উচ্চতা বৃদ্ধি তথা লম্বা হওয়ার উপায় হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম।
এছাড়াও লম্বা হওয়ার জন্য অনেক ধরনের ব্যয়াম রয়েছে, যা আপনি অন্যান্য বিভিন্ন সোর্স থেকে থেকে খুঁজে পাবেন। তবে প্রথমেই চাপ না নিয়ে সহজ ব্যয়াম দিয়ে আপনার লম্বা হওয়ার জার্নি শুরু করতে পারেন।
উচ্চতা হ্রাস প্রতিরোধের উপায়
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য লম্বা হওয়ার উপায়গুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি উচ্চতা যেন না কমে সেজন্য উচ্চতা হ্রাস প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর শরীরের ভিতরের বিভিন্ন সমস্যার জন্য অনেকের উচ্চতা কমে যেতে থাকে। আপনিও যদি এরকম সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে নিচে উল্লিখিত উচ্চতা হ্রাস প্রতিরোধের উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা
- সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা
- পেশি ক্ষয় মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ বা ব্যয়াম
- ধূমপান এড়িয়ে চলা
- পরিমিত বিশ্রামে থাকা।
লম্বা হওয়ার উপায় নিয়ে শেষ কথা
উচ্চতা বৃদ্ধি যদিওবা জেনেটিক্স এর সাথে সম্পর্কিত। সাধারণত, ১৮ বছরের পর উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে উপরের উল্লখ করা লম্বা হওয়ার উপায় অনুসরণ করলে ২৫ বছর পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আশা করি কিভাবে লম্বা হওয়া যায় সেবিষয়ে আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। তাহলে, আপনার বয়স যদি ২৫ বছরের কম হয় তাহলে উপরে উল্লেখ করা লম্বা হওয়ার উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চলার চেষ্টা করুন।
ধন্যবাদ এমন তথ্যবহুল আর্টিকেল শেয়ার করার জন্য। অনেক উপকৃত হলাম।
ধন্যবাদ