রক্তদানের পূর্বে যে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো জানতে হবে

রক্তদানের পূর্বে

প্রাপ্ত বয়স্ক কোন সুস্থ মানুষের স্বেচ্ছায় বিশুদ্ধ রক্ত  দেওয়ার প্রক্রিয়াকেই রক্তদান বলে। অসুস্থ, অসহায় মানুষদের রক্তের প্রয়োজনে রক্তদান করা একটি মহৎ কাজ। মানব দেহে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রক্ত উৎপন্ন হচ্ছে। রক্ত হলো মানব দেহের একমাত্র উপাদান যা এখন কৃত্রিমভাবে তৈরি সম্ভব হয় নি, তাই রক্তের বিকল্প রক্তই।

প্রয়োজনে রক্ত চাহিদায় প্রয়োজন একজন রক্তদাতা। রক্তদাতার কাছে রক্তদান স্বাভাবিক হলেও একজন অসহায় মানুষই বুঝে একজন রক্তদাতা সেই মুহূর্তে কতটুকু উপকার করলেন ।
সাধারণত নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ দুর্লভ। প্রয়োজনের সময় সহজলভ্য রক্তের গ্রুপধারী রক্তদাতা খুঁজে পেতেও  অনেক বেগ পেতে হয় । বাংলাদেশ তো বটেই সম্পুর্ন পৃথিবীতে রক্তের চাহিদার তুলনায় রক্তের যোগান এর মধ্যে রয়েছে ব্যবধান ।
রক্তদানের মত এমন মহৎ কাজের জন্য রক্তদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি-

রক্ত কি?

রক্ত হলো এক ধরনের তরল পদার্থ যা লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকনিক ও অনুচক্রিকা নিয়ে গঠিত। চলুন জেনে নেই কি কি কারণে রক্ত দেদওয়া বা নেওয়া যায় না। রক্তাদানের আগে কিংবা রক্ত নেওয়ার আগে যা জানতে হবে:

১. রক্তদানের বয়স বয়স ও ওজন 

 রক্তদানের জন্য একজন পুরুষ রক্তদাতকে অবশ্যই ১৮-৫৫ বছর এবং মহিলা রক্তদাতকে ১৮-৪০ বছর বয়সী হতে হবে। এক্ষেত্রে রক্তদাতার ওজন হবে কমপক্ষে ৪৫-৪৭ কিলোগ্রাম বা তার বেশি।

২. রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা 

রক্তদানে আগ্রহী প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অবশ্যই স্বাভাবিক এর মধ্যে থাকতে হবে । হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকলে তিনি রক্তদান করতে পারবেন না। হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম/ডে.লি. মহিলার ক্ষেত্রে ১১.৫-১৫.৫ গ্রাম/ডে.লি.। রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতকে অবশ্যই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

আরো পড়ুন:  রক্তদান ও বাংলাদেশে রক্তদানের অবস্থা

৩. রক্তচাপ ও তাপমাত্রা-

রক্তদাতকে অবশ্যই স্বভাবিক রক্তচাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে রক্তদান করা উচিত।

৪. রক্তে শর্করা-

রক্তদাতার শরীরে শর্করার  মাত্রা ঠিক রাখাতে রক্তদানের কমপক্ষে ২ ঘন্টা পূর্বে খাবার গ্রহণ করা উচিত। সম্পুর্ন এক ব্যাগ রক্তদানে যেহেতু প্রায় ৪৫০মিলি তরল দেহ থেকে চলে যায় এজন্য রক্তদানের পূর্বে পানি, শরবত ইত্যাদি পানীয় পান করতে হবে। এক্ষেত্রে কোমল পানীয় অবশ্যই বর্জন করতে হবে ।

৫. রক্তবাহিত সংক্রমক রোগ-

বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার রক্ত বাহিত কোন  সংক্রমক রোগ যেমন- এইচআইভি, হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি থাকা যাবে না । রক্তবাহিত রোগ থাকলে রক্তদাতা রক্ত দিতে পারবেন না । আশার কথা, বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালনে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ পরীক্ষাটি করে নেয়।

৫. রক্তদাতার শারীরিক অবস্থা-

সম্প্রতি বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এবং প্রচুর রক্তপাত হলে রক্তদাতাকে কমপক্ষে ৬ মাস বা বেশি সময় পরে অথবা একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রক্তদান করতে হবে।

গর্ভবতী ও দুধ পান করান এমন মহিলা নির্দিষ্ট সময় পরে (গর্ভাবস্থার কমপক্ষে ১ বছর পরে) ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রক্তদান করতে পারবেন ।মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের নিরাপদ দিনগুলোতে রক্তদান করতে পারবেন।

৬. এন্টিবায়োটিক সেবন- 

কোন রক্তদাতা এন্টিবায়োটিক সেবন করলে একটি নির্দিষ্ট ( এন্টিবায়োটিকের কার্যকাল) সময় রক্তদান করতে পারবেন না। রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে।

৭. সর্বশেষ রক্তদানের তারিখ-

রক্তদাতা একবার রক্তদানের পর পরবর্তী ৪মাস বা তার বেশি সময় ব্যবধানে পুনরায় রক্তদান করতে পারবেন। তাই রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই চেক করুন ৪মাস অতিক্রান্ত হয়েছে কি না!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top