ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় খুঁজছেন? ১০টি কৌশল জেনে নিন

ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায়

 আমরা ইতোমধ্যেই ব্লগে ভিজিটর বৃদ্ধির উপায় নিয়ে কথা বলেছি। তবে ভিজিটর বৃদ্ধি যেমন প্রয়োজন তেমনি ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় জানাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভিজিটর নিয়ে এসে যদি ধরে রাখতে না পারেন, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঠককে পার্মানেন্ট রিডার হিসেবে ধরে রাখতে না পারেন, তবে আদতে ব্লগের ট্রাফিক বাড়ানো কখনোই হয়তো সম্ভব হবেনা।

ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা বলতে মূলত দুইটি জিনিস বুঝায়। প্রথমত ওয়েবসাইটে তাদের spending time বৃদ্ধি করা এবং দ্বিতীয়ত, ম্যাক্সিমাম ভিজিটরসকে বারবার ফেরৎ আনার ব্যবস্থা করা।

ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার সহজ উপায়

একটি ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা খুব একটা সহজ নয়। তবে আপনি যদি কিছু কৌশল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার জন্য ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা খুব একটা কঠিন হবে না।

চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ব্লগে কিভাবে ভিজিটর ধরে রাখার উপায়গুলো কি কি?

১. কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল

আপনার ব্লগটিতে ভিজিটর বৃদ্ধি করা কিংবা ট্রাফিক ধরে রাখতে হলে কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করার বিকল্প নেই। আপনাকে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করার পূর্বে দেখে নিতে হবে, এটি আসলেই অন্যদের উপকারে আসবে কী না?

আপনি যদি অন্যের উপকার হয় এমন তথ্যবহুল আর্টিকেল লিখতে পারেন, তবে ভিজিটররা আপনার ওয়েবসাইটটি ফলো করতে অবশ্যই আগ্রহবোধ করবে।

কিন্তু আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটটিতে এমন আর্টিকেলে ভরিয়ে দেন, যা আসলে কারোরই কাজে আসলো না, তাহলে কিন্তু আপনার সাইটে ভিজিটর দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

২. Readable Content তৈরি করুন

পাঠক এবং সার্চ ইঞ্জিন উভয়ই বড় এবং কালারফুল কনটেন্ট পছন্দ করে। এমন কনটেন্ট যা তাদের চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো মানুষ এখন আর মনযোগ ধরে রাখতে পারেনা।

একটু কঠিন শব্দ কিংবা বুঝতে সমস্যা হয় এমন আর্টিকেল ট্রাফিক আপনার ব্লগ থেকে মুখ সরিয়ে নিবে। ট্রাফিক ধরে রাখার জন্য অবশ্যই আপনাকে সহজবোধ্য আর্টিকেল লিখতে হবে।

আরো পড়ুন:  গুগল অ্যাডসেন্স বিকল্প এড নেটওয়ার্ক | 7 best Google Adsense Alternatives

ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার একটি কার্যকরী উপায় হলো প্রয়োজন অনুযায়ী ছবি এবং পরিসংখ্যান ব্যবহার করা। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করার মাধ্যমে তাদের এংগেজমেন্ট বৃদ্ধি করা।

ট্রাফিক ধরে রাখার উপায়

কনটেন্ট পঠনযোগ্য এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি করার জন্য নিচের টিপসগুলো ফলো করতে পারেন:

  • ছোট ছোট বাক্য এবং প্যারাগ্রাফ করে লিখুন। এর ফলে লেখার আশে-পাশে অনেক ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে, যা পাঠকের পড়ার জন্য সুবিধাজনক হবে।
  • সুন্দর, মোটামোটি আকারের ফন্ট এবং লাইন স্পেস ব্যবহার করুন।
  • readability score টেস্ট করুন। যারা ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগিং করেন, তাদের জন্য ইয়োস্ট প্লাগইনে বাই ডিফল্ট স্কোর দেখার সুযোগ রয়েছে।
  • ইংরেজিতে ব্লগিং করলে গ্রামার ইরোর চেক করুন। আমরা পরামর্শ দিবো গ্রামারলি ব্যবহার করুন।
  • কপিরাইটমুক্ত ছবি, screenshots, ভিডিও এবং অন্যান্য visual elements ব্যবহার করুন।

৩. লেখায় ভিডিও যুক্ত করুন

ইন্টারনেটে সবচেয়ে সফল কনটেন্ট ফরম্যাট হলো ভিডিও। লেখায় যদি ভিডিও থাকে সেই কনটেন্টে পাঠক শুধুমাত্র ছবি এবং টেক্সট ব্যবহার করে লেখা কোনো কনটেন্টর তুলনায় বেশি সময় অতিবাহিত করে।

ওয়ার্ডপ্রেসে ভিডিও যোগ করা অনেক সহজ, তাছাড়া ব্লগারেও খুব একটা কঠিন নয়।

তবে কখনােই সরাসরি ভিডিও আপলোড করা উচিৎ নয়, এটি এসইও অপটিমাইজড উপায় নয়, সেই সাথে ব্যবান্ডউইথ, স্পিড এবং স্টোরেজ নষ্ট করে।

৪. ইন্টারনাল লিংক

ভিজিটর বাড়াতে কিংবা ধরে রাখতে এই বিষয়টা খুবই কার্যকর। এখন প্রশ্ন হলো, ইন্টারনাল লিংক কী? আচ্ছা মনে করুন, আপনি এসইও অপটিমাইজড আর্টিকেল নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখলেন।

এখন অনপেজ এসইও রিলেটেড আরেকটি আর্টিকেল আপনার ব্লগে অলরেডি পাবলিশ করা আছে। এখন আপনি আপনার এই আর্টিকেলটিতে ঐ আর্টিকেলটির লিংক হাইপারলিংক করে দিলেন। মূলত এটিই হচ্ছে ইন্টারনাল লিঙ্ক।

এখন কেউ যখন আপনার আর্টিকেলটি পড়ছে, মনে করুন সে এই আর্টিকেলটি পড়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হলো, এবং লিঙ্ক করা টপিকেও সে জানতে আগ্রহী, তাই চোখের সামনে পড়ায় তখন সে ঐ ইন্টারনাল লিঙ্কে ক্লিক করে সেই আর্টিকেলটিতে প্রবেশ করবে।

এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের পেজ ভিউ তো বৃদ্ধি পেল, সাথে সাথে ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটটিতে একটা নির্দিষ্ট সময় অবস্থানও করলো।

৫. Editorial Calendar তৈরি করুন

ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা কিংবা বৃদ্ধি দুটির জন্যই নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করাটা জরুরি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নিয়মিত বলতে কী বুঝানো হয়েছে?

আরো পড়ুন:  ব্লগার থেকে টাকা আয় করার ১০ উপায় | ব্লগ তৈরি করে আয় করুন

এখানে নিয়মিত বলতে বুঝানো হয়েছে, আপনি আপনার ব্লগে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আর্টিকেল পাবলিশ করার চেষ্টা করবেন। ধরুন আপনি প্রতিদিন কিংবা সপ্তাহ কিংবা মাসে একটা করে আর্টিকেল পাবলিশ করতে ইচ্ছুক। তাহলে এই নিয়ম নেমেই আপনি আপনার ব্লগে আর্টিকেল পাবলিশ করবেন।

একদিন মন চাইলো তো ৫টা আর্টিকেল পাবলিশ করে ফেললেন, আবার মন চাইলো না তো ১০ দিন আর্টিকেল লেখা বন্ধ করে দিলেন। এমনটা কখনই করতে যাবেন না। এতে করে আপনার ভিজিটরদের মাঝে একটা বিরূপ মনোভাব কাজ করবে। ফলে আপনি ভিজিটর হারাবেন।

আর্টিকেল পাবলিশ করার রুটিন

আপনার ব্লগটি যদি মাইক্রো নিশের উপর হয়, তবে সবচেয়ে ইফেক্টিভ ভাবে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় হলো নির্দিষ্ট সময় পরপর পাবলিশ করা, যেন নিয়মিত পাঠক আগে থেকেই জানেন যে আজ আপনার ব্লগে নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করা হবে। যেমন আমরা কোনো সিরিয়াল দেখার জন্য সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ইউটিউব চ্যানেলে চেক করি।

৬. মন্তব্যের সুবিধা রাখুন

আপনার সাইটটিতে আর্টিকেলের শেষে মন্তব্য করা যায় এমন সুবিধা রাখুন। এতে ভিজিটররা নিজেদের সমস্যাগুলো আপনাকে জানাতে পারবে।

নিয়মিত এবং দ্রুত কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ভিজিটরদের আপনার উপর বিশ্বস্ততা কাজ করবে। ফলে ঐ ভিজিটর আপনার সাইটটিতে একজন নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠবে।

৭. ক্লিন ওয়েবসাইট ডিজাইন

মার্কেটে ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য অনেক থিম রয়েছে। সমস্যা হলো নতুন ব্লগাররা একটু কালারফুল থিম বেছে নিতে পছন্দ করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব থিম ডিজাইন ওয়েবসাইটের জন্য ভাল নয়।

ওয়েব ডিজাইন ভালো না হলে পাঠককে বেশি সময় রাখার জন্য বাধাস্বরূপ। এজন্য আপনার ব্লগের পেজ ভিউ কমে যায়, সেই সাথে বাউন্সরেট বেড়ে যায়।

অন্যদিকে একটি ভালো, ক্লিন ডিজাইনের ওয়েবসাইট ভিজিটরসকে তার চাহিদামতো কনটেন্ট খুঁজে পেতে সহায়তা করে, প্রয়োজনীয় ক্যাটেগরিগুলো সামনে নিয়ে আসে যা ভিজিটরকে ব্লগে আরো বেশি সময় ধরে রাখতে পারে।

আমাদের প্রায়শই জিজ্ঞেস করা হয়, কিভাবে একটি ভালো থিম পছন্দ করা যায়? উত্তর হলো ‘simplicity’। সিম্পল, ক্লিন এবং ফাংশনাল থিম পাঠক প্রথম ইম্প্রেশনেই পছন্দ করে ফেলেন এবং পুরো ব্লগটি ঘুরতেও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

আরো পড়ুন:  ওয়ার্ডপ্রেস থিম ব্যাকআপ নেওয়ার সহজ উপায়

আপনি যদি বলেন, আপনি কোন থিম রিকমান্ড করবেন? তাহলে আমি বলবো Astra কিংবা Generatepress থিম।

৮. ফাস্ট লোডিং স্পিড

যেমনটা আমরা পূর্বেই বলেছি, মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। একই টপিকে শত শত আর্টিকেল আছে, তাই কেউই আপনার আর্টিকেল লোড হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেনা।

আপনার ওয়েবসাইট যদি স্লো হয়, তাহলে পাঠক ওয়েবসাইট লোডিং নেওয়ার আগেই ত্যাগ করবে। গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনও ফাস্ট পেজ লোডিং গুরুত্বপূর্ণ ranking factors হিসেবে ধরছে।

ওয়েবসাইট স্পিড লোডিং ফাস্ট করার জন্য  জন্য আপনাকে কিছু স্টেপ নিয়ে অপটিমাইজ করতে হবে। অর্থাৎ caching প্লাগইন ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্লিন করা, ইমেজ সাইজ অপটিমাইজ করা ইত্যাদি।

৯. পুশ নোটিফিকেশন

ওয়েবসাইট পুশ নোটিফিকেশন ভিজিটরস আপনার ওয়েবসাইট ত্যাগ করার পরেও কানেক্টেড থাকতে হেল্প করে, তাদেরকে পুণরায় ব্লগে ফেরৎ নিয়ে আসতে পারে।

পুশ নোটিফিকেশন ভিজিটরসকে তাদের মোবাইল এবং ডেস্কটপ ডিভাইসে সরাসরি নোটিফিকেশন পাঠায়, যা উপেক্ষা করা কঠিন। তাই স্যোশাল মিডিয়া এবং ইমেইলের চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ভিজিটর এংগেজ করতে পারে।

বিশেষ করে আপনার ব্লগ টপিক যদি মাইক্রো নিশ হয়, তবে এটি অধিক কার্যকরী হবে। মাইক্রো নিশ ব্লগের ভিজিটরস পরিসংখ্যান এনালাইসিস করে দেখা যায় ব্লগে ভিজিটরস নিয়ে আসার সেরা ৫টি রেফারাল এর একটি পুশ নোটিফিকেশন।

জনপ্রিয় কিছু পুশ নোটিফিকেশন টুলস হলো PushEngage, Onesignal, ইত্যাদি।

১০. নিজের ব্লগের অনলাইন গ্রুপ তৈরি

ব্লগের ফলোয়ার তৈরি করার আরো একটি দারুণ উপায় হলো ব্লগের সাথে রিলেটেড গ্রুপ তৈরি করা। আপনি এজন্য ফ্রি প্লাটফর্ম যেমন ফেসবুক, লিঙ্কডইন ব্যবহার করতে পারেন।

কমিউনিটি বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে আপনার ইনফ্লুয়েন্সও বাড়বে। গ্রুপের একটিভ মেম্বাররা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ব্লগ প্রমোট করতেও হেল্প করবে।

কিছুদিন পরই দেখবেন আপনার এই কমিউনিটি গ্রুপ ব্লগ ট্রাফিকের সবচেয়ে বড় সোর্স হয়ে দাড়িয়েছে। এই ধরনের ব্লগ ভিজিটর ধরে রাখার জন্য অন্য কোনো উপায়ও অবলম্বন করতে হবেনা।

শেষ কথা

একটি ব্লগ তার নিজস্ব ফ্যান তৈরি করতে না পারলে সফল ব্লগ হিসেবে দাবী করতে পারে না। তাই নিজের ব্লগটির ফ্যান-ফলোয়ার তৈরি করার চেষ্টা করুন।

উপরের এতকিছু করা যদি কঠিন মনে হয় তবে ব্লগটি ক্লিন ডিজাইন করে ফেলুন, নিজস্ব টপিকের উপর স্থির থেকে প্রতিনিয়ত কোয়ালিটি আর্টিকেল পাবলিশ করে যান।

আশা করি, ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় সমূহ আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক হবে।

3 thoughts on “ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় খুঁজছেন? ১০টি কৌশল জেনে নিন”

  1. আমার এই ওয়েবসাইটটিতে আমি এটি ব্যবহার করতে পারবো কি??

    1. যি পারবেন, পুশ এংগেজ আপনাকে ফ্রিতে যোগ করতে দিবেনা, তবে অন সিগন্যাল ১০০০0 সাবস্ক্রাইবার পর্যন্ত ফ্রি প্যাকেজ দেয়। ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুই ধরনের সাইটেই যোগ করতে পারবেন। টুলটি পেতে onesignalডটকম সাইটটি ভিজিট করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top