বর্তমান যুগে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব ভেষজ উদ্ভিদ আমরা ব্যবহার করে থাকি, তাদের মধ্যে অ্যালোভেরা অন্যতম। অ্যালোভেরার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণের কারণে এটি একটি জনপ্রিয় উদ্ভিদ, যার রয়েছে হাজার বছরের ব্যবহারগত ঐতিহ্য।
এই ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই মানুষ তাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য চাহিদার তালিকায় বেছে নিচ্ছেন অ্যালোভেরাকে। অ্যালোভেরার নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেয়ার আগে আসুন একনজরে জেনে নেই এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
অ্যালোভেরা কি | What is Aloe vera
অ্যালোভেরা (aloe vera) এক প্রজাতির স্বল্প কাণ্ডবিশিষ্ট ছোট আকৃতির রসালো উদ্ভিদ। এটি তার ঘন, সুতীক্ষ্ণ এবং মাংসল সবুজ পাতার জন্য পরিচিত, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় 12-19 ইঞ্চি (30-50 সেন্টিমিটার) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। Aloe গণ বা জেনাসের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদের মাঝে এই অ্যালোভেরা বা অ্যালো বারবাডেনসিস (Aloe barbadensis) এর পুষ্টি সমৃদ্ধতা এবং ভেষজ গুণাগুণের জন্য অন্যতম। বাংলা ভাষায় এটি “ঘৃতকুমারী” নামে সুপরিচিত।
অ্যালোভেরার প্রতিটি পাতায় একটি পাতলা টিস্যু থাকে যা পানি ও রস সঞ্চয় করে। এর ফলে পাতাগুলি ঘন হয়ে উঠে। এই পাতার ভেতর সঞ্চিত জেলির ন্যায় থকথকে নির্যাসই আমরা অ্যালোভেরা জেল হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতেও এই নির্যাস ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত শুষ্ক এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ায় অ্যালোভেরা বেশ ভাল জন্মে, বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এর খুব ভাল চাষ হয়।
অ্যালোভেরার উপকারিতা | Benefits of aloe vera
যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হতে থাকা এই অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবেনা। প্রাচীন সভ্যতায় এটি ক্ষতস্থান নিরাময় এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করার মত বিভিন্ন আয়ূর্বেদীয় টোটকায় ব্যবহৃত হত।
তবে বর্তমানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চুল এবং ত্বকের সুরক্ষায়ও ব্যবহৃত হয় এই অ্যালোভেরা।
১। উদ্ভিজ্জ যৌগের স্বাস্থ্যকর উৎস
অ্যালোভেরার পাতায় সঞ্চিত থাকা জেলের ন্যায় নির্যাসে উদ্ভিদের উপকারী জৈব পদার্থ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম-
- ভিটামিন এ
- বিটা ক্যারোটিন
- ফলিক এসিড
- অ্যামিনো এসিড
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
উল্লেখ্য, অ্যালোভেরার রসে বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম আমাদের স্নায়ু এবং পেশীর সচল ব্যবহারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের ৩০০ টিরও বেশি বিভিন্ন এনজাইম বিক্রিয়ায় সাহায্য করে, যার মধ্যে রক্তচাপের সামঞ্জস্যতাসহ স্বাভাবিক মাত্রার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ অন্যতম।
২। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল গুণাগুণে ভরপুর
সুস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভূমিকার কথা সকলেরই জানা। অ্যালোভেরার নির্যাসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম বিশ্বস্ত উৎস পলিফেনলের একটি বৃহৎ পরিবারের অন্তর্গত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল যৌগের সমাহার। এই পলিফেনল সমৃদ্ধ যৌগগুলো অ্যালোভেরার আরও কয়েকটি যৌগের সাথে মিলিত হয়ে কিছু সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও অ্যালোভেরায় বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন নামক হলুদ-লাল রঞ্জক পদার্থটিও একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা রেটিনা এবং কর্নিয়াল ফাংশনে সহায়তার মাধ্যমে চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে।
৩। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের সমাহার
অ্যালোভেরায় থাকা বেশকিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি ত্বকের যেকোন ঘা, ক্ষতসহ প্রাথমিক পর্যায়ের ইনফেকশন সারাতে এবং ত্বকের সমস্যার চিকিৎসা করতে সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। স্কিন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের মতে, এতে বিদ্যমান শীতল এবং ময়েশ্চারাইজিং প্রভাবের ফলে ত্বকের প্রশান্তি নিশ্চিত হয়।
পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বিভিন্ন প্রকার পোড়া দাগের নিরাময়েও অ্যালোভেরার রয়েছে শক্তিশালী অবদান। পরীক্ষামূলক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পোড়া দাগ ও ক্ষত সারাতে প্রচলিত ঔষধের তুলনায় অ্যালোভেরা কমপক্ষে নয় দিন কম সময় নেয়। এটি লালচেভাব, চুলকানি ও অন্যান্য সংক্রমণ নিরাময়ে সহায়ক।
যদিও অ্যালোভেরার এরূপ গুণাবলীর পক্ষে প্রমাণ যথেষ্ট নয়, কিন্তু গবেষণার ফল আশাব্যঞ্জক হওয়াতে বিশেষজ্ঞরা এর সপক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
৪। রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়
অ্যালোভেরা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে সাহায্য করে। আটটি গবেষণা থেকে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে দেহের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার প্রভাবের কারণে এটি প্রি -ডায়াবেটিস বা টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে।
উল্লেখ্য, অতীতের একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক দুই সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে সাহায্য করে।
৫। হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় সহায়ক
আমাদের দেহে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হলেই হৃদরোগের ঝুঁকি দেখা দেয়। আর এই ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই অ্যালোভেরা।
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। জার্নাল অফ নিউট্রিশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ভিটামিনোলজির (Journal of Nutritional Science and Vitaminology) একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরার রস খেলে LDL বা “খারাপ” কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। পাশাপাশি এটি HDL বা “ভাল” কোলেস্টেরলের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে তোলে।
যদিও ক্ষেত্রবিশেষে সব গবেষণার ফলাফল এক নয়, তবুও বেশিরভাগ গবেষণাতেই অন্ততপক্ষে LDL এর ১২ শতাংশ হ্রাস এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ২৫ থেকে ৩১ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা অ্যালোভেরাকে হৃদরোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভেষজ উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য অ্যালোভেরাসমৃদ্ধ যেকোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
৬। মুখের ঘা নিরামক
অনেকের জীবদ্দশায় কোন না কোন সময়ে মুখের আলসার বা ক্যানকারের ঘা (canker sore) দেখা দেয়। এগুলি সাধারণত সপ্তাহখানেকের মতো ঠোঁটের নীচে, মাড়িতে কিংবা মুখের ভিতরে স্থায়ী হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা চিকিত্সা মুখের আলসার নিরাময়কে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যথা উপশমে সহায়ক। আরেকটি গবেষণায় মুখের আলসারে আক্রান্ত ১৮০ জনের আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরার নির্যাস লাগিয়ে দেয়ার ফলে তাদের আলসারের আকৃতি বেশ খানিকটা কমে যাওয়ার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
৭। ডেন্টাল প্লেক (dental plaque) হ্রাসে সহায়ক
দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগ খুবই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এই অবস্থাগুলি রোধ করার অন্যতম সেরা উপায় হল দাঁতে প্লেক বা ব্যাকটেরিয়ার গঠন হ্রাস করা। অ্যালোভেরা মুখে প্লেক উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেপটোকক্কাস মিউটান (Streptococcus mutans) এর পাশাপাশি ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যানস (Candida albicans) নামক ইস্ট মারতে কার্যকর।
উল্লেখ্য, ৩০০ জন সুস্থ মানুষের মধ্যে চালানো গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিলো ১০০% বিশুদ্ধ অ্যালোভেরার জুসের সাথে স্ট্যান্ডার্ড মাউথওয়াশ উপাদান ক্লোরহেক্সিডিনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। ৪ দিনব্যাপী এই গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, দাঁতের প্লেক নিরাময়ে অ্যালোভেরা ক্লোরহেক্সিডিনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এছাড়াও ১৫-৩০ দিনের আরেকটি গবেষণাতেও গবেষকরা প্রায় অনুরূপ ফলাফল পেয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
তাছাড়াও, ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা অ্যালোভেরার নির্যাস সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ এবং টুথপেস্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত, তাদের ক্ষেত্রে প্লেক হবার সম্ভাবনা খুবই কম। এই গবেষণার বিষয়বস্তু ছিলো অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ টুথপেস্ট এবং সাধারণ ট্রাইক্লোসান সমৃদ্ধ টুথপেস্টের মাঝে তুলনামূলক বিশ্লেষণ, যা ৪০ জন কিশোর কিশোরীর মাঝে চালানো হয়। ৩০ দিন পর দেখা যায় যে, ট্রাইক্লোসান টুথপেস্টের চেয়ে অ্যালো টুথপেস্টটি প্লেক, জিঞ্জিভাইটিস ও ক্যান্ডিডার মতো মারাত্মক রোগ নিরাময়ে সক্ষম ভূমিকা পালন করে, তাও কোনপ্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
৮। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
অ্যালোভেরার পাতার ঠিক নিচের দিকে উপস্থিত ল্যাটেক্স (latex) নামক হলদেটে বর্ণের আঠালো যৌগটিতে বিদ্যমান অ্যালোইন (aloin) বা বারবালোইনের প্রভাবে (barbaloin) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পানের ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়াগুলিকে স্বাভাবিক থাকে, যার ফলে সুস্থ অন্ত্রের উদ্ভিদকে ভারসাম্য বজায় থাকে। পাশাপাশি দেহের অন্ত্রের পানির পরিমাণও নিয়ন্ত্রিত থাকে। একটি গবেষণায় অন্ত্রের পানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পেরিস্টালসিসের (peristalsis) উদ্দীপনার মধ্যে একটি সম্পর্ক দেখানো হয়েছে, যা কোনরকম যন্ত্রণা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে।
ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হওয়া ব্যক্তিদের উচিত পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী দৈনন্দিন রুটিনে অ্যালোভেরার রস অন্তর্ভুক্ত করা।
৯। খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে
অ্যালোভেরায় থাকা বেশ কয়েকটি উপকারী এনজাইম খাদ্যের শর্করা এবং চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পানের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের সুস্থ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, হজমশক্তি উন্নত হয় এবং ইরেটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (irritable bowel syndrome) বা আইবিএস (IBS) সহ পেটের অসুখ প্রশমন ও নিরাময়ে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৩৩ জন আইবিএস রোগীদের ওপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার রস আইবিএসের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। তবে গবেষণাটি প্লেসবো-নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় এর স্বপক্ষে আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে দাবী করেন বিশেষজ্ঞরা।
১০। গ্যাস্ট্রিক-আলসার নিরামক
পেটের অম্বল কিংবা গ্যাস্ট্রিক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য বাধাস্বরূপ। অ্যালোভেরার রসে উপস্থিত উপাদানগুলো আমাদের পেটের এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি অ্যালোভেরা আমাদের পাচনতন্ত্রে থাকা H. pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতেও সাহায্য করে, যা পেট এবং অন্ত্রের জ্বালাসহ আলসারের অন্যতম কারণ।
জেনে রাখা ভালো, এই পরামর্শ শুধুমাত্র অ্যালোভেরা বা অ্যালো বারবাডেনসিসের জন্য। অ্যালো গণের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য গাছগুলি বিষাক্ত হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণভাবে সেগুলোকে গ্রহণ করা উচিত নয়।
১১। পানিশূন্যতা নিরাময়ে সহায়ক
যেকোনো ভারী পরিশ্রম ও শারীরিক অনুশীলনের পর আমাদের দেহ ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত তরল গ্রহণের মাধ্যমে রিহাইড্রেশন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রমের পরে গ্লুকোজ বা ডাবের পানির চেয়েও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখে এই অ্যালোভেরার জুস।
অ্যালোভেরা বেশ রসালো এবং উপকারী খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ হওয়ায় এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে অন্যতম। নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পানের ফলে দেহ হাইড্রেটেড থাকে, যার ফলে আমাদের দেহ ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দেহের বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে এবং দেহকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও অ্যালোভেরার নির্যাসের প্রভাবে আমাদের দেহের পুষ্টিউপাদানগুলোর সুন্দর সমন্বয় ও সামঞ্জস্যতা ঘটে, যার প্রভাবে আমাদের শরীরের অঙ্গের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা অব্যাহত থাকে।
১২। কিডনি ও লিভারের সুস্থতা বজায় রাখে
ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কিডনি ও লিভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে তাদের সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর অ্যালোভেরা মিনারেল ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (phytonutrient) সমৃদ্ধ হওয়ায় কিডনি ও লিভারের সুস্থ কর্মক্ষমতায় এর অবদান বহুমূখী।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার
১. খাবার জুস হিসেবে
অ্যালোভেরার জুস তৈরি করতে প্রতি ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার নির্যাসের জন্য ১ কাপ তরল পানীয় (যেকোনো মৌসুমী ফলের জুস কিংবা সাধারণ খাবার পানি) ব্যবহার করুন এবং ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন।
২. ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল | | Aloe Vera Skin treatment
ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সংগৃহীত অ্যালোভেরা জেলের সাথে নিম্নোক্ত উপায়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারেঃ
প্রথম পদ্ধতি: ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে নতুন কোষ জন্ম নেয় এবং ত্বক প্রাণবন্ত থাকে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু এবং একটি পাকা কলা মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্টটিকে ২৫-৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। অতঃপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ত্বক হয় দাগহীন ও মসৃণ।
এছাড়াও অ্যালোভেরার সাথে লেবুর রস, টি ট্রি অয়েল বা ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সমন্বয়েও ফেসপ্যাক বানানো যেতে পারে। অ্যালোভেরার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে।
টি ট্রি অয়েলের সমন্বয়ে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের ফলে ব্রন, অ্যাকনে বা অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিটামিন ই ও অ্যালোভেরার মিশ্রণটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে এবং ত্বক মসৃণ রাখে।
এছাড়াও মেকআপের পূর্বে প্রাইমার হিসেবে এবং মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে রিমুভার হিসেবেও অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যায়।
৩. চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল | Aloe Vera Hair treatment
চুলের যত্নে ব্যবহৃত হওয়া গতানুগতিক প্রসাধন সামগ্রীতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আমাদের চুলের সুরক্ষায় যথেষ্ট নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যালোভেরা বেশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন এবং মৃদু, যা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে।
আসুন জেনে নেই চুলের যত্নে কীভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন-
প্রথম পদ্ধতি:
কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুতকৃত অ্যালোভেরা জেলের তুলনায় সতেজ অ্যালোভেরার নির্যাসের ব্যবহার সবচেয়ে উত্তম। সেজন্য যা করতে হবেঃ
- প্রথমেই অ্যালোভেরা উদ্ভিদ থেকে একটি পাতা কেটে নিন
- এরপর একটি চামচের সাহায্যে পাতার ভেতর থেকে জেল সংগ্রহ করুন
- আপনি ইচ্ছা করলে জেলটি যেকোন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। আবার সরাসরিও স্কাল্পে ব্যবহার করতে পারেন।
- এবার জেল বা তৈরিকৃত মিশ্রণটি সরাসরি মাথার ত্বকে ঘষুন এবং এক ঘন্টার জন্য রেখে দিন।
- অতঃপর চুল এবং মাথার ত্বক ধোয়ার জন্য একটি মৃদু কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
- প্রয়োজন অনুযায়ী সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন।
যারা সরাসরি সতেজ অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি সর্বোত্তম।
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
সরাসরি ব্যবহার ছাড়াও অনেকে অ্যালোভেরার সাহায্যে হেয়ার প্যাক বানিয়েও ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপাদানগুলোর যেকোনো একটি আপনি অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে নিতে পারেনঃ
- মধু
- জোজোবা (jojoba) তেল
- ডিমের সাদা অংশ
- মেথি
তারপর মিশ্রণটি মাথার তালু এবং চুলে ভালমত ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে। অতঃপর যেকোনো মৃদু কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পুর সাহায্যে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা সমূহ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ত্বকের যেসব সমস্যায় অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো নিম্নরূপ:
- সোরিয়াসিস (psoriasis)
- সেবরিয়া (Seborrhea)
- খুশকি (Dandruff)
- ছোটখাটো পোড়া দাগ
- ত্বকের জ্বলুনি
- ক্ষতিকারক রেডিয়েশনের প্রভাব
- হারপিস ঘা (Herpes sores)
- ব্রণ বা অ্যাকনে
- অ্যানাল ফিশার (Anal fissures)
আধুনিক রূপচর্চার পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে নারীদের ভরসার একটি বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে অ্যালোভেরা। এটি নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে ত্বকের উপকার সাধন করেঃ
১। ত্বকের উন্নতি সাধন এবং বলিরেখা প্রতিরোধ
প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু গবেষণা অনুযায়ী, ত্বকে নিয়মিত অ্যালোভেরার ব্যবহার বলিরেখা কমিয়ে আনার মাধ্যমে বার্ধক্যকে ধীর করতে সক্ষম। ২০০৯ সালে ৪৫ বছর বয়সী ৩০ জন নারীর ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে, ত্বকে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল লাগালে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ৯০ দিনের মধ্যে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় ।
এছাড়াও আরো বেশকিছু বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত গবেষণালুব্ধ তথ্য অনুযায়ী, অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে, যা শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী।
২। ব্রণের উপশম
ব্রণ বা অ্যাকনে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত তাজা অ্যালোভেরার জেল ব্যবহারের ফলে ব্রণ উপশম হয়। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে, যেগুলো ব্রণ বা অ্যাকনের অন্যতম কারণ।
যাদের ত্বক অ্যাকনে বা ব্রণ প্রবণ, তারা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ ক্লিনজার, টোনার বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলেও অনেক উপকার মেলে।
৩। ত্বক পরিষ্কার করে
পূর্বেই উল্লেখিত, অ্যালোভেরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর ফলে ব্রণ নিরাময়ের পাশাপাশি সোরিয়াসিস (psoriasis) এবং ডার্মাটাইটিস (dermatitis) নামক ত্বকের রোগসমূহ নিরাময় হয় এবং ত্বক ভেতর থেকে স্বাস্থোজ্বল ও পরিষ্কার থাকে।
এছাড়াও অ্যালোভেরার গুরুত্বপূর্ণ যৌগগুলি আমাদের ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট (UV) বিকিরণের প্রভাবকে নিরপেক্ষ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে আমাদের ত্বক UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব (রোদে পোড়া দাগ, ব্রণ বা বলিরেখার চিরস্থায়ী দাগ ইত্যাদি) থেকে মুক্ত থাকে।
৪। অ্যানাল ফিশার দূর করে
অ্যানাল ফিশার অনেকের জন্য বেশ অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক একটি শারীরিক জটিলতা। এর ফলে পায়ুপথে ব্যথার পাশাপাশি রক্তক্ষরণও হতে পারে। অ্যানাল ফিশারে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত কয়েকবার করে অ্যালোভেরা ক্রিম ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে এটি উপশমের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা সমূহ
আমাদের স্কাল্প বা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যকর অবস্থা অব্যাহত রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। নিম্নোক্ত উপায়ে চুলের যত্নে অ্যালোভেরা ভূমিকা পালন করে-
১। খুশকি দূর করে
খুশকি বা ড্যানড্রাফকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় Seborrheic dermatitis বলা হয়। খুশকির ফলে মাথার চুলকানি ভাব এবং চুলের নিচের ভাগের চামড়া ঝলসে যাওয়ার লক্ষণগুলি অ্যালোভেরা দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে।
১৯৯৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে যা খুশকির কারণ হিসেবে বিবেচ্য।
২। মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দুর করে
নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে এটি মাথার ত্বকে ও চুলের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। এছাড়াও স্কাল্প থেকে অতিরিক্ত সেবাম (sebum) বা তেলজাতীয় পদার্থ নির্গমন রোধেও সহায়তা করে এই অ্যালোভেরা। এর ফলে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং চুল স্বাস্থ্যকর ও নরম হয়।
৩। চুলের গোড়া মজবুত করে
অ্যালোভেরায় বিদ্যমান ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক এসিড চুলের গোড়া মজবুত করে এবং একইসাথে চুলপড়া বন্ধ করে।
৪। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে
সতেজ অ্যালোভেরার নির্যাস সরাসরি চুলে ব্যবহারের মাধ্যমে চুল ভেঙে যাওয়া, আগা ফেটে যাওয়াসহ অন্যান্য ক্ষয়রোধ হয়। ফলশ্রুতিতে চুলের বৃদ্ধিসাধনে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিউপাদান নিশ্চিত হয়।
অ্যালোভেরা জেল বা রস সংগ্রহের পদ্ধতি
১. জেল এবং রস সংগ্রহের জন্য আপনার প্রয়োজন কমপক্ষে কয়েক বছর বয়সী একটি পরিপক্ক অ্যালোভেরা উদ্ভিদের। এর ফলে এতে উপস্থিত সক্রিয় পুষ্টি উপাদানগুলির উচ্চমাত্রার ঘনত্ব নিশ্চিত হয়।
২. গাছের বাইরের অংশ থেকে মোটা ও তরতাজা পাতা বাছাই করে করে একবারে ৩-৪টি পাতা কেটে নিন। তবে তার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে পাতাগুলি স্বাস্থ্যকর এবং কোনরকম ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে মুক্ত।
৩. অতঃপর কাণ্ডের কাছাকাছি কেটে ফেলুন। বেশিরভাগ উপকারী পুষ্টি পাতার গোড়ার দিকে পাওয়া যায়। তবে শিকড় এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
৪. পাতাগুলো ধুয়ে ভালোকরে শুকিয়ে নিন এবং একটি ছুরি দিয়ে কাঁটাওয়ালা প্রান্ত ছেঁটে নিন।
৫. একটি ছুরি বা চামচের সাহায্যে পাতার ভেতর থেকে অভ্যন্তরীণ জেলটি আলাদা করুন।
৬. এমতাবস্থায় যদি খেয়াল করেন যে পাতার কাটা অংশ থেকে হলুদ রস ঝরছে তাহলে তা ঝরিয়ে নিন। এটি হল ল্যাটেক্স সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা ক্ষীর। আর আপনি যদি এই ক্ষীর ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি এটি একটি পাত্রে সংগ্রহ করতে পারেন।
৭. অ্যালো জেলকে কিউব করে কেটে নিন।
৮. মসৃণ অ্যালো জেল পেতে চাইলে কেটে নেয়া টুকরোগুলোকে আপনি এটিকে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন, এবং পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রেফ্রিজারেটরে আইস কিউবে সংরক্ষণ করুন।
অ্যালোভেরা ব্যবহারে সতর্কতা
১। যারা অ্যালোভেরার প্রতি সংবেদনশীল বা অ্যালার্জিক, তাদের উচিত সাবধানতার সাথে এটি এড়িয়ে যাওয়া এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য ব্যবহারের আগে অল্প পরিমাণে হাতের কব্জিতে লাগিয়ে দেখা।
২। অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যালোভেরা জুস পানের ফলে এর ল্যাটেক্সের রেচক প্রভাবের কারণে ডায়রিয়া, পেটে খিঁচুনিসহ লিভারের ক্ষতিসাধন হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।
৩। আপনি যদি রসুন, পেঁয়াজ, টিউলিপ ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জিক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার অ্যালোভেরা ব্যবহার না করাই উত্তম।
৪। যেকোনো অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ২ সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যালোভেরা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
৫। ১২ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং সদ্য মা হওয়া যেসব নারী সন্তানদের দুধপান করান তাদের অ্যালোভেরার জুস পান এড়িয়ে চলা উচিত।
৬। যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। অ্যালোভেরার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি কেউ অ্যালোভেরা জেল বা ল্যাটেক্সের সাপ্লিমেন্ট অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণ করে থাকেন, তার উচিত সাবধানে ডোজ অনুসরণ করা এবং অল্প সময়ের মধ্যে এর ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করুন।
কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারের পর অন্তত এক সপ্তাহ বিরতি নেয়া শ্রেয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং গুণমান নিশ্চিত করতে সর্বদা পরিচিত ও নামী ব্র্যান্ড দেখে সাপ্লিমেন্ট কেনা জরুরি।
৭। নিম্নলিখিত শারীরিক জটিলতা থাকলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা উচিত না-
- হেমারোয়েড (hemorrhoids) বা অর্শ্বরোগ
- কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা
- রেনাল ডিজঅর্ডার (renal disorder)
- হৃদযন্ত্রের জটিলতা (cardiac condition)
- Crohn’s disease
- আলসারেটিভ কোলাইটিস (ulcerative colitis)
- intestinal obstruction বা অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা
৮। অ্যালোভেরার অন্যান্য সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে-
- কিডনির সমস্যা
- প্রস্রাবে রক্ত
- পটাসিয়াম হ্রাস পাওয়া
- পেশীর দূর্বলতা
- বমি বমি ভাব বা পেট ব্যথা
- ইলেক্ট্রোলাইট (electrolyte) ভারসাম্যহীনতা
৯। আপনি যদি নিম্নলিখিত ঔষধগুলো সেবন করে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত অ্যালোভেরা ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা-
- Diuretics বা মূত্রবর্ধক পিল
- ভেষজ সাপ্লিমেন্ট
- কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroids)
- ডাইগোক্সিন (digoxin) জাতীয় ঔষধ
- ওয়ারফারিন (warfarin)
- ল্যাক্সেটিভ স্টিমুলেন্ট
- ডায়াবেটিসের ঔষধ
- Anticoagulants
১০। অ্যালোভেরা জুস কেনার আগে ১০০% বিশুদ্ধ এবং অরগ্যানিক পদ্ধতিতে তৈরি কিনা তা দেখে নিন।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যালোভেরার গুরুত্ব
কমপক্ষে ৬০০০ বছর ধরে অ্যালোভেরা এর নিরাময়যোগ্য গুণাবলী এবং ভেষজ পুষ্টিগুণের জন্য বহুলাংশে প্রচলিত হয়ে আসছে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি এন্ড ইন্টেগ্রেটিভ হেলথ (National Center for Complementary and Integrative Health) বা এনসিসিআইএইচ (NCCIH) এর মতে, প্রাচীনকালে অ্যালোভেরা “অমরত্বের উদ্ভিদ” হিসাবে পরিচিত ছিল এবং মিশরীয় ফারাওদের কাছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অন্যতম উপহার হিসাবে উপস্থাপন করা হত।
পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের পাশাপাশি চীনা, মেক্সিকান, উত্তর আমেরিকানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রূপচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে এই অ্যালোভেরা। প্রাচীন ভারতবর্ষের আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে বদহজম থেকে নিরাময়, ক্ষত উপশম, চুল পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে অন্যতম ছিলো এই অ্যালোভেরা, যার ধারাবাহিকতা বর্তমানেও জারি রয়েছে।
কালের আবর্তনে অ্যালোভেরার নানাবিধ গুণাবলী আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে এর সাথে এসে জুড়েছে নানান উপাধিও, যার মাঝে burn plant বা পোড়া গাছ, lily of the desert বা মরুভূমির লিলি ইত্যাদি অন্যতম।
অ্যালোভেরার রূপভেদ
উদ্ভিদ থেকে সতেজ অ্যালোভেরা নির্যাস সংগ্রহের পাশাপাশি অ্যালোভেরা নিম্নোক্ত উপায়েও পাওয়া যায়ঃ
- ক্যাপসুল (সাপ্লিমেন্ট)
- কৃত্রিম জেল
- তেল
- লোশন
- খাবার জুস
- পাউডার
অ্যালোভেরার উপকারিতা নিয়ে শেষ কথা
অ্যালোভেরার উপকারিতা ও বহুমূখী ব্যবহার যে শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করছে তা না, বরং ধীরে ধীরে এটি অর্থনৈতিকভাবে একটি সমৃদ্ধ শিল্পেও পরিণত হচ্ছে।
আমাদের সকলের উচিত স্বল্প পরিসরে হলেও অ্যালোভেরার চাষ করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর ব্যবহার নিশ্চিত করা।