এনজিওপ্লাস্টি কি, এনজিওপ্লাস্টি কত ধরনের | Angioplasty in Bangla

এনজিওপ্লাস্টি কী

এনজিওপ্লাস্টি কি : এনজিওপ্লাস্টি যা বেলুন এনজিওপ্লাস্টি এবং পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সলুমিনাল এনজিওপ্লাস্টি নামেও পরিচিত, এমন একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি যা সাধারণত হার্টের সংকীর্ণ, রক্ত চলাচলে বাধাযুক্ত ধমনী বা শিরা প্রশস্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

হৃদপিণ্ড প্রতিনিয়ত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত দানের সারা দেহে পাম্প করে। এবং অপরদিকে সারা দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত ফুসফুসে প্রেরণ করে। কিন্তু কোন কারণে এ রক্ত চলাচল বিঘ্ন হতে পারে। ধমনীতে স্নেহ বা বিভিন্ন কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থের জন্য সংকীর্ণ হতে পারে। যা রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এবং পরবর্তীতে যা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টিও করতে পারে। এর থেকে বিভিন্ন ধরনের হৃদপিন্ডের সমস্যাও হতে পারে। যা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এনজিওপ্লাস্টি।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় এনজিওপ্লাস্টি কি, এনজিওপ্লাস্টি কয় ধরনের, এনজিওপ্লাস্টি কিভাবে করা হয়, এবং এনজিওপ্লাস্টির উপকারিতা ও ঝুঁকি নিয়ে।

এনজিওপ্লাস্টি কি? এনজিওপ্লাস্টি কাকে বলে

বুকে ব্যথা, হার্ট ফেইলিওর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে এনজিওপ্লাস্টি। 1977 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি কার্ডিওলজিস্ট ড. অ্যান্ডস গ্রয়েনজীগ (Dr. Andreas Gruentzig) সর্বপ্রথম এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেন।

মূলত, এনজিওপ্লাস্টি হল বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃদপিন্ডের সংকীর্ণ ধমনীর প্রাচীর কে প্রশস্ত করার প্রক্রিয়া।  এনজিও মানে রক্ত বাহিকা প্লাস্টি মানে পুনর্নির্মাণ। এনজিওপ্লাস্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীর ভিতর দিয়ে হৃদপিন্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দেহকে সচল রাখা সাহায্য করে।

এনজিওপ্লাস্টি কত প্রকার | Types of Angioplasty

এনজিওপ্লাস্টি উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত রক্ত জমাট বাঁধার কারণে সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া ধমনীর প্রাচীরকে চওড়া করা। যাতে করে আবার পূর্বের ন্যায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহ অক্ষুন্ন থাকে। এনজিওপ্লাস্টি ধরন এবং অবস্থান অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. বেলুন এনজিওপ্লাস্টি | Ballon angioplasty

এক্ষেত্রে একটি বেলুন কে টিউব বা ছোট নলের মাধ্যমে ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়।এবং পরবর্তী তে আস্তে আস্তে বেলুনটিকে ফুলিয়ে ধমনীর প্রাচীর সংলগ্ন করা হয়।ফলে এই বেলন িকোলেস্টেরলের বিন্দুগুলো কে ভেঙে ফেলে।কিন্ত ধমনীকে খোলা রাখতে সেখানে প্রায় একটি সেন্ট (প্রসারণ যোগ্য ধাতব ক্ষুদ্র যন্ত্র) স্থাপন করতে হয়।

২. লেজার এনজিওপ্লাস্টি | Lesser angioplasty

এটিও বেলন এনজিওপ্লাস্টি এর মতই। কিন্তু এখানে বেলুন এর পরিবর্তে লেজার ব্যবহার করা হয়। এই লেজার রশ্মি করনারি ধমনীতে (হৃৎপিন্ডে অক্সিজেন যুক্ত চলাচল কারী ধমনী) কোলেস্টেরল যুক্ত কোষকে ধ্বংস করে এবং গ্যাসীয় কণায় বাষ্পীভূত করে।

৩. করোনারি অ্যাথেরেকটমি | Coronary atherectomy

এটিও এনজিওপ্লাস্টির মতো একটি প্রযুক্তি তবে এক্ষেত্রে ধমনি-প্রাচীরের প্লাককে বেলুনের সাহায্যে চেপে লুমেন প্রশস্ত করার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্র, যেমন ক্ষুদ্র ঘূর্ণী ব্লেড, ড্রিল, বেলুন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

৪/ করোনারি স্টেনটিং | Coronary stenting

স্টেন্ট হচ্ছে ক্ষুদ্র কিন্তু প্রসারণযোগ্য, ধাতব যন্ত্র যা এনজিওপ্লাস্টি সম্পন্ন হলে ক্যাথেটারের সাহায্যে সংকীর্ণ ধমনী তে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। ধমনীর প্রাচীর যেন আবারও সংকীর্ণ না হতে পারে সে কারণে স্টেন্ট-কে সেখানেই রেখে দেয়া হয়।

অর্থাৎ যাদের করোনারি ধর্মনি বেশ নাজুক না নরম তাদের ক্ষেত্রে স্টেন্ট অত্যন্ত উপযোগী ।

কখন এনজিওপ্লাস্টি করা হয়?

যখন ধারণা করা হয় রোগীর রক্তনালিতে ব্লকজনিত সমস্যা থাকতে পারে, তখন এনজিওগ্রাম (angiogram) করা হয়। তার ঝুঁকির বিষয় যদি থাকে, যেমন রোগী যদি ধূমপান করে, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, ডায়াবেটিস থাকে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে, পরিবারে যদি তার হার্টের সমস্যা থাকে, তাদের দেখা যায় কমবেশি হার্টের সমস্যার আশঙ্কা বেশি হয়।

এনজিওপ্লাস্টি কয় ধরনের

ইকোকার্ডিওগ্রাম করার পর যদি হার্টে পরিবর্তন পাওয়া যায় বা ইটিটি (ETT) পরীক্ষার মাধ্যমে যদি বোঝা যায় হার্টের রক্তনালিতে ব্লক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে এনজিওগ্রাম করা হয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে রক্তনালিতে ব্লক রয়েছে কি না।

ব্লক থাকলে কত শতাংশ ব্লক, কয়টা রক্তনালিতে ব্লক রয়েছে—এগুলো নিশ্চিত হওয়ার জন্য এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করে নিশ্চিত হওয়ার পর এনজিওপ্লাস্টি সার্জারী করা হয়।

এনজিওপ্লাস্টির উপকারিতা

করোনারি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান রোগ সৃষ্টি হয় করোনারি ধমনীতে। ধমনির ভিতর ব্লক সৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন যুক্ত রক্ত হ্রদ পেশিতে সংবহিত হতে পারে না।

ফলে হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। মাঝে মাঝে উচ্চ রক্ত চাপ ও দেখা দেয়। এমন মারাত্মক অবস্থা মোকাবেলায় এনজিওপাস্টি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এনজিওপ্লাস্টি ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনী থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ বা হ্রাস করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা উপশম করতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমিয়ে জীবন রক্ষায় অবদান রাখে।

যেহেতু বুক উন্মুক্ত (ওপেন হার্ট সার্জারী – open heart surgery) করতে হয় না সেহেতু কষ্ট, দীর্ঘকালীন সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র এক থেকে কয়েক ঘণ্টায় জীবন রক্ষাকারী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এবং কয়েক দিন পর থেকেই হালকা কাজকর্ম করা সম্ভব।

সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না।কিন্ত অনেকে আছে যাৱা বুকের অসুখে ভুগছেন, কিংবা এনজিওগ্রামের সময় রঞ্জকের বা রঙ এর প্রতি অ্যালার্জি দেখা দেয় আবার যাঁদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে।

এনজিওপ্লাস্টির ঝুঁকি | Angioplasty Risks

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এনজিওপ্লস্টির তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি  ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার শুরুতে, বিশেষত স্টেন্টিং করার সময় ২% রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

আবার বেলুন ছিড়ে কিংবা স্টেট চুপসে যেতে পারে। রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। ক্যাথেটার প্রবেশে সময় ধমনি ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এনজিওপ্লাস্টি করার পর রোগীর বিপদের সম্ভাবনা থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে হার্টে রিং লাগানো অংশটিতে রক্ত জমাট বাধে এবং জমাটবদ্ধ রক্ত ছুটে গিয়ে মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালিকে রুদ্ধ করে স্ট্রোক হতে পারে। আবার হার্টের রিং-এর ভিতরে কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যে নতুন করে অ্যাথেরোমা সৃষ্টি হতে পারে।

এনজিওপ্লাস্টি নিয়ে শেষ কথা

আশা করি আমাদের আলোচনা থেকে এনজিওপ্লাস্টি কি, কয় ধরনের, Angioplasty’র ঝুঁকি, এনজিওপ্লাস্টি কিভাবে করা হয় সেসব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এনজিওপ্লাস্টি নিয়ে যদি এখনো কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তবে, আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

2 thoughts on “এনজিওপ্লাস্টি কি, এনজিওপ্লাস্টি কত ধরনের | Angioplasty in Bangla”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top