অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবারে সাধারণত কয়টি অংশ থাকে?

অপটিক্যাল ফাইবার

অপটিক্যাল ফাইবার কি / কাকে বলে : অপটিক্যাল ফাইবার হলো একটি নমনীয়, স্বচ্ছ ফাইবার যা মানুষের চুলের চেয়ে কিছুটা পুরু ব্যাসের গ্লাস বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়।

পৃথিবীর একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা কারো পাঠানো কোনো মেসেজ মুহূর্তের ভিতর কিভাবে পেয়ে যান! ভেবেছেন কখনো? গুগল ব্রাউজ করছেন আপনার রুমের বিছানায় শুয়ে। কিন্তু গুগল থেকে আপনার কাছে সব তথ্য আসছে কিভাবে? একটি মাত্র ট্যাপ করেই ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্কে প্রবেশ করছেন মুহূর্তেই। তাই বা কি করে সম্ভব হচ্ছে? জানতে ইচ্ছে করেনি কখনো? এক কথায় বলি যদি, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর একটিই, অপটিক্যাল ফাইবার (optical fiber)।

আমাদের আজকের আলোচনা এই বিস্ময়কর বস্তু অপটিক্যাল ফাইবার যেখানে, আমরা অপটিক্যাল ফাইবার কি, অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত কয়টি অংশ থাকে, অপটিক্যাল ফাইবার এর ব্যবহার সমূহ, কিভাবে কাজ করে, optical fiber তৈরির ইতিহাস, এর সুবিধা, অসুবিধা, অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আমরা বিস্তারিত জেনে নিবো ইন-শা-আল্লাহ।

অপটিক্যাল ফাইবার কি  | What is Optical Fiber?

অপটিক্যাল ফাইবার একটি টেকনোলজি, যার মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা হয় আলোর রূপে। আর এই আলো চলাচল করে অত্যন্ত সরু তন্তুর মধ্যে দিয়ে। কখনো কখনো একে ফাইবার অপটিক (fiber optic) ও বলা হয়। 

এই অপটিক্যাল ফাইবার মাটির নিচে, এমনকি সমুদ্রের নিচে দিয়েও তথ্য বহন করে নিয়ে যেতে পারে। অনেকটা বাংলা গানের সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হওয়ার মতো। তবে তার থেকেও বেশি পথ পাড়ি দেয় অপটিক্যাল ফাইবার। 

অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির ইতিহাস | History behind optical fiber

একটি গল্প বলি। গল্পটা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের। তখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তথ্য আদান প্রদান করাটা ছিলো সময় সাপেক্ষ। আবার একসাথে অনেক তথ্য পাঠানো ও যেতোনা। বিজ্ঞানীরা দেখলেন, এতো মহা বিপদ। কি করা যায়? 

তাদের মনে হলো, আচ্ছা, আলোর মাধ্যমে যদি তথ্য পাঠানো যায়, তাহলে কেমন হয়? কারণ আলো তো অনেক দ্রুত চলাচল করতে পারে। কিন্তু, আলোকে বন্দি করা যায় কিভাবে?

তারা ভাবতে লাগলেন, পানির পাইপ দিয়ে পানি চলাচল করে। তাহলে আলোকে কি এমন কোনো পাইপের মধ্যে দিয়ে চলাচল করানো যায়? 

তাদের চিন্তা ভাবনা শুরু হলো কাচ নিয়ে। তারা দেখলেন, ঝর্ণা আলোকিত করার সময় কিছু আলো পানির ভেতর আটকে যায়! আবার আলোকে ইচ্ছেমত পথ বাঁকানো ও যায়! 

শুরু হলো পরীক্ষা নিরীক্ষা। দেখা গেলো আলোকে কাচের মধ্যে দিয়ে চালনা করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা তো মহা খুশি। কিন্তু, প্রশ্ন উঠলো, কাচের মতো এতো ভঙ্গুর একটা বস্তু নিয়ে কাজ করব কি করে? কাচের রড তো সহজেই ভেঙে যাবে। 

তখন ঠিক করা হলো, কাচের রড এর বদলে কাচের তন্তু ব্যবহার করা হবে। কারণ এই তন্তু কোনো রকম ক্ষতি করা ছাড়াই বাঁকানো যাবে। ব্যবহার করাও সহজ হবে। শুরু হলো গলিত কাচ দিয়ে অত্যন্ত সরু তন্তু তৈরি। চুলের চেয়েও সরু। 

লরেঞ্চ কার্টিস এর উদ্ভাবন:

কিন্তু নতুন সমস্যার উদয় হলো এবার। বায়ুমণ্ডলে আলোর একটি অংশ লস হচ্ছে। আবার, কিছুদূর যেতে না যেতেই, আলোর সংকেত কমে একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। এর সমাধান প্রথম যিনি বের করলেন, তিনি তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে গবেষণা করছিলেন। তার নাম লরেঞ্চ কার্টিস। 

আরো পড়ুন:  ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? Virtual Reality কিভাবে কাজ করে? 

প্রথমে আলোর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য কাচের তন্তুর ওপর একটি উচ্চ প্রতিফলক ব্যবহার হতো। কার্টিস এই প্রতিফলক পাল্টে ব্যবহার করেন আরো একটি কাচের আবরণ। যার প্রতিসরাঙ্ক ভেতরের কাচের চেয়ে কম। তাতে আলোর লস অনেকটা কমলেও তেমন কোনো সাড়া জাগেনি। কারণ তখনও একই সমস্যা রয়েই গেলো। 

অপটিক্যাল ফাইবার তৈরিতে আমেরিকান গবেষক কাও এর অবদান:

এবার এলেন আমেরিকান এক গবেষক কাও। তিনি বললেন, আলোর এই লস কাচের কারণে হচ্ছেনা। হচ্ছে কাচের সাথে মিশ্রিত অন্য বস্তুর জন্য। অর্থ্যাৎ, কাচ হতে হবে একেবারেই বিশুদ্ধ। এবারে সমস্যার সমাধান পাওয়া গেলো। অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি তে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে কাও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন। এভাবেই শুরু হলো পুরোদমে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার। 

অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত কয়টি অংশ থাকে | অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠন

অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত ৩ টি অংশ থাকে :

  1. কোর
  2. ক্ল্যাডিং
  3. প্লাস্টিক কোটিং
অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠন, অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত কয়টি অংশ থাকে
অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠন ও বিভিন্ন অংশ

সরু তন্তু, যার মধ্যে দিয়ে আলো চলাচল করে, সেটিকে বলা হয় কোর (core). কোর তৈরি হয় নমনীয়, স্বচ্ছ এবং একেবারে বিশুদ্ধ কাচ তন্তু দিয়ে। কখনো আবার ব্যবহার হয় প্লাস্টিক। 

স্বল্প-তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত (infrared) আলোর জন্য কখনও কখনও ফ্লুরোজিরকোনাইট (fluorozirconate), ফ্লুরোঅ্যালুমিনেট (fluoroaluminate), এবং ক্যালকোজেনাইড (chalcogenide) কাচ ব্যবহার করা হয়। (তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)

কোর এর বাইরে আরো একটি কাচের আবরণ থাকে, যা মূলত আলোকে কোর এর ভিতরেই সীমাবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। এর নাম হলো ক্ল্যাডিং (cladding). 

এবার এই পুরো গঠনটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আরো একটি প্লাস্টিক কোটিং (Plastic Coating) এর আবরণ দেয়া হয়। 

এভাবে তৈরি হলো অপটিক্যাল ফাইবারের একটি মাত্র strand. এমন আরো অনেক গুলো strand মিলিয়ে তৈরি করা হয় অপটিক্যাল ফাইবার।

একেকটি strand মানুষের চুলের মতো চিকন। এবার একটি ফাইবার কে অন্য একটি ফাইবার এর সাথে যুক্ত করা হয় optical fiber connector এর মাধ্যমে । আর এভাবেই এক তন্তুর শেষ প্রান্ত থেকে অন্যটির প্রথম প্রান্তে আলো চলাচল করে। 

অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার | Classification of optical fiber?

এবার আসা যাক অপটিক্যাল ফাইবার এর শ্রেণীবিন্যাস এ। একে অবশ্য তিন রকমে আমরা ভাগ করতে পারি। 

আলোর প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে ভাগ করা হলে অপটিক্যাল ফাইবার দুই প্রকার। 

  • Uniform index fiber : যার প্রতিসরাঙ্ক সব সময় একই রকম থাকে, কখনো এর মানের পরিবর্তন হয়না। 
  • Graded index fiber : এই ফাইবার এর ক্ষেত্রে এর প্রতিসরাঙ্কের মান দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে। 

আবার যদি কি ধরণের metarial ব্যবহার করে কোর তন্তু তৈরি করা হয়েছে তা ধরা হয়, সেক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবার আরো দুই প্রকার। 

  • plastic optical fiber : এক্ষেত্রে কোর তন্তু হিসেবে প্লাস্টিক বা পলিমিথাইলমিথাক্রিলেট ব্যবহার হয়। 
  • Glass optical fiber : যেখানে কোর তন্তু হিসেবে ব্যবহার হয় কাচ। 

আরো এক ভাবে ভাগ করা যায় অপটিক্যাল ফাইবারকে। 

  • Single mode fiber : এখানে শুধুমাত্র এক ধরণের আলোক উৎস ব্যবহার হয়। সাধারণত লেজার লাইট ব্যবহার করা হয় আলোক উৎস হিসেবে। এই ধরণের ফাইবার এর সুবিধা হলো, এরা অনেক অনেক দূরত্ব পর্যন্ত তথ্য সরবরাহ করতে পারে। তবে transmission power তুলনামূলক কম থাকে। 
  • Multimode fiber : এই ধরণের ফাইবার একেবারেই single mode fiber এর উল্টো। এখানে একাধিক ধরণের আলোক উৎস ব্যবহার করা যায়। যা মূলত LED লাইট। যদিও এর তথ্য transmission power অত্যন্ত high, এটি কিন্তু বেশি দূর পর্যন্ত তথ্য বহন করতে পারেনা। 

এইগুলোই হলো অপটিক্যাল ফাইবার এর শ্রেণীবিন্যাস।

এবার আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন, অপটিক্যাল ফাইবার কাজ করে কিভাবে! 

অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে | How does optical fiber work?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে কিছুক্ষণের জন্য নবম দশম শ্রেণীতে চলে যেতে হবে। মনে করার চেষ্টা করতে হবে আলোর প্রতিসরণ কেমন করে হয়। 

আরো পড়ুন:  ইন্টারনেট কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি | ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

মরুভূমিতে মরিচীকা হয় কি করে, তা পড়েছি না সবাই? তবে তো পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বিষয়ে সবাই কম বেশি জানি। তবুও আমি একটু অল্প করে মনে করিয়ে দেই।

আলো হালকা থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে আলোর পথ বেঁকে যায়। এই আলোকে যদি ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় কোণে ফেলা হয়, তবে সেই আলো প্রতিসরিত হয়ে বের হয়ে যায় না। বরং প্রতিফলিত হয়ে আগের মাধ্যমেই ফিরে আসে। এটিই হলো পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। 

আর এই মূলনীতি কে বাস্তবে কাজে লাগিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করা হয়েছে। এখানে কাচের তন্তুর ভেতরে আলোকে ৪২° এর ও কম কোণে ফেলা হয়। তন্তুর বাহিরে থাকা কাচের আবরণ যেটি ব্যবহার হয়, তার প্রতিসরাঙ্ক তুলনামূলক কম হওয়ায়, আলো কাচের তন্তুর ভিতরেই বারবার প্রতিফলিত হতে থাকে। এর বাইরে যেতে পারেনা। এভাবে বারবার পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে আলো চলতে থাকে। 

এই আলো কিছু মাইল যাওয়ার পর তার সঙ্কেত কমে যায়। তখন এই সঙ্কেত কে পুনরায় বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কিছু দূরত্ব পর পর ব্যবহার হয় repeater বা amplifier. পূর্বে repeater ব্যবহার হলেও এখন আসলে amplifier ই ব্যবহার হয়। আলো যখন এই amplifier এর মধ্যে ঢোকে, তার সঙ্কেত খুবই কম থাকে। কিন্তু বের হওয়ার সময় এর সঙ্কেত কয়েক গুণ বেড়ে যায়। 

তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, পানির নিচে এই amplifier শক্তি পায় কোথা থেকে যা দিয়ে আলোর সঙ্কেত বেড়ে যায়? এর উত্তর হলো, অপটিক্যাল ফাইবার এর ভেতরে cladding material এর উপরে একটি পাতলা তামার আবরণ দেয়া হয়, যেখান থেকে amplifier এনার্জি গ্রহণ করে আর আলোর সঙ্কেত কে বাড়িয়ে দেয়। 

অপটিক্যাল ফাইবার তথ্য স্থানান্তর করে কিভাবে?

এবার ব্যাপার হলো, সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আমার ফোন থেকে গুগলের সাথে তথ্য কি করে কানেক্ট হয়? কিংবা, আমেরিকায় থাকা বন্ধুটির কাছে আমার পাঠানো মেসেজ যায় কি করে? আমার ফোনের সাথে তো কোনো অপটিক্যাল ফাইবার লাগানো নেই। 

একটু বুঝিয়ে বলি বিষয়টি। মনে করুন, আপনি আপনার বন্ধুটিকে hello লিখে একটি মেসেজ পাঠালেন। এই মেসেজ প্রথমে equivalent binary code এ পরিবর্তন হবে, যা শুধু 0 এবং 1 দ্বারা তৈরি। এই কোড টি electro magnetic wave এর মাধ্যমে local cell tower এ পৌঁছে যায়।

অপটিক্যাল ফাইবার কিসের তৈরি

এরপর electro magnetic wave এর frequency ওই টাওয়ারে light pulse তৈরি করে। এই pulse এবার অপটিক্যাল ফাইবার এর মধ্যে দিয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে যায় আমেরিকায় থাকা আপনার বন্ধুর নিকটস্থ কোনো cell tower এ ।সেখান থেকে আবার electro magnetic wave এর মাধ্যমে পৌঁছে যায় তার ফোনে। 

গুগলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। পুরো পৃথিবী জুড়ে এর অপটিক্যাল ফাইবার এর বিস্তার। তাইতো আমরা বলি যে, আমরা গ্লোবাল ভিলেজ এ বাস করি। 

ওহ, আরো একটি কথা বলে নেই, তা হলো, প্রতিটা cell tower এই কিন্তু photoelectric cell থাকে। যা আলোকে ইলেকট্রিক সিগন্যাল এ রূপান্তর করতে পারে। এরপরই ওই সিগন্যাল আপনার আমার ফোনে তথ্যটি পাঠায়। 

এখন আবার মনে হতে পারে, আমরা কেনো অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করবো। সাধারণ ইলেকট্রিক তার দিয়েই তো কাজ হচ্ছে। আসুন, সেটিও জেনে নেই। 

অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রয়োজনীয়তা | Importance of optical fiber

একেবারে কমন একটি কারণ দিয়ে শুরু করি। ধরুন, প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জোরে জোরে বাজ পড়ছে। তখন সবার আগে কি ভাবেন আপনি? Wifi লাইন টা ঠিক আছে তো? Router টা আবার নষ্ট হয়ে গেলোনাতো! তাইনা? 

আরো পড়ুন:  ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? Virtual Reality কিভাবে কাজ করে? 

কেনো এমনটা ভাবেন? কারণ আপনার router এর লাইন তো সাধারণ ইলেকট্রিক তারের তৈরি। বাজ পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার নেট স্পিড ও কমে যায়। কিন্তু, যদি এক্ষেত্রে সাধারণ তার এর বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার হতো, তাহলে কিন্তু এই চিন্তা করতেই হতোনা। তার নষ্ট ও হতোনা। 

আরো কারণ আছে। এই যেমন ধরুন, এক দেশ থেকে অন্য দেশে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ তার ব্যবহার করা অসম্ভব। কারণ মাটির নিচে এবং সমুদ্রের নিচে এই তার বেশিদিন ঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

আবার যেহেতু, অপটিক্যাল ফাইবারে metal wire বা ধাতুর তার ব্যবহার হয় না, তাই এর মধ্যে দিয়ে সিগন্যাল লস কম হয়। অর্থ্যাৎ, নিরবচ্ছিন্ন সিগন্যাল পাওয়া যায়।

অপটিক্যাল ফাইবার এর আরো একটি সুবিধা হচ্ছে, এর মধ্যে কোনো রকমের electromagnetic enterference হয় না।

আবার বাইরে থেকে কোনও ডেটা বা সিগন্যাল ও এর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনা। তাই privacy নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। End to end encryption হয় ডেটার।

সাথে তো high bandwidth আছেই। High bandwidth বলতে বোঝায়, ডাটা ট্রান্সফার হয় খুব দ্রুত। অনেক বেশি দূরত্বেও খুব কম সময়ে transfer করা সম্ভব হয়।

আবার স্থায়ী ভাবে এই কানেকশন ব্যবহার করা যায় বলে খরচ ও কমে যায় অনেক। সাধারণ তার কিন্তু কিছুদিন পর পরই নষ্ট হয়ে যায় আর তখন ঠিক করতেও প্রচুর অর্থ খরচ হয়।

এগুলোই হলো মূল কিছু কারণ সাধারণ তারের বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করার। 

অপটিক্যাল ফাইবার এর ব্যবহার | Uses of optical fiber

এখন দেখা যাক, অপটিক্যাল ফাইবার কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়। 

আপনি কি জানেন, অপটিক্যাল ফাইবার সর্বপ্রথম কি কাজে ব্যবহার হয়েছিলো? শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। অপটিক্যাল ফাইবার সর্বপ্রথম ব্যবহার হয় চিকিৎসা ক্ষেত্রে, endoscopy তে। বুঝতেই পারছেন, কতটা উন্নত প্রযুক্তি এটি। যা দিয়ে সর্বপ্রথম imaging করা হয়েছিলো। দেখা গিয়েছিলো শরীরের ভেতরের অবস্থা! 

এক কথায় বলতে গেলে, তথ্য স্থানান্তর, imaging, আলোক উৎস, এই সব ক্ষেত্রেই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার হয়।

অপটিক্যাল ফাইবার এর আরো কিছু ব্যবহার রয়েছে। 

  • Sensor হিসেবে ব্যবহার হয়, যা দ্বারা তাপমাত্রা, চাপ সহ আরো অনেক কিছু পরিমাপ করা যায়। 
  • Light source হিসেবে ফাইবার লেজার এ ব্যবহার হয়। 
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরু ছিদ্র দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ভেতরের অংশকে আলোকিত ও imaging করা হয়। 
  • সাবমেরিন ক্যাবলে ব্যবহার হয়। 
  • CCTV এবং emergency service এর ক্ষেত্রেও এই ফাইবার ব্যবহার হয়। 
  • Telecommunication এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এ ও ব্যবহার হয়। 
  • ইন্টারনেট, টেলিফোন, লাইটিং ও ডেকোরেশনে ব্যবহার হয়। 

Google, AT&T, orange, Verizon এরা কিন্তু তাদের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রেখেছে পুরো বিশ্ব জুড়ে। এদের সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর কারণেই আমরা এতো সহজে এদের ব্যবহার করতে পারি। 

অপটিক্যাল ফাইবারের অপকারিতা | Disadvantages of optical fiber

অপটিক্যাল ফাইবার (optical fiber) এর অনেক অনেক প্রয়োজনীয়তা তো আমরা দেখলাম। এবার একটু খারাপ দিক গুলো ও জেনে নেয়া প্রয়োজন। 

  • অপটিক্যাল ফাইবার স্থায়ী প্রজেক্ট এর জন্য ব্যবহার করতে হয়
  • এর wire গুলো joining করা বেশ জটিল 
  • Installation এ ব্যয় হয় অনেক 
  • খুবই সাবধানতার সাথে handle করতে হয় 
  • এই প্রযুক্তি মাটির উপরে বা বায়ু স্তরে ব্যবহার করা যায়না 
  • হাই পাওয়ার লাইট সোর্স ব্যবহার করতে হয়, যা ব্যয়বহুল 
  • Specialist ছাড়া installation করা হলে তা কিছুদিন পরেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে 

অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে শেষ কথা

সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ, দুটো দিকই রয়েছে। তবে ভালো দিক গুলো যেখানে বেশি কার্যকর ও প্রয়োজনীয়, সেখানে খারাপ দিক গুলো তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনা। তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের ইন্টারনেট এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। 

এই সময় সকল দিক বিবেচনায় অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রয়োজনীয়তাই বেশি। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন সব কাজেই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার সহজলভ্য হবে। ব্যয়ও তখন কমে আসবে। আমরাও আলোর গতিতে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিচরণ করতে পারবো। 

আশা করি, অপটিক্যাল ফাইবার কি, কিভাবে কাজ করে এবং অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য তুলে ধরতে পেরেছে। এখনো যদি আপনার অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে কোন কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করতে পারেন।

2 thoughts on “অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবারে সাধারণত কয়টি অংশ থাকে?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top