শারিরীক শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়; শক্তি আমাদের সৌরজগতের চালিকাশক্তি। কোন মানুষ কতটা কাজ করার ক্ষমতা রাখে সেটিও নির্ভর করে তার শারিরীক শক্তির উপর। অনেক সময় আমরা শক্তিহীনতায় ভুগি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার নিজের শক্তি কমে যাওয়ার কারণ এবং তার নিজের শারিরীক শক্তির পার্থক্য প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেননা, ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
আবার অনেকে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কিংবা এনার্জি ফেরৎ পেতে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টারি মেডিসিন নিয়ে থাকেন, যেগুলোর বেশিরভাগ বিপরীত প্রতিক্রিয়াই দেখায়।
শক্তি বাড়ানোর জন্য সাপ্লিমেন্ট না নিয়ে প্র্রাকৃতিকভাবে কিছু কাজ করা যেতে পারে, যা অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় প্রাকৃতিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়। তবে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আগে জানতে হবে কি কারণে আমার শক্তি কম বা কমে যাচ্ছে।
আপনি যদি নিজেকে নিয়ে অহংকার না করে নিজের সাথে সৎ থাকেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি জানেন কোন কোন বিষয়ে আপনার দূর্বলতা রয়েছে, যেগুলোতে আপনি আরো উন্নতি সাধন করতে পারেন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
শক্তি কমে যাওয়ার কারণ কী?
আমাদের জীবনে যেমন উন্থান-পতন আছে, ঠিক তেমনি অন্যান্য সবকিছুর মতো সময়ের সাথে শক্তির মাত্রাও বিদ্যমান। দিনের প্রতিটি মূহুর্তে আপনি সমান শক্তি পাবেননা। কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে যার কারণে আমাদের শক্তি কমে যেতে পারে, নিম্নে আমরা সে কারণগুলিই জেনে নেব।
১) ঘুমে ব্যাঘাত
সার্কেডিয়ার রিদম নামে ইংরেজিতে একটা টার্ম আছে। এটির মূল কাজ হলো জীবের ঘুম এবং জেগে থাকার মাঝে সমন্বয় সাধন করা এবং চক্রটি নিয়মিত করানো। অর্থাৎ আমরা কখন ঘুম দিবো কিংবা কখন জেগে উঠবো, কতক্ষণ ঘুমাবো এসব সার্কেডিয়ান রিদমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এখন ঘুম আমাদের অনেকেরেই অগ্রাধিকার লিস্টর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া ঘুমের আগে আগে খাওয়া, ঘুমের আগে ডিজিটাল স্ক্রিনে চোখ রাখা (মোবাইল ব্রাউজিং, টিভি বা ল্যাপটপ স্ক্রিনে চোখ রাখা ইত্যাদি), অস্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস, অধিক রাতে খাবার খাওয়া।
এসবকিছুই আমাদের সার্কেডিয়ান রিদমকে বাধাগ্রস্থ করে, আমাদের অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত ঘুম। ফলাফলস্বরূপ দিনের বেলায় কাজের সময় আমরা ঘুম ঘুম অনুভব এবং দূর্বলতা বোধ করি।
২) পানি কম পান করা :
আমরা অনেকেই জানিনা যে আমরা পর্যাপ্ত পানি পান করছি না। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মানুষ তা স্বীকার করতে চাই না। আপনি যদি এমন লোক খুঁজে পান যে কিনা প্রায়শই মাথাব্যাথা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে তাকেও যদি জিজ্ঞেস করেন নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কি না? তিনিও বলবেন যি, আমি তো প্রচুর পানি পান করি। যদিও তার মাথা ব্যাথার মূল কারণ সম্ভবত পানি কম পান করা!!
এইচ এইচ মিচেলের মতে, মস্তিষ্ক এবং হার্ট ৭৩% জল নিয়ে গঠিত। ফুসফুসগুলি প্রায় ৮৩%, পেশী ও কিডনিতে ৭৯%, ত্বকে ৬৪% এবং হাড় ৩১% জল দ্বারা গঠিত।
পানির বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শরীরে পানির গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। তাই শরীরে দূর্বলতা অনুভব করলে আমাদের প্রথমেই হাউড্রেশন লেভেল টেস্ট করা দরকার। তাছাড়া পানির গুণাগুণও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
৩) এক্সারসাইজ না করা :
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসে ল্যাপটপ বা মোবাইল হাতে নিয়েই সব কাজ করা যায়। তাই শারিরীক পরিম্রমের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু আমাদের শরীরে যে রক্ত এবং অন্যান্য তরল রয়েছে তাদের চলাচল প্রয়োজন।
মাত্র ৪০০ বছর আগের কথা চিন্তা করুন যখন মানুষ সারাদিন ক্লান্তিহীনভাবে যুদ্ধ করতো! তারা কিভাবে সারাদিন শক্তির যোগান পেত? একটাই উত্তর, যুদ্ধ না থাকলেও তারা শারিরীক পরিশ্রম বন্ধ করতো না।
আমাদের যদি শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজ করতে না হয় তবে আপনার এক্সাসাইজ করা জরুরী। শক্তি ক্ষয় করার মাধ্যমেই শক্তি অর্জন করা সম্ভব।
৪) অস্বাস্থ্যকর খাদ্য :
আমাদের ব্যস্ত জীবনে খাবার অর্ডার করার ঘটনা নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। অর্ডার করা খাবারের বেশিরভাগই ফাস্টফুড। বর্তমানে অনেকে বাসায়ও ফাস্টফুড রান্না করে খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এসব খাবার যত সুস্বাদুই হোক না কেন, আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিতে পারেনা। আপনি বলতে পারেন ফাস্টফুডে অনেক প্রোটিন এবং ক্যালরি থাকে। হ্যা আপনার সাথে একমত, কিন্তু এই প্রোটিনের বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর এবং খারাপ কোয়ালিটির প্রোটিন। বাজার থেকে কীটনাশক দেওয়া শাক-সবজিও শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরি চাহিদা মেটাতে পারেনা।
৫) অতিরিক্ত কাজ করা :
প্রতিটি জীব এবং বস্তুর কার্যক্ষমতা নির্দিষ্ট। একটি ৫০০ টন লোড নেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাকে যদি ৭০০ টন লোড বোঝাই করা হয়, তবে খুব দ্রুতই ট্রাকটিকে সার্ভিসিং এ নিতে হবে। মানুষও ব্যতিক্রম নয়, প্রতিনিয়ত নিজের ক্ষমতাকে চরম লেভেলে নিয়ে গেলে আপনি প্রতিনিয়ত দূর্বল হতে থাকবেন। অধিক চিন্তা এবং অধিক কাজ দুটোই মানসিক এবং শারীরিকভাবে দূর্বল করে ফেলে। আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম না করে মানসিক প্রেশার নেন এবং দূর্বলতা বোধ করতে থাকেন, তবে অবশ্যই ভেবে দেখুন আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন কি না!
কিভাবে শক্তি বৃদ্ধি করা যায়! শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়
এখন আমরা দূর্বল অনুভব করা কিংবা শক্তি কমে যাওয়ার মূল কারণগুলো জেনে গেছি, সুতরাং এখন আমরা এসব সমস্যার সাথে আরো প্রস্তুতি নিয়ে লড়াই করতে পারবো। চলুন কিছু কার্যকরী শক্তি বৃদ্ধির উপায় জেনে নেই।
১) পর্যাপ্ত ঘুমানো :
আমাদের সমাজে এখন আর ঘুমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। কিন্তু শক্তি সঞ্চয় করার একমাত্র কার্যকরী উপায় পর্যাপ্ত ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুমানোর জন্য একটা রুটিন করুন এবং নিয়মিত অনসিরণ করুন।
প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘন্টা ঘুমান, সাপ্তাহিক দিনগুলোতে ৮-৯ ঘন্টা ঘুমান। রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে অবশ্যই ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমানোর ২ঘন্টা আগে খাবার খেতে হবে এবং ঘুমানোর ৩০ মিনিট পূর্বে ডিজিটাল স্ক্রিণ থেকে চোখ সরিয়ে নিন।
২) পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি পান করার অভ্যাস করা খুবই সহজ বিষয়। বর্তমানে অনেক মোবাইল অ্যাপস রয়েছে যেগুলোতে সারাদিন একগ্লাস করে বিভিন্ন সময়ে পানি পান করার জন্য রিমাইন্ডার সিলেক্ট করা যায়।
প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে পানি পান করার একটি নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করুন এবং প্রতিদিন ৩-৪লিটার ( প্রায় ১গ্যালন ) পানি করুন।
৩) শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে এক্সারসাইজ করুন
শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়গুলোর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশল exercise করা। এক্সারসাইজ এমন কঠিন হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই যে জীম এ গিয়ে ভারোত্তলন করতে হবে। যদিও ভারোত্তলন এবং শক্ত ব্যায়াম আপনার শক্তি আরো বেশি বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে প্রতিদিন ১ঘন্টা হাটাও বেশ কার্যকরী হতে পারে। হাঁটার আরো একটি সুবিধা হলো সকালের ফ্রেশ বাতাস শরীরকে আরো বেশি প্রফুল্ল করতে পারে এবং ব্রিথিং সমস্যা থাকলে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪) শক্তি বৃদ্ধি করার উপায় – ‘ধ্যান’
অতিরিক্ত চিন্তা এবং কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে মেডিটেশন করুন। মেডিটেশন আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসকে উন্নত করে যা অতিরিক্ত কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করে। সাঁতার কিংবা দৌড়ের মতো কঠোর পরিশ্রমের প্রতিযোগিতায় তারাই ভাল করে যাদের শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত।
আপনার কাজ করার ক্ষমতা এবং শক্তি যদি বৃদ্ধি পায়, তবে আপনি আরো বেশি কাজ করতে পারবেন। তখন শারিরীক পরিশ্রমকে অতিরিক্ত মনে হবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেই ট্রাকের লোড নেওয়ার ক্ষমতা যদি ১০০০টন করা হয় এবং তার উপর আগের সেই ৭০০টন লোড বা তারও বেশি লোড বোঝাই করা হয় তারপরেও ট্রাকটি স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে।
তাই ভাল ঘুমের পাশাপাশি বিভিন্ন চিন্তা এবং কাজের প্রেশার কমাতে ধ্যান করুন এবং নিজের শক্তি বৃদ্ধি করুন।
শেষ কথা :
উপরে আমরা শক্তি কমে যাওয়ার কারণ এবং শারিরীক শক্তি বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। শক্তি বৃদ্ধি করার উপায় নিয়ে উল্লিখিত বিষয়গুলো কোনো একটি বা সবগুলো একসাথে শুরু করতে পারেন।
কিছুদিনের মধ্যেই আপনি নিজের উন্নতি দেখতে পারবেন। ‘শক্তি ক্ষয় শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করে’ কথাটির সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবেন। শারিরীকভাবে ফিট হলে আপনার পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোনো কাজে আরো বেশি আত্মবিশ্বাস পাবেন।
শক্তি কমে যাওয়া এবং শক্তিশালী হওয়া সবকিছুই আপনার নিজের উপরই নির্ভর করছে, আপনাকে অবশ্যই শারিরীক শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়গুলো চেষ্টা করতে হবে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
Thanks
প্রতিবর্তনের সাথে থাকার আমন্ত্রণ রইলো।