Linux vs Windows | লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা অসুবিধা

linux vs windows

linux vs windows : Linux শব্দটি হয়ত অনেকের কাছে সুপরিচিত, আবার অনেকেই হয়ত প্রথমবার নামটি শুনছেন। অপারেটিং সিস্টেম বলতে আমরা হয়তো অনেকে শুধু উন্ডাজকেই বুঝি।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের ব্যবহার্য দৈনন্দিন গৃহসজ্জার সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, অত্যাধুনিক কম্পিউটার, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর এমনকি বিভিন্ন সার্ভারেও লিনাক্স বহুল ব্যবহৃত একটি অপারেটিং সিস্টেম।

প্রাথমিকভাবে কেবল কিছু উৎসাহী ব্যক্তিই মূলত লিনাক্স ব্যবহার ও এর উন্নতিসাধন করতেন। এখন বড় বড় কর্পোরেশন যেমন ডেল, আইবিএম, সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স, হিউলেট-প্যাকার্ড, নভেলসহ আরও অনেক বড় কোম্পানি সার্ভারে ব্যবহারের জন্যে লিনাক্সকে বেছে নিয়েছে।

ডেস্কটপ বাজারেও লিনাক্সের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। লিনাক্স বিশেষজ্ঞ ও লিনাক্স সমর্থকদের মতে লিনাক্সের এই উত্থানের পেছনে কারণ লিনাক্স সস্তা, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে হয় না, অর্থাৎ এটি বিক্রেতা-অধীন নয়।’ (তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া)।

বর্তমানে ইন্টারনেট ডিভাইস ব্যবহারকারী সকলেই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই অনেকেই উইন্ডোজ থেকে ব্যবহার শুরু করার চিন্তা করছেন।

Linux নাকি windows! সিদ্ধান্ত নিতে যেন আপনার সুবিধা হয়, সেই প্রচেষ্টায় আমাদের আজকের আর্টিকেলে থাকছে Linux vs Windows বিষয়ক আলোচনা।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কি | What is Linux Operating System

আমরা সকলেই জানি, যেকোন কম্পিউটার এবং মোবাইল ডিভাইসের মধ্যমণি হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম, যা যেকোন সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে।

সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ (Windows), আইওএস (iOS) কিংবা ম্যাকওএস (MacOS) থেকে লিনাক্সও কিন্তু কম জনপ্রিয় নয়।

আরো পড়ুন:  সফটওয়্যার কি | সফটওয়্যার কিভাবে তৈরি করে

লিনাক্স এমন একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম (Open source operating system) যার মাধ্যমে আপনি সুলভমূল্যে বা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

শুধু তাই নয়, লিনাক্স হতে পারে আপনার সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বহিঃপ্রকাশের একটি সেরা মাধ্যম।

Advantages of linux operating system | লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা

Windows, iOS, macOS এর তুলনায় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে:

১। ওপেন লাইসেন্সড সিস্টেম (open licensed system)

লিনাক্সের সোর্স কোড (source code) এক্সেস করা যায় বলে একে নিজের মত করে মডিফাই বা কাস্টমাইজ করে নেয়া খুব সহজ এবং বৈধ। এ কারণে লিনাক্স একটি ওপেন লাইসেন্সড সিস্টেম বলে প্রযুক্তির জগতে খ্যাত, যে সুবিধাটি Windows এর ক্ষেত্রে পাওয়া বেশ মুশকিলই।

২। ডেভেলপার ফ্রেন্ডলি অপারেটিং সিস্টেম (developer friendly operating system)

যেহেতু এটি কাস্টমাইজের ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীন দক্ষতা ও মেধা ব্যবহারের সম্পূর্ণ সুযোগ রয়েছে, সেহেতু আপনি নিজে যেমন লিনাক্স মডিফাই করতে পারছেন, তেমনি আপনার মডিফাইড ভার্সনটিও সবার সাথে শেয়ার করতে পারছেন।

বিশেষ করে যারা কোডিং এ দক্ষ এবং নিজেদের প্রয়োজনে কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে চান, তাদের জন্য লিনাক্স সর্বোত্তম অপশন। তাই নিঃসন্দেহে লিনাক্স কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের কাছে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

৩। সহজে ইনস্টলযোগ্য

লিনাক্স ইন্সটল করা কোন আহামরি ব্যাপার নয়। আপনি যেকোন ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ (USB flash drive) বা সিডি থেকেই খুব সহজে লিনাক্স ইন্সটল করে চালাতে পারবেন। এমনকি সেক্ষেত্রে আপনার হার্ডড্রাইভে কোন প্রকার পরিবর্তনও আনতে হবেনা।

৪। বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য

লিনাক্সের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ বিনা খরচে ব্যবহার করা যায়। আপনি বলতে পারেন, উইন্ডোজও তো ফ্রিতেই ব্যবহার করছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি কি অফিসিয়াল লাইসেন্সড উইন্ডোজ ব্যবহার করছেন? অবশ্যই না। আপনার ফ্রি লাইসেন্সড উইন্ডোজটা কপি।

৫। তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত

বর্তমান বিশ্বে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার (malware) বা অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য ইন্টারনেট জগত আজ হুমকির পথে। বিশেষ করে বেশিরভাগ খারাপ কম্পিউটার ভাইরাসই Windows এ সহজে সংক্রমণযোগ্য।

আরো পড়ুন:  ল্যাপটপটি প্রথম অন/স্টার্ট কবে করা হয়েছিল? জানার সহজ উপায়

যেহেতু লিনাক্সে উইন্ডোজের কোন প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার সাপোর্ট করেনা, সেহেতু এটি ভাইরাস বা malware দ্বারা সংক্রমিত হবার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। সেজন্য লিনাক্স ব্যবহারকারীকে কোনপ্রকার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারও ইনস্টল করতে হয়না।

৬। যেকোন কম্পিউটারেই ব্যবহারযোগ্য

Windows কিংবা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম বিশেষত লো সিস্টেম স্পেসিফিকেশনের (low system specification) কম্পিউটারে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কষ্টসাধ্য।

কিন্তু পুরাতন মডেলের কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আধুনিক ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জামাদিতেও লিনাক্স ব্যবহার বেশ সহজ।

৭। তুলনামূলক দ্রুতগতিসম্পন্ন

কোন ডিভাইসে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটলে এর অপারেটিং সিস্টেমটি বেশ ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে আমরা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করি।

এই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো সেই অপারেটিং সিস্টেমে থাকা ভাইরাসগুলোর ডাটাবেস আপডেট করার মাধ্যমে ডিভাইসটিকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

এর ফলে অপারেটিং সিস্টেমের প্রচুর মেমরি ব্যবহৃত হয় এবং ডিভাইস আরো ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে Windows এর নাম সবাই একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য।

যেহেতু লিনাক্সে কোনরূপ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হয়না, তাই এর বেশিরভাগ মেমোরিই অক্ষত ও অব্যবহৃত থেকে যায়। ফলে Windows বা MacOS এর তুলনায় লিনাক্স বেশ দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে।

৮। তুখোড় কার্ম ক্ষমতা

Windows এবং iOS এর ক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাং করা, লকিং-আপ, রিস্টার্টিং/রিবুটিং কিংবা hard drive crash একটি সাধারণ সমস্যা। সেদিক থেকে লিনাক্স বেশ দক্ষ এবং স্থিতিশীল একটি অপারেটিং সিস্টেম।

এর অভ্যন্তরীণ জটিলতা এতই কম হয়ে থাকে যে আপনাকে কম্পিউটার রিস্টার্ট করে পুনরায় কাজ শুরু করার ঝামেলায় পড়তে হবেনা।

৯। আধুনিক ইন্টারনেট ব্রাউজারের সাথে মানানসই

একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় লিনাক্সে আপনি আপনার পছন্দসই যেকোন ওয়েব ব্রাউজার ইনস্টল এবং ব্যবহার করতে পারবেন-হোক সেটা গুগল ক্রোম বা ফায়ারফক্স।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের অসুবিধা | Disadvantages of Linux Operating System

Linux ব্যবহার বেশ সহজ এবং সুরক্ষিত হলেও এর রয়েছে লিনাক্সের বেশকিছু অসুবিধাও। সেগুলো নিম্নরূপ;

১। মাইক্রোসফট/অ্যাপলের আওতাভুক্ত সফটওয়্যার চালানোয় সীমাবদ্ধতা

মাইক্রোসফট বা অ্যাপলের মালিকানাধীন সফটওয়্যারগুলো সাধারণত লিনাক্সে ইনস্টল হয়না। সেক্ষেত্রে আপনাকে থার্ড পার্টি অ্যাপসের সাহায্য নিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম থাকার কারণে লিনাক্স ব্যবহার বেশ চ্যালেঞ্জিংই বটে।

আরো পড়ুন:  উইন্ডোজ ১০ অটো আপডেট বন্ধ করার উপায় কী?

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের সুযোগ সুবিধাগত কারণে মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার (Microsoft SQL server) ব্যবহার করে থাকেন, যা তুলনামূলকভাবে বেশ শক্তিশালী এবং কর্মদক্ষতার অধিকারী। Windows এর জন্য ডিজাইনকৃত এই সার্ভার লিনাক্সে চালানো সম্ভব না।

২। অপর্যাপ্ত  সাপোর্ট

লিনাক্সের প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশ কম থাকায় লিনাক্স সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে আপনার নিজেকেই মাথা খাটাতে হতে পারে। এখনো সেই পরিমাণ সাপোর্ট ফোরাম তৈরি হয়নি, যেখান থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।

৩। সময় সাপেক্ষ

আপনি যদি অন্য অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে লিনাক্স ব্যবহার শেখা আপনার জন্য বেশ সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কেননা windows এর মত লিনাক্স ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়।

লিনাক্সের অফিস সফটওয়্যার স্যুট (office software suite) হিসেবে ওপেন-অফিস (OpenOffice) ভালো একটি অপশন হলেও লিনাক্স ব্যবহারকারীকে এর আওতায় মাল্টিটাস্কিং এ বেশ ধৈর্য্যর পরিচয় দিতে হয়।

৪। গেমসের অভাব

তরুণ প্রজন্মের গেমস অ্যাডিক্টেডদের কাছে Windows বা iOS সর্বোত্তম অপশন। কেননা লিনাক্স ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি জরিপে জানা গিয়েছে যে, বেশিরভাগ আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় গেমসই লিনাক্সে সাপোর্ট করেনা বা ইনস্টল হয়না।

লিনাক্স বনাম উইন্ডোজ- কোনটি বেছে নিবেন?

লিনাক্সের সুবিধা অসুবিধা উভয়ের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, লিনাক্স অবশ্যই সবার জন্য উপযোগী নয়। সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট কিংবা সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য লিনাক্স একটি সেরা পছন্দ।

বিশেষ করে ডিভাইসে থাকা ফাইলগুলোর সুরক্ষা যাদের প্রথম অগ্রাধিকার, তাদের জন্য নিঃসন্দেহেই লিনাক্স একটি সেরা অপশন।

পক্ষান্তরে, আপনি যদি ইন্টারনেট গেমিংয়ের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন, সেক্ষেত্রে লিনাক্সের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এটি আপনার ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

এখনো যদি আপনার মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় যে “লিনাক্স কেন ব্যবহার করা উচিত?”, কিংবা লিনাক্স নাকি উইন্ডোজ কোনটি আপনার ব্যাবহার করা উচিৎ?

সেক্ষেত্রে, উপরিউক্ত  linux vs windows এর আলোচনায় উল্লেখ করা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

linux vs windows

লিনাক্স / Linux

উইন্ডোজ / Windows

ফ্রি

পেইড

ওপেন সোর্স

ক্লোজড সোর্স

ফ্রি সফটওয়্যার

পেইড সফটওয়্যার

নিরাপদ

অনিরাপদ

হার্ডওয়্যার খরচ কম

 হার্ডওয়্যার খরচ বেশি

ফিচার কাস্টমাইজ করা সম্ভব

ফিচার কাস্টমাইজ করা সম্ভব না

সকল সফটওয়্যার পাওয়া যায় না

সফটওয়্যার সহজে পাওয়া যায়

গেমিং সফটওয়্যার অপ্রতুল

হাজার হাজার গেম পাওয়া যায়

linux vs windows নিয়ে শেষ কথা

নিঃসন্দেহে লিনাক্স ব্যবহারকারীদের সংখ্যা Windows, iOS কিংবা MacOS ব্যবহারকারীদের তুলনায় কম। কিন্তু কোনোরকম খরচ ছাড়াই লিনাক্স অফিসিয়াল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ এবং সুরক্ষিত সিস্টেমের কারণে লিনাক্স বর্তমানে অনেকেরই প্রথম পছন্দ।

linux vs windows অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনার উপর কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জনাবেন।

2 thoughts on “Linux vs Windows | লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা অসুবিধা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top