শরীরে লোম বেশি হয় কেন?

শরীরে লোম বেশি হয় কেন

লোম কম বেশি আমাদের সবার শরীরেই আছে। কারো কম, কারো একটু বেশি। কারো হাতে, বুকে, ঘাড়ে, কানে, গলায়, কবজির পিছনে বহু লোম দেখা দেয়। আবার কারো কারো শরীরে লোমের দেখাই মিলে না। প্রশ্ন হতে পারে, শরীরে লোম বেশি হয় কেন? আসুন উত্তর খুঁজি।

লোম কি?

লোম বা পশমের সাথে শরীরে কোনো সম্পর্ক নেই। এক কথায় পশম বা লোম দেহের একটি বাহ্যিক অংশ। পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের শরীরেই পশম থাকে। পশম শরীরের চামড়ার উপরের অংশে থাকে। এই পশম বা লোম দেখতে অনেকটা চুলের মতন হয়। কারো পশম ঘন ও কোঁকড়ানো হয়। কারো আবার পশম বা লোম হয় হালকা এবং কম কোঁকড়ানো। লোম বা পশম কম বেশি যেমনই হোক না কেনো আমাদের সবারই থাকে। শুধু যে মানুষের দেহেই পশম থাকে এটা ভুল। পশু পাখির দেহেও পশম থাকে।

লোমের প্রয়োজনীয়তা কী?

লোম নিয়ে হয়তো আমাদের একেক জনের একেক রকম ধারণা। তবে লোম বা পশম আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। নিচে লোম বা পশমের কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো :

☞ মাথার লোম বা চুলের কারণে আমাদের মাথার ত্বক বা চামড়া ধুলোবালি থেকে সুরক্ষিত থাকে। এর ফলে মাথার ত্বকে নানা ক্ষতিকর রোগ জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে না।

☞ চোখের উপরের ভ্রুতে লোম থাকায় আমাদের কপাল বেয়ে ঘাম বা পানি সরাসরি চোখে ঢুকতে পারে না। পানি চোখে সরাসরি ঢুকতে না পেরে ভ্রুতে আঁটকে থাকে।

☞ নাকে লোম থাকার কারনে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধুলোবালি সরাসরি নাক দিয়ে ঢুকতে পারে না। যদি নাকে লোম না থাকতো তবে ধুলোবালি জমে নাকে বিভিন্ন ফাঙ্গাস ও খোঁস – প্যাচড়া হতেই পারতো যা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।

☞ মুখে দাঁড়ি থাকলে ত্বক সুরক্ষিত থাকে এবং রোদের ক্ষতিকর রশ্মি সরাসরি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।

☞ হাতের এবং পায়ের লোমের কারণে দেহে ময়লা জমতে পারে না।

☞ বুকের লোম বুককে আকৃষ্ট করে এবং বুকে লোম থাকা একজন পরিপক্ক ব্যক্তিত্বেরও পরিচয় দেয়।

☞ শরীরের গোপন অঙ্গের লোম শরীরকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে।

শরীরে লোম বেশি হয় কেন?

মূলত আমাদের দেহে লোম বা পশম উৎপন্ন হয় হরমোনের কারণে। যেই হরমোনটি দ্বারা আমাদের দেহের লোম বা পশম প্রভাবিত হয় তা হলো “টেস্টোস্টেরন” হরমোন। আমাদের যাদের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি থাকে তাদের দেহে লোম বা পশম বেশি থাকে। টেস্টোস্টেরন হরমোন কম থাকার ফলে দেহে লোম বা পশমের ঘাটতি দেখা যায়।

শরীরের টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি দেখা দিতে থাকলে শারীরিক অক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীর দুর্বল হতে থাকে, ডিপ্রেশনজনিত সমস্যা দেখা দেয়, শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে, চুলপড়া বেড়ে যায়, নিম্নকর্ম ক্ষমতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা গুলি যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয় তবে টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

শরীরের লোম বেশি করার উপায় কি?

না! শরীরের লোম বৃদ্ধি করার কোনো উপায় নেই তবে যেহেতু টেস্টোস্টেরন হরমোনজনিত কারণে শরীরে লোমের আধিক্য ও ঘাটতে দেখা যায় তাই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করার বেশ কিছু উপায় আছে।

বেশ কিছু পুষ্টিবিদরা এমন কিছু খাবারের নাম উল্লেখ্য করেছেন যা আমাদের দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। নিচে এমন কিছু খাবারের নাম উল্লেখ্য করা হলো :

১. মধু: মধুতে আছে প্রাকৃতিক নিরাময়কারী উপাদান “বোরন” যা দেহের টেস্টোস্টেরন বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. রসুন: রসুনের গুরুত্বপূর্ণ আলিসিন যৌগ মানসিক চাপের হরমোন “করটিসল” এর মাত্রা কমাতে বেশ পটু । ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভালো ফল পেতে প্রতিদিন কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যেস করা উচিত। তাছাড়া রসুন হার্টের জন্যও ভালো।

৩. কলা: কলাতে রয়েছে ব্রোমেলেইন এনজাইম, যা দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কলা শরীরে দ্রুত এবং অধিক সময় যাবৎ শক্তি সরবরাহ করতে পারে। খেলার সময় খেলোয়ারেরা একারণেই কলা খায়।

এছাড়াও কাঠবাদাম, বাধাকপি, ডালিম, ঝিনুক, গরুর গোস্ত, বিভিন্ন টম জাতীয় ফল দেহের গুরুত্বপূর্ণ টেস্টোস্টেরণ হরমোন বৃদ্ধিতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

শরীরে লোম বেশি থাকুক বা কম মানুষ মাত্রই সুন্দর। আমাদের উচিত নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য লোম বা পশম বৃদ্ধির পেছনে না ছুটে দেহকে সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখার জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির সহায়ক খাবার গ্রহন করা। তাছাড়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পরিমিতও ঘুম টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top