ভিটামিন সি জাতীয় খাবার : স্বাস্থ্য সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের শরীরকে ফিট রাখার জন্য ব্যায়াম করার পাশাপাশি খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখেন। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সব ধরনের ভিটামিনের দরকার হয়। ভিটামিন এ, বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই ইত্যাদি সব ভিটামিনই শরীরের কোন না কোন কাজ করে থাকে। যার কারণে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
অন্য সব ভিটামিনের মতই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
ভিটামিন-সি শরীরে জমা থাকেনা। যার কারণে প্রতিদিন vitamin C সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়ে পরিশেষ
ভিটামিন সি পাওয়া যায় অনেক খাবার আছে যার বেশিরভাগই আমাদের হাতের নাগালে থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে কমলা, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, আমলকি, কাঁচামরিচ, পেঁপে, স্ট্রবেরি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আসুন জেনে নেয়া যাক ভিটামিন সি জাতীয় কিছু খাবার সম্পর্কে-
১। পেয়ারা
পেয়ারা এমন একটি ফল যা সারা বছরই পাওয়া যায়। পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পেয়ারা ফল খেতে ও যেমন সুস্বাদু তেমনি শরীরের জন্য উপকারী।
৫৫ গ্রাম ওজনের একটি পেয়ারায় ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। যা আপনার শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারে। একটি আপেল এর থেকে একটি পেয়ারায় বেশি পুষ্টি গুণ থাকে।
তাই প্রত্যেকের ভিটামিন সি এর উৎস হিসেবে প্রতিদিন একটি করে পেয়ারা খাওয়া উচিত।
২। কাঁচা মরিচ
সর্বোচ্চ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এর মধ্যে কাঁচা মরিচ অন্যতম। যা আমাদের অতি পরিচিত এবং সবার ঘরেই এটি সব সময় থাকে। কাঁচামরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচে ২৪২.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। কাঁচামরিচ হার্টের জন্য ভালো। প্রতিদিনের খাবারের সাথে একটি করে কাঁচা মরিচ রাখা উচিত।
৩। স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি একটি সুস্বাদু ফল। এটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও অনেক সুস্বাদু। স্ট্রবেরিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরিতে রয়েছে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।
স্ট্রবেরি বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। এটি কেক, আইসক্রিম ও বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেমে খাওয়া হয়। স্ট্রবেরি একটি সিজনাল ফলাফল। সিজন ছাড়াও এই ফল কমবেশি সব সময় বাজারে পাওয়া যায়।
৪। পেঁপে
পেঁপে অতি পরিচিত একটি ফল। এই ফলটি গ্রাম শহর সব জায়গায় পাওয়া যায়। পেঁপে একটি ভিটামিন সি জাতীয় ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম পেঁপেতে ৬৫ মিলিগ্রাম vitamin C রয়েছে।
পাকা পেঁপে অনেকের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি ফল। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখতে পারেন। এটি শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে।
৫। কিউই ফল
কিউই ফল ভিটামিন সি এর আর একটি উৎস। কিউই ফল খেতে সুস্বাদু এবং ভিটামিন সি-তে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম কিউই ফলে রয়েছে ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।
পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কিউই ফল ডায়েট ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিউই ফল অত্যন্ত উপকারী। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
কিউই ফলে ভিটামিন সি ও ফাইবার ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। এই ফলটি জুস বা সালাদ সব ভাবেই খাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিউই ফল রাখতে পারেন।
৬। লেবু
লেবু এমন একটি ফল সব সময় পাওয়া যায়। লেবু শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে। নিয়মিত হওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন,
- লেবু হজমশক্তি বাড়ায়। শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। বদহজম বুকজ্বালার সমস্যা দূর করে লেবু পানি।
- পেট পরিষ্কার রাখে। ক্ষতিকারক পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। যার ফলে ইউরিনেশন ভালো হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
- লেবু খাবারে রুচি বাড়ায় এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত লেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
৭। আমলকি
ভিটামিন সি এর অন্যতম একটি প্রধান উৎস আমলকি। আমলকী যেমন খাবারে রুচি বাড়ায় তেমনি শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে। আমলকিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি।
আমলকি আচার তৈরি সহ অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। আমলকির বেশ কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে।
- আমলকীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- আমলকীর রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আমলকির টক ও তেতো স্বাদ মুখে রুচি বাড়ায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
৮। ব্রকলি
সবুজ এই ব্রোকলি vitamin C ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। ব্রোকলি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং স্কিন ভালো রাখে। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্রকলি রাখতে পারেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে 99 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এই ব্রোকলি। মেদ কমাতে ব্রোকলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ব্রকলি এলার্জি ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে।
৯। ক্যাপসিকাম
ক্যপসিকাম একটি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। ক্যাপসিকামে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। বর্তমানে দেশে ক্যাপসিকাম খাওয়ার চাহিদা বেড়েছে।
এটি বিদেশি সবজি হলেও এখন আমাদের দেশেও অনেক জনপ্রিয় একটি সবজি হিসাবে পরিচিত। যা এখন দেশেই চাষ হয় এবং বাজারের এভেলেবেল পাওয়া যায়।
একটি ক্যাপসিকামের ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। ক্যাপসিকাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যাপসিকাম রাখতে পারেন।
১০। কমলা
কমলা একটি ভিটামিন সি জাতীয় ফল। শরীরে vitamin C এর ঘাটতি পূরণের জন্য কমলা ভালো ভূমিকা রাখে। সচরাচর সবসময় কমলা পাওয়া যায়।
একটি কমলায় প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। এই ফলটিন খেতেও সুস্বাদু এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। কমলা স্কিন ভালো রাখতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কমলা খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হওয়া সহ আরও অনেক উপকার হয়।
১১। পালংশাক
এইসবুজ শাকটি ভিটামিন সি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। পালংশাকে রয়েছে অনেক উপকারিতা। এই শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, কে, সি, ই এবং উচ্চমাত্রার প্রোটিন।
এছাড়া রয়েছে আয়রন ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালংশাক রাখা উচিত।
১২। আমড়া
আমড়া আমাদের দেশে বহুল পরিচিত একটি ফল। আমাদের দেশে দুই ধরনের আমড়ার চাষ হয়, দেশি এবং বিলাতি আমড়া। আমড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। আমড়া কাঁচা এবং রান্না করে উভয় ভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে।
আমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও আশ, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত আমড়া খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়।
১৩। টমেটো
টমেটো এমন একটি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যা আমরা সব সময় পেয়ে থাকি। রান্নার ক্ষেত্রে টমেটো বেশি ব্যবহার হয়। তবে পাকা টমেটো সালাদ করে খাওয়া যায়।
এটি ভিটামিন-সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারযুক্ত একটি সবজি। এটি স্কিনের জন্য অনেক উপকারী এবং শরীর সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১৪। আনারস
আনারস ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি সারা বছরই কমবেশি পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে আছে ৪৭ মিলিগ্রাম এর মত ভিটামিন-সি।
পুষ্টিগুণে ভরপুর এই আনারস ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৫। চেরি
চেরি বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। চেরি ফল দেখতেও যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও অনেক সুস্বাদু। চেরি ফল হিসাবে খাওয়া ছাড়াও খাবার ডেকোরেশন করতে ব্যবহার করা হয়।
চেরি একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম চেরিতে আছে ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি। তাছাড়াও আছে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পুষ্টিগুণে ভরপুর ও মিষ্টি একটি ফল চেরি।
নিয়মিত চেরি ফল খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ সহ নানা উপকার হয়।
১৬। জাম্বুরা
জাম্বুরা ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস। এ ফলে প্রচুর পরিমাণ vitamin C রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম জাম্বুরাতে ৬১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। এটি একটি মৌসুমী ফল।
জাম্বুরা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। জাম্বুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত এই ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
১৭। আম
আমকে ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে। আম যেমন খেতে সুস্বাদু তেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর। আম টক-মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।
আমে ভিটামিন সি ছাড়াও আরো অনেক এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্টস থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা আমের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত আম খেলে শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
১৮। বাঁধাকপি ও ফুলকপি
বাঁধাকপি ও ফুলকপি শীতকালীন সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন সি। বাঁধাকপিতে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
তেমনি ফুলকপিও ভিটামিন জাতীয় খাবার, সেই সাথে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়াম। ফুলকপি ব্লাড প্রেশারের উন্নতিতে সাহায্য করে। এই সবজি দুটি শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে এই সবজি দুটি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রতিদিন কি পরিমাণ ভিটামিন সি দরকার?
একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং একজন পূর্ণ বয়স্ক নারীর দৈনিক ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
যা কাটাছেঁড়া ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্দি কাশি ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
vitamin C স্কিন ভালো রাখে, হাড় ও দাঁত মজবুত করে। ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হচ্ছে সব ধরনের টক জাতীয় ফল।
শেষ কথা
প্রত্যেক মানুষের শরীরে অন্যান্য ভিটামিনের পাশাপাশি vitamin C এর প্রয়োজন হয়। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সহ শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানবদেহে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অনেক।
ভিটামিন সি শরীরের লৌহ শোষণে সহায়তা করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। vitamin C অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অন্যতম উৎস। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের টিস্যুগুলোকে ঠিক রাখে।
শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।