গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার উপায় নিয়ে অনেকেই ঝামেলায় পরেন। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত অথচ Google Adsense এর নাম শুনেন নি, এমন কি কেউ আছেন? উত্তর টা অবশ্যই “না”। বর্তমানে অনলাইনে আয়ের যতো উপায় আছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লাভজনক হচ্ছে গুগল এডসেন্স থেকে আয়।
কিন্তু আয় করার জন্য একটি Google Adsense একাউন্ট খোলা থাকতে হবে তো! সমস্যা হলো গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট খোলার সাথে সাথেই অন্য কিছুর মতো একটিভ হয়না। সাইটে বিজ্ঞাপন দেখাতে এডসেন্স একাউন্ট একটিভ হওয়ার পাশাপাশি গুগল এডসেন্স একাউন্টে সাইট এপ্রুভাল পেতে হয়।
আপনারা প্রায় সবাই জানেন যে, গুগল এডসেন্স হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা যা গুগল নিজেই পরিচালনা করে থাকে।
আপনারা নিশ্চয়ই কোনো ব্লগের পোস্ট কিংবা ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনের(Advertisements) সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
আর এই বিজ্ঞাপনগুলো মূলত গুগল এডসেন্সের মাধ্যমেই প্রদর্শন করানো হয়ে থাকে। আর বর্তমানে এই গুগল এডসেন্সের মাধ্যমেই অনেকে ইনকাম করছেন ঘরে বসেই।
তবে গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম করতে হলে অবশ্যই আপনাকে গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে হবে। অনেকের ব্লগে অনেক ইউনিক এবং ভালোমানের আর্টিকেল থাকার পরও তারা গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার সঠিক নিয়ম না জানায় ব্যর্থ হন।
তাদের কথা বিবেচনা করেই আজকের এই আর্টিকেল লিখা। তবে গুগল এডসেন্স খোলার পূর্বে গুগল এডসেন্স এপ্রুভালের কিছু প্রস্তুতি আপনাকে নিতে হবে।
এপ্রুভালের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সাইটে ইতোপূর্বেই গুগল এডসেন্স এপ্রুভালের সঠিক গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। আপনি চাইলে সেটি পড়ে নিতে পারেন।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার নিয়মগুলো জেনে নেয়া যাক।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
গুগল এডসেন্স কী (What is Google Adsense in Bangla?)
গুগল এডসেন্সের নাম প্রায় সবারই জানা। তবে গুগল এডসেন্স কী? সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
গুগল এডসেন্স হচ্ছে মূলত advertising network যার মাধ্যমে Blog বা Website এর মালিকরা তাদের ব্লগে বিজ্ঞাপন (Advertisement) প্রদর্শনের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করে থাকেন।
এটি গুগলের এমন একটি সার্ভিস যেটির মাধ্যমে advertiser রা টাকা দিয়ে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন এবং publisher রা তাদের নিজেদের সাইটে গুগলের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইনকাম করতে পারেন।
এখানে Advertiser তাদেরকে বলা হইছে যারা গুগলকে টাকা দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপনগুলো ইন্টারনেটে দেখাতে চান।অপরদিকে Publisher রা গুগলের বিজ্ঞাপনগুলো তাদের নিজেদের blog কিংবা YouTube video এর মাধ্যমে মানুষদের দেখিয়ে ইনকাম করেন।
এখন বুঝলেন তো, গুগল এডসেন্স কী?
এডসেন্স একাউন্টের প্রকারভেদ
পার্টনারশিপের উপর ভিত্তি করে এডসেন্স একাউন্ট মূলত দুই প্রকার।
১. হোস্টেড একাউন্ট
YouTube থেকে প্রাপ্ত এডসেন্স একাউন্ট কে হোস্টেড একাউন্টের তালিকার ধরা হয়। এটি মূলত ইউটিউবের সাথে যুক্ত। যার জন্য এর থেকে যে লভ্যাংশ আসে তার কিছু অংশ ইউটিউব পেয়ে থাকে।
২. নন হোস্টেড একাউন্ট
ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ থেকে প্রাপ্ত এডসেন্স একাউন্ট কে নন হোস্টেড একাউন্টের তালিকায় ধরা হয়। এটি মূলত ব্যক্তি নিয়ন্ত্রনাধীন।
গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার শর্তাবলী
গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে হলে অবশ্যই কিছু বিষয় আপনাকে জেনে রাখতে হবে। এমন কিছু নিয়ম আছে যেগুলো অবশ্যই আপনাকে মানতে হবে,অন্যথায় আপনার একাউন্ট অনুমোদন পাবে না।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত এবং একাউন্ট খুলতে যা থাকা আবশ্যকীয় ;
- আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। ১৮ বছরের নিচে হলে একাউন্ট খুলতে পারবেন না।
- অবশ্যই আপনার একটি ব্লগ অথবা ওয়েবসাইট কিংবা একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে।
- ব্লগে ভালোমানের পর্যাপ্ত এবং ইউনিক কনটেন্ট থাকতে হবে।
- অবশ্যই একটি জিমেইল একাউন্ট থাকতে হবে। জিমেইলের নাম আপনার ওয়েবসাইট / ব্লগের নামে মিল রেখে করাটা ভালো।
- এড্রেস ভেরিফাইয়ের জন্য একটি মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন হতে পারে।
গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার ধাপ
Google adsense একাউন্ট খোলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। যেকেউ খুব সহজেই এই একাউন্ট খুলতে সক্ষম হবেন।এই আর্টিকেলে আমরা শুধুমাত্র ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটের জন্য কী করে একাউন্ট খুলবেন তা step by step দেখিয়ে দিবো।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক how to create google adsense account ;
ধাপ ১. গুগল এডসেন্সে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রথমেই এডসেন্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এর জন্য আপনি Google এর সার্চ বাটনে Adsense লিখে সার্চ করে এডসেন্সের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন।
ওয়েবসাইটে প্রবেশের সাথে সাথে উপরের চিত্রের নীল রংয়ের “Get Started” বা ‘শুরু করুন’ লেখাট আসবে।
ধাপ ২. নীল রংয়ের ‘শুরু করুন’ বাটনে ক্লিক করলে নিচের চিত্রের অপশনগুলো দেখতে পাবেন।
Your website
এখানে আপনার ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ যেটির জন্য আপনি গুগল এডসেন্স খুলতে চাইছেন তার এড্রেসটি কপি করে এনে paste করে দিবেন।
Your email address
এডসেন্স এপ্রুভালের জন্য ইমেইল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।এক্ষেত্রে আপনাকে একটু চালাক হতে হবে।
আপনার একাউন্টটি এপ্রুভালের জন্য আপনার ইমেইলের নাম আপনার ব্লগের নামের সাথে মিল রেখে দিতে চেষ্টা করবেন।
মনে করুন আপনার ওয়েবসাইট/ব্লগ এর নাম “Running Time”। তাহলে আপনার ইমেইলটি খুলতে পারেন runningtime@gmail.com অথবা কাছাকাছি কোনো নামে।
- এরপর Your email address এই অপশনটিতে আপনার ইমেইলটি বসিয়ে দিবেন।
- এর নিচে যে দুটি অপশন আছে আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটি অপশন সিলেক্ট করে নিন।
- তারপর Save and Continue অপশন/বাটনটিতে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩. Save and Continue বাটনে ক্লিক করার পর পরইনতুন একটি পেজ আসবে।
এই অপশনে আপনার জিমেইলটি বসিয়ে Next (পূর্বে ব্যবহৃত মেইল এড্রেস) এ ক্লিক করবেন। Next এ ক্লিক করার পর আরো একটি পেজ লোড নিবে।
এই অপশনটিতে আপনার জিমেইলের Password টি বসিয়ে Next এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৪. এই অংশে “Select Your Country Or Territory” অপশনটিতে আপনি যে দেশ থেকে গুগল এডসেন্স একাউন্টটি খুলতেছেন সেই দেশের নাম সিলেক্ট করে নিবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : নতুন একাউন্ট খোলায় সবচেয়ে বড় ভুল এখানে হয়। অনেকেই নিজ দেশ সিলেক্ট না করে আমেরিকা, ইউরোপের কোনো দেশ সিলেক্ট করেন। এটা মারাত্মক ভুল।
এডসেন্স থেকে পেমেন্ট পাওয়ার জন্য এড্রেস ভেরিফাই করতে হয়। ১০ডলার একাউন্টে জমা হলেই পিন লেটার পাঠাবে আপনার লোকেশনে। এখন আপনি যদি বাংলাদেশে থেকে আমেরিকা দেশ সিলেক্ট করে একাউন্ট করেন, তাহলে তো আর আপনার হাতে পৌছাবেনা। ভেরিফাই করতে না পারলে আপনিও টাকা পাবেননা।
প্রশ্ন করতে পারেন, এডসেন্স একাউন্টের COUNTRY পরিবর্তন করে নিবো, সমস্যা কী! যি সমস্যা আছে। কারণ অ্যাডসেন্স একাউন্টের দেশ পরিবর্তন করা যায়না, হ্যা তবে দেশের মধ্যে স্থান অর্থাৎ এড্রেস পরিবর্তন করা যায়।
তাই এডসেন্স একাউন্ট খোলার সময় খুব সাবধানতার সাথে অবস্থানরত দেশ সিলেক্ট করুন।
এর পরের অপশনটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে Create Account অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
ধাপ ৫. এই অংশে আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না।পেজে কিছু ছবি আসবে, চিত্রের সাদা রংয়ের “Get Started” লিখাটিতে ক্লিক করলেই আপনি পরবর্তী ধাপে পৌঁছে যাবেন।
ধাপ ৬. এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। আপনাকে খুব সাবধানে এই ধাপটি পূরণ করতে হবে।
এখানে আপনি যে ঠিকানা দিবেন সেই ঠিকানাতেই এডসেন্স যাবতীয় চিঠি, চেক পাঠাবে। তাই আপনাকে অবশ্যই সঠিক এবং নির্ভুল ঠিকানা দিতে হবে।
এখানে Name option টিতে আপনার নাম (ব্যাংক একাউন্ট নামের হবহু), Address line এ আপনার ঠিকানা, City অপশনটিতে আপনার জেলার নাম এবং Postal Code এ আপনার পোষ্ট অফিসের কোড নাম্বার বসিয়ে দিবেন।
এরপর Number অপশনটিতে আপনার যেকোনো একটি নাম্বার দিয়ে দিবেন।সবগুলো ঘর পূরণ করে নিচের Submit বাটনটিতে ক্লিক করবেন।
ধাপ ৭. নাম্বার ভেরিফিকেশনের জন্য আরো একটি পেজে কিছু অপশন আসবে।
Phone Number অপশনটিতে আপনার Number দিয়ে দিবেন। এরপর যে দুটি অপশন আছে তার যেকোনো একটি আপনার পছন্দমতো সিলেক্ট করে Get verification code এ ক্লিক করে আপনার নাম্বারে যে ভেরিফিকসন কোডটি পাঠানো হবে সেটি বসিয়ে দিবেন।
ধাপ ৮.
এ পর্যায়ে উপরের চিত্রের “Your Adsense code” টি থেকে code টি কপি করে আপনার ব্লগের <head> ট্যাগের নিচে কিংবা </head> ট্যাগের উপরে বসিয়ে ব্লগের থিম Save করে নিতে হবে।
আপনার ব্লগে উপরের কোডটি যুক্ত করার পর Copy অপশনটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে Done এ ক্লিক করবেন।
ব্যস আপনার কাজ শেষ। এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার এডসেন্স একাউন্টটি।
এডসেন্স টিম ৩-৪দিনের মাঝেই আপনার একাউন্টটি একটিভ করে মেইল পাঠাবে, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে।
শেষ কথা
অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে গুগল এডসেন্স একাউন্ট। ব্লগের মালিকই বলুন আর ইউটিউবারই বলুন, তাদের ইনকাম করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে গুগল এডসেন্স।
যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে হলে গুগল এডসেন্স কে খুব গুরুত্বের সহিত দেখতে হয়। তবে গুগল এডসেন্স থেকে আয় করতে হলে অবশ্যই আপনাকে গুগল এডসেন্স একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে হবে। যা আমরা এই আর্টিকেলে একাউন্ট খোলার বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশা করি আপনি এই আর্টিকেটি follow করে খুব সহজেই Google Adsense account খুলতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও যদি একাউন্ট খুলতে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হন তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। আপনার সমস্যার সমাধান দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমরা।
এছাড়া ব্লগে যদি গুগল এডসেন্স এ অ্যাপ্লাই করেও বারবার রিজেক্ট হন, তবে সঠিক গাইডলানের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
Hooligan Media দিয়ে মনিটাইজেশন অনেক সহজ। পেমেন্ট ও ভালো। এটা দিয়া website, blog, youtube channel সবই মনিটাইজ করা যায়। রেগুলার পেমেন্ট।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ