আপনি যখন কিভাবে লেখক হওয়া যায় ভাবছেন, ভালো লেখক হওয়ার কলা কৌশল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, ঠিক তখন কি আপনার মাঝে একজন ভালো পাঠক হওয়ার চিন্তাও উঁকি দিচ্ছে? যদি না দেয়, তাহলে বাংলা সাহিত্যের জন্য হয়তো আপনি তেমন কিছু যোগ করতে পারবেন না। কেননা, একজন ভালো পাঠক না হলে কখনোই একজন ভালো লেখক হওয়া সম্ভব না।
একজন ভালো লেখক তার লেখার প্রতিটি অক্ষরে তার ভাবনা, তার চিন্তাকে যখন বাস্তব করে তুলতে পারেন তখনই তিনি নিজে সফল লেখক হিসেবে দাবী করতে পারেন। আমাদের বাংলার বিখ্যাত লেখকদের লেখা পড়তে গেলে আমরা যেন সবকিছু হারিয়ে ফেলি, শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের এক একটি বই যেন বাংলার এক একটি পরিবারের প্রতিদিনের বর্তমান ঘটনা।
হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী যেন জীবন্ত সত্যিকারের কোনো এক প্রফেসর, যাকে দেখতে ইচ্ছা করে, যার সামনে বসে তার তর্কের ছন্দে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।
ভালো লেখকরা যেন এক একজন জাদুকর, এমন এক শিল্পী যিনি তার লেখার সুর দিয়ে তার পাঠককে অন্য কোন জগতে নিয়ে যায় যেখানে এই বই আর পাঠক ছাড়া আর কেউ নেই!
আপনিও যদি নিজেকে একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান বা ভবিষ্যতে বাংলায় নিজের কোনো ওয়েবসাইট খুলতে চান এবং সেখানে আপনি আপনার মনের মতো করে লিখতে চান! সর্বোপরি, একজন ভালো লেখক হতে চান তাহলে, আপনার নিজের বাংলা শব্দভাণ্ডার নিয়ে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হবে। বাংলা লেখার দক্ষতার সক্ষমতা সম্পর্কিত অর্জন ক্রমবর্ধমান করতে হবে। আর ভালো লেখক হওয়ার কলা কৌশল রপ্ত করতে হলে প্রথমেই একজন ভালো পাঠক হতে হবে।
আপনার লেখক হওয়ার পথে সামান্যতম অবদান রাখতে আমাদের আজকের লেখায় থাকছে কিভাবে একজন ভালো লেখক হওয়া যায় এবং ভালো লেখক হওয়ার কলা কৌশল রপ্ত করার উপায়।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
ভালো লেখক হওয়ার কলা কৌশল
একজন ভালো লেখক হওয়া নিশ্চয়ই সহজ নয়, সেজন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে এবং ভালোভাবে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে একজন ভালো লেখক / লেখিকা হওয়ার চেষ্টা করা যায়, সে সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করবো। পুরোটা জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
১. বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ুন
আমার মতে একজন ভালো লেখক হতে গেলে এখন থেকেই প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ, কথায় আছে কোনো কিছু শেখা বা সাফ্যলের পিছনে একজন গুরু থাকে।
তো আপনি যদি আপনার প্রিয় লেখক এর বই একটু করে পড়তে থাকেন, তবেই আপনার লেখার মান, শব্দভাণ্ডার দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। ভালো লেখক হতে গেলে তাই খুব অল্প করে হলেও প্রিয় লেখকের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আপনি যদি সবসময় কোনো লেখক বা লেখিকার বই প্রতিদিন পড়েন তাদের সবকিছু জানতে পারবেন। জীবন-দর্শন, আচার-আচরণ, চলাফেরা, সবকিছু । এবং এগুলো আপনি জানতে পারলে আপনার লেখায় ঠিক সেরকমভাবেই প্রভাব পরবে।
২. প্রচুর লেখালেখির অভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনি যদি ভালো লেখক হতে চান, তবে প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ যত বেশী লিখবেন তত বেশী আপনার লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন যতো বেশী অভ্যাস করবেন আপনি আপনার লেখার মান ততই বুঝতে পারবেন।
আপনার লেখা পড়ে আপনিই চট করে বুঝতে পারবেন কোনটি ভুল আর কোনটি সঠিক। কারণ কথায় বলে- মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস করলে মানুষ কি না পারে। ঠিক তেমনি আপনার লেখার ধার হতে হলে আপনাকে অভ্যাসে দাসে পরিণত হতে হবে।
আমরা উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি- আপনি আপনার প্রতিদিনের অভ্যাসের কথা নিজের মতন লিখুন অথবা কনো ব্লগে লেখালিখি করুন। এরকম লিখতে লিখতে একসময় খুব সহজভাবে লেখাটা আপনার কাছে খুব আনন্দের মনে হবে।
৩. সবসময় সাথে নোটবুক রাখুন
একজন ভালো লেখক বা লেখিকা হতে চাইলে নিজের কাছে সবসময় একটি নোট বুক বা ছোট খাতা সবসময় কাছে রাখবেন। হঠাৎ করে আপনার কাছে কোনো শব্দ অপরিচিত মনে হচ্ছে? শব্দটি আপনি সাথে সাথে নোট করে লিখে রাখবেন এবং পরবর্তীতে ডিকশোনারীতে খুজে বের করবেন।
সেখান থেকে আপনি কতগুলো শব্দ জানতে পারলেন এবং দেখবেন দুটো বা তিনটে শব্দ আপনি লেখার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এভাবে অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি একজন ভালো লেখক হতে পারবেন।
৪. নিজস্ব স্বতন্ত্র চিন্তা – ভাবনা
একজন ভালো লেখক হতে চাইলে প্রথমেই নিজস্ব চিন্তা-চেতনা থাকতে হবে। আপনার কোনো কিছুর নিজস্ব চিন্তা – চেতনা বলতে আপনার চোখে দৃশ্যটা কেমন ছিলো, দুনিয়া কিভাবে দেখেছে সেটা আপনা জানার দরকার নেই। আপনি যদি কোন আম গাছে জাম ধরতে দেখেন তাহলে তাই লিখুন, মানুষ আপনাকে নিয়ে কি ভাববে তা নিয়ে চিন্তা করবেন না্। এভাবে নিজের লেখার স্বকীয়তা সৃষ্টি করতে পারবেন।
আপনি হয়তো কোনো লেখককে অনুসরণ করেন, কিন্তু তার লেখার মতো হুবহু লেখা হতে বিরত থাকুন। হুবহু লেখার চেষ্টা করলে আপনি কখনোই সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারবেন না। বরং আপনি অকালেই ঝড়ে যাবেন এবং আপনার লেখা কেউ গ্রহণ করতে চাইবে না।
৫. পরিকল্পনা করে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ধরুন আপনাকে কোনো টপিক দেওয়া হয়েছে লেখার জন্য, আপনি আগে টপিক বুঝে নিন তারপর লেখার চেষ্টা করুন। তা না হলে আপনার সময় অযথাই নষ্ট হবে।
আর কোনো ওয়েবসাইট লেখা পাবলিশ করার আগে সেই টপিক সম্পর্কিত বিষয়গুলো আগে ভালোভাবে জেনে নিন, রিসার্চ করে নিন তারপর লেখা শুরু করুন। এতে পাঠক আপনার লেখার কদর বুঝবে।
৬. সংশোধনী মুলক কাজ
আপনি যদি ভালো রাইটার হতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সংশোধনী মূলক কাজ করতে হবে। এবং তার জন্য রিভিশন হলো একটি অন্যতম প্রধান কাজ।
কারণ হলো আপনি যখন কনো কিছু খুব দ্রুত লিখতে যাবেন তখন কিছু না কিছু ভুল ধরা পড়বেই। উদাহরণ – বানান ভুল, ব্যাকরণ গত ভুল, একলেখা বারবার লিখেছেন কিনা ইত্যাদি।
৭. শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন
আপনাকে ভালো লেখক বা লেখিকা হতে গেলে অবশ্যই শব্দভাণ্ডারের প্রতি নজর রাখতে হবে। যত বেশী শব্দ জানবেন তত বেশী লেখা শ্রুতিমধুর লাগবে আপনার লেখায়।
শব্দভাণ্ডার জানার জন্য আপনাকে বেশী করে রিডিং পড়তে হবে। তাছাড়া আপনি শব্দভাণ্ডার জানতে অক্ষম হবেন। যত বেশী করে রিডিং পড়বেন তত বেশী আপনার সামনে নতুন নতুন ব্দ আসবে।
লিখতে গেলে আপনি সেই শব্দ ব্যবহার করে আপনার লেখাকে আরও বেশী শ্রুতিমধুর করতে পারেন। তাই আপনার জানার পরিধি বাড়াতে হবে। পাঠকও নতুন নতুন শব্দ শিখতে আপনার লেখা পড়তে আগ্রহী হবে।
৮. ভালো লেখক হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে
আপনি যদি ভালো লেখক / লেখিকা হতে চান তবে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে সময় দিতে হবে। মানে হলো আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া আপনি কখনো উন্নতি করতে পারবেন না।
আপনি লেখা ভালোবাসেন তবে মন দিয়ে করুন। কাজটিকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসে করুন। আপনি অবশ্যই পারবেন। আপনি যে কাজটিকে ভালোবাসেন সে কাজটির প্রতি আপনার সময় ব্যায় করতেও আফসোস থাকবে না। তবে সাফল্য পেতে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
লেখক হওয়ার কলা কৌশল নিয়ে শেষ কথা
আপনি একদিনেই দক্ষ ও ভালো লেখক হতে পারবেন না। তার জন্য আপনাকে সবসময় লেখা চালিয়ে যেতে হবে। সময় দিতে হবে। এবং এভাবেই আপনি সফলতা পাবেন।
আমাদের দেশে বা বিদেশে যেসব বিখ্যাত যেসব লেখক রয়েছেন তাদেরও সাফল্যের পিছনে অনেক সাধনা রয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম আর প্যাশন ধরে রেখে লিখতে লিখেতেই একদিন তারা নিজেদের আবিষ্কার করেছে।
ভালো লেখক হওয়া কোনো অসম্ভব কাজ নয়। আপনার যদি আসলেই লেখক হওয়ার মতো প্রতিভা থেকে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই একজন খুব ভালো লেখক হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন।
যেকোনো কাজই করুন না কেন, পিছনের লোকে সমালোচনা করবেই। কিন্তু, আপনার মধ্যে যদি অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত থাকে তবেই আপনি পারবেন।
আমরা এখানে কিভাবে লেখক হওয়া যায় এবং ভালো লেখক হওয়ার কলা কৌশলগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি লেখক হওয়ার পথে কিছুটা হলেও আপনার উপকারে আসবে।
আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হয়তো এ লেখা আমার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে। আমি লিখতে চাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।০১৮৪৩৮৬২৬১২
ধন্যবাদ