হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয় | হাইপোথাইরয়েডিজম এর লক্ষণ

হাইপোথাইরয়েডিজম

থাইরয়েড গ্রন্থি যখন দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন নিঃসরণে অক্ষম হয়ে পড়ার সমস্যাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। অর্থাৎ, হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে আক্রান্ত থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম হয়ে থাকে।

পূর্বে আমরা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের উপায় এবং হাইপারথােইরয়েডিজম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে আমরা থাইরয়েড সংক্রান্ত আরো একটি রোগ হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয়, হাইপোথাইরয়েডিজম এর লক্ষণ, হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে জেনে নিবো।

হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয়?

মানবদেহের বেশকিছু রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে থাকে। যেমন:

১। থাইরয়েডাইটিস (Thyroiditis)

থাইরয়েড গ্রন্থির ইনফ্লেমেশন (inflammation) বা প্রদাহের কারণে থাইরয়েডাইটিস দেখা দেয়। এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় এবং নিঃসৃত হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে।

২। পোস্টপার্টাম থাইরয়েডাইটিস (Postpartum thyroiditis)

কখনো কখনো দেহের অ্যান্টিথাইরয়েড অ্যান্টিবডি (antithyroid antibody) থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে। এর ফলশ্রুতিতে থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ শুরু হয়। এই অবস্থাকে পোস্টপার্টাম থাইরয়েডাইটিস বলে।

মূলত সন্তান জন্মদানের পর ৫-৯% নারীর এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।  তবে এটি রোগীর দেহে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।

৩। হাশিমোতোস থাইরয়েডাইটিস (Hashimoto’s thyroiditis)

আমাদের দেহের এমন কিছু কোষ কখনো কখনো থাইরয়েড গ্রন্থির কোষসমূহকে আক্রমণ করে এবং এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এই অবস্থাকে হাশিমোতোস থাইরয়েডাইটিস বলা হয়।

এই রোগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটি বংশসূত্রে প্রাপ্ত এবং এতে রোগী কোন ব্যথাবেদনা অনুভব করেনা।

৪। থাইরয়েড গ্রন্থির অপসারণ

সার্জারিজনিত কারণে কখনো থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণ করা হলে, অথবা কোন কেমিক্যাল রিয়েকশনের কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি আক্রান্ত হলে হাইপোথাইরয়েডিজমের আশঙ্কা দেখা দেয়।

৫। দেহে আয়োডিনের হেরফের

থাইরয়েড গ্রন্থি তার নিজস্ব হরমোন উৎপাদন ও নিঃসরণের কাজে আয়োডিন ব্যবহার করে। কিন্তু কখনো কখনো শরীরে উৎপাদিত আয়োডিনের পরিমাণের হেরফের ঘটে। এর ফলশ্রতিতে থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণে বেশ প্রভাব পড়ে।

৬। উচ্চমাত্রার আয়োডাইড সম্পন্ন ঔষধ সেবন

ঠান্ডা, সাইনাসের প্রদাহজনিত কিছু ঔষধে উচ্চমাত্রার আয়োডাইড বিদ্যমান, যেগুলো সেবন করলে রোগীর দেহে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে যেতে থাকে।

এছাড়াও অ্যামিওড্যারোন (amiodarone) এর মত বেশকিছু হৃদরোগজনিত ঔষধের কারণেও হাইপোথাইরয়েডিজমের সম্ভাবনা দেখা দেয়।

৭। থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা হ্রাস

কিছু মানুষ তাদের জন্ম থেকেই থাইরয়েড গ্রন্থির অকার্যক্ষমতা নিয়ে বড় হয়। জরিপে জানা যায়, এই সমস্যা প্রতি চার হাজার শিশুর মাঝে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

তাই কোন শিশু জন্মের সাথে সাথেই চিকিৎসকেরা তার দেহের থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্ক্রিনিং ব্লাড টেস্ট (screening blood test) দিয়ে থাকেন।

৮। পিটুইটারি ডিজঅর্ডার (pituitary disorder)

একটি সদ্যজাত শিশুর পিটুইটারি গ্রন্থি যদি ঠিকমত কাজ না করলে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শিশুর দেহে গ্রোথ হরমোন সঠিকভাবে উৎপন্ন হতে পারেনা এবং শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

আরো পড়ুন:  প্রাকৃতিক ঘরোয়া স্বাস্থ্য টোটকা

এছাড়াও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেই এই হরমোনের নিঃসরণ হ্রাস পেতে পারে, বিশেষ করে যদি তিনি পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

৯। লিথিয়াম (Lithium) সেবন

কোন কোন হাইপোথাইরয়েডিজম রোগী তাদের মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে লিথিয়াম সেবন করে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঔষধটি হাইপোথাইরয়েডিজমের ঝুঁকি বাড়াতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে রোগীর উচিত আগে থেকেই এ ব্যাপারে চিকিৎসককে অবগত করা।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ বা উপসর্গ

বয়সভেদে হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হলে তার ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলি নিম্নরূপ;

  • দেহে অকারণেই ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা
  • স্মৃতিভ্রষ্টতা দেখা দেয়া (কোন কিছু মনে না রাখতে পারা)
  • অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি (obesity)
  • ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা
  • কণ্ঠস্বর রুক্ষ, কর্কশ হয়ে যাওয়া
  • ত্বক ও চুল রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা কন্সটিপেশন (Constipation) হওয়া
  • মাংসপেশীতে খিচ ধরা
  • অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা জড়তা অনুভব করা
  • মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া

হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা ক্লান্তির লক্ষণগুলো খুব আস্তেধীরেই শরীরে দেখা দেয়। কিন্তু বাদবাকি উপসর্গগুলো শরীরে মেটাবলিজমের হার কমার সাথে সাথে আরো প্রকটরূপে প্রকাশিত হতে থাকে।

কখনো কখনো বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও রোগী বুঝতে পারেন না যে তিনি ইতোমধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই ওজন বৃদ্ধি ও ক্লান্তির লক্ষণ দেখার সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।

হাইপোথাইরয়েডিজম জনিত সমস্যা/জটিলতা

১। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের পিটুইটারি গ্রন্থি বেশকিছু প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ করে থাকে, যেগুলোর মধ্যে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (follicle-stimulating hormone) বা FSH এবং লুটেইনাইজিং হরমোন (luteinizing hormone) বা LH অন্যতম।

এই দুটি হরমোনের অনুপাতের তারতম্য ঘটলেও হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দিতে পারে, যার ফলে একজন রোগীর যৌনক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, অনিয়মিত মাসিক এমনকি সন্তানদানে অক্ষমতার মত মারাত্মক সমস্যাও দেখা দেয়।

২। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে পোস্টপার্টাম হাইপোথাইরয়েডিজমের তাৎক্ষণিক চিকিৎসাব্যবস্থা না নেওয়া হলে গর্ভপাত, প্রিম্যাচিউরড ডেলিভারি (premature delivery), অস্বাভাবিক রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো আরো মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে, তার অমরা ঝুঁকিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে। এই অবস্থাকে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (preeclampsia) বলা হয়।

৩। দীর্ঘমেয়াদী অনিয়ন্ত্রিত হাইপোথাইরয়েডিজমের অন্যতম একটি ঝুঁকির নাম পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (Peripheral neuropathy)।

এক্ষেত্রে দেহের পেরিফেরাল নার্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ফলে নার্ভগুলো মস্তিস্ক ও স্পাইন্যাল কর্ড (spinal cord) থেকে পুরো দেহে সিগন্যাল পৌছে দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রোগীর পায়ে এবং উরুতে ব্যথা, অবশভাব অনুভূত হয়।

৪। হাইপোথাইরয়েডিজমের সুচিকিৎসা না হলে রোগী শারীরিক অবসাদ, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি অবস্থার শিকার হতে পারেন। এই শারীরিক জটিলতাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ম্যাক্সিডেমা (Myxedema) বলা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত সিডেটিভ গ্রহণ, মানসিক চাপ ইত্যাদির কারণে ম্যাক্সিডেমা আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।  এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

আরো পড়ুন:  স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ঠিক রাখার টিপস

৫। থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণের স্বল্পতা অনেকসময় একজন নারীর স্বাভাবিক ওভ্যুলেশনের মাত্রা ব্যাহত করে। এর ফলে বিলম্বিত গর্ভধারণ এমনকি গর্ভধারণে অক্ষমতাও দেখা দেয়। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো হলে রোগী এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

৬। এছাড়াও দৈহিক স্থুলকায়তা (obesity), হৃদরোগের মত শারীরিক জটিলতায়ও ভোগেন হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীরা।

পূর্ণবয়স্কদের পাশাপাশি হাইপোথাইরয়েডিজম সদ্যজাত শিশু এবং বাচ্চাদের জন্যেও একটি হুমকিস্বরূপ! সদ্যজাত শিশুদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রভাবে যে উপসর্গ ও সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা নিম্নরূপঃ

১। একটি সদ্যজাত শিশুর দেহে থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা দেখা দিলে যদি তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে তার ক্রিটিনিজম (cretinism) এবং ডরফিজম (dwarfism) দেখা দেয়। ক্রিটিনিজম এর কারণে শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। অপরদিকে ডরফিজমের কারণে শিশুর দৈহিক বিকাশ ও বৃদ্ধির তারতম্য ঘটে। উভয় ক্ষেত্রেই থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা ছাড়াও দেহে অপর্যাপ্ত পুষ্টি এবং ঘনঘন রোগ সংক্রমণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রভাবে শিশু জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এর লক্ষণস্বরূপ তার দেহত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং চোখ সাদাটে হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর দেহে বিদ্যমান ভঙ্গুর রক্তকণিকার কারণে বিলরুবিন (bilirubin) নামক একধরণের রাসায়নিক পদার্থের সৃষ্টি হয়, যার বিপাকক্রিয়ায় শিশুর লিভার অক্ষম হয়ে পড়ে।

৩। শিশুর জিহ্বা লম্বা ও প্রসারিত হয়।

৪। কণ্ঠস্বর ও কান্না দুটোই কর্কশ শোনায়।

৫। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

৬। কখনো কখনো শিশুর নাভির কাছে অ্যাবডোমিন্যাল ওয়াল (abdominal wall) ক্ষতিগ্রস্থ হলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থাকে আম্বিলিক্যাল হার্ণিয়া (umbilical hernia) বলা হয়।

৭। শিশুর মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।

৮। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

৯। শিশুর ঘুমের মাত্রা বেড়ে যায়।

শুধু সদ্যজাত শিশুরাই নয়, একটু বড় বয়সের শিশু এবং কিশোর বয়সের যেকোন মানুষও হাইপোথাইরয়েডিজমের ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাদের ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের যে লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হল:

  1. দৈহিক ও স্বাস্থ্যগত বৃদ্ধি না হওয়া।
  2. দাঁত ও মাড়িজনিত সমস্যা (দাঁত উঠতে দেরি করা)।
  3. বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিকাল।
  4. মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া।

হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণের উপায়

সাধারণত কারো দেহে হাইপোথাইরয়েডিজমের কিছু উপসর্গ (ঘনঘন দুর্বলতা, শুস্ক ত্বক, কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি) প্রকট হওয়ামাত্র চিকিৎসকেরা তাকে বেশ কয়েকটি টেস্ট দিয়ে থাকেন।

উপসর্গগুলোর ধরণ এবং টেস্টগুলোর ফলাফল অনুযায়ী চিকিৎসকেরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। এই টেস্টগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগী আদৌ হাইপোথাইরয়েডিজমের শিকার হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া।

১। প্রথম ধাপে রোগীকে বেশকিছু ব্লাড টেস্ট দেয়া হয়। এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে রোগীর দেহের থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) এবং থাইরক্সিন (thyroxine) এর পরিমাণ জানা যায়।

যদি রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ কম থাকে এবং TSH এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে রোগী হাইপোথাইরয়েডিজম আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা।

আরো পড়ুন:  গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা : ফিট থাকতে গ্রিন টি

তবে রোগী যদি ইতোমধ্যে কোন কারণে হেপারিন (heparin), বায়োটিন (biotin) ইত্যাদি মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন।

সেক্ষেত্রে তার উচিত TSH ও থাইরক্সিনের টেস্টগুলো করানোর আগেই চিকিৎসককে এ বিষয়ে অবগত করা। কেননা এ জাতীয় ঔষধ সেবন এই হরমোন টেস্টগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

২। দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীর দেহের থাইরয়েড হরমোনগুলোর সামঞ্জস্যতা আনার জন্য চিকিৎসক লেভোথাইরক্সিন (levothyroxine) জাতীয় বেশকিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যেমন লেভো-টি (Levo-T), সিনথ্রয়েড (Synthroid) ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, লেভোথাইরক্সিন একধরণের সিনথেটিক থাইরয়েড হরমোন (synthetic thyroid hormone), যা রোগীর দেহের থাইরয়েড হরমোনগুলোর মাঝে সামঞ্জস্যতা আনে।

ফলাফল হিসেবে রোগী আগের চেয়ে সুস্থ অনুভব করেন এবং তার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। একই সাথে রোগীর ওজনও নিয়ন্ত্রণে বেশ সাহায্য করে এই লেভোথাইরক্সিন।

হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে লেভোথাইরক্সিন গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাসেবা। কিন্তু শরীরে TSH এর পরিমাণ বুঝে চিকিৎসকেরা রোগীকে লেভোথাইরক্সিনের ডোজ পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৩। সঠিক মাত্রায় লেভোথাইরক্সিন গ্রহণকালীন সময়ে প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পরপর চিকিৎসক রোগীর দেহের TSH পরিমাপ করেন। পরবর্তীতে ছয় মাস পর রোগীর ব্লাড লেভেল পর্যবেক্ষণ করা হয়।

এ পর্যায়ে রোগীর হরমোনের অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে রোগীর ইনসমনিয়া, বুক ধড়ফড় করাসহ আরো অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৪। কখনো রোগীর দেহে coronary artery disease দেখা দিলে চিকিৎসক লেভোথাইরক্সিনের ডোজ বাড়িয়ে দিতে পারেন। এর কারণে আমাদের হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে দেহের বিপাকক্রিয়ার হার বাড়াতে সামঞ্জস্যতা আনতে পারে।

৫। লেভোথাইরক্সিন জাতীয় ঔষধ সাধারণত রোগীকে প্রতিদিন একই সময়ে, বিশেষ করে সকালে খালি পেটে সেবন করতে হয়। সেবনের এক ঘন্টা পর রোগী তার সকালের নাস্তা কিংবা অন্যান্য ঔষধ সেবন করতে পারেন। কিন্তু ভুলবশত কখনো লেভোথাইরক্সিনের একটি ডোজ মিস হয়ে গেলে রোগীকে পরদিন দুটো ট্যাবলেট সেবন করতে হয়।

৬। লেভোথাইরক্সিন সেবন একটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাপ্রক্রিয়া হলেও এটি দামে সহজলভ্য এবং এর তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু কখনো যদি রোগী ঔষধের ব্র্যান্ড পরিবর্তন করতে চান কিংবা ডোজের তারতম্য আনতে চান, সেক্ষেত্রে তার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

সতর্কতা

লেভোথাইরক্সিন সেবনকালীন সময়ে চিকিৎসকেরা রোগীকে বেশকিছু খাবার ও ঔষধ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন;

১। সয়াজাতীয় ময়দা (soybeen flour)

২। আখরোট

৩। আয়রন সাপ্লিমেন্ট ও আয়রন মাল্টি-ভিটামিন

৪। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট

৫। অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষধ

৬। সুক্রালফেট (sucralfate) জাতীয় ঔষধ, যা আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

৭। কোলেস্টেরামাইন  (cholestyramine) বা কোলেস্টিপল (colestipol) জাতীয় ঔষধ, যা দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।

হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ে শেষ কথা

আশা করি, হাইপোথাইরয়েডিজম কি, হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয়, লক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

হাইপোথাইরয়েডিজম মানেই কিন্তু আতঙ্ক নয়, বরং উপসর্গ দেখা দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাই সচেতনতার পরিচয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top