শীতে ত্বকের যত্ন | শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবেন যেভাবে

শীতে ত্বকের যত্ন

অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে বিশেষ সচেতন হতে হয়। কেননা, এসময় বায়ুর আর্দ্রতা কম হওয়ায় শরীরে রুক্ষ্ম ও শুষ্ক ভাব এমনকি, অনেকে ত্বক ফেটে যায়। তাই, শুষ্ক ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবেন কিভাবে তা জানাতেই আমাদের আজকের আয়োজন।

ত্বক আমাদের দেহের বাহ্যিক অংশ। আমরা মূলত বাহিরে থেকে আমাদের দেহের এই ত্বকটাকে দেখতে পারি। আমাদের দেহের জন্য সুন্দর এবং প্রাণবন্ত ত্বক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতে ত্বকের যত্ন না নিলে প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়,  যা অবহেলা করতে করতে মারাত্মক রূপ ধারণ করে।

সুস্থ ও সুন্দর ত্বক আমাদের পরিপাটি থাকার পূর্বশর্ত। আমাদের অধিকাংশ মানুষের শীতকালে ত্বক ফেটে যায়, চামড়া উঠতে শুরু করে, শুষ্ক ত্বক বা চামড়াগুলো একদমই প্রাণহীন হয়ে পড়ে। একটু ভাববার বিষয় কেনো শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠে?

শীতকালে চারিদিকে একটা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে। সূর্যের দেখা মেলা একদমই ভার। হয়তো মাঝে মাঝে রোদের দেখা পাওয়া যায় তবে তা খুবই কম। ঠিক এই কারণে আমাদের দেহে ঘামও খুবই কম হয়। নিচে শীতকালে শুষ্ক ত্বকের প্রধান কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো :

  • শীতকালে আবহাওয়া যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে তাই আমাদের শরীরে ঘাম কমে যায়। ঘাম কমে যাওয়ায় শরীর শুকনো থেকে শুষ্ক হতে থাকে। মূলত শুষ্ক আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী।
  • অনেকের শরীরে এমনিতেই ঘাম কম হয়। তাদের ঘামগ্রন্থিও কমই থাকে। ৪০-৪২ বছরের পর থেকে মানুষের ঘামগ্রন্থি লোপ পেতে থাকে। এই কারণটির জন্য মূলত বংশগত ও জিনগত সমস্যা দায়ী।
  • যারা সারাদিন পানিতেই কাজ করেন বা যারা সারাদিন পানি বেশী ব্যবহার করেন তাদের ত্বক তথা চামড়া পাতলা হতে থাকে। এটিও ত্বক শুষ্ক থাকার অন্যতম কারণ
  • ভিটামিনের অভাবেও আমাদের ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ্ম রূপ ধারণ করে। এর জন্য ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি দায়ী। স্নেহ জাতীয় খাবার কম খেলে, শরীরে প্রয়োজনীয় ফ্যাটের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়।
  • অনেকে নিয়মিত কিছু ঔষধ সেবন করে যা ত্বককে মূলত শুষ্ক করেই রাখে। এই সমস্যাটি মূলত ঐ ঔষধের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণ্য হয়। ডায়াবেটিকস, চর্মরোগ, থায়রোডজনিত সমস্যা আক্রান্ত রোগীদের ত্বক মূলত ঔষধ খাওয়াজনিত কারণেই শুষ্ক হয়ে যায়।

শীতে ত্বকের যত্ন | শুষ্ক ত্বকের যত্ন

প্রথমেই আপনার ত্বকের দুর্দশার কারন খুঁজুন। উপরের কোন কারনটিতে আপনার ত্বক দিনদিন শুষ্ক হয়ে উঠসে তা নিশ্চিত হোন। এতে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে আপনার সুবিধা হবে। এরপর যা করবেন :

আরো পড়ুন:  গরমে ত্বকের যত্ন ও ঘরোয়া ফেসপ্যাক

১. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন:

আপনার ত্বক ঠিক কতখানি শুষ্ক তা অনুমান করে ঐ হিসেব করে একটা ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার কিনুন। বাজারে বেশ কিছু লোশন ও ময়েশ্চারাইজার ক্রিম আছে যা আপনার ত্বককে কোমল এবং সতেজ রাখতে সহায়তা করবে।

২. গরম পানি যেন ঠান্ডা থাকে:

গরম পানি দিয়ে গোসল করেন? হাত মুখ ধৌত করেন? এতে আরাম অনুভব করেন? সামান্য আরামের জন্য আপনি নিজ হাতে আপনার ত্বকের ক্ষতি করছেন। অতিরিক্ত গরম পানি আপনার ত্বকের ফলিকল গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হওয়ার জন্য আপনার ত্বক ভালো সুবিধা করতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরম পানিকে না বলুন।

৩. আরো পানি খান:

শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার অন্যতম সহজ উপায় এটি। বেশী বেশী পানি পান করুন। আপনার ত্বককে সতেজ ও উজ্জীবিত রাখার সবথেকে সস্তা উপাদান হলো পানি। তবে এই পানিই আপনার ত্বককে ভিতর থেকে ভেজা রাখে এবং আপনার ত্বক বাহিরে থেকে সতেজ হয়।

৪. অতিরিক্ত সাবান ও ফেইস ওয়াসের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন:

আপনার ত্বককে সাবান ও ফেইস ওয়াস পরিষ্কার করতে গিয়ে ত্বকের উপরের অংশকে শুষ্ক করে তোলে যা আপনার রুক্ষ্ম হয়ে যাওয়া ত্বকের অন্যতম কারন। তাই শীতকালে মুখে সাবানের ব্যবহার কিছুটা কম করতে হবে। নারিকেল তেল হাতে পায়ে এবং শরীরে মাখতে পারেন তবে এই ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করা তেলের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস

১. শীতে ঠোঁটের যত্ন
শীতের সময় যেখানে শরীরের চামড়ায় খরা ধরে যায় সেখানে ঠোঁট ফাটার কথা তো আসবেই। অবশ্যই আপনি শীতে আপনার ঠোঁটকে একটু বাড়তে যত্ন-আত্তি দিবেন।

এক্ষেত্রে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ঠোঁট ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে তবে পরিষ্কার করতে গিয়ে ঠোঁটের উপর আঘাত করা যাবে না। পরিষ্কার করার পর ঠোঁটে লিপবাম বা লিপজেল ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুন:  ত্বক ফর্সা করার ক্রিম খুঁজছেন? আপনার জন্য ফাঁদ নয়তো!

রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার ঠোঁটের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে।

২. শীতকালে মুখের যত্ন

মূলত এখন কিছু টিপস দিবো তাদের যারা ইতিমধ্যে নিজেদের ত্বকে খরা এনে ফেলেছেন। আলতো গরম পানি এবং লেবুর রস দিয়ে মুখকে ভালোমতন পরিষ্কার করুন।

যেহেতু আপনার মুখ একদমই শুষ্ক তাই ময়েশ্চারাইজার ক্রিম অল্প করে মুখে মাখুন। পাকা কলা দিয়ে আলতো করে মুখে ম্যাসাজ করুন পাকা কলায় প্রচুর ময়েশ্চারাইজার থাকে।

অতঃপর মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে ভার্জিন অলিভ ওয়েল বা অ্যালোভেরা তেল দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করুন।

৩. শীতকালে পায়ের যত্ন ও পা ফাটা

শীতকালে পায়ের অযত্নে পা ফাটা দেখা দেয়। পায়ের চামড়া অনেক বেশী মোটা থাকে। তবুও পায়ের চামড়া শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হতে হতে পা ফাঁটা সমস্যা দেখা দেয়।

এক্ষেত্রে পা ভালোভাবে পরিষ্কার রেখে পায়ে ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করা উত্তম। পায়ের মরা চামড়া তুলে ফেলা উচিত নয়। এতে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত বেশী হয়।

শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবেন যেভাবে

আপনার ত্বক যখনই শীতকালের রুক্ষ্মতায় একদমই নাজেহাল অবস্থায় আছে ঠিক তখনি দেখবেন মুখের একটা কালচে ভাব দেখা যাচ্ছে। শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে গেলেই ত্বকের এই কালো ভাব দেখা যায়।

কালো কিংবা শুষ্ক ত্বককে মশ্চারাইজ করবেন যেভাবে:

শুষ্ক ত্বকের যত্ন

১. এক্সফোলিয়েট করা কমিয়ে ফেলুন

শীতকালে আপনার ত্বক বারবার এক্সফোলিয়েট করলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে। তাই শীতে এক্সফোলিয়েট করা যাবে না। খুব বেশী প্রয়োজন দেখা দিলে আপনি এক্সফোলিয়েট করতে পারেন তবে বড়জোড় সপ্তাহে ২ বার বা এরও কম।

২. অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না

অনেকের ধারণা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে খুব তাড়াতাড়ি মুখ পরিষ্কার হয় এবং এতে ত্বক গ্লো করে। এই ধারনাটি একদমই ভুল। আপনি চাইলে কিছুটা গরম পানি ব্যবহার করতে পারবেন।

আরো পড়ুন:  ত্বক ফর্সা করার ক্রিম খুঁজছেন? আপনার জন্য ফাঁদ নয়তো!

অতিরিক্ত গরম পানি কোনো ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি মুখের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অতিরিক্ত গরম পানি মুখের ফলিকল পুড়িয়ে ফেলে।

৩. লেবুর ব্যবহার

মুখের ত্বকে উজ্জ্বল ফিরিয়ে আনতে লেবুর ব্যবহার করা হয়। লেবুতে অ্যাসিড রয়েছে, যা মুখের ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। ঠান্ডায় লেবু ব্যবহার করলে মুখের কালচে ভাব থেকে কিছুটা বাঁচতে পারেন।

তবে শীতে ত্বকের যত্ন নিতে নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে না কারণ লেবুর অ্যাসিড আপনার ত্বকের উপর প্রভাব ফেলবে।

৪. চালের গুঁড়োর ব্যবহার

নিজের ত্বককে ফর্সা করার জন্য, অনেকেই চালের গুঁড়ার ফেস প্যাকটি ব্যবহার করেন। চালের ফেস প্যাকে রয়েছে অ্যান্টি-এজিং। যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বল্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

চালের গুঁড়াতে স্টার্চ থাকে, যা ত্বককে শুষ্ক করে ফেলতে পারে। তাই আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে বারবার চালের গুড়োর ব্যবহার করা যাবে না।

৫. বারবার মুখ ধোয়া যাবে না

শীতে ত্বকের যত্ন নিতে বারবার মুখ ধোয়ার ভুলটি আমরা করিই। আমাদের ত্বকে কিছু ন্যাচারাল উপাদান থাকে যা আপনার ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

তাই আপনি বারবার মুখ ধুয়ে এই প্রাকৃতিক উপাদান গুলোকে নষ্ট করবেন না। বিশেষ করি সাবান দিয়া ঘন ঘন মুখ ধোয়া যাবে না। সাবানে ক্ষার থাকে যা আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে শেষ কথা

শীতকালে আরামের জন্য অনেকেই গরম পানির ব্যবহার করি। এই গরম পানি আমাদের দেহের জন্য মোটামুটি ক্ষতিকরই। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক শীতকালে সকলেরই চুল পড়ে যাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। এর অন্যতম কারন গরম পানি দ্বারা গোসল করা।

অতিরিক্ত চুল পরা থেকে পরিত্রাণ পেতে অবশ্যই আপনাকে অতিরিক্ত গরম পানি দ্বারা গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চুল পড়া কমানোর জন্য গোসলের পরপরই চুল ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। ভেজা রাখা যাবে না।

উপরের আলোচনায় শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে কিছু কার্যকরী টিপস শেয়ার করলাম। শীতকাল যেন আমাদের ত্বকের ক্ষতির কারণ না হয়ে পড়ে এর দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরকেই নিতে হবে।

শীতের শুষ্কতা ও রুক্ষতাকে এড়িয়ে শীতকালকে উপভোগ করতে আশা করি শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিয়ে উল্লেখ করা টিপসগুলো কাজে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top