পুরাতন আইফোন কেনার সময় যেসব বিষয় দেখতে হবে

পুরাতন আইফোন ক্রয়

একটি আইফোনের সখ আমাদের সকলেরই রয়েছে। হোক তা নতুন কিংবা পুরাতন আইফোন ( সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন )। পুরাতন মডেল কিংবা লেটেস্ট মডেল আইফোন। তবে ব্যবহৃত পুরাতন আইফোন কেনার আগে অবশ্যই কিছু জিনিস দেখে নিতে হবে।

যার কাছে অলরেডি আছে সে চায় লেটেস্ট মডেলের আইফোনটা ( latest model iPhone) কিনতে, আর যার নেই সে হয়তো একটা  ব্যবহৃত সেকেন্ড হ্যান্ড পুরাতন আইফোন কিনতে (second hand iPhone bd) পেলেও খুশি হবে। আইফোনের ব্যাপারটাই এমন যে সবাই কাছে পেতে চায়।

আইফোন যত সাধের-ই হোক সাধ্য থাকাও তো চাই। সাধ এবং সাধ্যের মেল বন্ধন ঘটাতে অনেকেই ব্যবহৃত পুরাতন আইফোন কেনার জন্য (old / used iPhone) আগ্রহী হন। প্রথমেই বলে রাখি ব্যবহৃত সাধারন ফোন কেনা আর পুরাতন আইফোন কেনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

একটি সাধারণ ফোন ৩বছরের বেশি ব্যবহার করা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু আইফোনের ক্ষেত্রে সেটা ৭-৮ বছরও কোন বয়সই না। না ব্রান্ডিং করছি না, আইফোন কোম্পানী আমাকে স্পন্সরও করেনি।

একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার যে বন্ধু ২০১৩-১৪ সালে আইফোন সিক্স নিয়েছিল ফোনটির বর্তমান কন্ডিশন কেমন। গুরুতর ফিজিক্যাল ড্যামেজ না হওয়া পর্যন্ত আইফোনের পারফরম্যান্স কমবে না।

সুতরাং পুরাতন আইফোন কেনা আমার মতে বেশ লাভজনক। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম মূল্যে পেয়ে যাবেন। তবে একটি ফোন মানুষ অনেক কারণেই বিক্রি করতে পারে। তাই পুরাতন আইফোন কেনার আগে অবশ্যই বেশ কিছু বিষয় দেখে নেওয়া উচিৎ।

পুরাতন আইফোন কেনার আগে কি কি দেখতে হবে

নতুন ফোন কেনার আগে আমরা অনেক বিষয় এবং ফিচার নিয়েই চিন্তা করি, দেখেশুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু পুরাতন আইফোন সাধারণত একজন এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারী কিনতে যান, যার আইফোন ব্যবহারের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।

আরো পড়ুন:  Refurbished Meaning in Bengali | রিফারবিশড ফোন চেনার উপায়

সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার পর তিনি বিভিন্ন জটিলতা দেখতে পান। এমন ক্রেতাদের জন্যই আমাদের আজকের আর্টিকেল। সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার আগে নিচের সেটিংস এবং জটিলতা টেস্ট করে নিন।

1. আইক্লাউড ও কান্ট্রি লকড

আইফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিরাপত্তা সিস্টেম। যেকোন ফোন চুরি হয়ে গেলে তা অচল করে দিয়ে পরবর্তীতে খোঁজ পাওয়া সম্ভব। পুলিশ তৎপর হলে তা খুব কম সময়ের মধ্যেই সম্ভব।

এমন কোন মানুষের থেকে ফোন কিনবেন না যার ফোনটিতে আইক্লাউড (icloud) কিংবা কান্ট্রি লকড দেওয়া, এবং তিনি নিজে আইক্লাউড রিসেট করতে পারছেন না।

কান্ট্রি লকড বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই খুলে দেয় কিন্তু আইক্লাউড লক না রিসেট করতে পারবেন আর না খুলতে পারবেন, যদি না আপনি সঠিক অ্যাপল আইডি জানেন।

ফোন চুরি হওয়ার সাথে সাথে সাধারণত আইটিউন (iTune) ব্যবহার করে লক করে দেয়। চোরাই ফোনেই সাধারণত এসব সমস্যা থাকে। তাছাড়া যেসব বিক্রেতার কাছে আইফোন কেনার রশীদ এবং আইফোনের বক্স থাকে না, তাদের থেকেও ফোন কেনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।

দেখা গেলো সকালে ফোন কিনলেন বিকেলে বাড়িতে পুলিশ চলে আসলো।

2. সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোনের বয়স

পূর্বেই বলেছি আইফোনের প্রাণ হচ্ছে কৈ মাছের প্রাণ। তবে কৈ মাছের জীবনেরও শেষ আছে। একটি আইফোন ৬-৭ বছর ব্যবহার হয়েছে সেটি যদি ২০-২৫ হাজার টাকায় কিনেন, বিষয়টা রিস্কি হয়ে যায়।

তিন বছরের অধিক পুরাতন আইফোন ক্রয় করার বিপক্ষে মতামত দিবো আমি। একটি পুরাতন আইফোন ক্রয় করার জন্যও আপনাকে অন্য ব্রান্ডের প্রায় নতুন কোন ফোনের দাম দিতে হবে। সুতরাং অন্তত ৩ বছর সার্ভিস নিতে পারবেন এমন আশা নিয়েই কেনা উচিৎ। IMEI নাম্বার চেক করে ফোনটির বয়স নির্ণয় করতে পারবেন।

3. আইফোনের মডেল

একটি used secondhand পুরাতন আইফোন যত ভালই থাকুক না কেন, আপ টু ডেট ফিচার না পেলে কোন লাভ নেই। আইফোনের উন্নত হার্ডওয়্যারের সাথে সাথে সফটওয়্যার আপ টু ডেট রাখতে প্রায়ই অপারেটিং সিস্টেমে আপডেট আসে।

আরো পড়ুন:  Refurbished Meaning in Bengali | রিফারবিশড ফোন চেনার উপায়

কিন্তু সব ফোনের জন্য এই আপডেট অ্যাভলেবল নয়। অ্যাপল কোম্পানী বর্তমানে iPhone 6s থেকে পরের ফোনগুলোর জন্য আপডেট প্রকাশ করে।

তাই ৭বছর আগে iPhone 6s ক্রেতা আজও লেটেস্ট ফিচার পাচ্ছেন। কিন্তু প্রায় একই সময়ে বাজারে আসা iPhone 6 এবং তার পূর্ববর্তী ফোনগুলোতে এখন আর কোন আপডেট আসে না।

তাই পুরাতন আইফোন কেনার সময় চেষ্টা করবেন iPhone 6s বা তার পরবর্তী মডেলের কোন ফোন নেওয়ার। আমার মতামত হলো সর্বনিম্ন iPhone 7 মডেল ক্রয় করা।

4. আইফোন ব্যাটারী ব্যাকআপ

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী আইফোনে সুইচ করার পর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা অনুভব করেন তা হলো ব্যাটারী ব্যাকআপ সমস্যা। আইফোনের নজরকাড়া স্লিম মডেল সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে ব্যাটারী কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। তবে আইফোন ১১ প্রো থেকে ব্যাটারী ব্যাকআপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পুরাতন আইফোন কেনার সময় দেখে নিবেন ফোনটির ব্যাটারী ক্যাপাসিটি কত% বাকি রয়েছে। ৬০% এর নিচে চলে আসলে ব্যাটারী পরিবর্তন প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তাই দেখে নিন ফোনের ব্যাটারী ব্যাকআপ যেন কমপক্ষে ৮০% থাকে।

5. মাইক্রোফোন

আইফোরের অনন্য বৈশিষ্ট্য siri, যা মাইক্রোফোন দিয়েই কনট্রোল করতে হয়। ফোন কেনার সময় আমরা ক্যামেরা, র‌্যাম, রোমের দিকে  নজর দিলেও মাইক্রোন টেস্ট করতে ভুলে যাই।

মাইক্রোফোনে রেকর্ডিং করে দেখুন ঠিকভাবে কাজ করে কিনা, দেখে নিন এর সবগুলো ফিচার ঠিক আছে কি না। siri কে কমান্ড করে টেস্ট করে নিন। কথা বলে দেখুন স্পিকার ঠিক আছে কি না।

6. ফিঙ্গার প্রিন্ট

অনেকদিন iPhone ব্যবহার করলে দেখা যায় চার্জার নষ্ট হলে আইফোন ইউজাররা কপি চার্জার দিয়ে চার্জ দেন। ফলাফল স্বরূপ ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট টাচ আইডি সমস্যা দেখা দেয়।

ফোন কেনার সময় এটা ভালভাবে টেস্ট করে দেখে নিন যেন ঠিকভাবে কাজ করে। আইফোনের টাচ আইডি এবং সিরি ঠিক থাকলে কাজ করা খুব সহজ হয়ে যায়। এই দুইটা ঠিক না থাকলে আইফোনের আসল মজাই পাবেননা।

আরো পড়ুন:  Refurbished Meaning in Bengali | রিফারবিশড ফোন চেনার উপায়

7. আইফোন স্টোরেজ

আইফোনের আলাদা কোন মাইক্রোএসডি (Micro SD) বা মেমোরীকার্ড স্লট না থাকায় স্টোরেজ ক্যাপাসিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্টোরেজ প্রয়োজনীয়তা একেক জনের একেক রকম। আপনার প্রয়োজনীয়তা কম হলেও ৩২ জিবি নিন। তবে আমার পরামর্শ নূন্যতম ৬৪জিবি স্টোরেজ ক্যাপাসিটির ফোন নেওয়া।

8. আইফোন ডিসপ্লে

iPhone ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি হ্যাঙ করেনা। কিন্তু যদি ডিসপ্লে ভেঙ্গে যায় এবং ভালো মানের ডিসপ্লে দিয়ে চেঞ্জ করা না হয় তবে হ্যাঙ করার সম্ভাবণা থাকে। বিক্রেতা এটিকে লুকানোর চেষ্টা করতে পারে তবে আপনি নিজে টেস্ট করতে পারেন।

পুরাতন আইফোন কেনার আগে ফোনটিতে কোনো ভারী গেম ইনস্টল করা থাকলে সেটি কিছুক্ষণ খেলুন, যদি না থাকে ইনস্টল করার সুযোগ থাকলে করে চেক করুন। অপশন না থাকলে সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোনটি একটানা ৩০-৪০ মিনিট ব্যবহার করে দেখুন, সমস্যা থাকলে এর মাঝে দেখা দিবে আশা করা যায়।

পুরাতন আইফোন কেনা নিয়ে শেষ কথা

সবশেষে পুরাতন আইফেন কেনার আগে পার্টস পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা জানতে কম্পউটারে 3u Tools ইনস্টল করে মোবাইল কানেক্ট করবেন।

মনে রাখবেন বাংলাদেশে আইফোনের কোন অফিসিয়াল কাস্টমার সার্ভিস নেই। সমস্যা হলে আপনাকে মার্কেটের কোন সার্ভিসিং সেন্টারে যেতে হবে। বাইরের আন-অফিসিয়াল সার্ভিস নেওয়া রিস্ক। চেষ্টা করতে হবে যেন সার্ভিসিং সেন্টারে যেতে না হয়।

তাই সেসেন্ড হ্যান্ড পুরাতন আইফোন কেনার আগে ভালভাবে যাচাই করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভাল হয় যদি ব্যবহৃত সেকেন্ডহ্যান্ড আইফোন কেনার সময় এমন একজনকে নিয়ে যেতে পারেন যিনি iPhone ব্যবহার করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top