কন্টেন্ট রাইটিং কি? কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায়

কন্টেন্ট রাইটিং

কন্টেন্ট রাইটিং হলো পেশাদার মার্কেটিং এর জন্য এক ধরনের কন্টেন্ট  তৈরি করার কাজ যা নির্দিষ্ট অনলাইন বা অফলাইন পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হয়। কন্টেন্ট রাইটিং অনেকের কাছে আর্টিকেল রাইটিং নামেও পরিচিত।

কন্টেন্ট রাইটিং প্রায় সকলের কাছে পরিচিত শব্দ হলেও অনেকেই আমরা কন্টেন্ট রাইটিং কি সেসম্পর্কে বিস্তারিতভাবে খুব কমই জানি। তবে কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় তৈরি হওয়ার পর থেকে মানুষ এসম্পর্কে জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কখনো কি কেউ চিন্তা করেছিল যে বই প্রকাশ না করে বিভিন্ন ছোট ছোট কন্টেন্ট লিখেও আয় করা সম্ভব হবে? মনে হয় না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত বেশি বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনভঙ্গী এবং সেইসাথে কাজের বিস্তৃতি।

বর্তমানের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, কর্মজীবী মানুষ সবাই এখন কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে চায়। আর তাদের জন্য চমৎকার একটি কাজ হলো কন্টেন্ট রাইটিং।

তাই কন্টেন্ট রাইটিং এ ক্যারিয়ার যারা গড়তে চান তাদের জন্যই আজকের গাইডলাইন, যেখানে কন্টেন্ট রাইটিং কি, কিভাবে কন্টেন্ট রাইটার হওয়া যায়, রাইটার এর কাজ, যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো ইন-শা-আল্লাহ।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

কন্টেন্ট কি | What is Content?

কন্টেন্ট হলো তথ্য, ধারণা এবং বার্তাগুলোর একটি সংকলন যা লিখিত, ভিজ্যুয়াল কিংবা শ্রবণযোগ্য ফরম্যাটে তৈরি করা হয়।

কন্টেন্ট মূলত তিন ধরনের:

১. অডিও কন্টেন্ট: ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে যে কন্টেন্ট তৈরি করা হয় তাকে অডিও কন্টেন্ট বলে। উদাহরণ: রেডিও, পডকাস্ট, এফএম, ইত্যাদি।

২. ভিডিও কন্টেন্ট: ভিডিও ধারণ করে কোন নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য তৈরি করা কন্টেন্টকে ভিডিও কন্টেন্ট বলে। যেমন: MP4, MKV ফরম্যাটের ফাইল।

৩. লিখিত কন্টেন্ট : পঠনযোগ্য আকারে নির্দিষ্ট টার্গেট পাঠকের জন্য প্রকাশিত কন্টেন্টকে লিখিত কন্টেন্ট বা Text Content বলে। যেমন: বই, ব্লগ, সংবাদপত্র, চিঠি, ইত্যাদি।

৪. ইমেজ কন্টেন্ট: বর্তমানে ছবিকেও (Image) কন্টেন্ট হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

সহজভাবে বললে, আপনি এখন যে লেখাটি পড়ছেন সেটিই মূলত লিখিত কন্টেন্ট। অন্যদিকে ইন্টারনেট জুড়ে কোটি কোটি ফটো রয়েছে, যেগুলোকে বলা হয় ইমেজ কন্টেন্ট। ইউটিউব প্লাটফর্মে যেসব ভিডিও দেখি সেসবই ভিডিও কন্টেন্ট। এবং একইভাবে গান এক ধরনের অডিও কন্টেন্ট।

কন্টেন্ট রাইটিং কি | What is Content Writing?

কন্টেন্ট রাইটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা, রচনা ও ওয়েব কন্টেন্ট সম্পাদনার প্রক্রিয়া।

সহজ কথায়, কন্টেন্ট রাইটিং হলো অর্থপূর্ণ, সহায়ক, এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠকদের পদক্ষেপ নিতে ইনফ্লুয়েন্স করা।

যদিও বেশিরভাগ লোকজন কন্টেন্ট রাইটিং বলতে আর্টিকেল রাইটিং বুঝে থাকেন। তবে ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ভিডিও স্ক্রিপ্ট, পডকাস্ট কিংবা অন্য কোনো প্লাটফরম যেমন টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের জন্য তৈরি কন্টেন্টও কন্টেন্ট রাইটিং এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকৃতপক্ষে, কন্টেন্ট রাইটিং সকল ধরণের কন্টেন্ট ফর্ম্যাটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেমন:

  • ভিডিও স্ক্রিপ্ট
  • ইমেল নিউজলেটার
  • মূল বক্তব্য
  • সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট
  • পডকাস্ট
  • ওয়েব কন্টেন্ট
  • ল্যান্ডিং পেজ
  • ইউটিউব ভিডিও ডেস্ক্রিপশান

কন্টেন্ট রাইটিং কত প্রকার?

মিডিয়ার উপর ভিত্তি করে কন্টেন্ট রাইটিংকে প্রধাণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

    1. অফলাইন কন্টেন্ট রাইটিং, এবং
    2. অনলাইন কন্টেন্ট রাইটিং

অফলাইন কন্টেন্ট রাইটিং

যখন কোনো পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিনে আর্টিকেল লিখবেন বা বই লিখবেন সেটা হবে অফলাইন কন্টেন্ট রাইটিং। এই রাইটিং করতে কোনো প্রকার ইন্টারনেট কিংবা অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। কেবল মাত্র খাতায় লিখে কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দিবেন, তারা আপনার লেখাকে প্রকাশ করবে।

অনলাইন কন্টেন্ট রাইটিং

অনলাইন প্লাটফর্মে প্রকাশিত কন্টেন্ট যা ইন্টারনেট ব্রাউজ করে দেখা, পড়া কিংবা শোনা যায়, সেসব কন্টেন্ট রাইটিংকে অনলাইন কন্টেন্ট রাইটিং বলা হয়।

আরো পড়ুন:  ইংরেজি আর্টিকেল লিখে আয় করার সাইট | মাসে লাখ টাকা আয়

ব্লগিং এর বদৌলতে বর্তমানে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে লেখা প্রকাশ করা বেশ সহজ হয়েছে। তাছাড়া অফলাইন নির্ভর কোম্পানিগুলোও অনলাইনে আসায় দিন দিন এই মাধ্যমই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কন্টেন্ট এর ব্যবহারের উপর আবার অনেকভাবে বিভক্ত করা যেতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১২ ‍ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং হলো:

  1. ব্লগ রাইটিং
  2. অ্যাফিলিয়েট কন্টেন্ট রাইটিং
  3. ই-বুক রাইটিং
  4. টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং
  5. প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটিং
  6. একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং
  7. প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশান রাইটিং
  8. নিউজ কন্টেন্ট রাইটিং
  9. স্ক্রিপ রাইটিং
  10. ট্রান্সলেশন
  11. ট্রান্সক্রিপশন: অডিও ও ভিডিও থেকে টেক্সট রাইটিং
  12. কোন বই বা হার্ড কপি থেকে সফট কপি রাইটিং

কন্টেন্ট রাইটার এর কাজ কি?

একজন কন্টেন্ট রাইটার হলেন একজন পেশাদার লেখক যিনি কোন ব্র্যান্ড এর পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করার জন্য তথ্যপূর্ণ এবং আকর্ষক আর্টিকেল বা কন্টেন্ট লেখেন।

একজন কন্টেন্ট রাইটার সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো লিখিত কিংবা ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট (ব্লগ রাইটিং থেকে শুরু করে প্রেস রিলিজ) তৈরি করার চেষ্টা করেন।

স্বাভাবিকভাবেই কন্টেন্ট রাইটার এর প্রথম কাজ লেখালেখি করা। তবে, যেহেতু কন্টেন্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, তাই কন্টেন্ট রাইটারদের কাজেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

কন্টেন্ট রাইটার

১. এসইও (SEO) কন্টেন্ট রাইটার: বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে টপ পজিশনে নিয়ে আসার জন্য লেখাকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করে লিখতে হয়।

২. ব্র্যান্ড জার্নালিস্ট: ব্রান্ড বা ব্যবসার প্রসারে প্রয়োজনী সম্পর্কিত আর্টিকেল

৩. অ্যাডভার্টাইজিং কপিরাইটার: বিজ্ঞাপনের জন্য স্লোগান, শর্ট স্ক্রিপ্ট, ইতাদি

৪. সোশ্যাল মিডিয়া রাইটার: বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পোস্ট তৈরি

৫. টেকনিক্যাল রাইটার: টেকনিক্যাল রাইটার মূলত কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে লিখে থাকেন। যেমন, কম্পিউটার বা মোবাইলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এক্সপার্ট হেল্প।

অনেকেই আছেন যারা লেখালেখি করাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। যারা পেশাদার রাইটার তারা সাধারনত কোনো ওয়েবসাইটে কিংবা কোনো পত্রিকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে লেখালেখি করেন, সহজ কথায় এটাই তাদের জব।

তবে অফলাইনেই যে শুধু পেশাদার হিসেবে লেখালেখি করা যায় এটা ঠিক না। অনেক প্লাটফর্ম আছে যেখানে আপনি অনলাইন পদ্ধতিতে পেশাদার রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। যার মধ্যে বর্তমানে ব্লগিং এবং ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং অন্যতম।

একনজরে একজন কন্টেন্ট রাইটার পেশা
সাধারণ পদবী কন্টেন্ট রাইটার, কন্টেন্ট ডেভেলপার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
বিভাগ মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন ও সেলস; গণমাধ্যম
প্রতিষ্ঠানের ধরন প্রাইভেট ফার্ম / কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং
ক্যারিয়ারের ধরন ফ্রিল্যান্সার, পার্ট-টাইম ও ফুল-টাইম
লেভেল এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা ০ – ১ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন ৳২০,০০০ – কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠান সাপেক্ষ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স ২২-৩০ বছর
মূল স্কিল গবেষণা করার দক্ষতা, আকর্ষণীয়ভাবে লিখতে জানা
বিশেষ স্কিল অনলাইনে লেখার পারদর্শিতা

কন্টেন্ট রাইটিং এর সুবিধা

কন্টেন্ট রাইটার কেন হবো এই প্রশ্নের উত্তর আসলে একেকজনের জন্য একেক রকম হবে। আপনি হয়তো আপনার প্যাশান থেকে করবেন, অন্যদিকে আমি ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ চাই, তাই লিখছি। তবে তিনটি কারণ কমন বলে মনে হয়,

  • সৃজনশীল কাজ
  • রিমোট জবের সুবিধা
  • প্রফিটেবল ক্যারিয়ার

একটা কন্টেন্ট লেখার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করে অনেক বেশি জানতে হবে, তারপর নিজের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের একটি কন্টেন্ট তৈরি হয়। এজন্য ধৈর্য্য শক্তির পাশাপাশি সৃজনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে অনলাইনের সুবাদে কন্টেন্ট রাইটিং এর বেশিরভাগ কাজ ঘরে বসেই করা হয়। সুতরাং, ৯টা-৫টা জবের ঝামেলায় যারা যেতে চান না, তাদের জন্য এটা বেশ সুবিধাজনক কাজ।

কন্টেন্ট ইজ গ্রীণ! একটি কন্টেন্ট থেকে সারাজীবন ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে। যেমন, একটি ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল যতদিন পরই ভিউ হোক না কেন, সেখান থেকে ইনকাম হবেই।

কন্টেন্ট প্রকারভেদটা যদি খেয়াল করে থাকেন, তবে দেখবেন কন্টেন্ট ছাড়া ইন্টারনেট মিডিয়া অচল। তাই, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে বর্তমানে আর্টিকেল রাইটারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এমন অনেক জার্নাল আছে যেখানে একটি আর্টিকেল লেখার বিনিময়ে ২৫ থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়।

তাছাড়া, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটেও প্রতি আর্টিকেলের জন্য ৫০ থেকে ৩০০ এবং অভিজ্ঞতা ও রেটিং সাপেক্ষে ৫০০ ডলারেরও বেশি পাওয়া যায়।

এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, কন্টেন্ট রাইটিং করা উচিৎ কিনা!

কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

১. শিক্ষাগত যোগ্যতা

কন্টেন্ট রাইটিং কোনো বয়সের উপর নির্ভর করে না। যেকোনো বয়সের যে কেউ এই কাজ করতে পারবে। কিন্তু আপনি যদি পেশাদার হিসেবে লেখালেখি করতে চান নূন্যতম উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে হবে।

তবে, সংবাদপত্রে কাজ করার জন্য সাংবাদিকতায় স্নাতক থাকলে ভালো, তবে অন্য বিষয়ে স্নাতক থাকলেও চলবে, যদি আপনার লেখার হাত ভালো হয়।

আরো পড়ুন:  ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি | কিভাবে ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যায়

২. বয়স

লেখক হওয়ার জন্য বয়স কোনো সমস্যা না। আপনি স্বাধীন ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোতে যেকোনো বয়সেই লিখতে পারেন। কিন্তু, সম্পূর্ণ পেশাদার জবে প্রবেশ করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ২২ থেকে ২৩ উল্লেখ করা থাকে। তাছাড়া, ব্লগ থেকে ইনকাম করার অন্যতম উপায় অ্যাডসেন্স ১৮ বছরের কম বয়সীদের অনুমোদন দেয়না।

৩. ইংরেজি দক্ষতা

ফ্রিল্যান্স রাইটারদের জন্য অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। কারণ ফ্রিল্যান্সার ডট কম, ফাইভার কিংবা আপ-ওয়ার্ক এগুলো কোনোটাই বাংলাদেশের সাইট নয়, আর যেহেতু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট নয়, তাই এখানে বাংলা ভাষা ব্যবহার করার সুযোগও নেই।

৪. গ্রামার

বাংলা কিংবা ইংলিশ যে ভাষাতেই কন্টেন্ট লিখতে যান না কেন, সেই ভাষার গ্রামার সম্পর্কে খুব ভালো দক্ষতা রাখা জরুরী। লেখায় ভুল গ্রামার লিখলে পাঠক লেখা পড়তে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে।

৫. কম্পিউটার টাইপিং

আপনি যদি অনলাইন কন্টেন্ট রাইটিং করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার টাইপিং জানতে হবে।

তাছাড়া একজন রাইটার হতে হলে লেখালেখির পাশাপাশি পড়াশোনার অভ্যাস থাকা খুবই জরুরী। ভবিষ্যতে আপনার লেখার মান উন্নতি করতে এই অভ্যাসটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে।

কন্টেন্ট রাইটিং এর নিয়ম

কন্টেন্ট লেখার নিয়ম কন্টেন্ট টাইপের উপর নির্ভর করে। যেমন: একটি এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার সময় সার্চ ইঞ্জিন এবং পাঠক দুজনের কথা মাথায় রেখেই সাজাতে হয়।

অন্যদিকে, কোনো পত্রিকায় ফিচার আর্টিকেল প্রকাশ করার জন্য শুধুমাত্র পাঠককে সেরা টেস্ট দেওয়ার চিন্তা করতে হয়।

আবার, কপিরাইটিং এর সময় আকর্ষনীয় লাইনেই ফোকাস করা হয়। তবে একটি সুন্দর কন্টেন্ট লেখার নিয়ম হিসেবে নিচের এই কয়েকটি পয়েন্ট অবশ্যই টাচ করতে হয়:

  • বিষয়বস্তু নির্ধারণ
  • আপনার অডিয়েন্স কী চায়, তা বের করুন
  • রিসার্চ করুন
  • কোন কোন পয়েন্ট কভার দিবেন, সেগুলো নোট করুন
  • আর্টিকেলের ভূমিকায় মনোযোগ দিন
  • সম্পর্কিত হেডলাইন ব্যবহার করুন
  • প্যারাগ্রাফ গুলো বড় না করে ছোট ছোট করুন
  • লেখা সম্পাদনা করুন

কন্টেন্ট রাইটিং এর নিয়ম

কন্টেন্ট রাইটিং এর ভবিষ্যত কেমন?

কন্টেন্ট রাইটাররা সাধারণত বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুযোগ পান। পার্সন টু পার্সন, কোম্পানী, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট, এজেন্সি থেকে শুরু করে ৯ টা ৫ টা জব। উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের ক্ষেত্র হলো:

  • ব্লগ
  • বিজ্ঞাপনী সংস্থা
  • পত্রিকা ও ম্যাগাজিন
  • ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস

লক্ষ্য করে দেখুন, প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ব্লগ গুগলে ইন্ডেক্স করাচ্ছে, যাদের কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য লেখক দরকার।

প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসায় বিজ্ঞাপনের কাজ যেমন বাড়ছে, একইভাবে বিজ্ঞাপন সংস্থাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পত্রিকা যেখানে শুধু হার্ড কপি ছিল, সেটাও অনলাইনে এসে গেছে এবং ক্রমশ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছেই।

বিল গেটস তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন, Content is King. বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে তা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করা যায়। যেকোনো মিডিয়া, যেকোনো কোম্পানী ও কাজে কন্টেন্ট এর বিকল্প নেই।

সুতরাং, কন্টেন্ট এবং কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা যে সামনে আরো বৃদ্ধি পাবে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

কন্টেন্ট রাইটিং কিভাবে শিখবো?

Before you speak, listen. Before you write ― William Arthur Ward

গভীরভাবে দেখলে এখানেই একজন ভালো লেখক হওয়ার কৌশল খুঁজে পাবেন। হ্যা, অবশ্যই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। একটু জানার চেষ্টা করলেই দেখতে পারবেন, পৃথিবীর বিখ্যাত সকল লেখকেরই পড়ার নেশা ছিল।

পড়ার পাশাপাশি এক্সপার্ট হেল্প নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঘরে বসেই অনলাইন কন্টেন্ট রাইটিং কোর্স করা যায়। ব্লগিং শুরু করতে চাইলে ফ্রি এসইও কোর্স রয়েছে। রাইটিং শেখার জন্য বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কোর্স এবং দেশীয় অনলাইন কোর্স করার প্লাটফর্মে ফ্রি এবং পেইড কোর্স করে নিতে পারেন।

এছাড়া, এসইও এবং কন্টেন্ট রাইটিং স্পেশালিস্ট Muntaseer Rahman এর তৈরি Content Writing Course আপনার জন্য সেরা অপশন হতে পারে। কারণ, এই সাইটের কোর্সগুলো শুধুমাত্র কন্টেন্ট রাইটিং শেখানোর উপর ফোকাস করে তৈরি করা হয়েছে।

কোর্সটি নতুন এবং কন্টেন্ট রাইটিং এ অভিজ্ঞ উভয় প্রকার রাইটারদের জন্যই ইফেক্টিভ। ২৫ টি লেসনে ভাগ করা ৬ ঘন্টার এই কোর্সটি করার আগে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং এর উপর ৩টি ফ্রী লেসন দেখতে পারবেন, সেইসাথে কোর্স এনরোল করার পর কোন কারণে বাতিল করতে চাইলে সম্পূর্ণ মানিব্যাক পাওয়া যাবে, তবে সেজন্য এনরোল করার ২৪ ঘন্টার মাঝে আবেদন করতে হবে।

কন্টেন্ট রাইটিং কোর্সটির মেইন কিছু ফিচারস:

  • লাইভ আর্টিকেল রাইটিং
  • প্রয়োজনীয় টুলস এর ব্যবহার
  • রিসোর্স শিট লাইফটাইম এক্সেস
  • প্রাইভেট ফোরামে সমস্যা তুলে ধরার সুযোগ
আরো পড়ুন:  সহজ ১০টি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ | ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করা যায়

কোর্সের ভিডিওগুলো দেখে শেষ করার পর আর্টিকেল লেখার উপর আপনাকে এসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। ইন্সট্রাক্টর আর্টিকেলটি চেক করে তিনি তার নিজস্ব মতামত ও মূল্যায়ন আপনাকে জানাবে, যা পরবর্তীতে আপনার লেখার মান ভালো করতে সহায়ক হবে।

কন্টেন্ট রাইটিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

এই উত্তর দেওয়াটা বেশ কঠিন। এটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে যেমন: আপনি কি ধরনের কন্টেন্ট লিখছেন, কোন ফরম্যাট অনুসরণ করছেন, বাংলা নাকি ইংরেজি কন্টেন্ট, কোন কোম্পানীতে জয়েন করছেন, ইত্যাদি।

তবে আপনার ধারণা দেওয়ার স্বার্থে বলতে পারি, একজন কন্টেন্ট রাইটার গড়পড়তা মানের কোনো পোর্টালে কাজ করলে শুরুতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পান।

একজন ব্লগার ৬ মাস পর থেকেই মোটামুটি ইনকাম শুরু করেন, যেখানে বাংলায় ১০০০ ভিজিটরের জন্য গড়ে ১-২ ডলার পান, সেখানে ইংরেজিতে ৫০ থেকে ১০০ ডলার কিংবা তাঁরও বেশি হতে পারে।

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার শুরুতে হয়তো ৫ ডলারে কাজ শুরু করেন, তবে ৪-৫টি কাজ করার পরেই প্রতি কাজের জন্য ২০ থেকে ৩০ ডলার নেন এবং এক বছরের মাঝে সেটি ১০০ ডলারে পৌছে যেতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটিং জব কোথায় খুঁজবেন?

প্রথমত আমি বলবো আপনি ব্লগিং শুরু করুন। কারণ, একবার লিখে ফেললে আপনি সারাজীবন প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন। তবে এসব করতে না চাইলেও সমস্যা নেই, কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগই রয়েছে। কনটেন্ট রাইটিং জব খোঁজ করুন,

১. ফেসবুক গ্রুপ

বর্তমানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কন্টেন্ট রাইটারদের ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে ক্লায়েন্ট তার কাজের ডিটেইলস লিখে পোস্ট দিয়ে লেখক হায়ার করেন।

২. ফেসবুক জব

ফেসবুকে বর্তমানে জব অপশন আছে। এখানে কন্টেন্ট রাইটিং, আর্টিকেল রাইটিং, রাইটার লিখে সার্চ করলেই বিভিন্ন জব পোস্ট চলে আসবে। তাছাড়া, আপনি কোন কোন জব করতে পছন্দ করেন, ফেসবুকে সেসব লিস্ট এড করে দিলে এধরনের সকল জব পোস্ট নোটিফিকেশন আকারে চলে আসবে।

৩. চাকরির সংবাদপত্র

পার্ট-টাইম কিংবা ফুল টাইম জব করার জন্য চাকরির খবরে চোখ রাখুন বিভিন্ন কোম্পানি লেখক চেয়ে সার্কুলার দিয়ে থাকেন।

৪. বিভিন্ন পত্রিকা

আজকাল পত্রিকাগুলো খবরের পাশাপাশি বিভিন্ন ফিচার ও টেকনিক্যাল কন্টেন্টও পাবরিশ করে, যার পুরোটাই আসে ফ্রিল্যান্স লেখকদের কাছ থেকে। সেক্ষেত্রে লেখা পাঠাতে তাদের মেইল এড্রেস কালেক্ট করে লেখা পাঠান।

৫. ব্লগ

বিভিন্ন ব্লগে গেলেই দেখবেন write with us বা আমাদের সাথে লিখুন বলে একটা পেজ আছে। আপনি চাইলেই তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন পড়ে লেখা শুরু করতে পারেন। ইংরেজিতে এমন কিছু ব্লগের লিস্ট দেখে নিন যারা ২৫ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত সম্মানী দেয়।

এছাড়া, যদি আপনার ইংরেজি দক্ষতা কম থাকে, কিংবা বাংলাতেও সেরকম লেখালেখির অভিজ্ঞতা নেই, সেক্ষেত্রে বাংলা ব্লগগুলোর মাধ্যমে শুরু করতে পারেন।

এসবের বাইরে ফ্রিল্যান্সিং সাইট এবং লিঙ্কডইন থেকেও কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ পাওয়া যায়।

কন্টেন্ট রাইটিং করে টাকা আয় করার বাংলাদেশি সাইট

কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার জন্য বাংলাদেশে অনেক ভালো সাইট আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো:

  • প্রথম আলো অনলাইন কন্টেন্ট
  • জে-আইটি আর্নিং প্রোগ্রাম
  • প্রতিবর্তন (বাংলা ও ইংরেজি)

প্রথম আলো অনলাইন কন্টেন্ট

আমরা সবাই প্রথম আলো পত্রিকার সম্পর্কে জানি। প্রথম আলোতে যারা প্রফেশনাল লেখালেখি করেন তারা অনেক টাকা পান। কিন্তু যারা প্রফেশনাল নয় তাদের জন্যও আছে সুবর্ণ সুযোগ।

প্রথম আলো ওয়েবসাইটে গিয়ে একাউন্ট খুলে লগ-ইন করলে তৈরি হয়ে যাবে আপনার ড্যাশবোর্ড। সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের লেখা সাবমিট করতে পারবেন।

জে-আইটি আর্নিং প্রোগ্রাম

এটাও একটা কন্টেন্ট রাইটিং মূলক সাইট। এখানে আপনি সর্বনিম্ন ৪০০ শব্দে লিখতে পারবেন। যখন আপনার লেখায় এক হাজার ইউনিক ভিউ হবে তখন আপনাকে ৫০০ টাকা দেয়া হবে এভাবে দু হাজার ভিউ‌ হলে ১০০০ টাকা।

আপনি গুগলে গিয়ে জে-আইটি সম্পর্কে সার্চ করলে অনেক তথ্য পাবেন। জেআইটি ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরি করে লগ-ইন করলে আপনার একাউন্ট সচল হয়ে যাবে।

এছাড়াও প্রতিবর্তন, টেকটিউনস, বাংলা ভাইবসহ বিভিন্ন সাইটে লিখে আয় করতে পারবেন। বাংলা গল্প কবিতা লিখে ইনকাম করার সাইটে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই।

কন্টেন্ট রাইটিং ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ

বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোতে যারা কপিরাইটার হিসেবে কাজ শুরু করেন, সিনিয়র (৪-৫ বছর পর) হওয়ার সাথে সাথে সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার কিংবা মার্কেটিং ম্যানেজার পদে উন্নতি পাবার সুযোগ রয়েছে।

সংবাদপত্রগুলোতে সাধাণত কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, এবং পরবর্তীতে সিনিয়র রাইটার, সাব-এডিটর, সিনিয়র এডিটর হয়ে চীফ এডিটর পর্যন্ত পদোন্ননি পাবেন।

তবে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটারদের ক্ষেত্রে পদ বলে কিছু নেই। সময়ের সাথে সাথে রেটিং এবং লেখার মান বৃদ্ধি পাবে, সেই সাথে আপনার চাহিদা এবং কাজের মূল্যও স্বাভাবিকভাবে অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাবে, বা বাড়ানোর সুযোগ পাবেন।

কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে পরিশেষ

তাহলে আমরা কন্টেন্ট রাইটিং কি, রাইটার এর কাজ কি, কিভাবে কন্টেন্ট রাইটার হওয়া যায়, ও কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিলাম।

কন্টেন্ট রাইটিং শুরু করার আগে আপনার জন্য একটি কথাই বলবো, লেখালেখি সবার জন্য সফলতা বয়ে আনে না। আপনি যদি নতুন নতুন জ্ঞান আহরণ করতে এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করতে প্রবল আগ্রহী হন, তাহলে আপনাকে কন্টেন্ট রাইটিং দুনিয়ায় স্বাগতম।

4 thoughts on “কন্টেন্ট রাইটিং কি? কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায়”

  1. ভাইয়া কন্টেন্ট রাইটিং বুঝলাম।আর এটাও বুজছি যে, যেকোনো একটা বিষয়ের উপর লিখে দক্ষ হতে হবে।এখন আমার প্রশ্ন হলো ডিজিটাল মার্কেটিং কন্টেন্ট নিয়ে।ডিজিটাল মার্কেটিং এ তো অনেক ধাপ রয়েছে,অনেক বিষয়বস্তু আছে এটার মধ্যে।তো ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য কি রকম কন্টেন্ট রাইটিং লাগবে?

    মনে করেন আমি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে ফ্রিল্যান্সিং করবো।আমাকে বিভিন্ন বায়ার বিভিন্ন ব্রান্ড বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ দিবে।তখন তো আমার একটা বিষয়ের উপর রাইটিং এর দক্ষ হলে চলবে না।বিভিন্ন ব্রান্ড বা প্রোডাক্ট এর বা এমন কিছুর কন্টেন্ট রাইটিং দিলো যেইটা আমি তখনই প্রথম নাম শুনলাম।তখন যদি না পারি তাহলে তো পুরো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে আমার।
    আশা করি আমার কথা বুঝতে পারছেন।
    প্রশ্ন আবার বলছি

    কন্টেন্ট রাইটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য কন্টেন্ট রাইটিং এক কি না?
    এক না হলে তখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য কন্টেন্ট রাইটিং কিভাবে লিখবো?

    1. pratiborton support

      ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য কন্টেন্ট রাইটিং এর পাশাপাশি কপি রাইটিং ও লেখা হয়। কপি রাইটিং হলো কম কথায় পণ্যের আকর্ষণীয় বিবরণ। অন্যদিকে কন্টেন্ট রাইটিং আরো বিস্তারিত বিষয় আলোচনায় নিয়ে আসে।
      এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য যখন আপনি লেখার জন্য অফার পাবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই গ্রাহক পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। দ্বিতীয়ত, আপনাকে রিসার্চ করা শিখতে হবে, যেন ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
      নতুন কোন পণ্য, সার্ভিস নিয়ে লেখার জন্য আপনার বায়ারকে ভালো কন্টেন্ট উপহার দিতে আপনার প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top