ওয়েব ডেভেলপমেন্ট; কিভাবে ওয়েব ডেভেলপারদের আয় হয়?

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ওয়েব ডেভেলপারদেরআয়

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? কিভাবে ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যায়! কিংবা ওয়েব ডেভেলপারদের আয় কত হয়, কিভাবে ইনকাম করেন? এজাতীয় প্রশ্ন আমরা প্রায়শই শুনতে পাই। কারণ ফ্রিল্যান্সিং এখন রয়্যাল ক্যারিয়ার অপশন, আর এই মার্কেটের রাজা বলা যায় ওয়েব ডেভেলপারদের। তাই web developement এবং ওয়েব ডেভেলপারদের নিয়ে প্রশ্ন থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

ওয়েব ডেভলপার হচ্ছেন এমন একজন প্রোগ্রামার যিনি world-wide-web এর জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে থাকেন। একজন ওয়েব ডেভেলপার জানেন কিভাবে একটি ওয়েবসাইট এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈরি করতে হয়। তিনি এটাও জানেন কিভাবে একজন ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইটের লেআউট পরিবর্তন করতে হয়, ফিচার এবং ফাংশান সংযুক্ত করতে হয়।

আমাদের এই আর্টিকেলে মূলত ওয়েব ডেভেলপারদের আয় কিভাবে হয় সেবিষয়ে জানা, কিন্তু তার আগে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? কিভাবে একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যায় সেবিষয়েও জেনে নেওয়া দরকার।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো ইন্টারনেট কিংবা প্রাইভেট নেটওয়ার্কের জন্য ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা। সহজ কথায়, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো ওয়েবসাইট তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষন করা।

এটি এমন একটি কাজ যা পর্দার আড়ালে করা হয়, কোনো ওয়েবসাইট ভিজিটরস এই কাজ দেখতে পারেন না।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট Vs ওয়েব ডিজাইন

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়েব ডিজাইনের মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্য আমরা একটি গাড়ি তৈরি করার প্রসেস এর সাথে তুলনা করবো।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট VS ডিজাইন

  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: কোনও ওয়েব ডেভেলপার প্রযুক্তিগত দিকগুলি থেকে ত্রুটিমুক্ত সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী গাড়ি নির্মানের জন্য বিভিন্ন কম্পোনেন্ট যেমন, ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন, চাকা ইত্যাদি সঠিকভাবে ব্যবহার করে রাস্তায় নামানোর জন্য প্রস্তুত করেন এবং কোনো সমস্যা থাকলে তা ঠিক করেন।
  • ওয়েব ডিজাইন: ওয়েব ডিজাইনার গাড়ির নান্দনিক নকশার জন্য (সিটের স্বাচ্ছন্দ্য, ড্যাশবোর্ডের বিন্যাস ইত্যাদি), পাশাপাশি গাড়ী চালনা এবং গাড়িতে চড়ার সুবিধার জন্য কাজ করেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায় এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে আয় করার উপায় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন আমাদের আজকের প্রসঙ্গ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এ ফিরে যাই।

কিভাবে ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যায়?

ওয়েব ডেভেলপার হওয়া খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। এটি হতে গেলে যে কলেজ ডিগ্রি থাকতেই হবে এমনটি নয়। যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্টরা ওয়েব ডেভলপার হতে পারেন। যদি কারো কোন কলেজ ডিগ্রী না থাকে বা স্টাডি গ্যাপ থাকে তবুও ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো খুব বেশি ম্যাটার করে না। ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার ক্ষেত্রে স্কিল বেশী জরুরী এবং কাজ শেখার জন্য ধৈর্য ও একাগ্রতা থাকতে হবে।

তাই আপনি যদি ওয়েব ডেভলপার হয়ে আয় করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে এখনি বিভিন্ন সাইট থেকে কাজ শিখে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন।

তিন ধরনের ওয়েব ডেভলপার আছেন। যথা,

  1. ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপার
  2. ব্যাক এন্ড ওয়েব ডেভেলপার
  3. ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার

ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?

Front-End ডেভলপার মূলত একজন ডিজাইনার। তারা বিভিন্ন অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ডিজাইন করে থাকে। ফটো ইলাস্ট্রেটর বা স্ক্রেচ অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং সেই ডিজাইনকে তারা এইচটিএমএল (HTML) সিএসএস (CSS) জাভাস্ক্রিপ্ট (JAVA) এ কনভার্ট করে থাকে যেটা ফাংশনাল না। ওয়েবসাইট ডিজাইন করা এবং সেটাকে কোডিংয়ে কনভার্ট করা একজন Front-End Developer এর কাজ।

ব্যাক এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?

Back-End ডেভলপারদেরও Front-End ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। কিন্তু Back-End ডেভলপাররা সাধারণত ডিজাইনের কাজ করেন না। তারা Front-End  ডেভলপারদের কাছ থেকে কোডটি নিয়ে সেটিকে ডায়নামিক করে অর্থাৎ একটি ওয়ার্কিং ওয়েবসাইট বা অ্যাপে পরিনত করে। যেটার একটি এডমিন প্যানেল থাকে সেখান থেকে ওয়েবসাইট এর যাবতীয় কনটেন্ট পরিবর্তন করা যায় এবং বিভিন্ন কন্টেন্ট যুক্ত করা যায়।

এই ডেভলপারদের কোডিং নলেজ এর প্রয়োজন হয় না। তাকে কোডিংয়ে গিয়ে কনটেন্ট পরিবর্তন করতে হয় না। একটি এডমিন প্যানেল থাকবে যেখান থেকে তিনি ডাইনেমিক্যালী ইমেজ এবং টেক্সটগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন এবং ওয়েব পেজে যে ফরমটি আছে সে ফরমের মাধ্যমে ভিজিটররা মেসেজ পাঠাতে পারবে।

ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?

Full Stack ডেভলপাররা মূলত অলরাউন্ডার। তারা ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট দুটি কাজই করে থাকেন। একটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব দিকে তাদের নলেজ আছে এবং একটি ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ কাজ তারা একাই করে থাকেন।

আরো পড়ুন:  সেরা ৩ বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট | বিল্যান্সার, সচ্ছল ও কাজখুঁজি

আপনি চাইলে এই তিন ধরনের ডেভলপারের মধ্যে যেকোনো একটি হতে পারেন। যেটার ওপর আপনার স্কিল বেশি ভালো থাকবে সেটিকে আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। তবে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জন করে কাজ শুরু করতে পারলে আপনার ক্যারিয়ার দ্রুত ডেভেলপ করতে পারবেন।

ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য কি কি শিখতে হবে?

ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ শেখার জন্য বেশী কিছুর প্রয়োজন হয় না। একটি মিডিয়াম মানের যেকোনো কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ এবং নেট কানেকশন থাকলেই চলবে। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখতে এক্সপেন্সিভ কোন ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর দরকার হয় না। সাধারণ বা ব্যাসিক একটি কম্পিউটার ও নেট কানেকশন থাকলে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন। প্রথম দিকে আপনার স্মার্ট ফোন দিয়েও কাজ শুরু করতে পারবেন।

ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে কোন কোন ল্যাংগুয়েজ শিখতে হবে?

কম্পিউটার আমার আপনার মতো বাংলা ইংরেজি বুঝেনা। তার সাথে কথা বলার জন্য, তাকে কোনো কিছু  করতে বলার জন্য কম্পিউটারের ভাষাতেই কমান্ড দিতে হবে। এজন্য একজন ওয়েব ডেভেলপারকে বেশ কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে হয়। যেমন:

HTML Language

ওয়েব ডেভেলপার হতে গেলে প্রথমে আপনাকে HTML শিখতে হবে। HTML একটি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ। এটি দিয়ে একটি ওয়েবপেজকে জাস্ট মার্ক করা হয়। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে HTML একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যাঙ্গুয়েজ। একটি ওয়েবসাইটকে ভাগ করা এবং কোথায় কনটেন্ট ডিসপ্লে হবে সেটার জন্য আপনাকে অবশ্যই HTML শিখতে হবে।

CSS Language

CSS দিয়ে মূলত ওয়েব পেজকে ডিজাইন করা হয়। একটি ওয়েব পেজের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার কি হবে, ছবি গুলো কেমন হবে, লেখাগুলো কি ফ্রন্টের হবে এই সকল ডিজাইনের বিষয় গুলো CSS দিয়ে করা হয়। CSS দ্বারা আপনি HTML দিয়ে যেগুলো মার্ক করেছেন ওই পেজের ওয়েবসাইটগুলো আপনি ডিজাইন করবেন যাতে ওয়েবপেজটি দেখতে সুন্দর লাগে। যার কারণে ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে HTML এর পরে CSS এর কাজ শিখতে হবে।

JavaScript and jQuery

JavaScript একটি scripting অথবা programming language যা সাধারনত কোন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়। একজন সফল ওয়েব ডেভলপার হতে গেলে আপনাকে জাভাস্ক্রিপ্ট শিখতে হবে। জাভাস্ক্রিপ্টে মাধ্যমে অনেক কাজই করা যায়।

Responsive Design

ভিজিটররা একটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন ডিভাইস থেকে ভিজিট করে থাকেন। ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব এই সকল ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইট ভিজিট করা হয়। সেজন্য ওয়েব সাইটের কনটেন্ট গুলো যাতে সব ডিভাইসে সুন্দরভাবে দেখা যায় তার জন্য এটাকে রেস্পন্সিভ করতে হয়। অন্যথায় যারা স্মার্টফোন বা ট্যাব থেকে ভিজিট করেন তারা ওয়েবসাইটটিকে প্রপারলি দেখতে পারেন না। কিন্তু যখন ওয়েবসাইটটিকে রেস্পন্সিভ করা হয় তখন সকল ডিভাইস থেকে ভিজিটররা সুন্দরভাবে কনটেন্ট গুলো দেখতে পারবেন। যার কারনে আপনাকে এই রেস্পন্সিভ ডিজাইন ফান্ডামেন্টাল শিখতে হবে।

Bootstrap

Bootstrap অনেক জনপ্রিয় একটি কনটেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক। বিভিন্ন ক্লায়েন্ট বা  কোম্পানি তাদের প্রোজেক্টের জন্য এই ফ্রেমওয়ার্কটি রিকমেন্ড করে থাকেন। এজন্য এই Bootstrap টি আপনাকে ভালোভাবে শিখতে হবে। HTML, CSS, JavaScrip, Responsive এগুলো আগে শিখলে এই Bootstrap ফ্রেমওয়ার্কটি  আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে।

এরপর আপনাকে একটি server-side স্ক্রিপ্ট ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে হবে। যাতে আপনার ডিজাইন করা অ্যাপ বা ওয়েবসাইটিকে আপনি ডাইনামিক এবং ফাংশানাল করতে পারেন। অনেকগুলো সার্ভার স্ক্রিপ্ট ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যেমন, PHP, RUBY, PYTHON, NODE JS এর যেকোন একটি ভালভাবে শিখে ওয়েব ডেভেলপার এর কাজ শুরু করতে পারবেন।

তবে সবগুলো একসাথে শিখতে যাবেন না। তাহলে দেখা যাবে কোনটাই আপনি ঠিকভাবে ডেভেলপ করতে পারছেন না। প্রথমে PHP শিখতে পারেন এটি অনেক ভালো ভালো কোম্পানি ইউজ করে থাকে এবং দ্রুত কাজের সুযোগ তৈরি হয়।

WordPress or Laravel

server-side ল্যাঙ্গুয়েজ পিএইচপি শেখার পরেই আপনি ওয়ার্ডপ্রেস অথবা Laravel শিখবেন। তবে আমি রিকমেন্ড করব ওয়াডপ্রেস শেখার জন্য কারণ ওয়ার্ডপ্রেসে দিয়ে বেশি কাজ করা হয়। অনলাইন জগতে যতগুলো ওয়েবসাইট আছে তার ৪০ শতাংশ ওয়েবসাইট WordPress দিয়ে অপারেট হচ্ছে এবং যতগুলো ই-কমার্স ওয়েবসাইট অনলাইনে আছে তার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ই- কমার্স ওয়েবসাইট WooCommerce দিয়ে চলছে। অনলাইনে ওয়ার্ডপ্রেসের একটি বড় মার্কেট আছে। যেটার ওপর প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। সে কারণে আপনি পিএইচপি এর পরে ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিলে অনেক ভাল কাজের সুযোগ পাবেন।

Git

Git হচ্ছে একটি সফটওয়্যার ভার্সন কন্ট্রোল সিস্টেম। যেকোনো সফটওয়্যার কে রেগুলার ব্যসিস আপডেট করতে হয় ওই সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের স্কিল আরো বেশি স্মুথ করার জন্য। তাই আপনি Git শিখবেন আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইট এর ভার্সন কন্ট্রোল করার জন্য। Git শেখার আরও একটি সুবিধা হচ্ছে আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন না কেন আপনি আপনার টিমের সাথে রিমোটলি কাজ করতে পারবেন। প্রোগ্রামিং করতে হলে আপনাকে অবশ্যই Git শিখে নিতে হবে।

UI/UX Design

UI/UX Design দিয়ে মূলত ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর বা স্ক্রেস এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে সফটওয়্যার ডিজাইন করা হয়। অনেকে শুধুমাত্র UI/UX ডিজাইন শিখেন কিন্তু কোডিং টা শিখেন না। আবার অনেকে শুধু কোডিং টা শিখে কিন্তু UI/UX Design শিখেন না কিন্তু আপনি যদি একজন ডেডিকেটেড ওয়েব ডেভলপার হতে চান তাহলে UI/UX Design এবং কোডিং দুটোই শিখবেন। কিভাবে একটি ডিজাইনকে কোড়িংয়ে কনভার্ট করতে হয় সেটি শেখাটা জরুরি। তাহলে একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে অন্যদের থেকে আপনার ভ্যালুটা বেশি থাকবে।

আরো পড়ুন:  সহজ ১০টি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ | ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করা যায়

ওয়েব ডেভেলপার হিসাবে নিজেকে ডেভেলপ করার জন্য আপনি বেসিক SEO শিখে নিতে পারেন। একটি ওয়েবসাইটকে গুগল রাঙ্কিং এ আনার জন্য সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে সেই ওয়েব সাইটের কনটেন্ট। তারপরও সেই ওয়েবসাইট কিভাবে কোডিং করা হয়েছে তা অনেকটাই নির্ভর করে গুগল রাঙ্কিং এর উপরে। আপনি যদি কোন ক্লায়েন্ট বা কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে অবশ্যই সেটাকে SEO ফ্রেন্ডলি করতে হবে,  যেন গুগোল রাঙ্কিং  এ আপনার ক্লায়েন্টের সাইটি চলে আসে। এ জন্য SEO ফ্রেন্ডলি স্টেমেল ট্যাগ গুলো কোথায় আপনি ব্যবহার করবেন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে।

এছাড়াও ফটোসপ সম্পর্কে একটি বেসিক ধারণা নিতে হবে। আপনি Front-End ডেভেলপার হন বা Back-End ডেভেলপার হন ফটোশপ সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। যাতে করে ডিজাইনাররা ডিজাইন সাবমিট করলে আপনি বিভিন্ন এলিমেন্ট গুলোকে আলাদা আলাদা করে নিতে পারেন এবং সেগুলো সফট্ওয়ারে ইন্ডিকেট করতে পারেন।

ওয়েব ডেভেলপারদের আয় কিভাবে হয়?

একজন web developer যে শুধু ওয়েবসাইট বিল্ড করে দিয়েই টাকা আয় করতে পারেন, এমনটা কিন্তু নয়। ওয়েব ডেভেলপারদের আয় করার জন্য আরো অনেকপথ অনলাইনে খোলা রয়েছে। আসুন জেনে নেই আপনি কিভাবে একজন সফল ওয়েব ডেভলপার হিসাবে ইনকাম করতে পারবেন।

১। বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজের সুযোগ

আপনি যদি ভালোভাবে কাজ শিখে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন তাহলে আপনার স্কিলের উপর বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পাবেন এবং ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যে কোম্পানি আপনাকে হায়ার করবে সেই সফটওয়্যার কোম্পানির ওয়েবসাইট গুলো আপনি ম্যানেজমেন্ট করে দিবেন। অথবা সেই কোম্পানির ক্লায়েন্টদের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরী করে দিবেন। আপনি যদি কাজে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারবেন তাহলে ভালো কোম্পানিগুলো থেকে খুব সহজেই কাজ পেয়ে যাবেন।

২। ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আয়

কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের সবসময় অনলাইনে প্রচুর ডিমান্ড থাকে। এমন কোন কোম্পানি নেই যাদের ওয়েবসাইট এর প্রয়োজন নেই। ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানির ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ এর প্রয়োজন। কারণ অনলাইনে তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসগুলোকে প্রেজেন্ট করার জন্য এবং কাস্টমারদের কাছে সেল করার জন্য। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে ওয়েব ডেভেলপারদের ডিমান্ড রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আপনি একজন ফ্রিল্যান্স ডেভেলপার  হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানিকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে অনলাইনে দারুন একটি ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে পারেন।

৩। সফটওয়্যার কোম্পানি লঞ্চ

আপনি নিজেই একটি সফটওয়্যার কোম্পানি লঞ্চ করে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। সফটওয়্যার রিলেটেড কাজগুলো বিভিন্ন কোম্পানিকে অফার করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি ক্যারিয়ার গড়ে ভালো ইনকাম করতে পারবেন। কাজটি যদি মনোযোগ দিয়ে শিখেন তাহলে অবশ্যই সফল হবেন।

৪। ওয়েব হোস্টিং বিজনেস

ওয়েবসাইটের কনটেন্ট গুলো যেমন HTML, PHP, ইমেজ ও ভিডিও সহ বিভিন্ন ধরনের ওয়েব কনটেন্ট রাখার জন্য ওয়েবসাইটে একটি স্পেস বা জায়গা দরকার হয় এবং কনটেন্টগুলো এমন একটি পিসিতে রাখতে হবে যার ২৪/৭ অনলাইন থাকবে। ওয়েব কনটেন্ট গুলো বুস্ট করা পিসিতে অনলাইন থাকলেই কেবল মাত্র ভিজিটররা ওয়েবসাইটটি দেখতে পাবেন। আর ওয়েব কনটেন্ট রাখার এই জায়গাটিকে বলা হয় ওয়েব হোস্টিং। হোস্টিং এর জায়গা যত বেশি হবে তত বেশি কনটেন্ট রাখা যাবে। হোস্টিংকে সার্ভারও বলা হয়। ডোমেইন এবং হোস্টিং অনলাইন জগতে অতিপ্রয়োজনীয় দুটি বিষয়। যেকোনো ওয়েবসাইটের নাম কে ডোমেইন বলা হয়। যারা হোস্টিং বিক্রয় করেন তারা ডোমেইনও বিক্রয় করে থাকেন। যে কেউ চাইলে একজন প্রোভাইডারের কাছ থেকে দুটোই কিনতে পারেন। আপনি যদি এই ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার হতে পারেন তাহলে হোস্টিং বিজনেস করে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৫। নিজস্ব প্রোডাক্ট বিক্রয়

ওয়েব ডেভলপার হিসাবে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের যে কোন প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। নিজের তৈরি বিভিন্ন কোর্স, ই-বুক, থিম, টেমপ্লেট ইত্যাদি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেল করতে পারবেন।

একজন ওয়েব ডেভেলপার  যদি একটি থিম বা টেমপ্লেট জনপ্রিয় করতে পারেন, তাহলে সেখান থেকেই তিনি যে পরিমাণ আয় করবেন, ভবিষ্যতে আর তার টাকা নিয়ে হয়তো চিন্তা করতে হবেনা।

আপনার কিংবা কোনো পপুলার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজস্ব প্রোডাক্ট সেল করে প্রতিমাসে ভালো একটি অ্যামাউন্ট ইনকাম করতে পারেন।

৬। ওয়েবসাইট বিক্রয়

অনলাইনে এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেগুলোতে আপনি চাইলে আপনার তৈরি করা নিজের ওয়েবসাইট টি সেল করে দিতে পারেন। এই বিজনেস অনেকেই করেন। প্রথমে নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটি পপুলার হওয়া পর্যন্ত ওয়েট করেন এবং ওয়েব সাইটটি কিছুদিন ইউজ করার পর পপুলার হয়ে গেলে বেশি দামে অন্য কোন কোম্পানির কাছে সেল করে দেয়। ওয়েবসাইট সেল করার জন্য অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। এমন একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে এম্পায়ার ফ্লিপার্স। এই প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট সেল করতে পারবেন। ওয়েবসাইট বিক্রয়ের জন্য flippa.com একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটা সেল করার মাধ্যমে ভালো টাকা ইনকাম করা যায়।

আরো পড়ুন:  অনলাইনে ইনকাম করার উপায় ২০২৩ | 18 Ways to Earn Money in Bangladesh

৭। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে খুব সহজেই মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত কোন একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করে দিয়ে সেই কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন পাওয়া। নিজের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগোল এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রচার করতে হয় এবং সেল করে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আপনার ওয়েবসাইট থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ভালো আর্ন করতে পারেন। তাদের প্রোডাক্ট এর একটি প্রাইজ দেওয়া থাকে সেটি সেল করে দিতে পারলে সেই কোম্পানির কমিশন দিয়ে থাকে। ওই কোম্পানির যতগুলো প্রোডাক্ট আপনার প্রচারের মাধ্যমে সেল হবে কতগুলো প্রোডাক্ট এর উপর আপনিও কমিশন পাবেন। একইসাথে আপনি এক বা একাধিক কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন এবং আপনি যদি অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট এর মত এমন বড় বড় কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।

৮। ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন

আপনি চাইলে ওয়েব ডেভেলপার হয়ে ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করে ইনকাম করতে পারবেন। যেমন ইউটিউবে ভিডিও মনিটরিং করা হয় এবং সেই ভিডিওতে অ্যাপ ভিউ/প্রদর্শন হয়। এর বিনিময়ে গুগল এবং ইউটিউব আমাদেরকে একটি পেমেন্ট দেয়। এরকম ভাবে যদি ওয়েবসাইট মনিটাইজ করা হয় সে ক্ষেত্রেও ওয়েবসাইট থেকে ভালো টাকা ইনকাম করা যাবে। ওয়েবসাইটস করার জন্য শুধুমাত্র যে গুগল অ্যাডসেন্স করতে হবে তা নয়। গুগল অ্যাডসেন্স ছাড়াও অনেক অ্যাড নেটওয়ার্ক আছে। এমন অ্যাড নেটওয়ার্ক দিয়ে ওয়েবসাইট মনিটরিং করার মাধ্যমে আপনি ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৯। স্পনসরশিপ (Sponsorship)

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আপনার যদি একটি পপুলার ওয়েবসাইট থাকে সেক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি আছে যারা আপনার ওয়েবসাইটে স্পন্সর করতে চাইবে। অর্থাৎ তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা আর্টিকেল এই ওয়েবসাইটে স্পন্সর হিসেবে রাখতে চাইবে এবং এর বিনিময়ে তারা আপনাকে একটি পেমেন্ট করবে। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে স্পনসরশিপ নিয়ে ইনকাম করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করে সেটি পপুলার হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। তাহলে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে প্রোডাক্ট বা আর্টিকেল স্পন্সার পাবেন এবং এটির মাধ্যমে ভালো ইনকাম করতে পারবেন।

১০। Sale Ad Space

একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হয়ে আয় করতে চাইলে আপনাকে একটি পপুলার ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। তাহলে আপনার এই ওয়েবসাইট এর বিভিন্ন অংশ বা অ্যাড স্পেস সেল করতে পারবেন। বিভিন্ন পপুলার ওয়েবসাইটগুলোতে স্পেস সেল হতে দেখা যায়। যে কোন নিউজ পেপারে দেখবেন যে বিভিন্ন অ্যাড দেওয়া হয়। এই অ্যাড স্পেস গুলো মূলত ডিরেক্ট সেল করা হয় বিভিন্ন কোম্পানির কাছে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যামাউন্ট তারা পেয়ে থাকেন।এই অ্যাড স্পেস গুলো সেল হয় সাপ্তাহিক, মাসিক বা বাৎসরিক চুক্তির ভিত্তিতে। আপনিও চাইলে আপনার ওয়েব সাইটে অ্যাড স্পেস সেল করে ইনকাম করতে পারবেন।

একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার কত টাকা আয় করেন?

ওয়েব ডেভেলপারদের আয় কিভাবে হয়, তা তো মোটামুটি জেনে নিলেন। এখন নিশ্চয়ই আপনার তাদের মাসিক ইনকামও জানতে ইচ্ছা করছে।

আপনি যদি একজন পিএইচপি বা ওয়াডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশী কোন কোম্পানিতে কাজ করেন, সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে ন্যূনতম ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন। সাধারনত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো খুব বেশি সেলারি দিতে পারে না। কারণ বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো টাকায় আয় করেন। যার জন্য তারা টাকায় স্যালারি দেয়। সেক্ষেত্রে আপনি যদি কোন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করেন তাহলে সেই কোম্পানি থেকে ডলারে স্যালারি পাবেন।

যেহেতু তারা ডলারে আয় করেন। সেক্ষেত্রে আপনি একজন প্রফেশনাল ও সফল ওয়েব ডেভলপার হিসেবে ওই কোম্পানিগুলো থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার ডলার স্যালারি এক্সপেক্টেশন রাখতে পারেন। যদিও এই এমাউন্ট গুলো ১০০% ফিক্সড না। এটি কোম্পানি ভেদে এবং কাজের ভিত্তিতে স্যালারি কম বা বেশি হতে পারে। একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভলপার প্রতি মাসে কয়েক হাজার ডলার ইনকাম করতে পারেন খুব সহজেই।

যারা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন বা অন্য কোনো ভাবে হায়ার এ কাজ করেন তারা প্রতি ঘন্টা হিসেবে অভিজ্ঞতা এবং রেটিং এর উপর ভিত্তি করে প্রতি ঘন্টায় ২০ থেকে ৪০ ডলার পান।

যদি ওয়েব সাইট ডিজাইন কন্ট্রাক্ট নেন, তবে ডিজাইন এবং ফাংশনের উপর ভিত্তি করে ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ বা তারও বেশি নিয়ে থাকেন।

আমরা ওয়েব ডেভেলপারদের ইনকামের যে হিসাবটা এখানে দিলাম, সেটা সাধারণ গড় হিসাব। কারো সাথেই এটা একদম মিলে যাবে এটা চিন্তা করা অস্বাভাবিক। অভিজ্ঞতা, রেটিং এবং মার্কেটিং এর উপর ইনকাম কম বেশি হতে পারে।

শেষ কথা

ওয়েব ডেভেলপাররা মূলত ওয়েব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকেন। অনলাইনে যতগুলো ওয়েবসাইট ভিজিট করা হয় সবগুলো আসলে ওয়েব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট। যেমন prothomalo.com, whyorwhen.com, YouTube.com ইত্যাদি।

একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ এর দুটি অংশ থাকে,  ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন। ব্যবহারকারীরা সাধারণত ডিজাইন টা দেখে থাকেন কিন্তু ডেভেলপমেন্ট দেখতে পায় না। আপনি যদি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে সঠিক কোর্স করে কাজ শুরু করতে পারেন।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ দিয়ে কাজ শিখে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি, Web Developer কত প্রকার, ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য কি কি শিখতে হবে এবং  কিভাবে হয় সেসব বিষয়ে আশা করি পরিষ্কারভাবেই বুঝতে পেরেছেন, তারপরেও যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top