ই-কমার্স টিউটোরিয়াল ও ২০টি অনলাইন বিজনেস আইডিয়া

ই-কমার্স টিউটোরিয়াল

ই-কমার্স ব্যবসা কি? ই কমার্স বলতে কি বুঝায়? E-commerce কিভাবে শুরু করবেন? এসব নিয়ে অনেকেই জানতে চান। শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে বর্তমানে অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্ট’র মত ছোট-বড় অনেক অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট গুলো আজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।

ই-কমার্স ব্যবসা এমন এক ধরনের ব্যবসা যেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে ইনকাম করা হয়। বর্তমান সময়ে অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা।

আপনিও চাইলে ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে অনলাইন জগতে নিজের জায়গা করে নিতে পারেন। তবে একজন সফল ই কমার্স ব্যবসায়ী হতে ভালো আইডিয়া এবং অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন সেসব নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি থাকতে হবে। তবেই কেবল ই-কমার্স ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা করতে পারেন।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

ই কমার্স ব্যবসার চাহিদা ও ভবিষ্যৎ

করোনাভাইরাসের এই সময়টাতে যেকোনো ধরনের ব্যবসাতে অনেক খারাপ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। কিন্তু অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসা সেক্ষেত্রে অনেক লাভজনক অবস্থানে ছিল।

বিশ্বজুড়ে আজ ই-কমার্স ব্যবসার চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে করে ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং অনলাইনে কেনাকাটা করা লোকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সেক্ষেত্রে ই-কমার্স ব্যবসার চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সুতরাং আমাদের ব্যবসা করার জন্য নতুন সুযোগ সামনে তৈরি হয়ে আছে। তাই আপনিও চাইলে এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওয়েবসাইট খুলে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

ই-কমার্স ব্যবসার আগে যা জানা জরুরী

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু বিষয় জানা থাকলে খুব সহজেই আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

প্রথমত আপনার একটি ল্যাপটপ অথবা ডেস্কটপ থাকতে হবে এবং ইন্টারনেট সংযোগ রাখতে হবে। এছাড়াও ডোমেইন ও হোস্টিং থাকতে হবে। ই-কমার্স বিজনেস করার ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইট থাকা বাধ্যতামূলক।

ই-কমার্স ব্যবসা

Ecommerce ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই আপনাকে নির্দিষ্ট একটি পণ্য বা সেবা বাছাই করে নিতে হবে এবং কম-বেশি মার্কেটিং (Marketing) সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

অনলাইনে আপনার বিক্রয় করা পণ্য বা সেবা কিভাবে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবেন সেই ব্যবস্থা সম্পর্কে আগেই জেনে নিবেন। এই বিষয়গুলো জেনে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।

অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন এটি নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন কিন্তু চিন্তার তেমন কোন কারণ নেই। খুব অল্প পুঁজি নিয়ে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

কি ধরনের পণ্য নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনার বিনিয়োগর পরিমাণ।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন

প্রত্যেক ব্যবসায় ঝুঁকি থাকে। তেমনি ই-কমার্স ব্যবসাও ঝুঁকি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, ই-কমার্স এমন একটি ব্যবসা যেটা সম্পর্কে সঠিক প্রসেস অনুসরণ করে শুরু করতে পারলে সফল হবার সম্ভাবণা অনেক বেশি।

আপনি ই-কমার্স স্টোরকে কিভাবে মেইন্টেন্ট করছেন এবং কতটা গ্রাহক ফ্রেন্ডলি সেবা দিচ্ছেন তার ওপরই মূলত নির্ভর করে আপনার বিক্রি তথা ইনকাম এর পরিমাণ কেমন হবে।

যদি সঠিক ধারণা এবং প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করেন তাহলে অবশ্যই সফল হবেন। আসুন জেনে নেই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে যা যা প্রয়োজন হয় সে সম্পর্কে-

১। ডোমেইন

একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য অবশ্যই আপনাকে ডোমেইন নেম (Domain Name) নির্বাচন করতে হবে। ডোমেইন মূলত আপনার ওয়েবসাইটের নাম।

ডোমেইন নেমটি সঠিকভাবে নির্বাচন করাটা জরুরী, কারণ এটিই আপনার ব্যবসার নাম হবে। তাই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সাথে মিল রেখে এই নামটি সিলেক্ট করতে পারলে ভালো হয়।

তবে কাজের সাথে মিল নেই এমন নামও সিলেট করতে পারেন। যেমন- অ্যাপেল। অ্যাপেল নামটির সাথে তাদের কার্যক্রমের কোন মিল নেই। আপনিও এমন আকর্ষণীয় এবং ছোট নাম সিলেক্ট করতে পারেন।

এছাড়াও ভালো কিওয়ার্ড অনুযায়ী ব্র্যান্ড নেম সিলেক্ট করতে পারেন। এজন্য গুগল সার্চের মাধ্যমে গুগোল প্যানেলের সাহায্য নিতে পারেন এবং কিওয়ার্ডের ওপর বেজ করে আপনার ডোমেইন নামটি পছন্দ করে নিতে পারেন।

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য একটি পপুলার ওয়েবসাইট তৈরি করতে ডোমেইন নামটি আকর্ষণীয় হওয়া জরুরী।

বাংলাদেশের কিছু অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম হলো:

  • বিক্রয়.কম
  • আইটিবাজার২৪
  • হটঅফারবিডি.কম
  • প্রিয়শপ.কম উপহারবিডি, ইত্যাদি

২। হোস্টিং

ই-কমার্স যেহেতু সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ডোমেইন যেমন প্রয়োজন তেমনি হোস্টিংও প্রয়োজন।

একটি পপুলার ওয়েবসাইট তৈরি করতে ডোমেন হোস্টিং দুটোই লাগবে। হোস্টিং (Web Hosting) মুলত যেখানে ওয়েবসাইটের ডাটাগুলো সংরক্ষন করা থাকে।

প্রফেশনাল ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করার জন্য সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করতে পারাটা জরুরি। হোস্টিং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে-

  • কেমন মানের একটি ওয়েবসাইট আপনি তৈরি করতে চাচ্ছেন সেটা আগেই ঠিক করে নেওয়া
  • কি পরিমান ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে প্রবেশ করতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা রাখা
  • কি ধরনের টেকনিক্যাল বিষয় সমুহ আপনার ওয়েবসাইটে থাকবে
  • এবং আপনার বাজেট কত হবে
  • হোস্টিং সার্ভার স্পিড, সার্ভারের আপগ্রেড অপশন, সিকিউরিটি ফিউচার, কাস্টমার সাপোর্ট সিস্টেম

এছাড়াও, যে প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং নিচ্ছেন তাদের বিশ্বস্ততা, হোস্টিং প্যাকেজের দামসহ অন্যান্য সুবিধা সমূহ যাচাই বাছাই করে নিবেন।

যেহেতু প্রোডাক্ট ফিচার করতে অনেক ছবি প্রয়োজন হয়, তাই সার্ভার স্পিড ভালো না হলে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খারপ হবে। তাই গ্রাহক ধরে রাখতে দ্রুত গতির হোস্টিং নেওয়া উচিৎ।

প্রাথমিক অবস্থায় দেশের বাইরের হোস্টিং নিতে না পারলেও দেশের সেরা ওয়েবহোস্টিং কোম্পানীগুলো থেকে হোস্টিং নিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রেও ভিআইপি কিংবা ডেডিকেটেড প্যাকেজ নেওয়া উচিৎ।

৩। ওয়েবসাইট তৈরি

ই-কমার্স বিজনেস শুরু করতে এখন আমাদের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস। ওয়ার্ডপ্রেস এমন একটি সিএমএস যেটার মাধ্যমে কোনোরকম কোডিং নলেজ ছাড়াই অল্প সময়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।

ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করা হলে সেই ওয়েবসাইটটি খুব সহজেই ম্যানেজ করা যায়। ই-কমার্স বিজনেস এর জন্য আপনার ওয়েবসাইটটি ওয়াডপ্রেস দিয়ে তৈরি করলে বেশ কিছু সুবিধা আপনি পাবেন। যেমন-

  • ওয়ার্ডপ্রেসে আপনি হোস্টিংয়ের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী আনলিমিটেড প্রোডাক্ট এবং ফিচার যোগ করতে পারবেন
  • রেস্পন্সিভ সাইট তৈরি করা যায়, যেটি সকল ধরনের ডিভাইস এ সাপোর্ট করে
  • ওয়ার্ডপ্রেসে বিভিন্ন ধরনের অপশান এবং কাস্টমাইজেশন এর সুযোগ রয়েছে। যা আপনি খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারবেন।
  • ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে খুব কম খরচে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়
আরো পড়ুন:  পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া ; ১০ টি লাভজনক পাইকারি ব্যবসা

একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সাধারণত ওয়েব ডেভেলপার হায়ার করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের ওয়েবডেলপার টিমকে দায়িত্ব দিতে পারেন

৪। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অ্যাপস তৈরি

ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে অ্যাপস থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি অ্যাপ থাকলে ক্রেতারা খুব সহজে আপনার কাছ থেকে পণ্য অর্ডার এবং পেমেন্ট করতে পারবেন এবং এটির মাধ্যমে অর্ডার ট্রাকিং করতে পারবেন। আপনার পণ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করলে অটোমেটিক্যালি এটি আপনার অ্যাপস এ আপলোড হয়ে যাবে।

বর্তমানে আমরা যতগুলো বড় বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট দেখি যেমন- দারাজ, ইভালী, আলিবাবা, আলীএক্সপ্রেস, ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন ইত্যাদি এদের প্রত্যেকেরই ওয়েবসাইটের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপস রয়েছে। তারা তাদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি পণ্য সেল করে থাকেন।

বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই অ্যাপসটি তৈরি করতে আপনার কোনো কোডিং নলেজ থাকা লাগবে না।

আপনাদের সুবিধার জন্য এমন অনেক অ্যাপস ডেভলপাররা আছেন যারা বর্তমানে রেডি কিছু কোড তৈরি করে রেখেছেন। যেগুলো খুব কম খরচে আপনি কিনতে পারবেন এবং এর লোগো, ইমেজ, টেক্সট ইত্যাদি পরিবর্তন করে আপনার স্বপ্নের অ্যাপসটি তৈরি করে নিতে পারবেন।

তবে আপনি চাইলে ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর কিছুদিন পরেও অ্যাপ লঞ্চ করতে পারেন।

৫। মার্কেটিং

ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে ভালো মার্কেটিং করতে জানতে হবে। অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে ভালো মার্কেটিং করা করাটা জরুরী। আপনি যত ভালো মার্কেটিং করতে পারবেন ততই আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর ভিজিট করবেন এবং তত বেশি আপনার পণ্য সেল হবে। এজন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো মার্কেটিং এ বেশি খরচ করে থাকেন।

ই-কমার্স বিজনেস এর সফল হওয়ার জন্য সঠিকভাবে মার্কেটিং করা প্রয়োজন। ই-কমার্স বিজনেস এর কিছু নিজস্ব মার্কেটিং প্ল্যান আছে।

প্রথমে আপনার ওয়েবসাইটকে গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। কোন ব্যক্তি আপনার ওয়েবসাইটটি কে গুগল সার্চ করলে যাতে সে খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইটটি পেয়ে যায়।

আপনার ওয়েবসাইটে অবশ্যই একটি ব্লগ সাইট রাখবেন, যাতে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট করতে পারেন। এটিতে আপনি বিজনেস শুরুর এক্সপেরিয়েন্স অথবা আপনার পণ্য সম্পর্কে ব্লগে শেয়ার করতে পারেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং করার পাশাপাশি আপনার পণ্যের সাথে কিছু ফ্রি অফার অথবা অ্যাফিলিয়েশন সিস্টেম রেখে কম খরচে কাস্টমারদের কাছে পৌছাতে পারবেন।

ইকমার্স মার্কেটিং

এছাড়াও মার্কেটিং করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যতগুলো আছে সবটাই অবশ্যই ব্যবহার করবেন। ফেসবুক, টেলিগ্রাম, লাইকি, টুইটার এইসব অনলাইন প্লাটফর্মে আপনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে সক্ষম হবেন।

৬। পণ্য সিলেকশন

প্রফেশনাল ভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বাজার যাচাই করে সঠিক পণ্যটি সিলেক্ট করে নিতে হবে। ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তি একসাথে একাধিক পন্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।

কিন্তু Ecommerce Business এর শুরুতে মার্কেট যাচাই করে যেকোনো একটি পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে। পণ্য সিলেক্ট করার জন্য আপনাকে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-

  • ই-কমার্স বিজনেসে আপনার প্রতিযোগী ব্র্যান্ডগুলো খুঁজে বের করা
  • তাদের অধিক পরিমাণ বিক্রিত পণ্যের তালিকা খুঁজে বের করতে হবে
  • সময় ও ক্রেতার চাহিদার সাথে মিল রেখে পণ্য নির্বাচন করতে হবে এবং
  • ব্যতিক্রম ধরনের পণ্য খুঁজে বের করতে হবে

এছাড়াও মৌসুমী পণ্য নিয়ে অনলাইন ব্যবসার চিন্তাও করতে পারেন। এগুলো খেয়াল রেখে ব্যবসা করলে আপনি সফল হতে পারবেন।

অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য পণ্য সিলেক্ট করতে আমাদের অনলাইন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে লেখা লিস্ট আর্টিকেলটিও পড়ে নিতে পারেন।

৭। সঠিক ভেন্ডার বা সাপ্লায়ার বাছাই করা

ই-কমার্স ব্যবসা পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সঠিক সাপ্লায়ার খুঁজে পাওয়া একেবারে সহজ কাজ নয়। এটার জন্য আপনাকে বেশ যাচাই-বাছাই করতে হবে।

ভেন্ডার মূলত যারা পণ্য বা পরিসেবা বিক্রয় করে থাকেন। ভেন্ডার সিলেক্ট করার আগে অবশ্যই আপনাকে তাদের পণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে এবং আগে যারা ওই ভেন্ডার এর কাছ থেকে পণ্য কিনেছেন তাদের মতামত জানতে হবে।

এছাড়াও তাদের পণ্যের মূল্য সম্পর্কে জানতে হবে এবং এই একই পণ্য অন্য ভেন্ডাররা কি দামে সেল করছেন এই সকল বিষয় জেনে ভেন্ডার নির্বাচন করতে হবে।

এছাড়াও আপনার নিকটবর্তী খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে অথবা লোকাল যেকোনো কোম্পানি থেকে পণ্য বাছাই করেও কিনতে পারেন। পুঁজি বেশি থাকলে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড বা শপ মালিক থেকে পণ্য নিতে পারেন।

আমাদের আশেপাশে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছেন, তারাও আপনার ভেল্ডার হতে পারেন। যেমন: ব্লক, বুটিকস ইত্যাদি তাদের থেকেও তুলনামূলক কম দামে পণ্য নিতে পারবেন।

এছাড়াও পণ্য কিনতে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেস যেমন-আলিবাবা, আলীএক্সপ্রেস এর মাধ্যমে পণ্য আনতে পারেন।

৮। ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করণ

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে অবশ্যই আপনাকে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে প্রথমে আপনাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লোগো তৈরি করতে হবে এবং ব্র্যান্ডের যে কোন একটি স্লোগান তৈরি করতে হবে।

যা দেখে ওয়েবসাইটে ভিজিটররা খুব সহজে আকৃষ্ট হন এবং আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য একটি প্রতিচ্ছবি মূলক কোম্পানি ভয়েস তৈরি করবেন।

ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে অবশ্যই ট্যাগ লাইন ব্যবহার করবেন। এটির মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা পাবে। সেই সাথে আপনার প্রতিষ্ঠানের সঠিক ইনফরমেশন প্রচার করতে হবে।

ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে আপনাকে নিয়মিত কাজ করতে হবে। ই-কমার্স ব্যবসা সফল ভাবে পরিচালনা করতে ব্রান্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৯। পেমেন্ট সিস্টেম

ই-কমার্স বিজনেস যেহেতু সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক তাই আপনাকে পেমেন্ট সিস্টেম ওয়েবসাইটে যুক্ত রাখতে হবে। যাতে ক্রেতারা পণ্য কিনে খুব সহজে আপনাকে পেমেন্ট করতে পারেন।

এজন্য আপনার ওয়েব সাইটে সব ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে অপশান রাখবেন। আপনি বিকাশ, নগদ অথবা রকেট নাম্বার এড করে রাখতে পারেন। যাতে কাস্টমাররা সহজভাবে প্রেমেন্ট করতে পারেন।

আপনি যদি পেমেন্ট গেটওয়ে অ্যাড করেন তাহলে কাস্টমাররা ভিসা ও মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে আপনাকে পেমেন্ট করতে পারবেন এবং পেমেন্ট এর জন্য ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার অ্যাড করে রাখতে পারেন। এছাড়াও আপনি ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেম রাখতে পারেন।

১০। ডেলিভারি সিস্টেম

যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ডেলিভারি সিস্টেম থাকে। তেমনি ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সিস্টেম অবশ্যই রাখতে হবে। এমনভাবে ডেলিভারি সিস্টেম রাখতে হবে যেন কাস্টমারের কাছে খুব সহজে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যায়।

আরো পড়ুন:  ঘরোয়া ব্যবসা | 15 Business Ideas From Home

Ecommerce ডেলিভারী সিস্টেম

সকলের সুবিধার জন্য আপনাকে অবশ্যই ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট ও ডেলিভারির ব্যাপারে শর্ত ও নিয়মাবলী উল্লেখ করতে হবে।

ডেলিভারির জন্য ভালো মানের কার্টুন, প্যাকেজিং ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট ডেলিভারি খরচ, পরিবর্তনশীল ডেলিভারি খরচ, ফ্রি ডেলিভারি এ ধরনের বিভিন্ন ডেলিভারি সিস্টেম রাখতে পারেন।

আপনার পুঁজি যদি বেশি থাকে তাহলে নিজস্ব ডেলিভারীদাতা রেখে পণ্য ডেলিভারি করতে পারে। তাছাড়াও, বাংলাদেশ বেশ কিছু কুরিয়ার সার্ভিস আছে যেমন- রেডেক্স, পেপারফ্লাই, ই-কুরিয়ার, ইউএসবি, ওমেক্স, সুন্দরবন ও এসএ পরিবহন। এসকল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ডেলিভারি করতে পারবেন।

ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া (২০ টি)

কি পণ্য বা সেবা নিয়ে আপনি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন সেটা হয়তো ভেবে পাচ্ছেন না। এখন আসুন এমন ২০ টি ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে জানব, যে ব্যবসা গুলো বর্তমান এবং ভবিষ্যত উভয়ের সময় চাহিদা থাকবে এবং আপনি সফলতার সাথে ব্যবসা করতে পারবেন।

(১) অনলাইন ফার্মেসি

চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষধ অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। এটির ব্যবহার মানুষের জীবনের অপরিহার্য। এর চাহিদা কখনো কম হয়না। আপনিও চাইলে একটি অনলাইন ঔষধালয় বা ফার্মেসি স্টোর দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বর্তমানে মানুষ ঘরে বসে পণ্য বা সেবা পেতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

অনলাইনের মাধ্যমে ওষধ কিনার চাহিদাও অনেক বেড়েছে এবং অনলাইনে প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী সংগ্রহ করে আপনি গ্রাহকদের সহায়তা করতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনে লাইভ চ্যাটিং করার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে অনলাইন ফার্মেসি ব্যবসায় উন্নতি করতে পারেন।

(২) পোশাকের বিজনেস

ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল বর্তমান অনলাইন জগতে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি ব্যাবসা আইডিয়া। জরিপে পাওয়া গেছে ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল ক্যাটাগরিটি ই-কমার্স ব্যবসার অনেক বড় একটি অংশ দখল করে রয়েছে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে পোশাক কেনার চাহিদা বেড়েছে এবং এটির চাহিদা পরবর্তীতে আরো বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। তাই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য পোশাক আপনার জন্য বেস্ট একটি আইডিয়া হতে পারে।

পোশাক পণ্যটি নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা করতে আপনার কোন শোরুম না থাকলেও চলবে। ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য একজন ডেলিভারি ম্যান রাখতে হবে। কাপড়ের গুণগতমান যদি ঠিক থাকে এবং নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক যদি অনলাইনে ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে ই-কমার্স বাণিজ্যে আপনি লাভবান হবেন।

(৩) শিশুদের খেলনা সামগ্রী

শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে খেলনা সামগ্রী ভালো ভূমিকা রেখে থাকে। শিশুদের খেলনা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মতই গুরুত্বপূর্ণ।

সকল পরিবারেই শিশুদের জন্য কিছু না কিছু খেলনা কেনা লাগেই। খেলনা সামগ্রী শিশুদের বিনোদনের বড় একটি মাধ্যম। যার কারণে অভিভাবকরা শিশুদের খেলনা সামগ্রীতে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে থাকেন।

তাই ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে শিশুদের খেলনা সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করা আপনার জন্য বেস্ট একটি আইডিয়া হতে পারে। শিশুদের খেলনা সামগ্রী নিয়ে আপনিও ই কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(৪) ব্যাগের বিজনেস

মানুষের জীবনে ব্যাগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। যা দৈনন্দিন জীবনের সব সময় কাজে লাগে। স্কুল, কলেজ, অফিস, ট্রাভেল সর্বক্ষেত্রে ব্যাগের ব্যবহার হয়। ব্যাগের চাহিদা কখনো শেষ হওয়ার নয়। মানুষের কাছে ব্যাগের প্রয়োজন সব সময় থাকবে।

দিন দিন অনলাইনে ব্যাগ কেনার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসা করতে চান, তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাগ বিক্রয় করে আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাজারে এটির চাহিদা সব সময় পাবেন।

(৫) বাইসাইকেল বিজনেস

পরিবহন সেক্টরে বাই সাইকেলের ব্যবহার দিন দিন খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শহরের মাত্রাতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বাইসাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে অনেকগুলো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ রয়েছে যাদের পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাইসাইকেলের ব্যবহার লক্ষণীয়।

বর্তমানে বাই সাইকেল বিক্রয়ের হারও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সব সময় বাইসাইকেলের ভালো চাহিদা ছিল, এবং রয়েছে। তাই আপনিও চাইলে একটি অনলাইন বাই সাইকেল স্টোর পরিচালনা করার মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(৬) বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ

নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ খুব বেশি প্রয়োজন। সকল আবাসিক বা ব্যবসায়িক ভবন নির্মাণ কাজে হার্ডওয়ার যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও প্রতিদিনের জীবন যাপনে প্রতিটি পরিবারের নানা ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ টুলসের ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন, ফ্যান, বাল্ব, সুইচ ইত্যাদি এমন অনেক ধরনের বৈদ্যুতিক পণ্য সামগ্রী দরকার হয়।

এই ধরনের সকল পণ্যের চাহিদা পূর্বেও যেমন ছিল এগুলোর চাহিদা বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। অনলাইনে হার্ডওয়ারের তেমন কোনো মানসম্মত স্টোর দেখা যায়না। ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি নতুন একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া বলা চলে।

তাই আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসা করে সামনে এগিয়ে যেতে চান তাহলে অনলাইনে একটি ইলেকট্রনিক্স হার্ডওয়ার স্টোর করে আপনার ই-কমার্স ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন।

(৭) নির্মাণ সামগ্রী

বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের মত নির্মান শিল্পও একটি জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ক্যাটাগরি। নির্মাণসামগ্রীর কাঁচামাল যেমন ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, স্টিল ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ ভবন নির্মাণ হচ্ছে তাতে বুঝা যায় এসব নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন আরো বাড়তে থাকবে।

যদি নতুন কোনো ব্যবসায়িক আইডিয়া নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে অনলাইনে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করা আপনার জন্য লাভজনক হবে।

নির্মাণসামগ্রী পণ্যের একটি অনলাইন স্টোর শুরু করে নির্মাণ কাঁচামাল গুলো সরবরাহকারী হিসেবে অনলাইনে আপনার ই-কমার্স ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

(৮) প্রসাধনীর ব্যবসা

বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে আপনি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রসাধনী সামগ্রীর বাৎসরিক চাহিদার হার ৫ থেকে ৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার, পারফিউম, মেকআপ ডিওডোরেন্ট সহ ওরাল কসমেটিকস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এগুলো মানুষের কাছে পছন্দের এবং বেশি ব্যবহার হওয়া পণ্য। নারীরা এ ধরনের পণ্য সমূহ বেশি ব্যবহার করে থাকেন। যার কারণে বাজারে এর চাহিদাও বেশি এবং এর চাহিদা কখনো কম হবে না। তাই আপনি সফলতার সাথে ব্যবসা করতে প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে আপনার ই-কমার্স ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন।

(৯) আসবাবপত্রের বিজনেস

প্রয়োজনে হোক বা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হোক প্রতিটি ঘরে আসবাবপত্রের ব্যবহার হয়ে থাকে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও আসবাবপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি চাহিদা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সেই সাথে অনলাইনে জিনিস কেনা চাহিদাও বেড়েছে।

কর্মব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচাতে বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটায় মানুষ বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন জীবনে আসবাবপত্রের অনেক প্রয়োজন। তাই ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এমন আসবাবপত্র নিয়ে আপনি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(১০) ঘরসজ্জা সামগ্রী

সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি ও জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে। তাই আসবাবপত্রের পাশাপাশি ঘরসজ্জার জিনিস ক্রয় করার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী প্রায় সকল শ্রেণীর পরিবারই ঘরসজ্জার জিনিসে কম বেশি অর্থ খরচ করেন।

আরো পড়ুন:  ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার ১০ উপায় 2023

চারুশিল্পের এমন নানা ধরনের পণ্যেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কম খরচে যেগুলো দিয়ে বাড়ি সুসজ্জিত করা যায়। এই সকল ঘরসজ্জার পণ্য নিয়ে আপনি ই-কমার্স বাণিজ্য পরিচালনা করে সফল হতে পারেন।

(১১) ইলেকট্রনিক্স পণ্য

বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স পণ্য খুব জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয়। মোবাইল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, স্মার্ট ঘড়ি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স এর জনপ্রিয় পণ্যসমূহ। বিভিন্ন ব্রান্ডের পরিবেশক হিসেবে যুক্ত হয়ে তাদের পণ্যসমূহ অনলাইনে অফার করার মাধ্যমে আপনি ই-কমার্স প্রক্রিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

যেহেতু এই ইলেকট্রনিক্স স্টোরটি অনলাইন ভিত্তিক হবে তাই অনেক বেশি খরচ করে আকর্ষণীয় স্থানে শো রুম ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যেকোন স্থানে থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাণিজ্য করা সম্ভব।

(১২) কম্পিউটার বিক্রয়

ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষ্যনীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং পেশার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে ঘরে ঘরে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার যত বৃদ্ধি পাবে ততোই কম্পিউটার কেনার চাহিদা বাড়তে থাকবে। তাই অনলাইনে ই-কমার্স বাণিজ্য শুরু করতে আপনি এই পণ্যটি নিয়ে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

(১৩) ব্যায়ামের সরঞ্জাম

মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শহরগুলোতে জিম্ বা ব্যায়ামাগার এর সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু এমন অনেক গ্রাহক আছেন যারা সময়ের অভাবে জিমে যেতে পারেন না। তাই ঘরে স্মার্ট ব্যায়াম সরঞ্জাম এর ব্যবস্থা করেন। যাতে নিজের সুবিধামতো ব্যায়াম করতে পারেন।

এ কারণে দিন দিন অনলাইনের মাধ্যমে ব্যায়াম সরঞ্জাম কেনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনিও চাইলে আমি ব্যায়াম সরঞ্জাম নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(১৪) রান্নাঘরের সরঞ্জাম

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত রান্নাঘরের সরঞ্জাম অপরিহার্য। প্রতিদিনের জীবন যাপনে এগুলো অতি প্রয়োজনীয়। বাজার গবেষণা সংস্থার জরিপমতে রান্নাঘরের সরঞ্জাম এর বার্ষিক চাহিদা ৬% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রান্নার কাজে যে সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই সকল নিয়েও সরঞ্জাম ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করা বর্তমানে অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন অনলাইনে পণ্য কেনা বা পেমেন্ট করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। যার কারণে অনলাইন ব্যবসা গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আপনিও চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে রান্নাঘরের সরঞ্জাম নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(১৫) গ্রোসারি স্টোর

নিত্য প্রয়োজনীয় যত খাদ্য পণ্য রয়েছে সেগুলো অনলাইনে অফার করার মাধ্যমে আপনি ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। আমাদের আশেপাশে যত স্টোর দেখি তার বেশিরভাগই গ্রোসারি স্টোর।

কোভিড-১৯ আসার পর থেকে ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটা অনেকাংশে বেড়েছে। বর্তমানে গ্রোসারির সকল পণ্য অনলাইনে বেশি অর্ডার করা হয়। গ্রোসারি পণ্যের চাহিদা সব সময় থাকবে।

আপনি চাইলে গ্রোসারি পণ্য নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি একটি লাভজনক ব্যবসায়িক আইডিয়া

(১৬) জুয়েলারি বিজনেস

অলংকার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অতি প্রাচীন একটি পদ্ধতি। বরাবরই নারীদের অলংকার এর প্রতি আকর্ষণ আছে। অনেকে ভবিষ্যতে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অলংকারে ভালো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চারুশিল্প বা পুথির অলংকারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে বিয়ে বা অন্য সকল অনুষ্ঠানের অলংকার ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।

যার কারণে অলংকার কেনার চাহিদা বেশি এবং এটির চাহিদা সব সময় থাকবে। তাই আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের অলংকার নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(১৭) ডিজিটাল পণ্য সামগ্রীর বিজনেস

ইন্টারনেটে যে কোন বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পণ্য ও সেবার প্রয়োজন হয়। যেমন সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স, স্টক ফটো, সাউন্ড ক্লিপ, ভিডিও টেম্পলেট সহ নানা টুলস এর সবগুলো ডিজিটাল পণ্য  সেবার মধ্যে পড়ে।

একটি অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এধরনের ডিজিটাল পণ্য সেবা দিয়ে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আপনিও ই-কমার্স বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারেন। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এটি আপনার জন্য একটি ভালো কমার্স বিজনেস আইডিয়া হতে পারে।

(১৮) বই ও স্টেশনারি স্টোর

শিক্ষাখাতে অনলাইন বুক স্টোর হতে পারে একটি অন্যতম উদ্যোগ। বই ও স্টেশনারি পণ্যের ব্যবহার সবসময় থাকবে। এর চাহিদা কখনো কমে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে ই-কমার্স সাইটে রয়েছে রকমারি.কম। দেশের সেরা ই-কমার্স সাইট গুলোর মধ্যে এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন বুক স্টোরও বটে।

অনলাইনে রকমারি.কম এ আপনি সব ধরনের বই পাবেন। তাই আপনিও যদি এই ধরনের একটি পপুলার ওয়েবসাইট তৈরি করে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে আপনিও সফল হতে পারবেন।

একাডেমিক বই এর পাশাপাশি অন্যান্য স্টেশনারি সরঞ্জাম দিয়ে অনলাইন বুক স্টোর শুরু করতে পারেন। এটি আপনার জন্য বেস্ট একটি ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে।

বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটা চাহিদা অনেক বেশি, যার কারণে আপনি সফলতার সাথে এই ই-কমার্স ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারবেন।

(১৯) ডোমেইন ও হোস্টিং বিজনেস

প্রথমেই যারা একটি অনলাইন ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাদের আগে ডোমেইন ও হোস্টিং প্লান কিনতে হয়। অনলাইন ওয়েবসাইটের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে এটির চাহিদা কখনো কমবেনা বরং দিন দিন এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আপনারা যারা ভালো একটি ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া খুজচ্ছেন, ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসা তাদের জন্য বেস্ট একটি আইডিয়া হবে।

ডোমেইন ও হোস্টিং বিজনেস করে অনেকেই আজ সফল। ই-কমার্স বিজনেসে ডোমেইন ও হোস্টিং একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।

আমরা আগেই যেমনটা জেনেছি, ডোমেইন মূলত একটি ওয়েবসাইটের নাম এবং সেই ওয়েবসাইটের তথ্য, ছবি, ভিডিওগুলো যেখানে সেভ হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে হোস্টিং।

একটি নতুন ওয়েবসাইটের জন্য এ দুটেই আবশ্যক। যার কারণে এটি চাহিদা সব সময় থাকবে। তাই ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়ে আপনি সফলতার সাথে ই-কমার্স বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবেন।

(২০) রিসেলার বিজনেস

বর্তমানে অনলাইন জগতে রিসেলার বিজনেস অন্যতম লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অনলাইনে এমন অনেক জনপ্রিয় কোম্পানি আছে যারা তাদের পণ্যসমূহতে রিসেলিং এর সুযোগ দেওয়া হয়। আপনি এমন কোনো কোম্পানিতে রিসেলার হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

রিসেলার বিজনেস করতে আপনার নিজের প্রোডাক্ট থাকার দরকার হয়না। অন্য কোম্পানীর প্রোডাক্ট ফিচার করে বিক্রি করতে হবে (কিছুটা বেশি দামে, অতিরিক্ত দামই আপনার লভ্যাংশ)। কোনো প্রোডাক্ট অর্ডার পেলে সেই অর্ডারটা মূল কোম্পানীকে পাঠিয়ে দেওয়াই আপনার কাজ।

ই-কমার্সে একসাথে এক বা একাধিক কোম্পানির সাথে রিসেলিং বিজনেস করার সুযোগ থাকে। তবে ভালো কোন কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলে সেই এক কোম্পানির হয়ে কাজ করেই মাসে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

রিসেলার বিজনেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের টিউটোরিয়ালটি পড়ে নিতে পারেন।

শেষ কথা

ই-কমার্স ব্যবসা কি, কিভাবে ই কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন এবং ২০ টি সেরা ও লাভজনক ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া এসকল বিষয় আশা করছি এতক্ষণে আপনি বুঝতে পেরেছেন।

যেকোনো ব্যবসায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে মার্কেট বুঝে সঠিক পণ্য নির্বাচন এবং সঠিকভাবে মার্কেটিং করাটা জরুরী। অনলাইনে সঠিক মার্কেটিং করার মাধ্যমে সহজভাবে আপনার পণ্য বা সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন।

বর্তমানে ইন্টারনেট বা স্মার্টফোনের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে সেই সাথে অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসার সুযোগও অনেক গুণে বেড়ে গেছে। এখন গ্রাহকরা ঘরে বসে বিভিন্ন ই কমার্স ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

পণ্য কিনে নেওয়া থেকে টাকা পেমেন্ট করা সবই এখন ঘরে বসে করা যায়। যার কারণে দিন দিন ই-কমার্স ব্যবসার চাহিদা বাড়ছে।

E-commerce ব্যবসা সফলভাবে করার জন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, অনলাইনে কোন পণ্যের চাহিদা গ্রাহকদের কাছে বেশি আছে।

উপরে উল্লেখিত ২০ টি ই-কমার্স ব্যবসার আইডিয়া থেকেও আপনার পছন্দের যেকোনো একটি আইডিয়া নিয়ে বিজনেস শুরু করতে পারেন।

সঠিক ধারণা নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা করলে অবশ্যই সফল হবেন। আপনার জন্য শুবকামনা।

2 thoughts on “ই-কমার্স টিউটোরিয়াল ও ২০টি অনলাইন বিজনেস আইডিয়া”

  1. “ব্র্যান্ডের যে কোন একটি স্লোগান তৈরি করতে হবে।” , স্লোগানের গুরুত্ব অনেক। একটি ভালো স্লোগান সবার থেকে আলাদা করে। ব্যবসা বাড়াতেও সাহায্য করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top