গরমে হিট স্ট্রোক ঝুঁকি : কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

হিট স্ট্রোক

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ডিহাইড্রেশন, ফুড পয়জনিং, সানবার্ন, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ বা শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি হিট স্ট্রোক হতে পারে।

আসুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক কি? এর কারণ ও লক্ষণগুলো কি কি, হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসাসহ সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

হিট স্ট্রোক (Heat stroke) কি?

হিটস্ট্রোক সম্পর্কে জানার আগে আমাদের হাইপারথার্মিয়া (hyperthermia) টার্মটির সাথে একটু পরিচিত হয়ে নেয়া জরুরি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপারথার্মিয়া বলতে দেহের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট কিছু শারীরিক জটিলতাসমূহকে বোঝায়।

একজন ব্যক্তি হাইপোথার্মিয়ায় তখনই আক্রান্ত হন যখন তার দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিছু বাহ্যিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়, এবং ফলশ্রুতিতে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

এখন আসা যাক হিট স্ট্রোক প্রসঙ্গে। হিটস্ট্রোক মূলত এই হাইপারথার্মিয়া বা তাপজনিত শারীরিক জটিলতারই একটি রূপ মাত্র, যা কিনা দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের পাশাপাশি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।

হাইপারথার্মিয়ার আরো দুটো রূপভেদের মাঝে হিট ক্র্যাম্প (heat cramps) এবং হিট এক্সোশন (heat exhaustion) অন্যতম।

তবে এই দুটো শারীরিক জটিলতার চেয়ে হিট স্ট্রোক তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবী করেন বিশেষজ্ঞরা, কেননা সঠিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা না দেয়া গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হবার ঝুঁকি প্রবল।

হিটস্ট্রোকের কারণ সমূহ কি কি?

১। দেহের তাপ শীতলীকরণে বাধা

মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়ার ফলে আমাদের দেহাভ্যন্তরে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেহ দুই প্রক্রিয়ায় সেই তাপ কমিয়ে এনে দেহ শীতলীকরণ করে

  • হয় সেই উৎপন্ন তাপ দেহত্বক জুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে, অথবা
  • ঘাম উৎপন্ন করে।

কিন্তু বেশকিছু বাহ্যিক পরিস্থিতিতে এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় দেহ বাধাপ্রাপ্ত হয়; যেমন প্রচন্ড তাপ, উচ্চ আর্দ্রতা কিংবা প্রখর রোদে শারীরিক প্রশিক্ষণ বা ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে।

এসব কারণে আমাদের দেহের তাপমাত্রা একটি বিপজ্জনক স্তর পর্যন্ত বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

২। অত্যাধিক উষ্ণ পরিবেশের সংস্পর্শে আসা

হিটস্ট্রোকের একটি প্রকারভেদ আছে, যা ননএক্সারশনাল (non-exertional) বা ক্লাসিক হিটস্ট্রোক (classic heatstroke) নামে পরিচিত।

সচরাচর উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার সংস্পর্শে দীর্ঘকাল থাকার কারণে একজন ব্যক্তি ক্লাসিক হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি সাধারণত বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক এবং যারা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে হবার সম্ভাবনা প্রবল।

৩। কঠোর শারীরিক পরিশ্রম ও ক্রিয়াকলাপ

এক্সারশনাল হিট স্ট্রোকের (Exertional heat stroke) ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির কঠোর শারীরিক পরিশ্রম বা কসরতই মূলত দায়ী।

সাধারণত অত্যাদিক গরম পরিবেশে ঘন ঘন শারীরিক পরিশ্রম করার ফলেই একজন ব্যক্তি এই ধরণের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

তবে হ্যাঁ, যারা এরকম পরিবেশে পরিশ্রম বা ক্রিয়াকলাপে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

৪। ডিহাইড্রেশন

সাধারণত ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোক একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

উচ্চতাপ কিংবা কঠোর পরিশ্রমের ফলে যখন আমাদের দেহ অত্যাধিক ঘামের ফলে পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তখন জরুরি ভিত্তিতে সঠিক মাত্রায় ফ্লুইড গ্রহণ না করা হলে রোগী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

৫। ভারী কাপড় পরিধান

সাধারণত মোটা ও ভারী কাপড় পরিধানের ফলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

৬। অ্যালকোহল সেবন

অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান ও অ্যালকোহল সেবনের কারনেও আমাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে।

হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়সমূহ

১। বয়স

আমাদের দেহ হিট স্ট্রোকের বিরুদ্ধে কতখানি লড়াই করে টিকে থাকতে পারে তা নির্ভর করে আমাদের দেহের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম (central nervous system) বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতার উপর।

এই দিকটি বিবেচনা করে নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে, হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আমাদের বয়সের তারতম্যের সাথে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতারও তারতম্য ঘটতে থাকে।

অপ্রাপ্তবয়স্কদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র তেমন উন্নত ও বিকশিত নয়। অপরদিকে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আমাদের দেহ তার নিজস্ব তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

শুধু তাই নয়, অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বেশি বয়স্ক-উভয় শ্রেণীর বয়সের মানুষই হাইড্রেটেড থাকার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখোমুখি হন। তাই হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে তারা সবচেয়ে বেশি থাকেন বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা।

২। হঠাৎ করে গরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়া

কোন স্থানে হঠাৎ করেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কিংবা কোন ব্যক্তি যদি হুট করেই কোন গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বা জায়গায় ভ্রমণ করেন, সেক্ষেত্রে উত্তপ্ত আবহাওয়া ও জলবায়ুর দরুন সেই ব্যক্তি হিটস্ট্রোক বা অন্যান্য তাপজনিত অসুস্থতার সম্মুখীন হতে পারেন।

এক্ষেত্রে, অকস্মাৎ এই আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হলে বেশ কিছুদিনের জন্য সকল প্রকার কায়িক শ্রম বন্ধ রাখাই শ্রেয়।  তবে হ্যাঁ, যদি উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল হতে পারে।

৩। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম

যারা সাধারণত কঠোর পরিশ্রম করেন, বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ, অ্যাথলেট বা জিমন্যাস্টরা হিটস্ট্রোকের আশঙ্কামুক্ত নন।

৪। পর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব

গরমে সিলিং ফ্যান সাময়িক স্বস্তি দিলেও খুব বেশি উত্তপ্ত পরিবেশের জন্য এয়ার কন্ডিশনিং তুলনামূলকভাবে উত্তম, কেননা এটি শুধু তাপমাত্রা কমিয়ে কক্ষকে শীতল করে তাই নয়, বরং আর্দ্রতাও কমিয়ে এনে দেহে স্বস্তি অনুভব করাতে সক্ষম।

৫। নির্দিষ্ট কিছু ঔষধপত্র

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন কিছু ঔষধ সেবন করি, যা শুধু আমাদের দেহকে ডিহাইড্রেটেটই করে দেয় তা নয়, বরং আমাদের দেহ তাপের প্রতি কতটা সংবেদনশীল বা কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে।

গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সচরাচর যেসকল ঔষধ সেবনের প্রতি আমাদেরকে সতর্ক থাকতে বলেন সেগুলো নিম্নরূপ:

  • ভাসোকনস্ট্রিকটরস (vasoconstrictors), যা আমাদের দেহের রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে দেয়।
  • বিটা ব্লকার ড্রাগস (beta blocker drugs), যা দেহের অ্যাড্রেনালিনকে (adrenaline) ব্লক করে রক্তচাপ প্রভাবিত করে।
  • ডিউরেটিকস (diuretics), যা আমাদের দেহ থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ লবন (সোডিয়াম) এবং পানি নিষ্কাশন করে ফেলে।
  • মানসিক রোগের লক্ষণ হ্রাস করতে ব্যবহৃত এন্টিডিপ্রেসেন্ট (antidepressants) বা এন্টিসাইকোটিকস (antipsychotics) টাইপ ড্রাগস।
  • এন্টিহিস্টামিন (antihistamines) এবং কিছু ডায়েট পিল।
  • বেশকিছু অবৈধ স্টিমুলেন্ট ড্রাগস, যেমন কোকেইন, অ্যাম্ফেটামাইন (amphetamine) ইত্যাদি।

আমরা সকলেই অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-এক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (attention-deficit/hyperactivity disorder) সম্পর্কে কমবেশি জানি, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এডিএইচডি (ADHD) বলে বেশি পরিচিত।

এই এডিএইচডি এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হওয়া কিছু স্টিমুলেন্ট ড্রাগসও হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রভাবক, তা হয়ত আমাদের অনেকেরই অজানা। (তথ্যসূত্র: মায়োক্লিনিক)

৬। নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক জটিলতা

নিম্নোক্ত শারীরিক জটিলতাসমূহে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি প্রবল:

  • হৃদরোগ
  • ফুসফুসজনিত সমস্যা
  • কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা
  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ওবেস বা স্থুলকায়তা
  • আন্ডারওয়েইট বা প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের অধিকারী
  • আয়েশী, স্থবির জীবনযাপন
  • পর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অভ্যস্ত না থাকা
  • পূর্বেও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার রেকর্ড থাকা, ইত্যাদি।

হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ

হিট স্ট্রোক এর মূখ্য লক্ষণ হচ্ছে দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি থাকা। তবে হ্যাঁ, অত্যাধিক তাপের কারণে জ্ঞান হারানোও অন্যতম প্রধান লক্ষণ বলে গণ্য করেন চিকিৎসকেরা।

হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ
হিট স্ট্রোক এর প্রধান লক্ষণসমূহ

এছাড়াও আরো যেসকল হিট স্ট্রোক সিম্পটমস বা লক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ:

  • মাথা ঘোরানো
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ত্বক শুষ্ক, গরম থাকা, ত্বকের আর্দ্রতা হারানো
  • প্রচণ্ড গরম থাকা সত্ত্বেও ঘামের অভাব
  • বমি বমি ভাব হওয়ার পাশাপাশি কখনো কখনো বমি হওয়া
  • দেহের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ত্বক লালচে বর্ণ ধারণ করা
  • শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত এবং অগভীর হওয়া, অর্থাৎ অনিয়মিত হওয়া
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া, যা শক্তিশালী বা দুর্বল কোনটাই হতে পারে। এর কারণ, প্রচণ্ড তাপের কারণে আমাদের দেহ শীতলীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, এবং এজন্য হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব সৃষ্টি হয়।
  • খিচুনি
  • পেশীর দুর্বলতা
  • মানসিক অবস্থা এবং আচরণের অকস্মাৎ পরিবর্তন যেমন মানসিক বিভ্রান্তি, দুঃশ্চিন্তা, হ্যালুসিনেশন, কথায় অস্পষ্টতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কোমা, ইত্যাদি।

হিট স্ট্রোক পরবর্তী শারীরিক জটিলতাসমূহ

শরীরের তাপমাত্রা কতটা দীর্ঘ থাকে, তার উপর নির্ভর করে জটিলতার ধরণ মারাত্মক হতে পারে। যেমনঃ

  • গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুলে ওঠা
  • নার্ভাস সিস্টেম প্রভাবিত হওয়া
  • মৃত্যু

হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া উচিত। তবে এরই মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া বাঞ্ছনীয়:

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত, শীতল স্থানে নিয়ে যাওয়া
  • শরীরের অতিরিক্ত গরম কাপড় সরিয়ে ফেলা
  • দেহের কুঁচকি, আর্মপিটসহ অন্যান্য গরম স্থানে বরফ সেঁক দেয়া
  • ব্যক্তিকে কিছুটা উঁচু করে কোন শীতল কক্ষে শুইয়ে রাখা
  • যেকোন উপায়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শীতল করা, দেহের তাপমাত্রা কমানো- সেটি মাথায় বা ঘাড়ে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে রেখে হতে পারে, কিংবা ঠান্ডা পানিযুক্ত টাবে রেখে গোসল বা ঠান্ডা পানিতে শাওয়ারের মাধ্যমেও হতে পারে।

মোটকথা, যতক্ষণ না দেহের তাপমাত্রা কমে স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে গা স্পঞ্জ করতে হবে।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার ‍উপায়

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের অন্যতম সহজ দিক হচ্ছে, এটি সহজেই অনুমেয়। গরম আবহাওয়া চলাকালীন নিম্নোক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো নেয়া থাকলে সহজেই হিট স্ট্রোক থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়সমূহ;

  • ঢিলেঢালা, হালকা ওজনের পোষাক পরিধান পরা এবং আঁটসাঁট অতিরিক্ত পোষাক পরা থেকে বিরত থাকা।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ সমৃদ্ধ পানীয় পান করা, যা দেহকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাম হয়, দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রাও বজায় থাকে এবং দেহে খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ হয়।
  • ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় যেমন চা, কফি, সোডা ওয়াটার, সফট ড্রিংকস, অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় ইত্যাদি পান থেকে বিরত থাকা। আপাতদৃষ্টিতে কোল্ড ড্রিংকস, কোল্ড কফি ইত্যাদি পানে আমাদের দেহ সাময়িকভাবে স্বস্তি অনুভব করে ঠিকই, কিন্তু তা ডিহাইড্রেশনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকাও পালন করে।
  • দিনের যে সময়টিতে তুলনামূলকভাবে কম গরম তাপমাত্রা থাকে(ভোরবেলা, সন্ধ্যা বা রাতে), সেই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা শারীরিক অনুশীলনের অভ্যাস করা।
  • খুব বেশি আর্দ্র বা উষ্ণ দিনগুলোতে এমন কোন কাজকর্ম হাতে না রাখা যা ঘরের বাইরে যেয়ে সারতে হতে পারে। আর একান্তই বাইরে যেতে হলে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, গ্লুকোজড ওয়াটার কিংবা স্যালাইন রাখা এবং তা পান করা।
  • সানবার্ন বা রোদে পোড়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে ছাতা, বড় হ্যাট/স্কার্ফ, সানগ্লাস এবং এসপিএফ ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা। কেননা সানবার্ন আমাদের দেহকে শীতলীকরণে বাধা দেয়।
  • সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় এই যে, প্রতি দুই ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরী; সেটি ঘর্মাক্ত দেহে বা সাঁতার কাটার সময়ই হোকনা কেন।
  • প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অতিরিক পূর্বসতর্কতা হিসেবে কিছু ঔষধ গ্রহণ করা, যা আপনার দেহকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে।
  • প্রখর রোদে কখনই বেশি সময় ধরে গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন পার্ক না করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তপ্ত পরিবেশে সূর্যের নিচে গাড়ি পার্ক করে রাখলে প্রতি দশ মিনিটে সেই গাড়ির তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে বাড়তে থাকে।

তাই পার্ক করা গাড়িতে বৃদ্ধ, শিশু বা কোন পোষা প্রাণীকে রাখার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

শেষ কথা

বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ বা সমভাবাপন্ন আবহাওয়ার দেশ হওয়ায় এই গ্রীষ্মে প্রখর গরম অনুভব করাই স্বাভাবিক।

তবে সেক্ষেত্রে এই তাপমাত্রার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শারীরিক কর্মক্ষমতার অভ্যাস রাখার পাশাপাশি সুস্থ জীবনযাপনের পন্থা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি।

কেননা একমাত্র তাহলেই হিট স্ট্রোক, হিট এক্সোশনের মত মারাত্মক শারীরিক জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top