ছোটবেলায় বিমানের শব্দে ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে বিমান দেখার নেশা আমাদের সবারই ছিলো। খেলনা বিমানের পাইলট সাজতে সাজতেই আমাদের মনে পাইলট হওয়ার নেশা অনেকেরই জন্মেছে। কিভাবে পাইলট হবো? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর, সেইসাথে বাস্তবতা আর সঠিক গাইডলাইনের অভাবে আমাদের ছোটবেলার রঙিন স্বপ্নটাকে আর বাস্তবরূপ দেওয়া হয়ে উঠেনা।
তবে যারা সত্যিকার অর্থেই নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারে তারা একদিন ঠিকই স্বপ্ন পূরণ করে ফেলে। নীল আকাশে মেঘের উপর দিয়ে ছুটে চলার নেশায় যারা মত্ত্ব, পাইলটের শুভ্র পোশাক যারা গায়ে জড়াতে চায় তাদেরকে গাইডলাইন দেওয়ার জন্যই আজকের আয়োজন।
পাইলটের ধরন: পাইলট সাধারণত ২ধরনের হয়ে থাকে যথা- সামরিক পাইলট এবং বেসামরিক পাইলট। প্রথমেই আমরা সামরিক পাইলট নিয়ে আলোচনা করবো।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
হতে চাইল সামরিক পাইলট
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনীর পাইলটদের সামরিক পাইলট বলা হয়। সামরিক পাইলটদের জিডিপি অর্থাৎ জেনারেল ডিউটি পােইলট বলা হয়ে থাকে। নৌ বাহিনী এবং সেনা বাহিনীতে সরাসরি কোন পাইলট নিয়োগ দেওয়া হয়না। প্রয়োজন অনুসারে বিমানবাহিনী থেকে ডেকে নেওয়া হয়।
বিমান বাহিনীতে যোগদানে শিক্ষাগত যোগ্যতা:
বিমান বাহিনীতে এইচএসসি পাশের পরই আবেদন করতে হয়। এসএসসি বা এইচএসসির যেকোন একটিতে অবশ্যই জিপিএ ৫.০০ সহ ৯.৫০ বা তার অধিক জিপিএ থাকতে হবে।
এইচএসসিতে অবশ্যই গনিত বিষয় থাকতে হবে। মূল কথা বিজ্ঞানের ছাত্র হতে হবে এবং গনিতকে বাদ দেওয়া যাবেনা।
বয়সসীম :নূন্যতম ১৬ বছর ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ২১ বছর।
শারীরিক যোগ্যতা :
উচ্চতা: পুরুষ: নূন্যতম ১৬২.৫৬ সে.মি (৫ ফুট ৪ ইঞ্চি) ; নারী- ১৫৭. ৪৮ সে.মি (৫ ফুট ২ ইঞ্চি)
বক্ষ: পুরুষ – ৩২ ইঞ্চি, নারী – ২৮ ইঞ্চি
প্রসারিত বক্ষ: ২ ইঞ্চি (৫.০৮ সেন্টিমিটার)
ওজন: উচ্চতা অনুযায়ী (বিএমআই)।
চোখের পাওয়ার: ৬/৬, অর্থাৎ স্বাভাবিক দৃষ্টিক্ষম থাকতে হবে।
বাছাই প্রক্রিয়া:
৬ টি ধাপে ক্যাডেট বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
১) প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা ( সাধারণ জ্ঞান, আইকিউ ও ইংরেজী বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় )।
২) প্রাইমারী মেডিকেল টেস্ট
৩) প্রাইমারী ইন্টারভিউ
8) ISSB board for 4 days ( সবচেয়ে জটিল ধাপ )
৫) ফাইনাল মেডিকেল টেস্ট
৬) এয়ার ফোর্স হেড কোয়ার্টারে ইন্টারভিউ: এখান থেকে ফাইনাল সিলেকশন দেওয়া হয়।
ট্রেনিং ও চাকরি:
নির্বাচিত ক্যাডেট পাইলটদের ৩বছরের লং ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হয়। ট্রেনিং শেষে তাদের কমিশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। বাংরাদেশ মিলিটারী একাডেমি এবং বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমিতে ট্রেনিং দেওয়া হয়।
ট্রেনিং এর প্রথম ২ টার্মে জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিং এবং সার্ভিস সম্পর্কিত পড়াশোনা করানো হয়। ৩য় এবং ৪র্থ ধাপে ক্যাডেট পাইলটদের ১২০ ঘন্টার ব্যাসিক ফ্লাইং ট্রেনিং দেওয়া হয়।
এরমাঝে ধাপে ধাপে পাইলটরা BUP (Bangladesh university of professionals) এর অধীনে BSc degree in aeronautic,ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা অন্য কোন ব্যাচেলর ডিগ্রিতে গ্রাজুয়েশন করার সুযােগ পান।
তিন বছরের পর্যায়ক্রমিক ট্রেনিং শেষে পাইলট হিসেবে এয়ারফোর্সে যোগদান করার সুযোগ পান।
বেসামরিক পাইলট হতে চাইলে
বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য যেকোন বিমানের পাইলট হতে চাইল দেশের বা দেশের বাইরের কোনাে ফ্লাইং ট্রেনিং একাডেমিতে ভর্তি হতে হবে। এইচএসসি এবং অনার্স পাশ করার পরেও ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নূন্যতম জিপিএ ২.৫০ পেতে হবে। পদার্থ বিজ্ঞান এবং গনিত বিষয় থাকা আবশ্যক। ইংরেজি লেখা এবং বলায় দক্ষ হতে হবে।
বয়স: নূন্যতম ১৬ বছর।
ফিটনেস: শারিরীকভাবে ফিট হতে হবে। মূলত সামরিক ফিটনেস রিকুয়ারমেন্টই ফলো করা হয়।
লাইসেন্স: বাংলাদেশ বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স পেতে নূন্যতম বয়স ১৭ হতে হবে। গ্রাইন্ড ও ৪০ ঘন্টা ফ্লাইং ট্রেনিং সফলভাবে শেষ করার পর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের (পিপিএল) জন্য আবেদন করা যায়।
কমার্সিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) এর জন্য আবেদন করতে ১৫০ ঘন্টা ফ্লাইং অভিজ্ঞত থাকতে হয় এবং নূন্যতম বয়স ১৮ হতে হবে। সিপিএল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দেশ বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কি পরিমাণ খরচ হবে:
একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে সিলেক্ট হলে পাইলট হওয়ার জন্য ২.৫ বছরের কোর্স করতে হবে। যেহেতু বেসরকারী একাডেমী, তাই সম্পূর্ণ খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। পড়াশোনা এবং ট্রেনিং শেষে পিপিএল এবং সিপিএল পাওয়া পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে।
বাংলাদেশে কিছু বেসামরিক পাইলট ট্রেনিং একাডেমী
- বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমি (Bangladesh Flying Academy)
- আরিরাং ফ্লাইং স্কুল (Arirang Flying School)
- গ্যালাক্সি ফ্লাইং অ্যাকাডেমি (Galaxy Flying Academy)