সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম : প্রায়শই বোর্ড পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন, মার্কশীট, কিংবা সার্টিফিকেটে নিজের ভুল নাম, ভুল বানান, বাবা মায়ের নাম ভুল এসে থাকে। আপনারও একই সমস্যা হলে সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন করা প্রয়োজন হবে। পূর্বে শুধু অফলাইন সার্টিফিকেট সংশোধন করা গেলেও এখন অনলাইন সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম চলে এসেছে।
আপনার প্রয়োজনে পাশে থাকতে আমাদের আজকের আয়োজনে কিভাবে সার্টিফিকেটে নিজের নাম, বাবা কিংবা মায়ের নাম সংশোধন করতে হয় ( certificate songsodhon ), সার্টিফিকেটে বয়স ঠিক করতে হয় তা স্টেপ বাই স্টেপ দেখানোর জন্য সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছি।
certificate এ নামের ভুল থাকলে প্রশাসনিক অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয়। তবে, স্বস্তির বিষয় হচ্ছে এখন ঘরে বসেই অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম চলে এসেছে। তাই, এখন আপনার নিজেই সার্টিফিকেটে নিজের নামের ভুল, বাবা কিংবা মায়ের নাম ভুল আসলে সার্টিফিকেট নাম সংশোধন করার নিয়ম অনুসরণ করে নিজেই ঠিক করতে পারবেন।
আপনি যে বোর্ডের অধীনস্থ হন না কেন, আপনার সার্টিফিকেটে যদি নিজের, বাবা কিংবা মায়ের নামে ভুল থাকে, তাহলে আজকের আলোচনা থেকে নিজেই অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম বা certificate correction application কিভাবে করতে হয় তা জেনে নিতে পারবেন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম | Online Certificate Songsodhon
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে জানার প্রথম ধাপেই সার্টিফেকেট এর নাম সংশোধন বা certificate name change করার ধাপগুলো কি কি তা জেনে নেওয়া যাক:
- প্রথমে কোন কোন বোর্ড পরীক্ষার জন্য নাম পরিবর্তন করবেন তার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
- অনলাইনে কিংবা অফলাইনে সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
- স্কুল অথবা কলেজ থেকে আবেদনটি ফরওয়ার্ড করিয়ে নিতে হবে।
- আবেদনের প্রেক্ষিতে নাম সংশোধন হয়ে গেলে তখন ফ্রেশ ডকুমেন্ট (সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, ইত্যাদি) এর জন্য আবেদন করতে হবে।
- এখন আবার আগের মতো অনলাইনে কিংবা অফলাইনে নতুন সার্টিফিকেট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট কপি উত্তোলনের জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
- আপনার ডকুমেন্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে বোর্ডে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং পুরাতন ডকুমেন্ট দিয়ে সংশোধিত নতুন ডকুমেন্ট নিয়ে আসতে হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য কি কি ডকুমেন্ট বা কাগজ লাগবে?
- নিজের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ইংলিশ ভার্সন এর কপি যেটাতে আপনার সঠিক নাম রয়েছে।
- পিতা মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের সফট কপি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
- ডকুমেন্ট পিডিএফ ফরম্যাটে সাবমিট করতে হবে।
- এফিডেভিট বা নোটারি পাবলিকেশন এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এর প্রয়োজন নেই তবে ক্ষেত্রবিশেষে লাগতে পারে।
তাহলে এই হচ্ছে সার্টিফিকেট নাম সংশোধনের প্রক্রিয়া। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন এর জন্য আবেদন করার নিয়ম
সার্টিফিকেট সংশোধন ফরম বরিশাল বোর্ড এবং সার্টিফিকেট সংশোধন দিনাজপুর বোর্ড এ এখনো অনলাইন প্রক্রিয়ার আওতাধীন আসেনি। এজন্য আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের নিকট অথবা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করবেন।
অতঃপর, প্রধান শিক্ষকের নিকট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সহ জমা দিতে হবে। অন্যান্য বোর্ডে নাম সংশোধন করার জন্য নিজ নিজ বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
নিম্নে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম মাদরাসা বোর্ড, সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম কুমিল্লা বোর্ড, সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম চট্টগ্রাম বোর্ড, সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম যশোর বোর্ড, সার্টিফিকেট সংশোধন সিলেট বোর্ড এ আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইট এড্রেস দেওয়া হলো:
বোর্ড | ওয়েবসাইট |
মাদরাসা বোর্ড | efiling.ebmeb.gov.bd/index.php/eservice |
কুমিল্লা বোর্ড | web.comillaboard.gov.bd/bisecb |
চট্টগ্রাম বোর্ড | web.bise-ctg.gov.bd/bisectg |
যশোর বোর্ড | app.jessoreboard.gov.bd/index.php/name |
সিলেট বোর্ড | application.sylhetboard.gov.bd/index.php/online |
যেহেতু, আমরা ঘরে বসে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম জানতে চাই, তাই আমাদের এমন একটি বোর্ড নির্বাচন করতে হবে যেটি অনলাইনে certificate correction application জমা নিচ্ছে এবং certificate name change করা শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে, আমরা এখানে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম ঢাকা বোর্ড এর ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখাবো।
কেননা, সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম জেনে ঢাকা বোর্ড এর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই অনলাইনে নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে কাউকে কারো কাছে যেতে হবে না।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম ঢাকা বোর্ড:
১. প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
২. এখানে আপনার অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন নামে একটি অপশন খুঁজে পাবেন। এখানে ক্লিক করুন।
৩. এরপর আপনার কয়েকটি অপশন দেখতে পাবেন। এখন নাম ও বয়স সংশোধনের আবেদন অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
৪. আবেদন ফরম বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি পেজ আসবে যেকোনো একটি পরীক্ষার (জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি) রোল, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার বছর সাবমিট করে তথ্য যাচাই করবেন। এবার আপনার সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের জন্য একটি আবেদন ফরম ওপেন হবে। ভালোভাবে পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে সাবমিট করবেন।
আপনি জেএসসি, এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নাম সংশোধন করতে পারবেন। মনে করুন আপনি এইচএসসি পাশ করেছেন তাহলে আপনি ইচ্ছা করলে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এই তিনটি পরীক্ষার জন্যে একসাথে অথবা যে কোন দুইটি বা একটি পরীক্ষার জন্য নাম সংশোধন করতে পারবেন। এখন আপনি কোন পরীক্ষার জন্য নাম সংশোধন করবেন সেটা ঠিক করুন। তবে সব পরীক্ষার জন্য নাম সংশোধন করাই উত্তম হবে।
এখন কোন পরীক্ষার নাম সংশোধন করবেন তার পাশের বক্সে ক্লিক করুন। যেমন আপনি প্রথমে জেএসসির ইনফরমেশন দিয়েছেন আর তিনটি পরীক্ষার জন্যই নাম সংশোধন করতে চাচ্ছেন। তাহলে এখন শুধু এসএসসি এবং এইচএসসি পাশের বক্সে ক্লিক করুন। তাহলে দেখবেন আপনার এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ইনফরমেশনগুলো চলে আসছে।
এখন আপনি যদি শুধু নিজের নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে NAME এ ক্লিক করুন। যদি পিতার নাম অথবা মাতার নাম নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে ওই দুইটি পাশে দুটি অপশন (FATHER, MOTHER)এ ক্লিক করুন। এখানে আরেকটা অপশন আছে সেটি হচ্ছে ডেট অফ বার্থ (DOB)। পরে এই অপশনটি নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি কি সংশোধন করতে চাচ্ছেন তা সঠিকভাবে পূরণ করুন। আবেদন ফরমে আপনাকে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দেওয়া লাগবে। কারণ মোবাইল নম্বর অনেক গুরুত্বপূর্ণ, পরবর্তীতে এই মোবাইল নাম্বারে আপনাকে মেসেজ দেওয়া হবে।
এখন আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। সব ডকুমেন্ট কিন্তু পিডিএফ ফরমেটে আপলোড করতে হবে। যেমন; আপনি যদি শুধু নিজের নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন এর অনলাইন কপি( ইংলিশ ভার্শন) দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন এ আপনার সঠিক নামটি অবশ্যই থাকতে হবে। মাতার নাম বা পিতার নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার NID এর পিডিএফ কপি সাবমিট করতে হবে।
আপনি এখন আবেদন ফর্মের তথ্যগুলো ভালো করে দেখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনি একটি ম্যাসেজ পাবেন।
মেসেজে আপনাকে একটি আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। যখন আপনি আবেদন সাবমিট করলেন তখন ওয়েবসাইটে আপনার জন্য একটি প্রোফাইল তৈরি হবে এবং আপনি আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার আবেদন এর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আপনি যে আবেদন করেছেন তার একটি কপি পাবেন। আপনি কোন কোন পরীক্ষার জন্য এবং কি কি সংশোধন করবেন তা উল্লেখ থাকবে। এখানে Print নামের একটি অপশন পাবেন একদম উপরের অংশে। এখানে ক্লিক করে এটি ডাউনলোড করে নিজের কাছে যত্ন করে রাখুন, পরবর্তীতে কাজে লাগবে। এখন আপনাকে আবেদন ফি দিতে হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা দেখার জন্য নিচের পদক্ষেপ অনুসরণ করুন :
- আগের মত নাম ও বয়স সংশোধন অপশন এ ক্লিক করুন।
- এবার সর্বশেষ অবস্থা এই অপশনটিতে ক্লিক করুন।
এরপর আপনি আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা দেখতে পারবেন। যদি টাকা জমা না দেন তাহলে টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া থাকবে আর টাকা জমা দেওয়া হয়ে গেলে স্কুল অথবা কলেজ থেকে ফরওয়ার্ড করানোর জন্য নির্দেশ দিবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
এখন আগের আবেদনের মতো আবেদন ফি জমা দেওয়া লাগবে। প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড এর জন্য আবেদন ফি ২০০ টাকা। আর বাকি সব ডকুমেন্ট এর জন্য আবেদন ফি ৫০০ টাকা করে। অনলাইনে ফি জমা দিলে চার্জ রেজিস্ট্রেশন কার্ডের জন্য ৪.১৫ টাকা এবং বাকিগুলার জন্য ৭.৮৮ টাকা করে। ব্যাংকে গিয়ে জমা দিলে সব ডকুমেন্ট এর জন্য চার্জ ৫৮ টাকা করে।
ফ্রেশ কপির জন্য আবেদন করার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই মেসেজ আসা শুরু হয়। এক থেকে দেড় মাসের মাঝে আপনার সব ডকুমেন্ট রেডি হয়ে যায়। এরপর শুধু বোর্ড থেকে আবেদনের কপি, পেমেন্ট স্লিপ, প্রিন্ট অর্ডার এবং পুরাতন ডকুমেন্ট দিয়ে নতুন সংশোধিত ডকুমেন্ট তুলে নিয়ে আসবেন।
ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। এই হল নাম সংশোধন সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম ও পদ্ধতি।
সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
আবেদন ফি অনলাইন কিংবা অফলাইনে জমা দিতে পারবেন। আপনার আবেদন কপি তে সোনালী স্লিপ নামে একটি অপশন পাবেন। এখানে ক্লিক করুন। অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদন ফি জমা দেওয়ার জন্য আপনি মোট তিনটি অপশন পাবেন।
-
- ব্যাংকের মাধ্যমে,
- মোবাইল ব্যাংকিং এবং
- কার্ড এর মাধ্যমে।
যদি অনলাইন এ দিতে চান তাহলে কার্ড অথবা মোবাইল ব্যাংকিং যেভাবে দিবেন তা সিলেক্ট করুন। আবেদন ফি দেওয়ার পর আপনাকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে। এটি ডাউনলোড দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আবেদন ফি’র পরিমাণ হচ্ছে ৫০০ টাকা। আর অনলাইনে আবেদন ফি জমা দিলে ৭.৮৮ টাকা চার্জ প্রযোজ্য। সুতরাং একটি পরীক্ষার জন্য আপনাকে ৫০৭.৮৮ টাকা জমা দিতে হবে।
যদি অফলাইনে অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে চান তাহলে প্রথম অপশনটি সিলেক্ট করুন এবং সোনালী স্লিপ ডাউনলোড করে ব্যাংকে টাকা জমা দিবেন। ব্যাংকে জমা দেয়ার ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৫০০ টাকা এবং চার্জ ৫৮ টাকা প্রযোজ্য। সুতরাং একটি পরীক্ষার জন্য আপনাকে ব্যাংকে ৫৫৮ টাকা জমা দিতে হবে।
ব্যাংক একটি অংশ ব্যাংক আপনাকে দিয়ে দিবে। ওই অংশটি যত্ন সহকারে রেখে দিবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আবেদনটি আপনার স্কুল এবং কলেজে চলে যাবে। তখন আপনাকে স্কুল অথবা কলেজ এর যে কোন একটি থেকে ফরওয়ার্ড করিয়ে নিতে হবে।
স্কুল কিংবা কলেজ থেকে ফরওয়ার্ড করানো
আপনি স্কুল বা কলেজের কম্পিউটার অপারেটর সাথে যোগাযোগ করলে উনি সাথে সাথেই কাজটি করে দেবেন। স্কুল থেকে আবেদনটি ফরোয়ার্ড করলে আপনি তখন আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে করলে দেখতে পারবেন যে আপনার আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখন শুধু আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তীতে কি করতে হবে তা আপনাকে মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই সংশোধন হয়ে যায়। তবে ১৫ দিন থেকে ৬ মাস ও লাগতে পারে।
বোর্ড মিটিং
আপনার নাম বোর্ড মিটিং এর মাধ্যমে সংশোধিত হয়। তো অনেক সময় আপনাকে বোর্ড মিটিংয়ে ডাকতেও পারে আবার নাও ডাকতে পারে। সাধারণত ছোটখাটো কোনো ভুল যেমন : নামের মাঝখানে স্পেস না থাকা, আক্ষরিক ভুল ইত্যাদির জন্য সাধারণত বোর্ড মিটিংয়ে ডাকে না। কিন্তু আপনি যদি পুরো নাম পরিবর্তন করতে চান কিংবা টাইটেল পরিবর্তন করতে চান তখন হয়তো আপনাকে বোর্ড মিটিংয়ে ডাকতে পারে।
যদি আপনাকে বোর্ড মিটিংয়ে ডাকে তবে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। তখন আপনাকে আপনার যাবতীয় সকল ডকুমেন্টের মুল কপি নিয়ে যথাসময়ে ঢাকা বোর্ডে উপস্থিত হতে হবে। বোর্ড মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার নাম সংশোধিত হবে। তখন আপনি একটি ম্যাসেজ পাবেন। এরপর আপনাকে ফ্রেশ কপির জন্য এপ্লাই করতে হবে।
সংশোধিত সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
আপনার সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন সম্পূর্ণ হলে আপনি মেসেজ পাবেন এবং আপনার প্রোফাইল এ গেলে Print Order নামের একটি অপশন পাবেন। সেখানে ক্লিক করে প্রিন্ট অর্ডারটি ডাউনলোড করুন। প্রিন্ট অর্ডার এ আপনার নাম যে সংশোধন হল তা উল্লেখ থাকবে।
এখন আপনি যে যে কাগজপত্র নতুন করে তুলতে চান তার জন্য আলাদা আলাদা করে আবেদন করতে হবে। যেমন: মনে করেন আপনি শুধু এইচএসসি এবং এসএসসি এর ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট তুলবেন। তাহলে আপনাকে এসএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট এর জন্য আলাদা করে মোট চারটি আবেদন করতে হবে। এভাবে আপনি যতগুলো কাগজ তুলবেন ততগুলো আবেদন করবেন।
সংশোধিত ফ্রেশ সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট কিংবা এডমিট কার্ড এর জন্য আবেদনের সময় প্রতিবার ওই প্রিন্ট অর্ডার অবশ্যই আপলোড করতে হবে। এর সাথে আরো ডকুমেন্ট চাইতে পারে, সেগুলো ও আপলোড দিবেন। যেমন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার এডমিট কার্ড এর জন্য আবেদন করলে রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সফট কপি আবশ্যক।
সংশোধিত সার্টিফিকেট কপির জন্য আবেদন করার নিয়ম
1. সংশোধিত সার্টিফিকেট উঠানোর জন্য প্রথমে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে যাবেন এবং On line Application এ ক্লিক করুন। অথবা এই লিঙ্কে ক্লিক করে সরাসরি অনলাইন আবেদন পেজ এ যান এবং ডকুমেন্ট উত্তোলনের আবেদন বাটনটিতে ক্লিক করুন। নতুন পেজটি দেখতে নিচের ছবির মতো হবে।
2. এবার পরীক্ষা সিলেক্ট করুন; আইডি, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে Find অপশন এ ক্লিক করুন।
3. এখন আপনার ওই ডকুমেন্ট এর আবেদন ফর্ম ওপেন হবে। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ডকুমেন্ট আপলোড করে সাবমিট করুন।
সবগুলোর ডকুমেন্ট এর জন্য আলাদা আলাদা করে আবেদন করতে হবে। আলাদা আলাদা আবেদনের জন্য আলাদা আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে এবং ওয়েব সাইটে আপনার জন্য আলাদা প্রোফাইল তৈরি হবে এবং ওয়েবসাইটে আপনি আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করে আগের মত আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে?
সার্টিফিকেট সংশোধন এর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস লাগে। সার্টিফিকেট সংশোধনের কাজকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথমটি হচ্ছে সার্টিফিকেট তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন। এটি সম্পন্ন হতে প্রায় ১৫ দিন থেকে এক মাস লাগতে পারে ( যদিও শিক্ষা বোর্ড থেকে বলা হয় যে সর্বোচ্চ ছয় মাস লাগতে পারে)।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফ্রেশ ডকুমেন্ট উত্তোলনের জন্য আবেদন। এই কাজটি সম্পন্ন হতে এক সপ্তাহ থেকে একমাস লাগতে পারে।
FAQ: সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম
আমার স্কুলে, কলেজ আলাদা বোর্ডের অধীন। একসাথে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসির জন্য আবেদন করতে পারবো?
প্রথমে জেএসসি, এসএসসি ঠিক করে নিন। সংশোধিত সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর এইচএসসি’র জন্য আবেদন করবেন।
সার্টিফিকেট সংশোধনের পর কি আগেরটার মত পাব? নাকি পাতলা কাগজের সার্টিফিকেট দেয়?
সব ডকুমেন্টস আগের মতই থাকবে। শুধু রেজিষ্ট্রেশন কার্ড এ ডুপ্লিকেট লেখা থাকে।
আমার স্কুল আগে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ছিল, এখন ময়মনসিংহ বোর্ডের অধীন। কোন বোর্ডে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
আপনার সার্টিফিকেটে যে বোর্ডের নাম আছে, সেখান থেকেই অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধন করার নিয়ম কি?
সার্টিফিকেটে যেকোন নাম বা বানান একইভাবে সংশোধন করতে হয়। সার্টিফিকেটে মায়ের নাম সংশোধন করার জন্য প্রথমে
১. শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
২. অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন নামক অপশন খুঁজে ক্লিক করুন।
৩. এখন নাম ও বয়স সংশোধনের আবেদন অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৪. আবেদন ফরম বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি পেজ আসবে যেকোনো একটি পরীক্ষার (জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি) রোল, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার বছর সাবমিট করে তথ্য যাচাই করবেন।
৫. এবার আপনার সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের জন্য একটি আবেদন ফরম ওপেন হবে। সেখানে আপনার মায়ের নাম সংশোধন করে সাবমিট করুন।
আমি ভার্সিটিতে পড়ি।ভার্সিটি সার্টিফিকেট কি পরে সংশোধন করতে পাবরো?
অবশ্যই। বোর্ড সার্টিফিকেট সংশোধন করার পর পরীক্ষা কন্ট্রোল সেকশনে যোগাযোগ করুন।
বয়স সংশোধন করা যায়?
এইচএসসি শেষ হলে আর বয়স সংশোধন হয় না
ঢাকা বোর্ডে সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পত্রিকা বিজ্ঞাপন ও এভিডেভিড লাগে?
জ্বি না। তবে বাবা মায়ের সম্পূর্ণ নাম বা পদবী পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন ও বয়স সংশোধন এর আবেদন একসাথে করা যায় না। যদি আপনি নাম ও বয়স সংশোধন করতে চান তাহলে আলাদা করে দুইবার আবেদন করতে হবে। একটি নাম সংশোধন এর জন্য আরেকটি বয়স সংশোধন এর জন্য। বাকি পদ্ধতি সব একই।
মনে রাখবেন, এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলে আপনার সার্টিফিকেটের বয়স সংশোধন করা যাবে না। আবেদন করার সময় অনলাইন এ টাকা জমা দিলে অবশ্যই কম্পিউটার ব্যবহার করবেন। কেননা, মোবাইলে টাকা জমা দেওয়ার পর স্লিপ ডাউনলোড করতে সমস্যা হতে পারে।
আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ার পর সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম আপনার কাছে এখন পরিষ্কার হয়েছে, এবং নিজেই ঘরে বসে করতে পারবেন। এখনো যদি আপনার মনে certificate correction application এবং Board certificate name change নিয়ে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
Anyone can collect certificate from board without owner? Please tell me?
আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ২য় বর্ষে পড়ি। আমার সার্টিফিকেট গুলোতে নিজের নামের সাথে টাইটেলযুক্ত, বাবার নাম পরিবর্তন ও জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে চাচ্ছি।
জন্ম তারিখ ২০ অক্টোবর দেয়া কিন্তু আমি ২১ অক্টোবর করতে চাচ্ছি। আমি কি এটা চেঞ্জ করতে পারবো?
আর এখন তো জেএসসি অফ তাহলে জেএসসি সার্টিফিকেট সংশোধন করার কি কোনো প্রয়োজন আছে? না করলেই বা অসুবিধা কি?
এইচএসসির পর সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা যায় না। যেহেতু, জেএসসির’র রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়েই আপনার সকল বোর্ড পরীক্ষার তথ্য আপডেট করা হয়, তাই জেএসসি সনদ সংশোধন করা উচিৎ। তবে না করলেও খুব একটা সমস্যা নেই। বাকিগুলো পরিবর্তন করতে পারেন।
ধন্যবাদ স্যার, আচ্ছা স্যার এভিডেভিট করার করার জন্য কি কি লাগবে? এবং এভিডেভিট ফর্ম কোথায় গেলে পাওয়া যাবে। এবং আরেকটা বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়ায় কি জন্মতারিখ সংশোধন করা যাবে? প্লিজ স্যার, দয়া বিষয়টা জানাবেন।
এভিডেভিট করার জন্য একজন উকিলের সাথে কথা বলুন। পাসপোর্ট সাইজের ছবির সাথে বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে। জ্বি, জন্ম সনদ সংশোধন করতে পারবেন
Mother nid card not have, If I submit mother birth certificate online copy then ok or not?
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে অবশ্যই আপনার মায়ের ভোটার আইডি কার্ড লাগবে
Amar jsc ssc certificates ey baba ma and amr jonmo tarikh vul ase…college ey vortir somoy amr birth certificate and baba mayer NID lagbe ekhn college ey vorti hote kono problem hobe?
না, কোন সমস্যা হবে না। তবে ভর্তি হওয়ার পর পর ই সার্টিফিকেট সংশোধন করে নিন। নতুবা, এইচএসসি’র পর বয়স সংশোধন করতে পারবেন না।
ভর্তি হওয়া যাবে কিন্তু আজ না হয় কাল আপনাকে সংশোধন করতেই হবে যদি আপনি সরকারি জব করতে চান কিংবা বিদেশে পড়াশুনা করতে চান।