রিসেলার ব্যবসা মানে কি | কীভাবে রিসেলার বিজনেস করবেন?

রিসেলার ব্যবসা

রিসেলার মানে কি : রিসেলার হলেন সেই ব্যক্তি কোন যে পণ্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য মার্কেটিং করে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করে লাভ অর্জন করেন। অনলাইন দুনিয়ায় যাদের সামান্যতম বিচরণ আছে তারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে রিসেলার ব্যবসা নামটি শুনেছেন। বর্তমানে যতগুলো কম টাকায় লাভজনক ব্যাবসা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এই রিসেলার ব্যবসা

রিসেলার ব্যবসা করার জন্য আপনার নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নেই, কোনো স্টোর হাউজ বা শপও প্রয়োজন হবেনা!

একজন রিসেলার ব্যবসায়ী পণ্য উৎপাদনকারী এবং ক্রেতার মাঝে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করেন। রিসেলার ব্যবসাকে আমরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মোডিফাইড ভার্সনও বলতে পারি।

বর্তমান যুগে নিজস্ব একটি পরিচয় তথা ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে ছুটছে মানুষ, একই সাথে বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। আপনি যদি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেক্ষেত্রে রিসেলার ব্যবসা (Reseller Business) আপনার জন্য খুলে দিতে পারে সফলতার দুয়ার।

বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য রিসেলার ব্যবসা সর্বোত্তম অপশন। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু রিসেলিং ব্যবসা, আসুন প্রথমেই জেনে নেই রিসেলার ব্যবসা কি।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

রিসেলার ব্যবসা বা বিজনেস মানে কি | What is Reseller Business in Bangla

কোন জিনিস তার উৎপাদনকারী, বিক্রেতা কিংবা পাইকারী বিক্রেতার কাছ থেকে কম দামে ক্রয় করে সেটি পুনরায় বেশি দামে বিক্রয় করাই রিসেলার বিজনেস।

এক্ষেত্রে একজন রিসেলারের উদ্দেশ্য থাকে বেশ ভাল অঙ্কের মুনাফা লাভ এবং আধুনিক ব্যবসায়িক যুগে নিজের অবস্থান পোক্ত করা।

রিসেলার ব্যবসা এর ধরণ

ব্যবসায়িক ধরণ ও সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে রিসেলার বিজনেস অনলাইন ও অফলাইন-দুরকমই হতে পারে। তবে রিসেলার ব্যবসার মূল উদ্যোক্তা যেহেতু ছাত্র ছাত্রীরাই, সেহেতু তারা তাদের অবসর সময়টাকে প্রাধান্য দিয়েই অনলাইনকে রিসেলার ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়।

মূলত ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা তাদের নিজস্ব ওয়েবপেইজকে অনলাইন শপ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা তাদের পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়া শুরু করে থাকে।

রিসেলার ব্যবসা এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে একজন মার্কেটার কোনো কোম্পানীর পণ্যের প্রচার করেন। গ্রাহক তার লিঙ্ক দিয়ে সেই কোম্পানী থেকে সরাসরি নিজে জিনিস ক্রয় করেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের ইউনিক লিঙ্ক ব্যবহার করায় সেই কোম্পানী নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেন।

রিসেলার বিজনেস এ কোম্পানী রিসেলার কে কোনো কমিশন দিবেনা। একজন রিসেলার তার অনলাইন শপেই প্রোডাক্টটির অর্ডার নিবেন এবং পেমেন্ট গ্রহণ করবেন। পরবর্তীতে তিনি এই অর্ডার অন্য কোম্পানীকে ফরওয়ার্ড করবেন, তারাই ডেলিভারী করবে।

আরো পড়ুন:  ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো | How to Learn Freelancing in 2023

প্রশ্ন হলো তাহলে রিসেলার ব্যবসা করে লাভ কি? একজন রিসেলার তার শপে পণ্যের দাম অরিজিনাল কোম্পানীর বিক্রিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখেন। তিনি যতবেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন, সেটাই তার লাভ।

রিসেলার ব্যবসা কেন করবেন?

বেশিরভাগ মানুষেরই ব্যবসায়িক পথ মসৃণ হয়না। সেক্ষেত্রে অনেকেই প্রথমে রিসেলার ব্যবসা নিয়ে একটু দ্বিধার মাঝে থাকতে পারেন এটাই স্বাভাবিক।

তবে রিসেলার বিজনেসের সময় ও সুযোগ বিনিয়োগের ক্ষেত্র বেশ সমৃদ্ধশালী। যার ফলে আপনি আর্থিক লাভ থেকে শুরু করে আপনার ব্যবসায়িক দক্ষতাকে শাণিত করতে পারবেন।

রিসেলার ব্যবসা কে সম্ভাব্য ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার পেছনে কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১। বিক্রয়ের বিস্তৃত অপশন

আপনি যদি একজন রিসেলার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ। মনে করুন, আপনি পোশাক বিক্রয়ের মাধ্যমে আপনার রিসেলার বিজনেসটি চালু করতে চান।

প্রাথমিক পর্যায়ে মুনাফা লাভের পর কিন্তু আপনি আপনার অনলাইন শপে আধুনিক ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল বিষয়ক আরো পণ্য যোগ করতে পারেন, হতে পারে সেগুলো জুতা, কসমেটিক্স, জুয়েলারি, হ্যান্ডব্যাগ ইত্যাদি।

সেক্ষেত্রে আপনার অনলাইন বিজনেসে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পণ্য কেনার খরচটি ছাড়া আর কোন খরচ আপনাকে বহন করতে হচ্ছে না।

২। অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের সুযোগ

রিসেলার বিজনেস শুরু করতে হলে আপনাকে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। একটি নির্দিষ্ট পণ্যের পাইকারি দামেই আপনি সেই পণ্যটি ক্রয় করতে পারছেন, এবং বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা সম্পূর্ণই আপনার স্বাধীনতা।

সেক্ষেত্রে আপনি নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দামে আপনার পণ্যটি গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করে বেশি মুনাফা লাভের একটি সুযোগ পাচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, একচেটিয়া বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ না করে পণ্যের গুণগত মান অনুযায়ী একটি মানানসই মূল্য ধার্য করা শ্রেয়।

৩। ব্যবসা শীঘ্রই শুরুর দারুণ সুযোগ

একটি রিসেলার বিজনেস শুরুর জন্যে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট সময় বা প্রক্রিয়ার অপেক্ষা করতে হবেনা। আপনি আপনার অনলাইন শপে পণ্যসামগ্রী যোগ করা এবং আনুষঙ্গিক আরো কিছু কাজ সারার পরমুহূর্তেই আপনার রিসেলার ব্যবসা প্রক্রিয়াটি চালু করতে পারেন।

অর্থাৎ আপনার বিজনেস সেটআপ এবং উদ্বোধন দুটোই একই দিনে এবং কম সময়ের মধ্যে শুরু করার একটি দারুণ সুযোগ আপনার হাতের মুঠোয়।

৪। কোন ইনভেন্টরি চার্জ বহন করতে হয়না

আপনি যদি আপনার রিসেলার বিজনেসের জন্য কোন রিসেলার ড্রপশিপ মার্কেটপ্লেস এর সাহায্য নিয়ে থাকেন।

সেক্ষেত্রে আপনাকে পণ্যের জন্য কোন অগ্রিম বাল্ক ইনভেন্টরি চার্জ (bulk inventory charge) বহন করতে হবেনা। এক্ষেত্রে eBay, Amazon, Ali Express ইত্যাদি ড্রপশিপ মার্কেটপ্লেস বেশ নির্ভরযোগ্য এবং বহুল প্রচলিত।

এখন অনেকের কাছেই হয়ত ড্রপশিপিং শব্দটি নতুন মনে হতে পারে। তাদের জন্যে বলছি, মনে করুন  একজন রিসেলার হিসেবে আপনার অনলাইন শপে কোন পণ্যের অর্ডার আসার পর আপনি আপনার সাপ্লায়ার বা পাইকারী বিক্রেতার থেকে পণ্যটি ক্রয় করে অর্ডারকারী অর্থাৎ আপনার গ্রাহকের কাছে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি বিক্রয় করলেন। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ড্রপশিপিং।

অর্থাৎ ড্রপশিপিং এমন একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া বা ধাপ, যার মাধ্যমে আপনি একজন পাইকারী বিক্রেতা বা পণ্য নির্মাতা এবং একজন গ্রাহকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।

৫। নিম্ন আর্থিক ঝুঁকি

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যদি পাইকারী বিক্রয় বা হোলসেলিং (wholesaling) এর মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্যয়বহুল বাল্ক ইনভেন্টরি চার্জ এবং শিপিং ফি (shipping fee) এর বিনিময়ে পণ্য নির্বাচনের বিস্তৃত সুযোগটি অর্জন করে নিতে হবে।

আরো পড়ুন:  পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া ; ১০ টি লাভজনক পাইকারি ব্যবসা

পক্ষান্তরে, রিসেলার বিজনেসের ক্ষেত্রে কম ঝামেলায় কম পুঁজিতেই আপনি পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে বাল্ক ইনভেন্টরি যেমন কিনতে হচ্ছেনা, তেমনি চড়ামূল্যে শিপিং ফিও প্রদান করা লাগছেনা। গ্রাহকরা তাদের পছন্দসই পণ্য আপনার অনলাইন শপে অর্ডার করামাত্রই আপনাকে শুধুমাত্র সেই পণ্যের জন্য সাপ্লায়ারকে অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে।

৬। সময়ের পর্যাপ্ততা

রিসেলার বিজনেসের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে এতে পুরো সময় ব্যয় করতে হবেনা। রিসেলার ব্যবসার বেশিরভাগ প্রক্রিয়াই স্বয়ংক্রিয় এবং অটোমেটিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে এটি সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব।

এছাড়াও ড্রপশিপিং এর কারণে পণ্য প্যাকেজিং এবং শিপিং এর ঝামেলা না থাকায় রিসেলারের অনেকখানি সময় বেঁচে যায়। তাই বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রী এবং চাকুরিজীবীদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় পার্টটাইম ইনকাম সোর্স।

রিসেলার ব্যবসা কীভাবে করবেন | How to Start Reselling Business

রিসেলার মানে কি

আধুনিক যুগের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় নিজের একটি সুদৃঢ় স্থান গড়ে তোলার জন্য আপনাকে প্রথমেই রিসেলার ব্যবসার কয়েকটি মূলশর্ত বা ধাপ অতিক্রম করতে হবে। যেমন:

১। ই-কমার্স (e-commerce) সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান

যেহেতু রিসেলার ব্যবসা সম্পূর্ণই অনলাইন ভিত্তিক, সেহেতু একজন রিসেলার হিসেবে আপনার মূলশর্ত হচ্ছে ই কমার্স সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং দক্ষতা। সেক্ষেত্রে আপনার যদি নিজস্ব ফেসবু্ক একাউন্ট/পেইজ থাকে, সেটি অবশ্যই ভাল।

তবে রিসেলার বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনাকে কম ঝামেলায় বেশি সাহায্য করবে আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটটিই আপনার নিজস্ব অনলাইন শপ হিসেবে কাজ করবে।

২। উন্নতমানের ই-কমার্স ওয়েবসাইট/অনলাইন শপ তৈরি

একটি উন্নতমানের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনাকে বেশকিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এখন আপনার মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সুবিধাগুলো কি কি।

প্রথমত, আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট তথা অনলাইন শপটি যেমন আপনার বিজনেসের পরিচয় বহন করবে, তেমনি একশ্রেণীর নির্দিষ্ট গ্রাহকের একটি ট্র্যাক পরিচালনা করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

এতে করে আপনার বিজনেসের গুরুত্ব বাড়ার পাশাপাশি একজন রিসেলার হিসেবে আপনার সুনামও অক্ষুণ্ণ থাকবে।

দ্বিতীয়ত, একজন রিসেলার এবং গ্রাহকের মাঝে একটি আধুনিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট তথা অনলাইন শপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন। পণ্য ক্রয় করার আগে একজন গ্রাহক সাধারণত অনলাইন শপটির গ্রহণযোগ্যতা, ডিমান্ড এবং পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

এসব দিকগুলোর কথা মাথায় রেখে একজন রিসেলারকে তার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড, কর্মদক্ষতা ও আনুষঙ্গিক ডিজাইন ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। আর সেক্ষেত্রে তার ওয়েবসাইটে উন্নতমানের ডোমেইন হোস্টিং সিস্টেম সেটআপ করতে হবে।

৩। সৃজনশীল কন্টেন্ট তৈরি

একজন রিসেলার হিসেবে উন্নতমানের কন্টেন্ট তৈরির দক্ষতা আপনার পণ্যের দ্রুত প্রচার, প্রসার এবং বিপণনের জন্য বেশ কার্যকর। আপনি যত ধারাবাহিকভাবে আপনার পণ্য সম্পর্কিত কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন, গ্রাহকের কাছে ততই আপনার পণ্যের গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।

এজন্য আপনার ব্লগ কন্টেন্ট এবং ভিডিও কন্টেন্ট উভয়ই মনেটাইজিং (monetizing) করা জরুরি।

৪। বিজ্ঞাপন তৈরি

বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাই আপনার পণ্যের জন্য সুনির্দিষ্ট মানের বিজ্ঞাপন তৈরিতে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে ফেসবুকে প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞাপন আসার সম্ভাবনা খুব কম বলে রিসেলার এবং ড্রপশিপারদের জন্য এই মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয়।

৫। পণ্যের বাজারদর এবং গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে জ্ঞান

রিসেলার বিজনেসে ভাল করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে গ্রাহকের মনস্তত্ত্ব এবং পণ্যের গুণাগত মান অনুযায়ী এর দরদাম সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদায় এবং স্বভাবে বেশ পরিবর্তন আসে।

সে দিকটা মাথায় রেখেই একজন রিসেলারকে তার গ্রাহকের জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে হয়। তাছাড়া একশ্রেণীর গ্রাহককে হাতে রাখবার জন্য পণ্যের একটি সুলভ মূল্য নির্ধারণ করার আইডিয়াও থাকা জরুরি।

আরো পড়ুন:  টেলিগ্রাম বট থেকে ইনকাম | How to Earn Money from Telegram Bot

অনলাইন রিসেলার ব্যবসা আইডিয়া | Online Reseller Business Idea

আপনি যদি রিসেলার ব্যবসা জগতে একদমই নতুন হয়ে থাকেন, নিম্নোক্ত আইডিয়াগুলো আপনার জন্য কার্যকরী হতে পারে;

১। পোষাক ব্যবসা (clothing business)

আপনি যদি নারী পুরুষ শিশু নির্বিশেষে সকল বয়সের সকল শ্রেণীর গ্রাহকের জন্য পণ্য সরবরাহ করতে চান, সেক্ষেত্রে clothing business এর চেয়ে ভালো অপশন আর হতেই পারেনা।

এক্ষেত্রে, গ্রাহকের ফ্যাশন সেন্স সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আপনার পক্ষে সহায়ক। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বদলালে আপনি সহজেই সেই অনুযায়ী আপনার পণ্যতালিকায় অরিবর্তন আনতে পারেন।

২। জুয়েলারি ও কসমেটিক্স

পোষাক ব্যবসার মত জুয়েলারি এবং কসমেটিক্সেও রয়েছে গ্রাহককে আকর্ষণ করার দারুণ সুযোগ। ভাল গুণগত মানসম্পন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট সরবরাহের মাধ্যমে আপনি যেমন গ্রাহকের আস্থাভাজন হতে পারছেন, তেমনি পণ্য বিক্রয়ের পর বেশ ভাল অঙ্কের একটি লাভ অর্জনের অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন।

জুয়েলারি এবং পোশাক ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে, বিভিন্ন মৌসুমে বা উৎসব-পার্বণ অনুযায়ী বিভিন্ন সৃজনশীল থিম মাথায় রেখে আপনি বিশেষ ধরণের জুয়েলারি ও পোষাক আপনার গ্রাহককে সরবরাহ করতে পারবেন। এতে করে গ্রাহক আকর্ষণের সম্ভাবনা বেড়ে যাবার পাশাপাশি আপনার ব্যবসায়িক সুনাম অর্জনের পথটিও মসৃণ হচ্ছে।

৩। স্টেশনারি আইটেম (stationary item)

রিসেলার বিজনেসে অন্যতম ডিমান্ডিং একটি অপশন হচ্ছে স্টেশনারি আইটেম। বর্তমানে ক্রাফটিং, আর্ট স্কিলসহ ইত্যাদি শখ মেটানো ছাড়াও বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজকর্মেও স্টেশনারি আইটেমের বেশ চাহিদা।

এছাড়াও শিশু কিশোরদের উপহার দেয়ার জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্টেশনারি আইটেমের কোন তুলনাই নেই। এত বহুমুখী চাহিদার কারণে বর্তমানে বেশকিছু রিসেলার কোম্পানী স্বল্প দামে বেশি মুনাফার জন্যে স্টেশনারি আইটেমকে বেছে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে রিসেলার ব্যবসা প্লাটফর্ম | Reseller Platform in BD

ইন্ডিয়ান মেশো অ্যাপ এর কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন! রিসেলিং বিজনেস বেশ লাভজনক হওয়ায় রিসেলারদের সংখ্যা বাড়ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশেও বর্তমানে বেশ কিছু রিসেলিং প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে যেমন:

এসব সাইটের প্রোডাক্ট ছবি, ইনফো ডাউনলোড করে নিজের অনলাইন শপ, ফেসবুক পেজ, গ্রুপ কিংবা অন্য কোনো প্লাটফর্মে প্রকাশ করে অর্ডার নিতে হবে। অবশ্যই মূল প্রাইসের সাথে নিজের প্রফিট যোগ কিরে দিবেন।

অর্ডার পাওয়ার পর একাউন্ট লগইন কর অর্ডার সেন্ড করে দিন।

FAQ: রিসেলিং বিজনেস

রিসেলিং বিজনেস করে কত টাকা ইনকাম করা সম্ভব? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতি মাসে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।

প্রশ্ন: রিসেলিং করে কিভাবে উপার্জন করা যায়?

শুধু মাত্র ৩টি কাজ করতে হবে:

  1. রিসেলার ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্ট ছবি ডাউনলোড ও ডিটেইল কপি করে নিন
  2. পেইজ, গ্রুপ, বা ওয়েবসাইটে শেয়ার করুন
  3. অর্ডার পেলে তা রিসেলিং সাইটে ফরওয়ার্ড করে দিন।

প্র: অর্ডার কিভাবে করবো?

যে প্রোডাক্ট অর্ডার পেয়েছেন, সেটি ভিজিট করে Buy Now তে ক্লিক করুন। টোটাল সেলিং প্রাইস (আপনি যে মূল্য নিয়েছেন) এবং কাস্টমার ডিটেইল দিয়ে অর্ডার করে দিবেন।

প্র: প্রোডাক্ট এর প্রাইস কিভাবে সেট করবো?

রিসেলিং ই-কমার্স সাইটে প্রতিটি পণ্যের প্রাইস দেওয়া আছে। সুতরাং, এই মূল্যের সাথে আপনার প্রফিট যোগ করে প্রাইস ঠিক করবেন।

প্র: পেমেন্ট কিভাবে পাব?

অর্ডার কিভাবে করবো, এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, যে মূল্য আপনি রাখছেন, সেটি উল্লেখ করে অর্ডার প্লেস করতে হয়। যদি ক্যাশ অন ডেলিভারী সিস্টেম হয়, তবে অর্ডার কনফার্ম হওয়ার পর আপনার প্রফিটের অংশ একাউন্টে যোগ হয়ে যাবে।

প্র: প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এবং ডেলিভারিতে কারা করবে?

আপনাকে কিছুই করতে হবেনা, যাদের কাছে অর্ডার ফরওয়ার্ড করবেন, তারাই সবকিছু করবে।

প্র: কার নামে এ কাস্টমার এর কাছে ডেলিভারি হবে?

আপনি যে নামে অর্ডার নিয়েছেন (কোনো ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ কিংবা আপনার নাম), সেইনামেই ডেলিভারী হবে।

রিসেলার ব্যবসা নিয়ে শেষ কথা

আশা করি, রিসেলার মানে কি সেবিষয়ে বুঝতে পেরেছেন। আর্থিক ঝুঁকি কমবেশি সব ব্যবসায়েই থাকে এটাই স্বাভাবিক, তাই রিসেলার ব্যবসা যে একেবারেই ঝুঁকিহীন, তা বলা যাবেনা। তবে, যেহেতু ইনভেস্টমেন্ট কম তাই ঝুঁকিও অনেক কম।

সব বাধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে আপনি যদি সততা এবং ধৈর্যশীলতার সাথে নিজের বিজনেসের প্রতি দায়িত্বশীল এবং অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে রিসেলার বিজনেস করেই উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌছানো আপনার জন্যে ব্যাপারই নয়।

8 thoughts on “রিসেলার ব্যবসা মানে কি | কীভাবে রিসেলার বিজনেস করবেন?”

  1. ধন্যবাদ আপু। একটা প্রশ্ন আমি কার পরিচয় দিয়ে অর্ডার করব ? যাদি কাস্টমার এর পরিচয় দিতে হয় তাহলে কীভাবে দিব?

    1. pratiborton support

      আপনি নিজের একাউন্ট থেকে অর্ডার করবেন। ফরমে কাস্টমার ডিটেইলস চাওয়া হবে, সেখোনে কাস্টমার সম্পর্কে জানাবেন।

  2. Apu ami wholesale a product kine sell korte parbona.
    Suppose Ami circle er product gulo post korlam & order confirm korlam.tarpor ki korbo?

    1. প্রথমত আপনাকে যেকোনো অথেনটিক রিসেলার প্লাটফর্ম বা ওয়েবসাইটের সাথে পরিচিত হতে হবে।
      আপনি কোন অর্ডার পাওয়ার পর সেটি সেই রিসেলিং সাইটে ফরোয়ার্ড করে দিবেন। বাকি কাজ অর্থাৎ প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এবং ডেলিভারি তারাই করে দিবে আপু।

      ধন্যবাদ।

  3. আইমান সামিন

    তথ্যবহুল পোস্ট। আমার কাছে সোর্সিং করাটাই সবচাইতে কঠিন মনে হচ্ছে। পাইকারি দরে কিনে স্টক করে ব্যবসা করা যায়। তবে, যাদের ইনভেস্ট করার মতো খুব একটা সামর্থ্য নাই, তারা অর্ডার আসার পরে সাপ্লায়ারকে ইনফর্ম করে তাদের থেকেই ডেলিভারি করিয়ে নিতে পারে। এভাবে অনেকেই রেসেলিং বিজনেস করছে। সাপ্লায়ারের সোর্সিং করাটাই এখানে মূল চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই বিষয়ে কোন আইডিয়া থাকলে জানানোর অনুরোধ রইলো। রিসেলারহাব, সার্কেল বিডি… ইনারা সোর্সিং করছেন কিভাবে?

    1. ধন্যবাদ। রিসেলিং বর্তমানে ই-কমার্সে বেশ বড় জায়গা দখল করে আছে। রিসেলার হতে আপনাকে প্রোডাক্ট সোর্স নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। অরিজিনাল সেলারই সেসব দেখবেন। তবে আপনি যদি রিসেলার হাব এর মতো ই-কমার্স সেবা দিতে চান সেক্ষেত্রে ভালো পরিমাণ লাভের জন্য এক্সপোর্ট করতে হবে। তবে, নির্দিষ্ট কিছু পণ্য নিয়ে করতে চাইলে একদম রুট লেভেলে চলে যান। যেমন, আপনি যদি শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করতে চান তবে সিরাজগঞ্জ এর আশে পাশে বহু তাঁত শিল্প রয়েছে, যেখানে অত্যন্ত কম দামে ভালো কোয়ালিটির প্রোডাক্ট পাবেন।

      আপনার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, রিসেলার অনলি যুক্তরাজ্য থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে আসে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top