মুখের ব্রণ দূর করার উপায় জানা উঠতি বয়সী সকল ছেলে মেয়েরই জানা দরকার। ১৪-১৮ বছর বয়সী ছেলে মেয়েরা ব্রণ সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। বয়ঃসন্ধি, শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন, হরমোনাল চেঞ্জ, লাইফ স্টাইলের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এসময় দুখে ব্রণ সমস্যা দেখা দেয়। শুধু ব্রণ হয়েই ক্ষান্ত হয় না, ব্রণের দাগ মুখের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে ফেলে।
বাংলায় একটা কথা আছে সবাইতো সুখী হতে চায়, কিন্তু আমি যদি এটাকে একটু ঘুরিয়ে বলি সবাইতো সুন্দর হতে চায় তাহলে কেমন হয় বলুনতো?
কিন্তু আসলে মানুষের এই সুন্দর হওয়ার প্রতিযোগিতায় শত্রুরূপে কাজ করে কিছু বিরক্তিকর অবয়ব যেমন চুল পড়া, মুখে বিভিন্ন দাগ এবং ব্রণ তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা।
তাই, আজ আমরা এই ব্রণ সমস্যা কেনো হয়, মুখের ব্রণ দূর করার উপায় এবং ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায় নিয়ে জানার চেষ্টা করবো।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
ব্রণ কেন হয় | what causes acne on face?
১. হরমোনাল পরিবর্তন: আসলে এই ব্রণ সমস্যা খুবই সাধারণ বিষয়, তরুণ তরুণীদের মধ্যে যদিও বেশি দেখা যায়, তবে মাঝবয়সীদেরও ব্রণ সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই ব্রণ যেটা দেখা যায় সেটা আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ব্রণ, যেটা হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। এটা সব মানুষেরই হয়, এটা স্বাভাবিক তবে কারো কিছু বেশি হয় কারো কিছু কম হয়।
২. অয়েলি স্কীন: যাদের অয়েলি স্কীন তাদের ক্ষেত্রে এটা একটু বেশি হয়। কারণ তাদের মুখে বাইরের ধুলাবালি পলিউশন এগুলো বেশি জড়িয়ে যায় এবং মুখের লোমকূপ ভরে যায়, ফলে সেখান দিয়ে ওয়েল বের হতে পারে না। ফলে, ভিতরে একধরনের বাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে সেটা ব্রণ হিসাবে ফুলে ওঠে এবং এটাই আসলে ব্রণ ওঠার মূল কারণ।
৩. লাইফ স্টাইল: এগুলো ছাড়া আরো কিছু শারীরিক সমস্যা এবং খারাপ অভ্যাসের কারণে যেমন: ঘুমে ব্যাঘাত, হঠাৎ রাত জাগা, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, মাস্টারবেশন প্রভৃতি কারণে মুখে ব্রণ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের শারীরিক সমস্যাটা আগে দূর করতে হবে।
৪. অতিরিক্ত দুঃচিন্তা: অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা করলেও ব্রণ উঠতে পারে। চিন্তার কারণে অনেকের ঘুমে ব্যঘাত ঘটে, খাবারে রুচি নষ্ট হয়, সর্বোপরি মেটাবলিজমেই আঘাত আনে, যার কারণে ব্রণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মুখের ব্রণ দূর করার উপায়
মুখের ব্রণ আসলে খুবই বিরক্তিকর। তবে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মুখের ব্রণ দূর করার উপায়গুলো হলো:
১. দিনে অন্তত তিন বার একটা ভালো ফেসওয়াস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন, এক্ষেত্রে সাবান ব্যাবহার করতে পারবেন না, কারণ সাবানে ব্রণ বৃদ্ধি পায়। ব্রনের ক্ষেত্রে জেলি জাতীয় ফেসওয়াস বেশি কাজ করে।
২. নিয়মিত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা।
৩. অনেকের দেখা যায় ২-১টা করে ব্রণ হয় মাঝে মাঝে, ঘুম ঠিকমতো না হওয়া এধরনের ব্রণ সমস্যার মূল কারণ। এধরনের ব্রণ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমালে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
৪. সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার চাদর, বিছানা, বালিশের কভার, চিরুনি, ম্যাকআপ ব্রাশ, এধরনের জিনিস পরিষ্কার করা উচিত।
৫. অবশ্যই নিয়মিত এক দিন পর মাথার ত্বক পরিষ্কার করবেন।
৬. দুশ্চিন্তা হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে যা ব্রণ বৃদ্ধি পেতে অনেক সময় সাহায্য করে। ব্রণ দূর করতে রিলাক্স থাকার চেষ্টা করুন।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা দূর করুন।
৮. অয়েলি স্কিন হলে তেল ও দুধ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
সাধারণত এই ব্যসিক ব্যসিক অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই আপনার আর কোন ব্রনের সমস্যা হবে না। এতেও যদি আপনার ব্রনের সমস্যা না কমে তাহলে একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে শারীরিক স্বাস্থ্য চেক করিয়ে নিন।
ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
এতক্ষনতো মুখের ব্রণ দূর করার উপায় নিয়ে কথা বললাম, এবার চলুন ব্রনের দাগ কিভাবে দূর করবেন সেসম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ব্রণের দাগ দূর করার উপায় সমূহ:
১. ব্রণ হলে অনেকে চাপ দিয়ে গলিয়ে দেন, এটা করবেননা। ব্রণ হলে একটা রসূনের কোয়া ২ভাগ করে ৫মিনিট ধরে রাখবেন। কিছুদিন পর ব্রণ নিজে থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
২. ব্রনের দাগ দূর করতে দারুচিনি গুড়া এবং মধুর মিশ্রন মুখের কালো দাগের উপর লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি লাগানোর পূর্বে অবশ্যই আপনার হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে দেখবেন আপনার এলার্জি আছে কিনা, যদি এলার্জি থাকে তাহলে লাগাবেন না।
৩. কালো দাগের উপর বেবি ওয়েল লাগাতে পারেন, এতে কিছু দিনের মধ্যই আপনার ব্রনের কালো দাগ চলে যাবে।
৪. দিনে দুই বার এলোভেরা জেল এবং মধুর মিশ্রন লাগাতে পারেন।
৫. মুখে নিমপাতা ব্যবহার করুন। নিমপাতা মুখের জন্য শুধু নয় নিমপাতা আপনার শরীরের স্কীনের অনেক রোগ ই সারাতে সক্ষম। এটা আপনার ব্রণ কমাতেও সাহায্য করবে। চর্মরোগ সারাতে ওস্তাদ। তাই মুখে সপ্তাহে দুইবার নিমপাতা লাগান।
৬.মুখে ডাবের পানি লাগাতে পারেন। এটা প্রাকৃতিক ভাবে আপনার মুখের দাগ দূর করতে সক্ষম।
এরপরেও যদি আপনার মুখের দাগ না যায় তাহলে আপনি লেজার ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। এটার মাধ্যমে আপনার মুখের সব রকম কালো দাগ, গর্ত, ব্রণ দূর করা সম্ভব।
ব্রণ দূর করার উপায় নিয়ে শেষ কথা
মানুষের মুখ এবং চুল সৌন্দর্য্যর প্রতীক। তাই আপনার চুল পড়া সমস্যা বা মুখের অযাচিত ব্রণ নিয়ে বসে থাকবেন না। উপরে উল্লিখিত পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করুন।
আশা করি, মুখের ব্রণের দূর করার উপায় এবং ব্রণের দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে জেনেছেন। তারপরেও যদি সমস্যা থেকে মুক্তি না পান তবে, একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।