ব্যবসা করার টিপস : একটি ব্যবসা শুরু করার সাথে পরিকল্পনা করা, মূল আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং একাধিক আইনি কার্যক্রম জড়িত। প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে জানতে নিচে স্ক্রোল করুন।
একটি স্টার্টআপ বা নতুন ব্যবসা শুরু করা প্রতিটি উদ্যোক্তারই স্বপ্ন। ব্যবসা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সকল উদ্যোগই সফল হয়না, এবং ব্যবসায় সবাই সাফল্যও পায় না। কিংবা বলা যেতে পারে বিজনেস সবার জন্য নয়। যার কারণে, বর্তমানে চাকরি বনাম ব্যবসা নিয়েও অনেকের মাঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ব্যবসা শুরু করার কৌশল জানতে আপনার একটি পারফেক্ট ব্যবসা করার টিপস ও প্লান প্রয়োজন।
তাই, আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয় ব্যবসা করার টিপস কে দুই ভাগে বিভক্ত করেছি।
প্রথমত ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত আপনার জন্য সঠিক কিনা? দ্বিতীয়ত, একটি বিজনেস আইডিয়া সফল করতে কিভাবে পরিকল্পনা করতে হয় এবং ব্যবসা করার কৌশল কি হবে তা নিয়ে।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
ব্যবসা করার টিপস | Business Tips
U.S. Bureau of Labor Statistics এর তথ্য অনুসারে,
- ২০% ছোট ব্যবসা প্রথম বছরের মধ্যেই ব্যর্থ হয়।
- ৩৩% ছোট ব্যবসা দুটি বছরের মধ্যেই ব্যর্থ হয়।
- ৫০% ছোট ব্যবসা পাঁচ বছরের মধ্যেই ব্যর্থ হয় এবং
- ৬৬% ছোট ব্যবসা ১০ বছরের মধ্যে ব্যর্থ হয়।
বিশ্বব্যাপী নতুন স্টার্টআপ ব্যর্থতার হারের এই পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, একটি নতুন ব্যবসা শুরু করে সফল করা এখন কতটা চ্যালেঞ্জিং।
নতুন ব্যবসা শুরু করা এবং একটি সফল ব্যবসা করা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। কীভাবে আপনার নিজের ব্যবসাটি সঠিকভাবে শুরু করবেন সে সম্পর্কে জানার উপর দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য এবং ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
একটি পুরানো প্রবাদ আছে যে,
‘মানুষ ব্যর্থ হওয়ার পরিকল্পনা কখনো করে না, তারা পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়’।
কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। ব্যবসা করার প্রথম টিপস এটি, অর্থাৎ পরিকল্পনায় ভুল করা যাবে না।
ভাল কোন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কোন ব্যবসায় লাফিয়ে পড়লেই হয় না। একটি উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় পরিণত করতে সুপরিকল্পনা থাকতে হবে।
অর্থাৎ, আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং কিভাবে অর্জন করবেন তাও জানতে হবে। আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্তই ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলবে। সুতরাং, আপনার ব্যবসায়ের প্রতিটি দিক যত্ন সহকারে মূল্যায়ন করা জরুরী।
ব্যবসা নাকি চাকরি!
কঠিন সত্যটি হলো একটি ভাল ব্যবসায়িক আইডিয়া সফল ব্যবসার এক ডজন ধাপের মাত্র একটি ধাপ। এর অর্থ এই নয় যে আপনার ভালো আইডিয়া নিয়ে কাজ করার কোন দরকার নেই। এর অর্থ হলো বাজারে আনার আগে আপনার আইডিয়া নিয়ে আরো অনেক কাজ করা দরকার।
কিন্তু একটি ভাল ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে ভুল লোক স্টার্ট আপ দিলে নিশ্চিতভাবেই ব্যবসা খুব বেশি দূর আগাবে না। তাই নিশ্চিত হওয়া দরকার আপনি ব্যবসা করার জন্য সঠিক ব্যক্তি কিনা। ব্যবসায় লস করার চেয়ে চাকুরিতে যদি সাফল্য পান সেটাই তো ভালো! কি বলেন?
১। সৎ হন
স্ব-মূল্যায়ন করা কুখ্যাতভাবে কঠিন কাজ। আমরা অন্যকে নিয়ে চুলছেড়া সমালোচনা করতে পারলেও নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাল নয়, আত্মসমালোচনা ব্যাপারটা আমাদের বেশিরভাগের মাঝেই নেই।
নিজের দোষ-ত্রুটি আমরা চোখে দেখি না, আবার লক্ষ্য করলেও নিজের কাছেই স্বীকার করতে চাই না। আমার কথাটি বিশ্বাস করতে না পারলে একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
১০ বা ততোধিক লোকের সাথে এই ছোট পরীক্ষাটি করতে পারেন। জিজ্ঞেস করুন উপস্থিত ব্যক্তিদের মাঝে কে কে বাইক চালাতে পারেন। দেখবেন প্রায় ১০০% হাত উপরে উঠে যাবে।
এরপর জিজ্ঞেস করুন কে কে এভারেজ বাইকারদের চেয়ে ভাল রাইড করতে পারেন? এখনো দেখবেন গড় ৯০-৯৫% হাত উপরেই থাকবে। সুতরাং, এটি আমাদের কী বলে?
“Dunning-Kruger Effect” নামের একটি থিওরি আছে, এই থিওরির মূল কথা হলো আমরা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না থাকার কারণে নিজেদেরকে অধিক সামর্থ্যবান বলে মনে করি। আসলে এত বেশি সংখ্যক মানুষ এভারেজের চেয়ে ভাল চালক হতে পারেনা।
একটি শ্রেনীর ছাত্রদের এভারেজ নাম্বার যদি ৫০ হয়, এবং তাদের অধিকাংশই যদি মনে করে আমরা এভারেজের চেয়ে ভাল, তাহলে তো এভারেজ নাম্বারটা ৫০ থাকতো না, তাই নয় কি?
তাহলে কিভাবে নিজের দোষ-গুণ সম্পর্কে জানতে পারবো? হ্যা উপায় আছে। এমন কিছু মানুষ বেছে নিন যারা আপনার সম্পর্কে ভালো জানে। তাদের কাছে আপনার সম্পর্কে বলতে বলুন। তাদের অবশ্যই নিশ্চত করবেন যে তাদের কথায় আপনি কোন কষ্ট পাবেন না। মানুষ মাত্রই নিজের সম্পর্কে খারাপ কথা বা নিজের দূর্বলতা শুনতে পছন্দ করেনা কি না!
কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর উত্তর খুজে পাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে বিশ্লেষণ করা যায়। নিচে সেসব বিষয়ে সামান্য আলোচনা করে নেওয়া যাক!
২। আপনি কি একজন সেলফ-স্টার্টার?
কোন কোম্পানির অধীনে চাকরি করা একজন কর্মী না হওয়ায় আপনাকে কী করতে হবে বা কখন কাজে আসতে হবে এসব নিয়ে প্রশ্ন করার কেউ থাকবেনা। যদি আপনি এমন কেউ হন যার অনেক কঠিন রুলস প্রয়োজন যেমন স্কুল-কলেজে পরীক্ষার প্রেশার না থাকলে অনেকের পড়া হতো না, তবে আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করা সেরা বিকল্প নাও হতে পারে।
৩। আপনি কতটা সংগঠিত?
পরিকল্পনার পাশপাশি সাংগঠনিক দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে। সত্য কথা হলো, ব্যবসা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেখানে সাফল্য কখনই গ্যারান্টিযুক্ত হয় না। আপনি যদি এমন কেউ হন যার জন্য ব্যর্থতা বা অর্থ হারানো আপনার জন্য মারাত্মক ধ্বংসাত্মক হবে, তবে সম্ভবত ব্যবসায়ের উদ্যোগ আপনার জন্য নয়।
৪। আপনার যোগাযোগ দক্ষতা কেমন?
আমরা বেশিরভাগই নিজেকে “people persons” হিসাবে বিবেচনা করি। তবে ব্যবসা মালিকরা যোগাযোগকে সম্পূর্ণ নতুন স্তরে নিয়ে যান। বিশেষ করে কোন ব্যবসা শুরু করার সময় আপনার ক্লায়েন্ট, ব্যবসায়িক অংশীদার, ইন্ডাস্ট্রি পার্টনার, পন্য সরবরাহকারী, কর্মী, হিসাবরক্ষক, আইনজীবি, এবং অন্য অনেকের সাথে দক্ষতার সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হতে হবে।
৫। আপনি কতটা সুশৃঙ্খল?
অধ্যবসায় এবং সহনশীলতা এমন দুটি বিষয় যা আপনার সাফল্য নির্ধারণ করবে। যেমনটি আমরা আগেই বলেছি, ব্যবসার শুরুতে ভুল হবে এবং এরমধ্যে কিছু ভুল হয়তো ব্যয়বহুল হবে। ছিটকে যাওয়ার পরে পুনরায় উঠতে পর্যাপ্ত সহনশীতা এবং অধ্যবসায় থাকতে হবে। জানেন তো ব্যর্থ হওয়ার একমাত্র নিশ্চিত উপায় হলো হাল ছেড়ে দেওয়া।
উপরের প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি সন্তুষ্ট হন যে আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার এবং সফল ব্যবসা করার মতো যোগ্যতা এবং সামর্থ্য রয়েছে তবে চাকরি না করে, আপনার চূড়ান্ত সাফল্যর জন্য ব্যবসা শুরু করা উচিৎ। এখন পরবর্তী পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া য়ায়।
নতুন ব্যবসা করার টিপস সমূহ | How to start a Business
একটি নতুন বিজনেস আইডিয়া সফলতার হার সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই দেখেছি। সফলতা এবং ব্যর্থতা যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকলে অনেক ভুল এড়ানো সম্ভব। চলুন ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় টিপসগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. বিজনেস আইডিয়া মূল্যায়ন করুন
ব্যবসা করার টিপস নয়, বরং এটা থাম্ব রুল। আপনার নিজের ব্যবসার ধারণাটি অবশ্যই মূল্যায়ন করতে সক্ষম হওয়া উচিৎ। যাইহোক, এই পদক্ষেপটি অবশ্য স্ব-মূল্যায়নের মতো কঠিন নয়।
আপনার বিজনেস কি রকম হবে? অনলাইন বিজনেস নাকি অফলাইন? পাইকারী ব্যবসা নাকি খুচরা! অল্প খরচে ব্যবসা শুরু করবেন, নাকি ইনভেস্ট করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যাপিটাল আছে! এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ক্লিয়ার হতে হবে।
২. টার্গেট মার্কেট শনাক্ত করুন
আপনার ব্যবসায় সফল হতে ব্যবসা করার গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় টিপসটি হলো নিজের মার্কেট সনাক্ত করতে পারতে হবে। আপনার পণ্য বা পরিষেবা কারা কিনবে?, কোন এলাকায় আপনার প্রোডাক্ট চাহিদা বেশি হবে, কোথায় কম্পিটিশন কম হতে পারে, এসব জানতে হবে।
আপনার টার্গেট মার্কেট সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে মার্কেট সনাক্তকরণের পূর্বে আপনার মানসিকতার পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রেতার মতো চিন্তা করার পরিবর্তে গ্রাহকের মতো চিন্তাভাবনা শুরু করুন। নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার ধারণা স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।
- পণ্য বা পরিষেবাটি কোন সমস্যার সমাধানের জন্য মার্কেটে আসতেছে?
- আপনার পণ্য বা পরিষেবা কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান করে?
- অন্যান্য প্রতিযোগী পণ্যের চেয়ে আপনার সমাধান কেন ভাল?
- মানুষ কি এই সমস্যার সমাধানে অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক?
আপনার টার্গেট মার্কেটের ক্রেতাদের সম্পর্কে যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সম্ভাব্য ক্লায়েন্টে সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্য জানা জরুরী:
- বয়স
- অবস্থান
- আয়
- লিঙ্গ
- পেশা
- শিক্ষা
- বৈবাহিক অবস্থা
- জাতীয়তা
- সন্তান সংখ্যা
উপরের কোন তথ্যগুলো প্রয়োজন তা আপনার পণ্যের উপর নির্ভর করবে। এই সমস্ত তথ্য আপনার পণ্য বা পরিষেবা গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তার সাথে আরও ভালভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এটি একটি ভাল বিপণন কৌশলও বটে।
৩. ব্যবসায় প্রতিযোগিতা মূল্যায়ন করুন
ব্যাবসায় প্রতিযোগীদের তিনটি বিভাগে বিভক্ত করতে পারি:
ক. সরাসরি প্রতিযোগিতা : এগুলো এমন প্রতিষ্ঠান যা আপনার ব্যবসায়ের মতো একই লক্ষ্য নিয়ে বাজারে একই পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করে। ঔষুধ কোম্পানী স্কয়ার এবং বেক্সিমকোর কথা ভাবতে পারেন।
খ. অপ্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতা : এই ধরনের প্রতিযোগিতায় প্রায় একই উপযোগিতার দুটি জিনিস হলেও বস্তুত একই নয়, যেমন ডিশ কেবল এবং স্যাটেলাইট টিভি অ্যান্টেনা।
গ. বিকল্প প্রতিযোগিতা- এধরনের প্রতিযোগিতায় বাজারে প্রচলিত একটি পণ্যের সমস্যা সমাধান করে নতুন এবং আরো উন্নত বিকল্প নিয়ে আসা। যেমন প্রচলিত চা এবং গ্রিণ টি।
আপনার প্রতিযোগীরদের শনাক্ত করার পর আপনাকে নিম্নলিখিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে :
- কতদিন যাবত ব্যবসা করছে?
- তারা যে পণ্য এবং পরিষেবাদি সরবরাহ করে তার পরিসীমা কতটুকু?
- তাদের ব্যবসায়ের প্রসার কোথায়, কিভাবে করছে?
- গ্রাহকরা পণ্য বা পরিষেবা নিয়ে কি ধরনের ফিডব্যাক দিচ্ছে? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক!
- প্রতিযোগিতায় অ্যাডভান্টেজ দিতে পারে এমন কোন কৌশল কি খুঁজে পেয়েছেন?
- তাদের বিজ্ঞাপন/বিপণনের কৌশল কী ধরনের?
- তাদের মূল্য নির্ধারনের কৌশল কেমন?
বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য হল আপনার প্রতিযোগিদের শক্তির দিকগুলো জেনে নেওয়া এবং আরও ভাল প্রতিযোগিতা করার জন্য তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা।
৪. নতুন ব্যবসা শুরু করতে খরচ নির্ধারণ করুন
নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করার পর এর আর্থিক সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে আপনার নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে:
- আপনার ব্যবসাটি শুরু করা থেকে লাভজনক হয়ে উঠতে কী পরিমাণ খরচ হবে?
- কোন কোন খাতে কি পরিমাণ প্রাথমিক ব্যয় হবে?
- আপনার চলমান ব্যয় কত হবে?
- নতুন ব্যবসা শুরু করতে আপনার মূলধনের উৎস কি?
- ব্যবসায়ের উপার্জন ক্ষমতা কী এবং এটি অর্জনে কতক্ষণ সময় লাগবে?
- আপনি কীভাবে ব্যবসা ধরে রাখবেন এবং লাভজনক না হওয়া পর্যন্ত আপনার বিভিন্ন বিল পরিশোধ করবেন?
আপনার কাছে উপরোক্ত তথ্যগুলো হাতে পাওয়ার পর আপনাকে অতিরিক্ত অতিরিক্ত “আকস্মিক” ব্যয়ের জন্য কিছু ‘অতিরিক্ত’ খরচ যোগ করতে হবে।
তাছাড়া একটি ব্যবসা কত সময় পর লাভজনক হয়ে উঠবে সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করার সময় আমরা প্রায়শই অতিরিক্ত আশাবাদী হয়ে উঠি, ফলাফলস্বরূপ বিজনেস দাড়াবে দাড়াবে সময়ে গিয়ে অর্থ সংকটের কারণে ছেড়ে দিতে হয়।
একটি স্টার্ট-আপকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আপনার কতটা অর্থ দরকার? কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। কিছু লোক আপনাকে আপনার অনুমানকে দ্বিগুণ বা এমনকি তিনগুণ করতে বলবে।
তবে আপনার স্টার্ট-আপ দেওয়ার জন্য অনুমানগুলোর সাথে আরো ৫০% যোগ করে শুরু করা উচিত। এসব জটিল কাজে পাকা হিসাব রাখা জরুরী, প্রয়োজনে বাজেট পরিকল্পনা ও ট্র্যাকিং অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।
৫. নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য পেশাদার পরিকল্পনা
ব্যবসা করার টিপসগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপের একটি পরিকল্পনা। আপনি যদি এখনো কোন পরিকল্পনা না করে থাকেন তবে প্রথম একটি পেশাদার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করুন।
“পেশাদার” অর্থ এই নয় যে আপনাকে বাইরে যেতে হবে এবং এটি করার জন্য কাউকে ভাড়া করতে হবে। আমি বোঝাতে চাইছি একটি পেশাদার ব্যবসা পরিকল্পনা কেমন হয় তা আপনার জানা দরকার এবং অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।
প্রায়শই নতুন উদ্যোক্তারা একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে অবহেলা করে, এটি ব্যবসা শুরু করার ভাল কৌশল নয়। কোনও পরিকল্পনা ছাড়া আপনি জানেন না আপনি কোথায় চলেছেন। বিজনেস কোন এডভেঞ্চার নয়, প্রতিটি ধাপ আপনাকে সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা মাফিক দিতে হবে। নইলে আপনার প্রতিষ্ঠিত প্রতিযোগীরা এক ধাক্কায় আপনাকে প্রতিযোগিতার বাইরে বের করে দিবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা আপনাকে একটি শক্ত ভিত্তিতে শুরু এবং ব্যবসা চালিয়ে যেতে সক্ষম করবে। আপনি যখন তহবিল বা বিনিয়োগ নিরাপদ করার সন্ধান করছেন তখন একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও প্রয়োজনীয়।
একটি ভালো স্টার্ট-আপের সলিড ফাউন্ডেশন হলো বিজনেস স্ট্রাটেজি। একটি পরিকল্পনায় সাধারণত
- ব্যবসা বিভাবে চলবে?
- আপনি আপনার বিজনেস থেকে কী চান,
- কী অর্জন করতে চান,
- কিভাবে আপনার চাওয়াগুলো পূরণ করবেন এসব বিষয়ই থাকে।
৬. ব্যবসায় Money Principles ব্যবহার করুন
একজন মালিক হিসাবে আপনার প্রতিটি পয়সা কোথায় ব্যয় হবে এবং কোথায় করা উচিত তা সঠিকভাবে জানতে হবে। সমস্ত ব্যবসায়েই সময়ের সাথে সাথে ব্যায় বাড়তে থাকে এবং অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হতে পারে।
ব্যবসা শুরুর পূর্বে আপনার নির্বাচিত ব্যবসার সাথে নিজেকে পরিচিত করতে হবে এবং আপনার ব্যয়গুলো সম্পর্কে ব্যপক ধারণা নিতে হবে। সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আপনার অপশনগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
যেমন- আপনি যদি এমন কোন কাঁচামাল (Raw Materials) সোর্স পেলেন যেখানে ইউনিট প্রতি ১টাকা কমে পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো আপনার খরচ কমানোর পাশাপাশি প্রতিযোগিদেরও টেক্কা দিতে পারবেন।
৭. ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করুন
নতুন ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্যকে অনুসরণ করতে করতে হঠাৎ লক্ষ্য বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন দিকে ফোকাসড হয়ে যান এবং লক্ষ্য ছাড়িয়ে গিয়ে অবশ্বম্ভাবীভাবে সমস্যায় পড়েছেন। দ্রুত লাভ করার চিন্তা থেকে ফোকাস বাড়িয়ে দেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই কাজটিই ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি একজন ওয়েবসাইট ডেডেভলপার হিসেবে কাজ শুরু করলেন এবং আপনি একজন এক্সপার্ট ওয়েব ডেভেলপারও বটে। আপনি এমন কোনও ক্লায়েন্টকে পেলেন যিনি ডেভেলপমেন্ট এর পাশাপাশি এসইও চান। এখন আপনি যদি কাজটি নেন তাহলে কি ঘটবে?
হতে পারেন আপনি পৃথিবীর সেরা ওয়েব ডেভেলপার, কিন্তু গ্রাহক আপনার কাছে সেরা এসইও টাও প্রত্যাশা করছেন। গ্রহক যদি আপনি এসইও করায় সাইট র্যাঙ্কে কোন উন্নতি না পান, ক্লায়েন্ট খুশী হবে না নিশ্চয়ই! জানেন তো প্রথম ইম্প্রেশনের দ্বিতীয় কোন সুযোগ হয়না।
আপনি যদি রেফারেল (একজনের মুখে প্রশংসা শুনে আরো অনেক কাজ পাওয়া) ব্যবসার কোনও সুযোগ চান তবে এই প্রথম প্রকল্পগুলো ভালভাবে করা দরকার। আপনার প্রথম কয়েকজন ক্লায়েন্ট পুনরায় গ্রাহক হয়ে ওঠেন কিনা তাও নির্ভর করে আপনার প্রথম ইম্প্রেশনের উপর।
মনে রাখবেন, অ্যামাজন প্রথমে শুধু বই বিক্রি করতো। তারপর আস্তে আস্তে তাদের ব্যবসা এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে ভার্চুয়ালি যাই কিনতে চান অ্যামাজনে পেয়ে যাবেন।
তাই আমাজনের মতো হওয়ার চেষ্টা করুন। একটি সংকীর্ণ ফোকাস দিয়ে শুরু করুন এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে প্রসারিত করুন।
ব্যবসা করার টিপস বিষয়ে পরিশেষ
অধিকাংশ উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা শুরুর পূর্বে ব্যবসা শুরু করার কৌশল নিয়ে এত বেশি ভাবেন যে ব্যবসাই শুরু করতে পারেন না। আমাদের মধ্যে অনেকে পারফেকশনিস্ট রয়েছেন যারা সবকিছু পারফেক্ট না হলে কোন কিছু করতে চান না। আপনার মাঝেও এমন পারফেকশনিস্ট হবার প্রবণতা থাকলে সতর্ক থাকুন।
বিজনেস করতে গিয়ে আপনি হয়তো ভুল করবেন। ভুলগুলোকে গ্রহণ করুন, আমরা কেউই সর্বদা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। অপ্রত্যাশিত বাধা আসবেই, কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন ব্যবসা শুরু করে সফল হতে নিজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা জরুরী, এবং ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স বের করে আনার চেষ্টা করুন
আশা করি, ব্যবসা করার টিপস সমূহ আপনার বিজনেস কৌশল তৈরি করতে এবং সফল হতে অনেকটা সহায়ক হবে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।