পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট এবং বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য দেশের সর্বত্র বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। তবে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ঘরে বসে পার্সোনাল একাউন্টের খোলার মতো এতটা সিম্পল নয়। তাই, বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট কিভাবে নিতে হয়, সেবিষয়ে আমাদের ব্যবসায়ী ভাইদের মাঝে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, বিকাশ এজেন্ট একাউন্টের কমিশন এবং সুবিধা থেকে মাস শেষে মোটা অংকের ইনকাম নিয়ে আসতে পারে।
তাই, বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য কি কি লাগে, বিকাশ এজেন্ট হওয়ার শর্ত, বিকাশ এজেন্ট হতে কত টাকা লাগবে, সর্বোপরি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ভালোভাবে জানতে হবে।
আপনার সুবিধার্থে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে বিকাশ এজেন্ট হতে হয় তথা বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ও আনুসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করবো ইন-শা-আল্লাহ।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য কি কি লাগবে
১. প্রতিষ্ঠিত দোকান: বিকাশ এজেন্ট হওয়ার প্রথম যোগ্যতা একটি দোকান থাকা। এমন জায়গায় দোকান থাকতে হবে যেখানে বিকাশ এজেন্ট প্রয়োজন এবং চাহিদা রয়েছে।
২. ট্রেড লাইসেন্স: আপনার দোকানের সরকারি ব্যবসা লাইসেন্স বা ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। না থাকলে এলাকার ইউনিয়ন অফিস অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স পেতে সরকারি কর দিতে হয় যা এলাকাভেদে ২০০-৫০০ টাকা হতে পারে।
৩. জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট আইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট এর ফটোকপি (৪ কপি)
৪. সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৪ কপি)
৫. একটিভ সিম (বিকাশ একাউন্ট নেই এমন)
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২২ | bKash Agent Registration
প্রতিষ্ঠিত দোকান ও এলাকায় বিকাশের চাহিদা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বিনিয়োগ করার মতো অর্থ থাকলেই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলা যায়। বর্তমানে প্রচলিত ৩টি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনে নিবো।
1. সার্ভিস পয়েন্ট থেকে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
উপরিউক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করার পর নিকটস্থ বিকাশ কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টে যেতে হবে। আপনার কাগজ জমা নেওয়ার কিছুদিনের মাঝেই আপনার দোকানের লোকেশন, মার্কেট চাহিদা এবং আশেপাশে অন্য কোন বিকাশ এজেন্ট আছে কিনা, এসব চেক করতে বিকাশ মার্কেটিং অফিসার আসবেন।
2. মার্কেটিং অফিসার কর্তৃক বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনি যদি বিকাশ অফিসে যেতে না চান, তাহলে বিকাশের মার্কেটিং অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার এলাকায় যদি কোন বিকাশ এজেন্ট থাকেন, তাহলে তারসাথে যোগাযোগ করতে প্রায়ই একজন মার্কেটিং অফিসার আসেন। তাই, সেই এজেন্ট এর নিকট থেকে নাম্বার নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
অথবা, বিকাশ হেল্পলাইন নাম্বার ১৬২৪৭ নাম্বারে কল করে কাস্টমার এজেন্ট এর সাথে কথা বলে তাকে জানান যে আপনি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে চান। তিনি আপনার নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আপনার এলাকার মার্কেটিং অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার কাছে পাঠাবেন।
আপনার কাগজপত্র এবং ব্যবসার ডিটেইলস ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে মার্কেটিং অফিসার বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট এপ্রুভ করতে সম্মতি দিলে ১মাসের মাঝেই আপনার বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
3. অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
কোন মোবাইল কন্টাক্ট না করেও অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য অনুরোধ পাঠানো যায়। এজন্য বিকাশের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট ফরম পূরণে যা প্রয়োজন হবে:
- যিনি এজেন্ট হতে চান তার নাম (ভোটার আইডি অনুযায়ী)
- ফটো আইডি নাম্বার (জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট আইডি/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স)
- ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার
- যোগাযোগ নম্বর
- দোকানের নাম
- দোকানের ঠিকানা
- ইমেইল আইডি
আপনার অনুরোধ পাওয়ার পর যোগাযোগ করার জন্য আপনার এলাকার বিকাশ মার্কেটিং অফিসার চলে আসবেন, প্রয়ীজনীয় ডকুমেন্টস নিবেন এবং ভেরিফিকেশন করে জমা দিবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ মাসের মাঝেই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট একটিভ হয়ে যাবে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার সময় একাউন্টে কিছু টাকা লোড করে নিতে হবে যেন আপনার কাস্টমার আপনার দোকানে এসে সেন্ড মানি করতে পারে।
অন্যদিকে, আপনার ক্যাশেও টাকা থাকতে হবে, যেন ক্যাশ আউট করার পর কাস্টমারকে ক্যাশ দিতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হলো বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগবে?
না, কোন নির্দিষ্ট এমাউন্ট নেই। আপনার দোকানের লোকেশন, ডেইলি ট্রাঞ্জেকশন কত হতে পারে এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রথমবার একটা এমাউন্ট লোড করে নিতে হবে।
গ্রামের কোন দোকানে ৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করলেও হতে পারে, আবার শহরের কোন দোকানের জন্য হয়তো সেটা ৫-১০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট ধরে রাখার শর্ত:
- প্রতিদিন মিনিমাম ২০০০ টাকা লেনদেন করতে হবে
- বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে সবসময় ৭০০০ টাকার বেশি থাকতে হবে।
- প্রতিমাসে মিনিমাম ৫টি বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলতে হবে
বিকাশ এজেন্ট কমিশন | bkash agent profit
বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে পার্সোনাল একাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট কিংবা পার্সোনাল বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠানো, উভয় ক্ষেত্রেই বিকাশ এজেন্ট কমিশন পাবেন।
বিকাশ কোড *২৪৭# ডায়াল করে প্রতি ১০০০ টাকা ট্রাঞ্জেকশনের জন্য বিকাশ এজেন্ট ৪.১০ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন।
বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ দিয়ে প্রতি ১০০০ টাকা ট্রাঞ্জেকশনের জন্য বিকাশ এজেন্ট ৪.৩০ টাকা কমিশন পাবেন।
লেনদেনের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি অ্যাপ দিয়ে করলে বিকাশ এজেন্ট প্রতি হাজার টাকায় ০.২০ টাকা অতিরিক্ত কমিশন পাবেন। অর্থাৎ, প্রতি হাজার লেনদেনে বিকাশ এজেন্ট ৪.৫০ টাকা কমিশন পাবেন।
লেনদেনের মাধ্যম | বিকাশ এজেন্ট কমিশন (প্রতি হাজারে |
USSD/*247# | ৪.১০ টাকা |
বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ | ৪.৩০ টাকা |
বিকাশ অ্যাপ দিয়ে ৯০% ট্রাঞ্জেকশন | ৪.৫০ টাকা |
বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট থেকে টাকা পাঠানোর জন্য প্রথমে *247# ডায়াল করলে কয়েকটি অপশন দেখতে পারবেন, যথা:
- Cash in – বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য
- SA Transfer – সুপার এজেন্ট এর কাছে টাকা উঠানোর অপশন
- B2B Transfer – বিকাশ মার্কেটিং অফিসার এর কাছে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট
- My bKash – বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট এর ব্যালেন্স ও অন্যান্য তথ্য দেখার জন্য
- Helpline
এছাড়া, বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ ইনস্টল করেও বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট থেকে টাকা পাঠানো যায়, এবং বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনের জন্য অতিরিক্ত কমিশনও পাওয়া যায়।
এজন্য প্রথমে আপনার ফোনের প্লেস্টোর অথবা আইস্টোর থেকে বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে লগইন করে নিতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট লিমিট
বিকাশ এজেন্ট থেকে কোন নাম্বারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পাঠানো যায়, এরচেয়ে বেশি ক্যাশ ইন করতে পারবেন না।
একই নাম্বারে দিনে সর্বোচ্চ ৫ বার ক্যাশ ইন করা যাবে।
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট থেকে একবারে সর্বোচ্চ ৩০০০০ টাকা ক্যাশ আউট করে এজেন্ট একাউন্টে নেওয়া যাবে।
একই নাম্বার থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ বার এজেন্ট একাউন্টে ক্যাশ আউট করা যাবে।
এছাড়া বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে আর কোন লিমিট নেই। আপনি যত ইচ্ছা ততো সংখ্যক নাম্বারে প্রতিদিন লেনদেন করতে পারবেন। যত বেশি লেনদেন তত বেশি প্রফিট হবে।
বিকাশ এজেন্ট এর সুবিধা
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য পূর্ব থেকেই একটি দোকান থাকতে হয়। সুতরাং, বিকাশ এজেন্ট হলে আপনি আপনার দোকান থেকে প্রতি মাসে খুব বড় একটা এমাউন্ট অতিরিক্ত লাভ করতে পারবেন।
যদি একজন বিকাশ এজেন্ট প্রতিদিন ১ লাখ টাকা ট্রাঞ্জেকশন করেন, তাহলে তার দৈনিক ন্যূনতম ৪১০ টাকা লাভ হবে। বিকাশ অ্যাপ দিয়ে লেনদেন করলে সেটা ৪৩০ থেকে ৪৫০ টাকা হবে।
মাস শেষে তিনি দৈনিক ১ লাখ টাকা ট্রাঞ্জেকশন এর জন্য ১২৩০০ টাকা কমিশন পাবেন। ট্রাঞ্জেকশন এর পরিমাণের সাথে সাথে বিকাশ এজেন্ট এর লাভ বাড়তে থাকবে।
আপনার একই দোকান থেকে প্রতি মাসে এত বাড়তি ইনকামের চেয়ে বড় সুবিধা আর কি হতে পারে!
বিকাশ এজেন্টে একাউন্ট দিয়ে পার্সোনাল একাউন্টে লেনদেনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিল পেমেন্ট করা যায়। এবং এধরনের লেনদেনেও কমিশন পাবেন।
FAQ: বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট থেকে অন্য এজেন্ট একাউন্টে লেনদেন করা যায়?
জ্বি না, বিকাশ এজেন্ট অন্য কোন এজেন্ট একাউন্টের সাথে লেনদেন করতে পারবেন না।
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট দিয়ে বিকাশ ব্যবসা করা যায়?
জ্বি না, এটা আইনত অপরাধ। তাছাড়া, বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টে লেনদেনের উপর লিমিট রয়েছে। তাই, আপনি চাইলেও বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না।
আইডি কার্ড না থাকলে বিকাশ এজেন্ট হওয়া যাবে?
আইডি কার্ড লাগবেই। তবে আপনার পরিচিত অন্য কারো নামেও বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলে ব্যবসা করতে পারবেন।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট কি বন্ধ করা যায়?
অবশ্যই। আপনি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট বন্ধ করতে বিকাশ হেল্পলাইন অথবা আপনার এলাকার মার্কেটিং অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন।
বিকাশ এজেন্ট একাউট থেকে কি বিল পে করা যায়?
হ্যা, বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট দিয়ে সকল বিল পেমেন্ট করতে পারবেন।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম তো জানলেন। তবে বিকাশ এজেন্ট নেওয়ার পর আপনাকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, বিকাশ এজেন্টদের একাউন্টে পার্সোনাল একাউন্টধারীদের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ থাকে।
তাই, হ্যাকাররা প্রায়শই এধরনের এজেন্টকে টার্গেট করে থাকে। মনে রাখবেন, বিকাশ কখনো পিন, ওটিপি জিজ্ঞেস করে না, তাই কখনো কাউকে আপনার বিকাশ এজেন্ট একাউন্টের পিন বা ওটিপি বলবেন না।
আশা করি, আমাদের আলোচনা থেকে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে জানার পর আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন নেই। তারপরেও যদি কোনকিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।