জ্বর এমন একটি শব্দ যেটা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমন মানুষ খুজেঁই পাওয়া যাবে না যার কখনও জ্বর হয়নি। তারপরেও জ্বর আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত, জ্বর হলে করণীয় কি সেসম্পর্কে ভালভাবে জানি না।
করোনা আসার পর থেকে জ্বর হলে সবার ভয় ও দুশ্চিন্তা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে হঠাৎ সারাদেশে জ্বরের ঘটনা হুট করে বেড়ে গিয়েছে। বেড়ে চলেছে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বর কোনভাবেই অবহেলা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাবে না।
জ্বর হলে করণীয় কি, কীভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং জ্বর কীভাবে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি, জ্বর সাড়ানোর ঘরোয়া উপায়, সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
জ্বর কি | what is Fever in Bangla
জ্বর হচ্ছে শরীরের এমন একটা অবস্থা যখন শরীরে কোন জীবাণু আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রানপণভাবে যুদ্ধ শুরু করে এবং এই যুদ্ধের মূল অস্ত্র থাকে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের বংশবিস্তার রোধ করা।
তবে যদি জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং কোনভাবেই না কমানো যায়, এটা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে করোনার সময়ে আইসিইউতে অনেক রোগী মারা গিয়েছেন ভাইারাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি অতিরিক্ত যেটাকে সাইটোকাইন স্টর্ম নামে অভিহিত করা হয়েছে।
জ্বর এর লক্ষণ | Fever symptoms
জ্বর হলে করণীয় কি তা জানার আগে জ্বর হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে হবে। জ্বর হয়েছে কিনা জানতে রোগীর শরীরে তাপমাত্রা মাপতে হবে। এখানেই একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ চলে আসে। কারণ ডাক্তারি জীবনে দেখেছি, বেশীরভাগ রোগীর বাসায় থার্মোমিটার নেই বা থাকলেও তারা মাপতে জানেন না। সুতরাং থার্মোমিটার রিড করা বা মাপতে শিখতে হবে।
তো শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে কিনা এটা জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে নরমাল বা সাধারণ তাপমাত্রা কোনটি। কারণ সঠিকটা না জানলে ভুলটা ধরতে পারবেন না। সাধারণত মানুষের শরীরে তাপমাত্রা থাকে আনুমানিক ৯৮° ফারেনহাইট বা ৩৭° সেলসিয়াস। এটা আবার মানুষ থেকে মানুষে বিভিন্নতা রয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে বিকালে তাপমাত্রা বেশী হতে পারে। মাসিকের সময় তাপমাত্রা বাড়তে পারে। ভারী এক্সারসাইজ করলে শরীর অতিরিক্ত উত্তপ্ত হতে পারে। তবে জ্বর কখন বলবো সেটা প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের মধ্যে কিছু তারতম্য আছে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বরের লক্ষণ
- সাধারনত ৯৯°-৯৯.৫° ফারেনাইট বা এর উপরে (মুখে/বোগলে), অথবা
- ১০০.৪ বা তার উপরের (পায়ুপথে) তাপমাত্রাকে জ্বর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের লক্ষণ
- ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনাইট (পায়ুপথে),
- ৯৯.৫ ডিগ্রী ফারেনাইট (মুখে) ও
- ৯৯ ডিগ্রী ফারেনাইট (বোগলে) তাপমাত্রা থার্মোমিটারে প্রদর্শিত হলে তাকে আমরা জ্বর হিসাবে চিহ্নিত করব।
জ্বর হওয়ার কারণ | Fever Causes
আমাদের মস্তিস্কে হাইপোথ্যালামাস নামক একটি অংশ রয়েছে যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।
যখন কোন কারণে যেমন ইনফেকশন হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কাজ করা শুরু করে, এই হাইপোথ্যালামাস তখন তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আরো কিছু কমপ্লেক্স মেকানিজম শুরু হয় যা তাপামাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
সাধারণত যেসব কারণে জ্বর আসে সেগুলো হলো:
- ব্যাক্টেরিয়াজনিত জ্বর যেমন ব্যাকটেরিয়াল সাইনুসাইটিস
- ভাইরাসজনিত জ্বর যেমন কোভিড ১৯
- ফাঙ্গাসজনিত জ্বর ভ্যালি ফিভার
- বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময়ের জ্বর
- ভ্রমণজনিত জ্বর
- পশুপাখির সংস্পর্শজনিত জ্বর
- অতিরিক্ত গরমের কারণে জ্বর
- অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারনে জ্বর
- কিছু এন্টিবায়োটিক ও প্রেশার কমানোর ঔষধের কারণে জ্বর
- ক্যান্সারজনিত জ্বর
- বাতরোগজনিত জ্বর
- ভ্যাকসিনজনিত জ্বর
জ্বরের সাথে কী কী উপসর্গ থাকতে পারে?
- শরীর ব্যথা
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- মাথা ব্যথা
- মাথা ঘুরানো
- দূর্বলতা
- চোখে জ্বালাপোড়া
- কানে ব্যথা ও পুঁজ বার হওয়া
- গলা ব্যথা
- বুকে ব্যথা ও নিংশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়াশ
- শরীরে ছোট লাল ফুসকুড়ি
- প্রসাবে জ্বালাপোড়া
- খিঁচুনি ইত্যাদি
জ্বরের সাথে খিঁচুনি হলে করণীয় কি?
১. বাচ্চা হলে যে কোন একপাশে আলতো করে শুইয়ে রাখতে হবে
২. আশেপাশে ধারালো ও বিপজ্জনক বস্তু সরিয়ে রাখতে হবে
৩. শিশুর জিহ্বা যেন দাঁতের মধ্যে না পড়ে খেয়াল রাখতে হবে
৪. খিঁচুনির সময় শক্ত করে চেপে ধরা যাবে না। কারণ এটা সম্পূর্ণ মস্তিস্কজনিত একটা ঘটনা যার উপর রোগীর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং জোর করলে রোগী ব্যথা পেতে পারে।
৫. এই সময় পানি খাওয়ানোর চেস্টা করা যাবে না
৬. খিঁচুনি বেশীক্ষন স্থায়ী হলে হাসপাতালে নিতে হবে
সাধারণ জ্বর এবং কোভিড ১৯
বর্তমানে সারাদেশে জ্বরের প্রকোপ হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে। ব্যক্তিগত চেম্বার ছাড়াও মানুষ এখন রাত বিরাতে যখন ডাক্তারকে পাচ্ছেন না তখন টেলিমেডিসিনের পিছনে ছুটছেন।
ধারণা করা হচ্ছে কোভিডের নতুন কোন ওয়েভ শুরু হতে যাচ্ছে। কারণ প্রতিদিন, হাজার হাজার মানুষ কোভিড শনাক্ত হওয়া শুরু হয়েছে। কোভিডজনিত মৃত্যুর সংখ্যাটাও এখন ডাবল ডিজিট ক্রস করে ফেলেছে।
কী কী উপসর্গ দেখে আমরা ধারণা করতে পারি যে একজন মানুষ কোভিড আক্রান্ত হতে পারে:
- প্রচন্ড শুকনো কাশি যেটা এতোটাই তীব্র হয় যে রোগীর নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হয়ে যায়।
- কাশি ছাড়াও নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হতে পারে।
- বুকে চাপ দিয়ে ধরতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে জ্বর থাকতে পারে।
- শারীরিক দুর্বলতা কোভিড রোগীদের মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য, প্রায় প্রতিটা রোগীই দূর্বলতার অভিযোগ জানান।
- এছাড়া নতুন কিছু স্ট্রেইনে ভয়েস বা স্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
- স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার কিছু ঘটনা জানা গেছে।
- অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
যদিও অনেকক্ষেত্রে জ্বর ও গায়ে ব্যথা ছাড়া আর কোন উপসর্গ না থাকলেও কিছু কিছু উপসর্গ নিয়ে কোভিড রোগীরা হরহামেশাই হাসপাতালে আসছেন।
জ্বর হলে করণীয় কি | জ্বর সারানোর ঘরোয়া উপায়
হঠাৎ জ্বর হলে আমরা সবাই দিশেহারা হয়ে যাই। বিশেষ করে রোগী যদি নিকটাত্মীয় বা কাছের কেউ হয়। সবসময় হয়তো ডাক্তার নাও পাওয়া যেতে পারে। কিংবা কোথাও বেড়াতে গেলে বা দুর্গম কোন এলাকাতে যেখানে আশেপাশে হাসপাতালও নেই, সেক্ষেত্রে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কস্টসাধ্য।
জ্বর হলে আমাদের সাধারণত একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে জ্বর কি ১০১° ফারেনহইাট বা এর উপরে গেছে কিনা নাকি এটা ১০০° বা এর নিচে আছে।
যদি জ্বর ১০১° বা এর উপরে থাকে তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি নিতে হবে।
আর যদি জ্বর ১০০ বা নিচে থাকে তাহলে মুখে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারবেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী।
এছাড়া, জ্বর হলে আপনাকে রোগীর গা মুছিয়ে দিতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত জ্বর না কমে। এটাকে আমরা বলি Rapid Tapid Sponging। হালকা কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে হালকা ভাবে নিঙড়ে যেন ভিতরে পানি চুপচুপ না করে এভাবে রোগীর গা মুছতে হবে। সাথে কপালে পট্টি দিতে পারেন এবং মাথা ধুইয়ে দিতে পারেন।
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে শেষ করার পরে যেন মাথা যেন অতিরিক্ত ভিজে না থাকে। এতে করে জ্বর পরবর্তীতে আবার বেড়ে যেতে পারে। রোগীর হাত ও পায়ের তলাও ভিজে কাপড় দিয়ে বারবার মুছতে হবে।
কোন জ্বর সমস্যায় ইমার্জেন্সি ডাক্তার দেখাতে হবে?
যেকোন রোগে কখন ইমার্জেন্সি অবস্থা এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর কোন রোগ না বরং এটা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। তাই জ্বর হলে কখন ইমার্জেন্সি সেটা জানা খুবই জরুরী। নিচে কিছু উপসর্গ বর্ণনা করা হলো যার মাধ্যমে বুঝা যাবে যে
১. যদি দীর্ঘদিন থেকে জ্বর থাকে এবং বারবার জ্বর ফেরত আসে। এটাকে পাইরেশিয়া অব আননোউন অরিজিনও বলা হয়ে থাকে।
২. জ্বর যদি কোনভাবে ১০১° ফারেনহাইট এর নিচে নামতে না চায়
৩. জ্বরের সাথে যদি খিঁচুনি থাকে
৪. জ্বরের সাথে যদি শ্বাসকস্ট থাকে
৫. জ্বরের সাথে যদি ঘাড় শক্ত হয়ে যায়
৬. জ্বরের সাথে যদি অনবরত বমি ও পাতলা পায়খানা হতে থাকে
৭. জ্বরের সাথে যদি শরীরে পক্সের মতো গোটা গোটা দানা উঠে
৮. জ্বরের সাথে যদি রোগী ভুলভাল বলা শুরু করে বা কাউকে চিনতে না পারে
৯. জ্বরের সাথে যদি কেউ প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভব করে বিশেষ করে মাংসপেশীতে
১০. জ্বরের সাথে যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়
জ্বর হলে কি কি খাবার সেবন করতে হবে?
জ্বরের সময় সাধারণত মুখে রুচি থাকে না। কিছুক্ষেত্রে সবকিছু তিতা লাগে কিংবা বিস্বাদ। তাই অনেকে খাবার খেতে চান না যেটা একদমই অনুচিত। একটা ইঞ্জিন চলতে যেমন তেল লাগে তেমনি আমাদের শরীরকে চালাতেও লাগে খাদ্য। মুখে রুচি না হলেও একপ্রকার জোর করেই খেতে হয়। কিছু খাবার আছে যা শরীরে শক্তি যোগানোর পাশাপাশি জ্বর সারাতে সাহায্য করে এবং সেগুলো সম্পর্কেই কিছু জেনে নিবো আজকে।
১. জাউ ভাত
জাউভাত বা গলানো ভাত রোগীর জন্য অনেক উপকারী। এটা নরম হওয়ায় খেতে সুবিধা। বিশেষ করে জ্বরের সাথে গলা ব্যথা বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হলে জাউয়ের বিকল্প নেই। অনেকে আদা মাখিয়ে খাওয়ার সাজেশনও দিয়ে থাকেন। তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন শাক সবজিও যোগ করতে পারেন।
২. টকজাতীয় ফল
মাল্টা, কমলা ,আপেল, আঙুর, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি টকজাতীয় ফলে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভিটামিন ও পুস্টিরও কমতি নেই। এছাড়া, টকজাতীয় ফল রক্তে পিএইচ (pH) কমিয়ে দেয় যাতে করে জীবাণু যেন বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।
৩. সিদ্ধ খাবার
সিদ্ধ খাবার হজম হতে সুবিধা হয়। তাই জ্বরের রোগীর সিদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। এতে খাবারগুলো হজম দ্রুত হয়। যেমন সিদ্ধ সবজি, ডিমসিদ্ধ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
৪. আদা ও রসুন
আদার ও রসুন প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন সবজি। সর্দি জ্বরসহ যে কোন অসুস্থতা নিরাময়ে কার্যকরী। আদা কিংবা রসুন তাই রান্নায় বেশী বেশী করে দিতে হয়। এছাড়া এতে খাবারের স্বাদও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
৫. মধু
মধু একটি উপাদেয় খাদ্য। জ্বরের যে খাবারগুলি আমরা চিকিৎসকরা রেকমেন্ড করি তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই মধু। তবে কখনই ১ বছরের নিচের বাচ্চাকে মধু দিতে হয় না।
৬. কালজিরা
কালজিরার গুণের কথা আমরা সবাই জানি। বলা হয়ে থাকে মৃত্যু ছাড়া সবধরনের রোগের উপায় এই কালজিরা। প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পুস্টি উপাদান সমৃদ্ধ এই খাবার তাই জ্বরে আমাদের অন্যতম প্রয়োজনীয় আহার্য। এছাড়া কালজিরা খেতে না পারলে এখন কালজিরার তেল পাওয়া যায় যা মধুর সাথে মিশিয়ে অনেকেই করোনা জ্বরের সময় খেয়ে ভাল ফলাফল পেয়েছে।
৭. প্রোবায়োটিক
প্রোবায়োটিক হলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরে বাসা বেঁধে অন্যান্য জীবাণুর হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। কিন্তু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনও প্রোবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
জ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
জ্বর হলে তো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেই হবে। যদিও বিভিন্ন কারণে মানুষজন বাসায় বসে ঘরোয়া চিকিৎসা নেয় এবং একমাত্র খারাপের দিকে গেলেই চিকিৎসা নিতে ছুটে। কিন্ত জ্বর হলে এগুলো করার আগে কীভাবে জ্বর প্রতিরোধ করা যায় সেটা নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যাতে পারে প্রাথমিকভাবে। যেমন –
১. পানি পান
প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানি আমাদের বেঁচে থাকার জন্যেই শুধু অপরিহার্য না। পানি আমাদের শরীরের ইম্যুনিটিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই সাহায্য করে। পানি পান করলে মস্তিস্ক, হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, কলিজা, ফুসফুস সবই ভাল থাকে এবং রক্তসঞ্চালনও সঠিকভাবে হয়।
২. পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতা
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে শুধু ব্যক্তিপর্যায়ে না, পারিবারিক এবং সামাজিক পর্যায়েও। আশেপাশে নোংরা ফেলা যাবে না বরং নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ব্যক্তি পর্যায়ে হাতের নখ ছোট রাখতে হবে। খাওয়ার আগে হাত ধুতে হবে। রুম নোংরা করা যাবে না। পায়খানা প্রসাবের পর হাত সঠিকভাবে পরিস্কার করতে হবে।
৩. পু্স্টিকর খাদ্য
পুস্টিগুণসম্পন্ন সুষম খাদ্য সেবন করতে হবে। বর্তমানে ফাস্টফুড ও তৈলাক্ত খাবারের যুগে মাছ শাক সবজি ও প্রয়োজনীয় ফলমুলোমূহ যেন বর্তমান প্রজন্তের বেজায় অপছন্দ। যার কারণে খুব সহজেই শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু। যার ফলশ্রুতিতে হচ্ছে জ্বর ও অন্যান্য সমস্যা।
৪. স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল
সঠিকভাবে জীবনযাপন এখন সময়ের দাবী। সকাল সকাল উঠা, সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া, নিয়মিত এক্সারসাইজ, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস পরিত্যাগের মাধ্যমে যে কেউ নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। বর্তমান সময়ে ধুমপানসহ বিভিন্ন ধরনের বাজে অভ্যাস জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে রেখেছে যার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি দিনদিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ
নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো-আপে থাকতে হবে। প্রত্যেক ঋতুতেই বিভিন্ন ধরনের রোগ আমাদের আক্রমণ করে এবং জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে চললেই আমরা অনেকটাই নিজেদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারবো।
আশা করি, আজকের আলোচনায় উল্লেখ করা জ্বর প্রতিরোধের উপায় এবং জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা আপনার দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ্য থাকতে কাজে লাগবে।