চিরতা খাওয়ার উপকারিতা | চিরতা খাওয়ার নিয়ম

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

সত্য যেমন তেতো, তেমনি চিরতার স্বাদ যতই তেতো হোক, শরীরের জন্যে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের অস্বীকার করার সুযোগ নেই। চিরতার পাতলা ডালপালা পরিষ্কার করে এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে অর্ধেকটা পান করলে এবং বাকি অংশ রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে, এবং এর বহুবিধ ব্যবহারে যেসব শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই, আজকে আপনার সামনে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে, আসুন জেনে নেই চিরতা আসলে কি (what is chirota in bangla)?

মূলত চিরতা হচ্ছে ঔষধি গাছ যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এই চিরতা উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Swertia chirayita. চিরতা গাছে ফুল থাকা অবস্থাতেই গাছের ডাল-পালা সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের জন্যে প্রস্তুত করা হয়। চিরতা খাওয়ার সঠিক মাত্রা দিনে ২ থেকে ৭ গ্রাম।

চিরতার খাওয়ার উপকারিতা সমূহ | Benefits of Eating Chitrota

১) অনেকেরই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। চিরতা খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হলো এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

২) জ্বর অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের অনেকেই ঘন ঘন জ্বর ও বমির সমস্যায় পড়ে। পিত্তজ্বর, ঘন ঘন বমি, ইনফ্লুয়েঞ্জাতে চিরতার ব্যবহার উপকার দেয়।

৩) অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় টাইফয়েড জ্বরের পর, প্যারাটাইফয়েড হয়। এক্ষেত্রে টাইফয়েড জ্বরের পর চিরতা খেলে প্যারাটাইফয়েড থেকে রক্ষা পেতে উপকারিতা পাওয়া যায়।

৪) নিয়ম করে চিরতা খাওয়া এলার্জির উপশমে সহায়ক। যাদের নিয়মিত এলার্জির সমস্যা হয়, তাদের ক্ষেত্রে এটা উপকার দিবে।

৫) নিয়মিত চিরতা ভেজা পানি পান, উচ্চরক্তচাপ ও কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৬) অনেকেই নিয়মিত পেটের সমস্যায় ভূগেন। চিরতার পানি পান বদহজম ও পেটের অন্যান্য সমস্যা কমায়।

আরো পড়ুন:  কাঠ বাদাম এর উপকারিতা | প্রতিদিন কয়টি কাঠবাদাম খাওয়া উচিৎ?

৭) অনেকের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় এবং সাথে অসংখ্য ঔষুধ। এই ক্ষেত্রে ঔষুধের পাশাপাশি চিরতার পানি উপকারে আসবে।

৮) কৃমির সমস্যায় কাজ করে, কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

৯) হাঁপানির সমস্যায় চিরতা খায়ের উপকারিতা পাওয়া যায়।

১০) চিরতা খাওয়ার উপকারিতাগুলোর মাঝে অন্যতম হলো এটি দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করে। তাছাড়া, চিরতার ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ রয়েছে।

১১) লিভারের সমস্যায় চিরতা খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায়।

১২) নিয়মিত চিরতা খেলে রক্ত পরিষ্কার থাকে, ফুড পয়জনিং কম হয়।

১৩) নিয়মিত চিরতার রস খেলে শরীর সতেজ থাকে, দুর্বলতা কমে।

১৪) শরীরের কাটা ছেড়া, ক্ষত দ্রুত শুকায়, শরীরে অবসাদ কমে, ঝিমুনিভাব কমে।

১৫) তেতো খাবার ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই পরিমিত ও নিয়ম অনুসারে চিরতা ব্যাক্টেরিয়াটা ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

১৬) চিরতা শরীরকে সার্বিক ভাবে সুস্থ ও ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে।

১৭) চিরতা শরীরে রক্তকোষ গঠনে সাহায্য করে। তাই নিয়ম অনুযায়ী চিরতা সেবনে শরীরে রক্তশূন্যতার সমস্যা কমে।

চিরতার খাওয়ার নিয়ম

১) নিয়মিত চিরতার পানি পানের ক্ষেত্রে রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস বা সমপরিমাণ পানিতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে অর্ধেক এবং বাকি অংশ রাতে ঘুমানোর আগে পান করা যাবে।

২) কাটা ঘা বা ক্ষত শুকানোর ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ বা সমপরিমাণ গরম পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রাখলে, সকালে ওই পানি ছেকে তা দিয়ে ক্ষত মুছে নিলে উপকার পাওয়া যাবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করতে হবে।

৩) জ্বর সারাতে ৭ থেকে ৮ কাপ গরম পানিতে চিরতা সিদ্ধ করে সেটাকে ২ থেকে তিন কাপে পরিণত করে সকালে অর্ধেক বিকেলে অর্ধেক খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

৪) হাঁপানির সমস্যার বা হঠাৎ কাশি বৃদ্ধি পেলে ১ থেকে দুই গ্রাম চিরতার গুঁড়ার সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। আশা করা যায় ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে উপকার পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:  মধু খাওয়ার উপকারিতা | 10 Benefits of Eating Honey

৫) চুলপড়া রোধ করতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা রাতে গরম পানিতে রাখা চিরতা সকালে ছেকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। পরবর্তীতে মাথা ভালো করে পরিষ্কর করে নিন।

৬) অনেকেরই চুলকানির সমস্যা থাকে। এ ক্ষেত্রে ২৫ গ্রামের মতো চিরতা নিয়ে কে ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। ১০০ গ্রাম সরিষার তেল চুলায় গরম করুন, ফেনা কমে গেলে সেখানে চিরতার ব্লেন্ডটি ছেড়ে দিন। চিরতা ভাজা হয়ে গেলে, এবার তেল ছেকে নিন। এই তেল চুলকানোর স্থানগুলোতে হালকা করে মালিশ করতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার, কেটে যাওয়া বা ক্ষত হয় জায়গায় এই তেল লাগানো যাবেনা।

৭) নিয়মিত চিরতা খেতে চাইলে একটানা ২০ থেকে ৩০ দিন সেবনের পর সমপরিমাণ সময় বিরতি দেওয়া দরকার।

চিরতা খাওয়ার অপকারিতা

উপকারের পাশাপাশি চিরতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কিছু অপকারিতাও আছে। প্রয়োজনের চাইতে বেশি চিরতা খাওয়া বা ব্যবহার করা দুটোই হিতে বিপরীত হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে পরিশেষ

পরিশেষে এটাই বলবো যে, যদিও চিরতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক, তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে যেকোন জিনিস ব্যবহারের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। চিরতা অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়াও আবার উচিত নয়।

চিরতা খাওয়ার অপকারিতা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়াতে দৈনিক ২ থেকে ৭ গ্রামের বেশি খাওয়া যাবেনা। তবে গর্ভবতী মা বা শিশুকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ বা ভেষজ খাওয়ানো উচিত নয়।

দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন এমন রোগী বা, ক্রিটিকাল অসুখে ভুগছেন এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিরতা খাওয়া বা ব্যবহার করা উচিত। নির্দিষ্ট মাত্রায়, নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে চিরতা খাওয়া অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী।

আশা করি, চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানাতে পেরেছি। আপনার এবিষয়ে এখনো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top