আর্টিকেলটি পড়ার আগে একটু চিন্তা করে নেওয়া যাক, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো- কেন আপনার কাজের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করা প্রয়োজন? যদি আপনি কারণটি জানেন তবে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আর্টিকেলটিতে উল্লেখ করা উপায়গুলো দ্রুত বুঝতে সুবিধা হবে। যারা এখনো ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাদের জন্য ২টি পয়েন্ট আলোচনা করা প্রয়োজন, তাহলে হয়তো আপনি কেন প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে যাবেন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরী কেন?
চর্ম রোগের জন্য যদি আপনি ব্যাথানাশক কোন ক্রিম ব্যবহার করেন, তবে ফলাফল তো শূন্যই হবে! কাজের পারফরম্যান্স উন্নতি করার জন্য জানতে হবে কোন কারণে আপনার কর্ম ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তা যদি না জানেন, তবে কোন কৌশলগুলো নিয়ে কাজ করলে উন্নতি করা সম্ভব তা জানা কঠিন হয়ে যাবে।
যখন আপনার কর্ম দক্ষতা কমতে শুরু করবে আপনার ব্যক্তিগত জীবনও অবশ্যই আক্রান্ত হবে। অর্থাৎ আপনাকে একসাথে দুইটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
কর্ম দক্ষতা রাতারাতি বৃদ্ধি পায়না। আপনি ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর জানেন আর নাই জানেন, প্রত্যেকেরই কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হতাশা, সংকোচ, বিভ্রান্তি কিংবা আত্মবিশ্বাসের মতো বিষয়গুলো সিভি, লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এসব বিষয়ে প্রথমে কাজ করা জরুরী।
১) প্রতিকূল পরিবেশ :
কাজের প্রতিকূল পরিবেশ উৎপাদনশীলতায় মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। দূর্বল পরিচালনা, অযোগ্য নেতৃত্ব, স্বীকৃতির অভাব, দূর্ব মনোবল, দলীয় সংযোগ সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি পারফরম্যান্স উন্নতির পথে বড় বাধা।
যদি আপনি এধরনের সমস্যায় আক্রান্ত কোন কাজের পরিবেশে কাজ করতে হয়, তবে আপনার পারফরম্যান্স উন্নতি করার জন্য বেস্ট অপশন কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন করা।
যদি আপনি কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে না পারেন বা না চান তবে আর্টিকেলটি আপনাকে শেখাবে কিভাবে প্রতিকূল পরিবেশে পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করা যায়।
কাজের পরিবেশ যদি আপনার অনূকুলে হয়, তবে আর্টিকেলে উল্লেখ করা ৫টি কৌশল প্রয়োগ করার জন্য আপনি প্রস্তুত।
২) ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জ :
জীবন এমন একটা গ্রাফ যার ওঠানামা চিরন্তন, কখন আকাশ ছুবে আর কখন মাটির তলায় নেমে যাবে কেউ জানি না। এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের কর্মক্ষমতায় আঘাত করে। বিশেষ করে যারা দূর্বল মনের মানুষ, অল্পতেই পথ হারিয়ে ফেলি তাদের জন্য মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
তাছাড়া জীবনে এমন কিছু ক্রাইসিস আসে যা থেকে বের হওয়া সত্যিই কঠিন, এসব চ্যালেঞ্জ বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।
Jenny Blake, the author of Pivot, wrote that: “The only move that matters is your next one.”
যদি আপনার জীবন হঠাৎই পাল্টে যায়, সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়! তবুও স্থির থাকুন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন আর পরের ধাপটি দেওয়ার চিন্তা করুন।
পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করার ৫টি কৌশল
না, কাজের পারফরম্যান্স বৃদ্ধির কোন জাদু এখানে নেই। যেসব কর্মীদের প্রোডাক্টিভিটি লেভেল অনেক উন্নত তারা নিচের ৫টি কৌশল সর্বদা ব্যবহার করে থাকে। আমি আত্মবিশ্বাসী যদি আপনি যদি আপনিও নিয়মিত চর্চা শুরু করেন তবে আপনার পারফরম্যান্স অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।
১) পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারন :
জীবনের লক্ষ্য থাকলে মানুষ লক্ষ্য অর্জন করার থেমে যায়, এজন্য অনেকে লক্ষ্য সেট করে না। এসব লজিকবিহীন ডায়লগ সিনেমার জন্যই ঠিক আছে। কখনো শুনেছেন বিলগেটস তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে, জ্যাক মা তার ব্যবসার পরিসর কমিয়ে দিচ্ছে? মানুষ নতুন নতুন স্বপ্ন বুনতে এবং পূরণ করতে ভালোসে।
আপনার যদি লক্ষ্য না থাকে তবে মাঝমাঠে গিয়ে সঠিক রাস্তা খুঁজে পাবেন না, আপনার সঠিক রাস্তা খুঁজে পেতেই বেলা ফুড়িয়ে যাবে।
আপনি যদি লক্ষ্য ঠিক করেন তবে আপনারকে ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় লাগবেনা। আপনার উদ্দেশ্য এবং দিক-নির্দেশনা ঠিক করতে কি অর্জন করতে চান সে বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরী।
স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে আপনি যে লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চান সেগুলো লিখে ফেলুন। প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময়সীমা সেট করুন এবং নিয়মিত অগ্রগতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করুন। জানেন তো ‘আত্মসমালোচনা সবচেয়ে বড় সমালোচনা’!
২) কাজের পরিকল্পনা প্রতি রাতে করে ফেলুন :
যদি আপনার পরেরদিন কি কাজ করতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা না থাকে তবে প্রায়সই আপনার কাজে ঝামেলা বাধবে, আপনি ফলাফলস্বরূপ সহকর্মীদের সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এসব সমস্যায় পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে আপনি নিজেকে সরিয়ে ফেলেন যা আপনার উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। দিনে কোন কাজগুলো করতে হবে রাতেই ঠিক করে নিলে বিচ্ছিন্ন এমন ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
৩) সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখুন :
অনেকেই আমরা একা থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই বৈশিষ্ট্য আপনার জন্যই শত্রু হয়ে দেখা দিবে। আপনার প্রতিদিনের কাজের মাঝেই কিছু সময় সহকর্মীদের জন্য রাখুন।
কাজের চাপে সময় বের করতে না পারলেও কাজের জন্যও একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়, সেসময়টাকে কাজে লাগান। একটু হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলেও সুসম্পর্ক রাখা যায়।
সহকর্মীদের সাথে ভাল সম্পর্ক আপনার কাজের পরিবেশকে উপযুক্ত করার পাশাপাশি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলে। যা আদতে আপনার কাজের প্রোডাক্টিভিটিকেই বৃদ্ধি করবে।
৪) কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা :
আমাদের অবচেতন মন পরিবর্তন পছন্দ করে না। ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা সবকিছু আমাদের অবচেতন মন থেকেই আসে। এরা আপনাকে নতুন চ্যালেঞ্জ কিংবা আপনার গোল অর্জন করতে প্রতিকূল অবস্থার সাথে লড়াই করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কখনো এসবকে পাত্তা দিবেননা।
বন্ধু, কলিগ, সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন, পরামর্শ নিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের লক্ষ্যের প্রতি দায়ব্ধ থাকুন এবং তা অর্জন করতে এগিয়ে যান।
৫) সফলতা উদযাপন করুন :
মন প্রায়শই আমাদের ব্রেনের সিদ্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান করে। মনকে কন্ট্রোল করতে পারাই সফলতার চাবিকাঠি। নিজেকে ট্র্যাকে রাখা এবং মোমেন্টাম ধরে রাখার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো নিজের সফলতা উদযাপন করা। আপনার সফলতা যত ছোটই হোক উদযাপন করতে ভুলবেননা। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথেেএসব সেলিব্রেশন আপনার পরের দিন আরো বড় সফলতা পাওয়ার মোটিভেশন।
নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ এবং নিয়মিত সফলতা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি আকাঙ্ক্ষা এবং মোটিভেশন।
শেষ কথা :
কাজের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি বা উন্নত করার জন্য আপনাকে ভোর ৪টা থেকে ১৪ ঘন্টা কাজ করতে হবেনা, এটা কোন ভাল পারফরমারের কাজও নয়।
একজন দক্ষ কর্মী তার কাজের প্রতি ফোকাসড থাকে, নিজের প্লান নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখে, কি করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে নেয়। প্রোডাক্টিভ পারফরমাররা কম পরিশ্রমে দক্ষতার সাথে কাজ করে।
আপনিও একজন ভাল পারফরমার হতে পারেন, সেক্ষেত্রে উপরের ৫টি কৌশল আপনাকে নাটকীয়ভাবে কাজের পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।