দেখতে সিমের বীজের চাইতে সামান্য বড় কিন্তু কাজুবাদাম এর উপকারিতা অসামান্য। বাদামের জগতে রাজকীয় আসন অধিকার করেছে এই কাজু বাদাম।
আমাদের আজকের আলোচনা কাজুবাদাম এর উপকারিতা নিয়েই। আপনিও যদি কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তবে ঝটপট পড়ে নিন আমাদের আর্টিকেলটি। চলুন তবে মূল আলোচনা শুরু করা যাক!
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
কাজুবাদাম এর উপকারিতা | Kaju Badam Upokarita
কাজু বাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে চলুন কাজু বাদামের পরিচয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কাজু বাদামের ইংরেজি প্রতিশব্দ Cashew Nut. কাজু বাদাম বা Cashew nut এর বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale.
উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশ সমূহে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এই কাজু। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলেও ইদানিং এর বেশ ভালো চাষাবাদ হচ্ছে। যা থাকে:
কাজু বাদামের উপাদান সমুহ (এক আউন্স পরিমাণ কাজু বাদামে):
- ক্যালরি – ১৫৭ গ্রাম;
- প্রোটিন – ৫ গ্রাম;
- ফ্যাট – ১২ গ্রাম;
- কপার – ৫৭% (প্রতিদিনের চাহিদার);
- আয়রন – ১১% ( প্রতিদিনের চাহিদার);
- ফাইবার – ১ গ্রাম;
- কার্বোহাইড্রেটস – ৯ গ্রাম।
- এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম ইত্যাদিও আছে।
শরীরের সুস্থতা কে না চায়! কিন্তু শরীরের চাহিদা অনুযায়ী যত্ন ক’জনইবা নিতে পারে। যারা পারে, তারা পায় রোগমুক্ত দীর্ঘ জীবন।
রোগমুক্ত থাকার জন্য আপনার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের উপাদান। যার নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন সুস্থ জীবন। তেমনি একটি উপাদান কাজু বাদাম বা Cashew nut. এবারে জানবো নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা।
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
১. হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়
মস্তিষ্ক থেকে শুরু পায়ের পাতা পর্যন্ত অনবরত রক্ত সঞ্চালন করে দেহকে কর্মক্ষম রাখে হৃদপিণ্ড। তাই এই হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব আপনার। নিয়মিত সঠিক পরিমাণ কাজু বাদাম আপনার হার্টকে দিতে পারে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা।
কাজু বাদামে আছে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ যা দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল) হ্রাস করে এবং উপকারী কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বৃদ্ধি করে।
যখন আপনার হার্টের শিরা উপশিরায় এই লো ডেনসিটি কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে তখন হার্ট স্বচ্ছন্দে রক্ত সঞ্চালন করতে পারবে না ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এর মতো বিপদজনক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই সময় থাকতে যদি নিয়মিত কাজু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তাতে আপনারই ফায়দা।
২. ওজন কমাতে কাজুবাদাম
আপনার কি দ্রুত ওজন বেড়ে যাচ্ছে? মুটিয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে চিন্তিত? তবে আপনার জন্য সহজ সমাধান আছে এই কাজু বাদামে। নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে এবং কমে যাওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত সহায়ক।
কাজু বাদামে আছে ওমেগা-৩ যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন বা এলডিএল এর পরিমাণ হ্রাস করে শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
৩. কাজুবাদাম হাড় মজবুত করে
কাজু বাদমে আছে নানা ধরনের খনিজ উপাদান। উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান হলো:
- ক্যালসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়া
- ভিটামিন-কে ইত্যাদি।
আপনারা হয়তো ইতিমধ্যেই জেনে থাকবেন যে উক্ত উপাদান গুলো আমাদের হাড়ের বৃদ্ধি ও সঠিক গঠনে সহায়ক। কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে অস্টিওপোরোসিস এর মতো রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে।
আপনার বয়স যদি ৩০ বছরের নিচে হয় তাহলে এখনই আপনার সময়। এখন থেকে যদি নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে ৪০ বছরের পর থেকে বাকি জীবন আর বাতের ব্যাথা কিংবা গিটের ব্যাথার যন্ত্রণা সইতে হবে না।
আর যাদের বয়স ৪০ কিংবা তার উপরে তাদেরও দুশ্চিন্তার কিছুই নেই, আপনারাও এখন থেকেই খেতে পারেন যা আপনাদেরকে দেবে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ হাড়ের নিশ্চয়তা।
৪. চোখের যত্নে
আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। কিন্তু চোখের যত্ন নেয়ার কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, যতক্ষণ না চোখ নিজে থেকেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়!
সত্যি বলতে চোখ যখন নিজেই মনে করিয়ে দেয় তখন আমাদের তেমন কিছুই করার থাকে না। নিজেদের হেলায় আমরা খুইয়ে বসি চোখের মতো অমূল্য রতন।
চোখের যত্নেও কিন্তু বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে এই কাজু বাদাম। কাজু বাদামে আছে জিয়াজ্যানথিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট। এই এন্টিঅক্সিডেন্টটি চোখকে নানাবিধ দূষণ জনিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে।
নিয়মিত কাজু খাওয়ার অভ্যাস শেষ বয়সে আপনার চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
৫. ত্বকের যত্নে কাজুবাদাম
সুন্দর ত্বক কে না চায়! কিন্তু চাইলেই কি সবাই পায়? ত্বকের কমনীয়তা বজায় রাখার জন্য সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। আপনার নিয়মিত খাবারের তালিকায় যদি কাজু বাদাম থাকে তবে আপনার ত্বক সুন্দর করার দায়িত্বটা তারই।
কাজু বাদামে আছে সেলেনিয়াম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, নানা ধরনের ফাইটোক্যামিকেলস ও প্রোটিন। ত্বকের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে ত্বকের যত্নে এসব উপাদানের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
৬. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কাজুবাদাম
আপনি কি এনিমিয়ায় ভুগছেন? কাচাকলা, কচুশাক কিংবা জিয়ল মাছ খেতে খেতে বিরক্ত? তাহলে মুখের স্বাদ পরিবর্তনে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন মজাদার কাজু বাদাম। কাজু বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ কপার।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, আমাদের শরীরে আয়রন এবং কপার যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমে যায় তাহলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আর ফলাফলে দেখা দেয় এনিমিয়া কিংবা লো ব্লাডপ্রেসার এর মতো রোগ।
কাজু বাদামে থাকা এই প্রচুর পরিমাণ কপার আমাদের দেহের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের মাত্রাকে তরান্বিত করে এবং রক্তাল্পতা জনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে নিয়মিত সঠিক পরিমাণ কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস দেহের প্রায় ৫৭% কপারের চাহিদা পুরণে সক্ষম।
৭. চুলের যত্নে কাজুবাদাম
আপনি কি সুন্দর ঝলমলে রেশমি ঘন চুল পেতে চান? এমন চুল পাওয়ার জন্য কত কিছুই না এতদিনে ট্রাই করেছেন। কিন্তু ফলাফল জিরো! বরং, নানা ধরনের কেমিকেলযুক্ত তেল ব্যবহার করে চুলের বারোটা বাজিয়েছেন!
কথা গুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে আপনার জন্য সুন্দর সমাধান আছে এই কাজুবাদামে। কাজু বাদাম নিঃসৃত তেল মাথার স্ক্যাল্পে এমন প্রভাব সৃষ্টি করে যাতে করে শরীরের অভ্যন্তরে এক ধরনের এনজাইমের নিঃসরণ ঘটে। এই এনজাইম চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমায় এবং চুলকে করে তোলে আরও ঝলমলে ও সিল্কি।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজুবাদাম
ডায়াবেটিসকে বলা হয় সকল রোগের মা। এক ডায়াবেটিস রোগ থেকে শরীরে জন্ম নিতে পারে হাজারো ব্যাধি। তাই বলে এমনটা ভাবার কারণ নেই যে এর কোনো প্রতিকার নেই। রোগটা অনেকটা বংশ পরাম্পরায় হয় বলে এটার পূর্ব প্রতিরোধ হয়তো নেই কিন্তু নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনে প্রতিকার ভালোই পাওয়া যায়।
আপনি যদি ডায়াবেটিস আক্রান্ত হন এবং নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কাজুবাদাম রাখেন তবে এটি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে কাজুবাদামে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ স্তর পরিচালনা করে অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে। এতে করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
অনেক তো জানলেন কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়মটাও নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে। নিয়মটা একদমই সোজা। তা হলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ৬-৭ টা বড়জোর ১০ টা কাজুবাদাম রাখতে পারেন।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আগের দিন রাতে এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে কাজু বাদাম গুলো ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে পানি সহ বাদামগুলো খেয়ে নিতে পারেন, এতে স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
এছাড়া, কাজু বাদাম আপনি নাস্তা হিসেবেও খেতে পারেন। সল্টেড কাজু খেতে কাঁচা অপেক্ষা বেশি সুস্বাদু।
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তবে চোখ বন্ধ করে সল্টেড কাজুকে না বলুন। এটা আপনার উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি করবে।
বর্তমানে ইউটিউবে কাজু বাদামের নানা ধরনের মুখরোচক রেসিপি পাওয়া যাচ্ছে। আপনি ভোজনরসিক হয়ে থাকলে সেসবও ট্রাই করতে ভুলবেন না যেনো!
কাজু বাদামের দাম কত?
বাংলাদেশে প্রতি কেজি কাজুবাদাম এর দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। আমরা প্রথমেই বলেছি এটা আমাদের অঞ্চলের ফল নয়। যেহেতু বাংলাদেশের চাহিদার বেশির ভাগ ক্ষেত্রবিশেষে পুরোটাই আমদানি করে আনতে হয় তাই দাম কিছুটা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।
দাম দেখে ভড়কে গেলেন? কিন্তু একটু হিসেব করে দেখুন নিয়মিত কাজুর পেছনে অর্থ ব্যয় করে kaju badam er upokarita নেওয়া ভালো! নাকি শরীরের অমূল্য কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অযত্নে অবহেলায় নষ্ট করে ডাক্তারের পেছনে অর্থ ব্যয় সাথে বোনাস দৌড়াদৌড়ি ভালো? বুদ্ধিমানরা সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন আশা করি।
কাজুবাদাম এর উপকারিতা নিয়ে পরিশেষ
আমাদের আজকের প্রবন্ধে আমরা কাজুবাদাম এর উপকারিতা, উৎপত্তিস্থল, এর উপাদান ও দাম ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি।
এখন আপনারা যদি নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজেদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করে নেন তাহলেই আজকের প্রবন্ধের স্বার্থকতা।
nice airticle
Thanks a bunch
মাশাআল্লাহ! চমৎকার গোছানো এবং তথ্যবহুল একটি লেখা। 💚
Thanks a lot…stay with Pratiborton.