ওজন কমানোর সহজ ও ঘরোয়া উপায় : 25 Weight loss tips

ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমাতে চান, ওজন কমানোর উপায় বা weight loss tips খুঁজছেন? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। অতিরিক্ত ওজন আমাদের অনেকেরই একটি বড় সমস্যা।ওজন কমানোর জন্য অনেকেই অনেকরকম চেষ্টা হয়তো করে দেখেছেন, এবং এখনো কোনো ভালো ফলাফল পাচ্ছেন না, অনেকে আবার খুব দ্রুত কিংবা ৭ দিনে ৫ কেজি ওজন কমানোর জন্য না খেয়েও চেষ্টা করেছেন।

এসব ছেড়ে দিন, ওজন কমানোর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী উপায় হলো নিয়মিত ডায়েট ফলো করে আস্তে আস্তে কমিয়ে ফেলা।কম খান কিন্তু খাওয়া বন্ধ করা যাবেনা

আপনি চাইলে খুব সহজে আপনার ওজন কমিয়ে নিতে পারবেন। তবে,ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং  দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই আপনি আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমিয়ে নিতে পারবেন।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

ওজন কমানোর উপায় ও ২৫ টি Weight loss tips

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়আমাদের আজকের স্বাস্থ্যবিষয়ক টিউটোরিয়ালে আপনার ওজন কতটুকু বেশি আছে, কতটুকু কমাতে হবে এবং কিভাবে ওজন কমাবেন সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, লেখাটা একটু দীর্ঘ, সময় নিয়ে পড়ুন, আশা করি উপকারে আসবে।

অতিরিক্ত ওজন কি? (What is Extra Weight)

আপনার ওজন স্বাভাবিক আছে নাকি অতিরিক্ত আছে তা নির্ণয় করা যায় BMI (Body Mass Index) এর মাধ্যমে। আপনার BMI যদি ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে আপনার ওজন স্বাভাবিক আছে।

আপনার BMI যদি ২৫-২৯.৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে আপনার অতিরিক্ত ওজন আছে এবং ৩০-৩৫ কিংবা এর থেকেও বেশি BMI কে মেদবহুল হিসেবে ধরা হয়।

কিভাবে BMI নির্ণয় করবেন? (How to Calculate BMI)

BMI নির্ণয় করার জন্য আপনি কিলোগ্রাম অর্থাৎ আপনার ওজন ও আপনার উচ্চতা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রথমেই আপনার ওজন কত এবং উচ্চতা কত তা জানতে হবে। এরপর আপনার উচ্চতা কে মিটারে কনভার্ট করে নিতে হবে।বডি মাস ইনডেক্স

উদাহরণস্বরূপ- ধরুন আপনার ওজন ৬০ কেজি এবং আপনার উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। এখন আপনার উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চিকে মিটারে কনভার্ট করলে হয় ১.৬ মিটার। এখন ১.৬ এর বর্গ করতে হবে অর্থাৎ, (১.৬×১.৬)=২.৫৬।

এখন আপনার মোট ওজনকে ২.৫৬ দিয়ে ভাগ করতে হবে অর্থাৎ, (৬০÷২.৫৬)=২৩.৪।

আমরা আগেই জেনেছি BMI ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ হলে আপনার ওজন স্বাভাবিক তাই বলা যায় যে এখানে যেহেতু BMI ২৩.৪, তাই ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতায় ৬০ কেজি ওজন স্বাভাবিক।

এভাবে আপনি নিজেই BMI নির্ণয় করে আপনার ওজন স্বাভাবিক আছে নাকি কমাতে হবে, কমাতে হলে কতটুকু কমালে BMI স্বাভাবিক হবে তা জেনে নিতে পারবেন।

ওজন কেন বাড়ে বা ওজন বাড়ার কারণ কি?

ওজন কিভাবে কমানো যায় এর চেয়ে আমাদের আগে ভাবা উচিত ওজন কেনো বাড়ে। কারণ- ওজন বাড়ার কারণগুলো যদি আপনি জানতে পারেন তাহলে এই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন যা ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় উপায়।

ওজন বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে। তন্মধ্যে ক্ষতিকর ও অনিয়মিত খাদ্যাভাস এবং শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম না করা অনেকাংশে দায়ী। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ দেওয়া হলো।

১। অলসতা বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা

আমাদের যে পরিমান শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত তার চেয়ে যখন কম পরিশ্রম করি বিশেষ করে শুধু খাওয়া আর ঘুমের মধ্যে থাকি তাহলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া শারীরিক ব্যায়াম না করার কারণে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

২। অতিরিক্ত খাওয়া

আমাদের অনেকের একটি বদ-অভ্যাস হলো যখন তখন খাওয়া। বিশেষ করে অতিরিক্ত খাওয়া। প্রতিদিন একজন মানুষের যে পরিমান খাওয়া দরকার তার চেয়ে বেশি খাওয়া। বিশেষ করে, চর্বি অথবা ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি পরিমানে খাওয়া। যার ফলে অতিরিক্ত হারে ওজন বাড়তে থাকে।

৩। বংশগত বা জেনেটিক্যাল

অনেকের দেখা যায় সব নিয়ম মেনে চলেন কিন্তু তারপরও ওজন বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এর কারণ হলো বংশগত প্রভাব। আপনার বাবা-মা কিংবা আপনার বংশের মধ্যে যদি এরকম মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি কিংবা মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ কিছু কিছু জিনিস আমরা বংশগতভাবে পেয়ে থাকি।

৪। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া

আমরা যারা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাই তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ভাতের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই যারা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ভাত খান তাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আরো পড়ুন:  ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি | ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

তাছাড়াও অন্যান্য অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার ওজন বৃদ্ধি করে। যেমন: পপকর্ণ, দুধ, আলু, সফট ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, রুটি ইত্যাদি।

৫। বিভিন্ন ধরণের ঔষধ

আমরা আমাদের ট্রিটমেন্টের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের ঔষধ নিয়ে থাকি। এই ঔষধগুলোর একেকটির একেক ধরণের পার্শপ্রতিক্রিয়া থাকা। এমন কিছু কিছু ঔষধ আছে যেগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহারের কারণে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।

৬। বিভিন্ন ধরণের রোগ

কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোর কারণে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন: হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস এর ফলে ব্যবহৃত ইনসুলিন, পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম এবং কুশিং সিনড্রোমের মোট রোগগুলির কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়।

৭। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া

আমরা বেশির ভাগ মানুষ চর্বি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এই চর্বি জাতীয় খাবারগুলো আমাদের সবার জন্য অনেক ক্ষতিকর। এগুলো আমাদের শরীরে স্থুলতার পরিমান বাড়ায়। যার ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়।

৮। ওজন বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক

বিভিন্ন কারণে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে যার মধ্যে অনেকগুলো সম্পর্কে এখন আপনিও জানেন। ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে যেমন আমাদের শারীরিক সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়, তেমনি শরীরের মধ্যে নানা ধরণের রোগ-বালাই বাসা বাঁধতে পারে। ওজন বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিকগুলি নিচে আলোচনা করা হলো।

৯। উচ্চ রক্তচাপ

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের মতো খারাপ রোগ আপনার শরীরে দানা বাঁধতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হলে আপনার হার্ট ফেইলিউর, হার্ট এটাক সহ মাথা ধরা, বমি বমি ভাব হতে পারে। তাছাড়াও এর ফলে আরো নানা রোগে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।

১০। টাইপ-২ ডায়াবেটিস

ওজন বৃদ্ধির ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হতে পারেন। আর এর ফলে আপনার অতিরিক্ত পিপাসা পাবে, বার বার মূত্র ত্যাগ করতে হতে পারে, শরীর ও মন ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরবে তাছাড়াও এর ফলে হার্ট, এবং চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

১১। স্ট্রোক

অতিরিক্ত ওজন শুধু শরীরের উপরেই প্রভাব ফেলে না এটি আপনার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট। আর মস্তিষ্কের উপর প্রভাব পড়লে আপনার স্ট্রোক হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ওজন আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

১২। হার্ট এটাক ও হার্ট ফেইলিউর

অতিরিক্ত ওজনের ফলে শরীরে ফ্যাট এর পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই ফ্যাট বা চর্বি গুলো আমাদের শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এর ফলে আমাদের হার্টের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে হার্ট এটাক ও হার্ট ফেইলিউর এর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

১৩। মানসিক সমস্যা

ওজন বৃদ্ধির ফলে যে শুধু শারীরিক সমস্যাই হয় তা কিন্তু নয়। এর প্রভাব আপনার মানসিক স্বাস্থ্যেও বড় রকমের প্রভাব ফেলে। যেমন এর ফলে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, উদ্বেগ (anxiety) সহ আরো নানা ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

১৪। স্লীপ এপনিয়া (Sleep Apnea) ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা

স্লীপ এপনিয়া হলো একটি বড় রকমের রোগ। যার ফলে একজন অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট মানুষের ঘুমানোতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও শ্বাসকষ্টও হতে পারে। মূলত স্লীপ এপনিয়া এর ফলে ঘুমানোর সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়।

১৫। চলাফেরায় সমস্যা

একজন স্বাভাবিক ওজনওয়ালা মানুষ যে পরিমাণ কাজ ও পরিশ্রম করতে পারবে একজন অস্বাভাবিক অতিরিক্ত ওজনের মানুষ ঠিক সে পরিমান কাজ করতে পারবে না। অল্পতেই হাপিয়ে উঠবে। তাছাড়া চলাফেরা এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সমস্যার সমুক্ষীন হবে।

ওজন কমানোর উপায়

প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমানোর উপায়আপনি যদি ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন তাহলে দেখতে পারবেন যে, ওজন কমানোর উপায় ও weight loss নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ও  আমাদের এই সাইবার দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া আছে। যেসব তথ্যের বিজ্ঞানের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এসব তথ্য প্রমাণিতও নয়।

আজকে আমি আপনাদের দেখাবো ওজন কমানোর ৩০ টি প্রাকৃতিক উপায় যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওজন খুব সহজেই কমিয়ে নিতে পারবেন। এই তথ্যগুলো প্রমাণিত এবং বিজ্ঞানের সাথে এর সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

১। ডায়েট এ প্রোটিন যুক্ত করুন

আপনার ওজন কমানোর জন্য প্রোটিন একটি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ প্রোটিনকে বলা হয় পুষ্টির রাজা। আপনি প্রতিদিন যে পরিমান ক্যালোরি গ্রহণ করেন তা যদি আপনার চাহিদার তুলনায় বেশি হয় তাহলে ধীরে ধীরে আপনার ওজন বাড়তে থাকবে।

তাই এই অতিরিক্ত ক্যালোরি গুলোকে পোড়ানোর জন্য আপনার বেশি শক্তির দরকার হবে। বেশি শক্তির জন্য বেশি প্রোটিন দরকার। কারণ একমাত্র প্রোটিনই পারে আপনার এই অতিরিক্ত ক্যালোরি গুলোকে নিঃশেষ করতে।

প্রতিদিন যদি আপনার ডায়েট এ প্রোটিন যুক্ত করেন তাহলে আপনার বিপাক ক্রিয়া ৮০-১০০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে আপনার ওজন বাড়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আপনার ওজন সবসময় ব্যালান্স থাকবে। সকালের নাস্তায় ডিম আপনার জন্য হাই প্রোটিন হিসেবে কাজ করবে।

২। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে

প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোতে সাধারণত অতিরিক্ত চিনি, ফ্যাট বা চর্বি এবং ক্যালোরি ব্যবহার করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো অনেক মজাদায়ক হয়ে থাকে যা আপনাকে আরো সেইসব খাবার বেশি বেশি খেতে ঊদ্বুদ্ধ করবে।

এই খাবারগুলো মূলত কিছুটা আসক্তির মতো। একবার খেলে বার বার খেতে মন চায়। কিন্তু এই খাবার গুলিতে অতিরিক্ত হারে ক্যালোরি, চিনি, ফ্যাট থাকার কারণে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই ওজন কমাতে হলে এইসব খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৩। স্বাস্থকর খাবার ও স্নাক্স গ্রহণ

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাড়িতে যে খাবার গুলো খাওয়া হয় সেগুলো বেশির ভাগ আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ বাড়ির খাবার গুলোতে ক্যালোরি, ফ্যাট এর পরিমান বেশি থাকে।

উদাহরণস্বরূপ- যদি আমরা লক্ষ্য করি, যারা আমরা পড়ালেখার জন্য বাহিরে থাকি বিশেষ করে মেসে তারা অনেকদিন পর বাসায় গেলে কিছুদিন বাড়ির ভালো খাবার খেলেই মোটা হয়ে যাই। আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। এর মূল কারণ বাড়ির খাবারের অধিক ফ্যাট এবং ক্যালরি।

তাই বাড়িতে তৈরী করা যায় এমন স্বাস্থকর খাবার অথবা নাস্তা হিসেবে স্বাস্থকর স্নাক্স বানিয়ে খেতে পারেন। অথবা বাজারে পাওয়া যায় এমন অনেক স্বাস্থকর স্নাক্স বা খাবার ক্রয় করেও খেতে পারি। এতে করে আমাদের ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। কিছু স্বাস্থকর খাবার যেমন: দই(Yogurt), সকল ধরণের ফল-মূল, বাদাম, গাজর, শশা, ভালোভাবে সিদ্ধ ডিম ইত্যাদি।

৪। খাবার হিসেবে সীমিত পরিসরে চিনি গ্রহণ করুন

খাবার হিসেবে অতিরিক্ত চিনি খাবার ফলে আপনি বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন: হার্টের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার।

আমেরিকানরা প্রতিদিন ১৫ চামচ চিনি তাদের খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে এবং বিভিন্ন ধরণের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যগুলোতে ঠিক কত পরিমান চিনি ব্যবহার করা হয় তার সঠিক হিসেবে পাওয়া যায় না। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে খাবার আমদানি করা হয়। তাই এসব খাবার গ্রহণের আগে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

আরো পড়ুন:  কিডনি ভালো রাখার উপায় | কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আপনি যদি আপনার ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই অতিরিক্ত চিনির ব্যবহার কমাতে হবে এবং যেসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করা হয় তা পরিহার করতে হবে।

৫। বেশি বেশি পানি পান করুন

ওজন কমানোর জন্য পানি

সবচেয়ে বড় সত্যি কথা হলো বেশি বেশি পানি পান আপনার ওজন কমানোর উপায় হিসেবে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। হাফ লিটার পানি এক ঘন্টার মধ্যে আপনার ২৪-৩০% ক্যালোরি পোড়াতে পারে।

খাবার গ্রহণের আগে পানি পান করলে তা আপনার ওজন কমানোর জন্য অনেক কাজে দিবে। বিশেষ করে যারা মধ্য বয়সী অথবা বয়স্ক তাদের জন্য অনেক ফলপ্রসূ হবে।

বিভিন্ন ধরণের কোমল পানীয় কিংবা এনার্জি ড্রিঙ্কস এর পরিবর্তে যদি আপনি বেশি বেশি পানি পান করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনার ওজন কমে আসবে।

৬। চিনি ছাড়া কফি পান করুন

সৌভাগ্যবশত কফি এমন একটি পানীয় যার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্টস (Antioxidants) এবং উপাদান রয়েছে। কফি পানের ফলে আমাদের শরীরের এনার্জি লেভেল অনেক বেড়ে যায়, যা ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।

ক্যাফিনেটেড (Caffeinated) কফি আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া ৩-১১% বৃদ্ধি করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কে ২৩-৫০% কমিয়ে দেয়।

বিশেষ করে ব্ল্যাক কফি (Black Coffee) ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই কফির মধ্যে খুব স্বল্প পরিমাণ এমনকি কোনো ধরণের ক্যালোরি থাকে না। যা আপনার অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য সহায়ক।

৭। ডায়েট এ Fatty Fish যুক্ত করুন

Fatty Fish মানে হলো মেদবহুল (মাছের পেটি বলে থাকি যেগুলোকে), চর্বিপূর্ণ মাছ যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে তেল মজুদ থাকে। যেমন: Salmon, Sardines or Tuna মাছ।

এসব মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে ও omega-3 এসিড থাকে। যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

অনেকে ভাবতে পারেন এসব মাছের মধ্যে তো চর্বি আছে। হা আছে, তবে আমরা অনেকেই জানি না যে মাছের চর্বি বা তেল আমাদের মানবদেহের জন্যে অনেক কার্যকরী।

৮। তরল ক্যালোরি (Liquid Calorie) পরিহার করতে হবে

তরল ক্যালোরিগুলো সাধারণত বিভিন্ন ধরণের বেভারেজ বা কোমল পানীয়তে থাকে যেমন: সুগার সফট ড্রিঙ্কস, ফ্রুট জুস , চকোলেট মিল্ক, এনার্জি ড্রিঙ্কস ইত্যাদি।

এই ধরণের কোমল পানীয় গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর বিশেষ করে এটা আমাদের স্থূলতা বাড়ায় মানে অতিরিক্ত হারে ওজন বৃদ্ধি করে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এই কোমল পানীয় গুলো পান করার ফলে শিশু ও অন্যান্যদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ৬০% থাকে।

তাছাড়াও আমাদের মস্তিষ্ক এই তরল ক্যালোরি গুলোকে তেমন গুরুত্ব দেয় না বরং এর চেয়ে সলিড ক্যালোরি গুলো শরীরের জন্যে বেশি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।

৯। নিয়মিত চিনি ছাড়া গ্রীন টি (Green Tea) পান করুন

গ্রীন টি হলো একটি প্রাকৃতিক বেভারেজ যা বিভিন্ন ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্টস দিয়ে ভরপুর যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমানোর ডায়েট

নিয়মিত গ্রীন টি পান করার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায় যেমন,

  • ফ্যাট কাটতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • গ্রীন টি পান করার ফলে আপনার শরীরের এনার্জি লেভেল ৪% বৃদ্ধি পাবে এবং ১৭% ফ্যাট কাটতে সাহায্য করে
  • বিশেষ করে যাদের পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য খুবই উপকারী।

তবে রেগুলার গ্রীন টি এর চাইতে Matcha Green Tea অনেক বেশি পাওয়ারফুল, যা ওজন কমানোর পাশাপাশি মেদ কমাতে সাহায্য করে।

১০। বেশি বেশি বিভিন্ন ধরণের ফল ও শাক-সবজি খেতে হবে

ফল এবং শাক-সবজি অতিমাত্রায় স্বাস্থকর খাবার যা ওজন কমানোর উপায় হিসেবে দূর্দান্ত। ফল এবং শাক-সবজির মধ্যে থাকে পানি, পুষ্টি ও ফাইবারের উচ্চমান শক্তিগুণ। কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার এর মধ্যে ফল ও শাক-সবজি অন্যতম। যা আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমাবে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের ফল ও শাক-সবজি খায় তাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম এবং যাদের অতিরিক্ত ওজন আছে তাদের ওজন কমতে শুরু করবে।

আমাদের দেশের বার্মিজদের ত্বক এবং ফিটনেসের কথা সবাই শুনে থাকবেন, কক্সবাজার ভ্রমণ করে থাকলে হয়তো আপনার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের এই অনিন্দ সুন্দর মোলায়েম ত্বক এবং ফিটনেসের পিছনে রয়েছে কম তেল ও প্রচুর শাক সবজি খাওয়ার অভ্যাস।

১১। দৈনিক ক্যালোরি গণনা করে খাবার গ্রহণ করুন

ওজন হ্রাস করার সময় আপনি কি খাচ্ছেন তা সম্পর্কে আপনার সম্মক ধারণা রাখতে হবে। কিছু পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে এই কাজ টি করা সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ- ফুড ডায়েরি কিংবা প্রতিদিন কি খাচ্ছেন তার ছবি তুলে রাখতে পারেন। অথবা অনলাইনে অনেক ডায়েট অ্যাপ পাওয়া যায় যার মাধ্যমে হিসাব করে প্রতিটি খাবারে কত ক্যালোরি আছে তা হিসাব করতে পারেন। এভাবে নিয়মিত ক্যালরি কাউন্ট করে খাবার গ্রহণ করলে আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে।

১২। খাবার গ্রহণের জন্য ছোট প্লেট ব্যবহার করুন

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা খাবার গ্রহণের জন্যে ছোট প্লেট ব্যবহার করে তাদের খাবার গ্রহণের পরিমাণ সাধারণত কম হয়।

ছোট প্লেট হওয়ার কারণে খাবারের পরিমাণও কম থাকে। তখন এক ধরণের প্রবণতা তৈরী হয় যে আমাকে এই খাবারের মধ্যেই শেষ করতে হবে।

বড় প্লেটে বেশি খাবার গ্রহণের প্রবণতা তৈরী হবে। তাই ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমাণ কমাতে সর্বদা ছোট প্লেট ব্যবহার করতে হবে।

১৩। কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন

ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া। কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এজন্য কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেতে হবে।

আপনার ডায়েট প্ল্যান এ সর্বদা কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার রাখুন। কম কার্বোহাইড্রেট ও বেশি বেশি প্রোটিন খেলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে যার ফলে অল্প ক্যালরি আপনার শরীরে প্রবেশ করবে এবং আপনার ওজন হ্রাস পাবে।

লো-কার্ব ডায়েট (Low-Carb Diet) ৩ গুণ বেশি কার্যকর স্ট্যান্ডার্ড লো-ফ্যাট ডায়েট এর চেয়ে। তাছাড়াও Low-Carb Diet বিভিন্ন ধরণের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।

১৪। ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন

ধীরে খাবার গ্রহণ করা আরেকটি সহজে ওজন কমানোর উপায় । ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করলে কম ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করবে যার ফলে আপনার হরমোন উৎপাদন আরো বাড়িয়ে দিবে আর এর ফলে আপনার ওজন কমতে থাকবে।

আরো পড়ুন:  আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা

যদি আপনি খুব দ্রুত খাবার খান তাহলে আপনার শরীর বোঝার আগেই আপনি অনেক বেশি ক্যালরি খেয়ে ফেলবেন। যা আপনার শরীরের জন্য আদৌ ভালো কিছু হবে না।

বরং যারা ধীরে ধীরে খাবার খায় তাদের চেয়ে যারা খুব দ্রুত খাবার খায় তারা খুব বেশি স্থূল হয় এবং তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার হার বেশি।

১৫। কিছু কিছু ফ্যাট এর পরিবর্তে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন

নারিকেল তেলের মধ্যে হাই ফ্যাট থাকে যা অন্য সব সাধারণ ফ্যাট এর থেকে আলাদা। এর বিপাকীয় প্রক্রিয়া অন্যান্য ফ্যাট এর চেয়ে ভিন্নধর্মী। কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণের পর এই নারিকেল তেলের ফ্যাট আপনার বিপাকীয় শক্তি বাড়িয়ে তুলবে। যা ওজন কমাতে সহায়ক।

বিশেষ করে নারিকেল তেল পেটের মেদ ও চর্বি কমানোর জন্য উৎকৃষ্ট উপাদান। তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার ডায়েট এ নারিকেলতেল ব্যবহার করবেন।

তবে, অন্যান্য কিছু ফ্যাট এর পরিবর্তে আপনি এই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ, অন্যান্য ফ্যাট এর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যাবে।

১৬। আপনার ডায়েট এ ডিম ব্যবহার করুন

ওজন কমানোর জন্য আদর্শ খাবার হলো ডিম। ডিম দামে সস্তা, স্বল্প ক্যালোরি যুক্ত, হাই প্রোটিন এবং আরো নানা ধরণের পুষ্টি গুণে গুণান্বিত। হাই প্রোটিন খাবার আপনার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করবে তাছাড়াও এই খাবার আপনাকে আত্মতৃপ্তি দেবে এবং অন্যান্য খাবার এর তুলনায় এই খাবার এ ক্যালোরি এর পরিমাণ কম।

অধিকন্তু, আপনি যদি প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ভারী পরোটা বা ভারী রুটি কিংবা রোল খাবার পরিবর্তে ডিম খান তাহলে পরবর্তী ৮ সপ্তাহে ৬৫% ওজন হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রতিদিন কম ক্যালোরি খেয়েই আপনি আপনার পেট ভরা রাখতে পারবেন। উপরন্তু, আপনি ডিম থেকে হাই প্রোটিনও পাবেন।

১৭। আপনার খাবার গুলো ঝাল বা মশলা যুক্ত করুন

Chili Peppers and Jalapenos এর মধ্যে একধরণের উপাদান আছে যার নাম হলো Capsaicin। এই উপাদানটি আপনার বিপাক ক্রিয়া বাড়াবে এবং পেটের চর্বি ও মেদ এবং শরীরের অন্যান্য ফ্যাট কাটতে সাহায্য করবে।

তাছাড়াও Capsaicin আপনার ক্ষুধা কমাবে এবং ক্যালোরি গ্রহণ কমাবে যার ফলে আপনার ওজন ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে।

১৮। Probiotics ব্যবহার করুন

Probiotics হলো একধরণের লাইভ ব্যাকটেরিয়া যেটা আপনার শরীরের জন্য অনেক ভালো বেনিফিট প্রদান করবে। এই লাইভ ব্যাকটেরিয়া আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে, হার্টকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে, হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াবে সর্বোপরি এটা আপনার ওজন কমাতে ব্যাপক সহায়তা করবে।

ওজন কমাতে probiotic

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ওজনওয়ালা ও স্থূলকায় মানুষদের মধ্যে Gut Bacteria বেশি পরিমাণে থাকে যা তাদের ওজন বৃদ্ধিতে বেশি ভূমিকা পালন করে।

Probiotics ব্যাকটেরিয়া আপনার এই Gut Bacteria গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। যার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তাছাড়াও এই Probiotics আপনার শরীরে ফ্যাট জমতে দিবে না। বিভিন্ন ধরণের প্রোবায়োটিক্স ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে Lactobacillus gasseri সব চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে একজন মানুষের ওজন কমাতে।

১৯। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

পর্যাপ্ত ঘুম আপনার ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাছাড়াও ভবিষতের ওজন বৃদ্ধি রোধ করতেও এটা অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমায় তাদের চেয়ে যারা পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমায় না তাদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা ৫৫% বেশি এবং এটা সবচেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তাছাড়া কম ঘুম হজমশক্তি কমিয়ে দেয়।

২০। ফাইবার (Fiber) যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন

ফাইবার খাদ্য গুলো আপনার ওজন কমানোর উপায় হিসেবে খুবই সহায়ক হবে। ফাইবার টাইপ খাবার গুলো আপনার পেট কে সহজে খালি হতে দিবে না। কিছু কিছু ফাইবার টাইপ খাদ্যতে অনেক উপকারী গাট ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আপনার স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

আপনার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে এই জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি গ্রহণ করুন যার ফলে আপনার ওজন খুব দ্রুত কমে যেতে থাকবে। কিছু ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন- শস্য, ফল, শাক-সবজি, বাদাম, মটরশুঁটি, গাজর ইত্যাদি।

এগুলো থেকে সেরকম কোনো ক্যালরি না পাওয়া গেলেও আপনার পেট ভরা থাকবে, যার কারণে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করার প্রবণতা কমে আসবে।

২১। খাবারের প্রতি আসক্তি কমান

খাদ্য আসক্তি এমন একটি জিনিস যা আপনার ব্রেইনকে একই ধরণের খাবার বার বার খেতে উদ্বুদ্ধ করে। এর ফলে অনেকেই অনেক বেশি খাবার খেয়ে থাকেন।

২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রায় ২০% মানুষ এই খাদ্য আসক্তিতে ভুগে থাকেন যা তাদের শরীরের অনেক ক্ষতি করে থাকে।

এসব খাবার সাধারণত অনেক মজাদার হয়ে থাকে যেমন- বিভিন্ন ধরণের জাঙ্ক ফুড, ফ্যাট ও চিনি যুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। এই ধরণের খাবারগুলো দ্বারা বেশি মানুষ আসক্তির শিকার হয়ে থাকে।

সবচেয়ে ভালো হবে যদি এই খাদ্য আসক্তি থেকেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আপনার ওজন এমনিতেই কমে যেতে থাকবে।

২২। নিয়মিত শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করুন

প্রতিদিন নিয়মিত আপনি শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন- জগিং হতে পারে কিংবা দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা সাইক্লিং, যা আপনার ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করবে। এর ফলে আপনি যেমন মানসিক প্রশান্তি পাবেন সাথে সাথে আপনার ওজন ব্যাপক হারে কমে যাবে।

শারীরিক ব্যায়াম এর মাধ্যমে আপনি অনেক জটিল রোগ থেকে বেঁচে যাবেন। যেমন- হার্ট এর রোগ। শারীরিক কসরত আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখবে এবং আপনার বডি ওয়েট কমাবে। শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার পেটের মেদ ও শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

২৩। ছানার জল (Whey Protein) ব্যবহার করুন

ছানার জল বা Whey Protein আমাদের শরীরের মেদ কমানোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে হাই প্রোটিন পাওয়া যায় যা আমাদের বাড়তি ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।

যদি আপনি এই প্রোটিন নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে, আপনার ওজন সহজেই কমাতে পারবেন। আপনার Lean Muscleও খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।

শুধু এই প্রোটিন ব্যবহার এর সময় সতর্ক থাকুন যাতে এতে কোনো চিনি বা অস্বাস্থকর কিছু ব্যবহার করা না হয়।

২৪। কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন

যেসব খাবারে কম ক্যালরি বিদ্যমান সেসব খাবার নিয়মিত খান। কারণ কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেলে আপনার ওজন বাড়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকবে। তাই খাবার গ্রহণের সময় সতর্ক থাকুন।

কোনোভাবেই যেন হাই ক্যালরি ফুড আপনি না খান। কারণ এর ফলে আপনার ওজন তো কমবেই না আরো বাড়তে থাকবে।

হাই ক্যালোরি ফুড মূলত স্থূলতার অন্যতম একটি কারণ। যেমন- বার্গার, ফাস্ট ফুড এ অনেক পরিমান ক্যালরি থাকে। এই খাবার গুলো পরিহার করতে হবে।

২৫। লাইফস্টাইল পরিবর্তনে মনোযোগ দিন

ডায়েট বা ওজন কমানো এমন একটি জিনিস যা সবার দ্বারা সবসময় সম্ভব হয় না। এর মূল কারণ হলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনধারা বা লাইফস্টাইল।

এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া তাই ধৈর্য্য ধরে এটা কন্টিনিউ করতে হবে। না হলে আপনি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন না।

শুধুমাত্র ওজন কমানোর দিকে নজর না দিয়ে সব সময় নিয়ম মেনে চলুন, স্বাস্থকর খাবার গ্রহণ করুন, ফ্যাট চর্বি হাই ক্যালোরি খাবার হাই কার্বহাইড্রেট খাবার পরিহার করুন। নিয়মিত শারীরিক চর্চা করুন।

সর্বোপরি আপনার লাইফস্টাইল কে সুন্দর ভাবে সাজান। তাহলেই আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন এবং স্বাভাবিক শারীরিক সক্ষমতার অধিকারী হবেন।

ওজন কমানোর উপায় নিয়ে শেষ কথা

মেদ, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন এটা যেমন একটি বড় সমস্যা তেমনি ওজন কমানোর উপায় এবং সমাধানও আমাদের চারপাশেই আছে। আপনি চাইলে খুব সহজেই এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আপনার মেদ, স্থূলতা কিংবা অতিরিক্ত ওজন কে কমিয়ে নিতে পারেন। শুধু দরকার ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য্য ও শৃঙ্খল জীবনধারা।

ওজন কমানোর জন্য আমাদের চারপাশে অনেক চটকদার বিজ্ঞাপন দেখবেন যেগুলো দেখে অতি উৎসাহী হওয়া যাবে না। কারণ এসব চটকদার পদ্ধতি আপনার ওজন তো কমবেই না বরং আপনার ক্ষতিই করবে বেশি। এসব চটকদার ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন নানা ধরণের রোগে। তাই এসব জিনিস পরিহার করুন।

এখানে যে ২৫ টি ওজন কমানোর উপায় দেওয়া আছে তা যদি আপনি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে আপনার ওজন কমে যাবে ইন-শা-আল্লাহ।

তবে এসব পদ্ধতিতেও যদি আপনার মেদ, স্থূলতা বা ওজন না কমে তাহলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

1 thought on “ওজন কমানোর সহজ ও ঘরোয়া উপায় : 25 Weight loss tips”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top