ইউনিয়ন পরিষদ হয়তো আপনার গ্রামেই অবস্থিত। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সমূহ সম্পর্কে অবগত আছেন?
আপনি যদি আপনার ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সম্পর্কে অবহিত থাকেন, তাহলে আপনার প্রয়োজনীয় প্রায় সকল তথ্য এবং সেবা নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে নিতে পারেন।
একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল
ইউনিয়ন পরিষদ কি | What is Union Parishad in Bangla
ইউনিয়ন পরিষদ হল পল্লী অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক। গ্রাম চৌকিদারি আইনের ১৮৭০ এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি হয়। এ আইনের অধীনে প্রতিটি গ্রামে পাহারা টহল ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে কতগুলো গ্রাম নিয়ে একটি করে ইউনিয়ন গঠিত হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সমূহ
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার সেবা পাওয়ার যেমন অধিকার আছে, ঠিক তেমনি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাকেও জানতে হবে আপনি কোথায় কি ধরণের সেবা পেতে পারেন।
তাহলে চলুন জেনে নেই, আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কি কি সেবা পেতে পারি এবং কিভাবে পেতে পারি।
১. ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ
আপনি জানেন কি ? আপনি যে কৃষি যন্ত্র টি ১ লাখ টাকায় কিনেছেন, তা মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজারে পেতে পারতেন ? প্রতি বছর সরকার কৃষি যন্ত্রের উপর ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্ত অর্ধেকেরও বেশি টাকা পুনরায় ফেরৎ যায় আমাদের না জানার কারণে।
আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিসদে প্রতি সপ্তাহে একদিন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপস্থিত হন আপনাদের এসব বিষয়ে জানানোর জন্য। এছাড়া কৃষি বিষয়ক যেকোন পরামর্শ, সেবা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
এছাড়াও কৃষি কর্মকর্তা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে অনক রকম সুবিধা করে দিতে পারেন। যেমন: বর্তমানে অনেক যন্ত্র আছে যার অনেক দাম। সরকার থেকে ৫০% দেওয়ার পরেও হয়তো ১০ লাখ টাকা লাগবে যন্তটি কিনতে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার তার মধ্যে একটি।
একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারদিয়ে প্রতি ১০ মিনিটে আপনি ১ বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই করা, পরিষ্কার করে বস্তাবন্দি করতে পারবেন। মাত্র ২জন শ্রমিক দরকার হবে।
মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টার |
শ্রমিক খরচ এবং তেল খরচ মিরিয়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিক দিয়ে যদি এই সবগুলো কাজ আপনি করাতে চান, তবে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা আপনার প্রয়োজন হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো আপনি এত টাকা কোথায় পাবেন ? এই সমস্যার সমাধান আপনার ইউনিয়ন পরিষদে আসা কৃষি কর্মকর্তার কাছে পাবেন।
আপনারা যারা দান চাষ করবেন, তাদের মাঝে ১৫ জন বা ৩০ জন করে নিয়ে একটা যন্ত্র আপনাদের দেওয়া হবে।
আরো ভালো খবর হলো, তারা আপনাকে লাইফ টাইম ফ্রি সার্ভিসিং দিবে এমনকি যন্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও পাবেন তাদের কাছে পুরোপুরি ফ্রি তে।
তাছাড়া আপনারা যন্ত্রটি নিয়ে ব্যবসা করতেও পারবেন, অর্থাৎ গ্রুপের বাইরের কারো কাজ করে দিয়ে আপনারা আপনাদের গ্রুপে টাতা জমাবেন এবং নতুন নতুনিযন্ত্র কিনে ব্যবসা বড় করতে পারবেন।
আরো একটি জানার মতো কথা হলো- আপনি যদি কোন কারণে গ্রুপ ত্যাগ করতে চান, তবে আপনি আপনার পুরো টাকা ফেরৎ পাবেন। আপনি কি এই অসাধারণ সেবা সম্পর্কে জানতেন? কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
২. ইউনিয়ন পরিষদ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশ সরকার বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিটি নাগরিক কে দক্ষ্য করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছে।
নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে ৩মাসের কোর্সটি শেষ করে নিজেকে আপনি একজন কম্পিউটার পারদর্শী কিংবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্য কারো জীবনের অভিশাপ দূর করতে পারেন। কোর্সটি সম্পন্ন করতে ১০০০ টাকা ফি দিতে হবে।
৩. ইউনিয়নে ইন্টারনেট ব্রাউজিং সার্ভিস
বাংলদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এখন হাই স্পিড ওয়াইফাই ব্যবস্থা। বাংলাদেশের যেকোন ইউনিয়ন অফিসে আপনি সেবাটি পাবেন।
সেবাটি পেতে অফিস চলাকালীন সময়ে উপস্থিত হয়ে তথ্য সহায়কের সাথে কথা বলে আপনি কম্পিউটার এবং ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন।
কত টাকা দিতে হবে: আপনি প্রতি ঘন্টা ৩০ টাকা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ৩০০ টাকায় ৫ দিন কম্পিউটার ব্যবহারের সার্ভিসটি নিতে পারেন।
যারা গ্রাম থেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, কিন্তু ভালমানের ডাটা কানেকশন এবং বেশি দামের জন্য কাজ করতে পাছেন না, তারা সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন।
৪. ইউনিয়ন পরিষদে ভিডিও এডিটিং শেখানো হয়
আপনার যদি কোন ভিডিও ইডিটিং প্রয়োজন হয়, তবে আপনি আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে চলে যেতে পারেন । আপনার ভিডিও লেন্থ এর উপর ভিত্তি করে মাত্র ২৫০-৫০০ টাকা দিয়ে ইডিটিং করে নিতে পারেন। অফিস চলাকালীন যেকোন সময় আপনি এই সেবা পেতে পারেন।
৫. মৎস এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ক পরামর্শ
মৎস ও প্রাণি সম্পদ বিষয়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা (ভেটেরিনারী সার্জন) প্রতি সপ্তাহে একদিন ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আপনাদের সেবা দানের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন । আপনার মৎস এবং প্রাণি সম্পদ বিষয়ক যেকোন তথ্য, পরামর্শ এবং সেবা প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট দিনে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যান। সার্ভিসটি বিনামূল্যে পাবেন।
৬. স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা সহকারী আপনাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ এবং সেবা দিতে আসেন। নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত হয়ে বিনামূল্যে আপনি ঘরের কাছেই উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারেন।
৭. ইউনিয়ন পরিষদ নিরাপত্তা সেবা
আপনার জান-মালের যদি নিরাপত্তাে সংকট দেখা দেয়, তবে আপনি আপনার নিজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নিরাপত্তা প্রদানের আবেদন করতে পারেন। গ্রাম পুলিশ এবং চৌকিদার আপনাকে বিনামূল্যে নিরাপত্তা দিবে।
ইউনিয়ন পরিষদ সেবা |
৮. কৃত্তিম প্রজনন পরিসেবা
যাদের গৃহপালিত পশু বা প্রাণির উন্নত কৃত্তিম প্রজনন করাতে চান, তারা নির্দিষ্ট দিনে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেটেরিনারী মাঠ সহকারীকে দিয়ে উন্নত মানের কৃত্তিম প্রজনন করিয়ে নিতে পারেন। সেবাটি পেতে আপনার খরচ হবে ১০০ টাকা।
৯. আরো যেসকল সার্ভিস ইউনিয়ন পরিষদে পাবেন
- তথ্য কেন্দ্র থেকে তথ্য সেবা – বিনামল্যে
- পাসপোর্ট ফরম – ৩০ টাকা
- ভিসা ফরম – ৫০ টাকা
- ভিসা আবেদন ও ট্রাকিং
- ভিডিও কলিংএবং ভিডিও কনফারেন্স
- অনলাইন আবেদন – ১০০ টাকা
- রেজাল্ট দেখা – ২০ টাকা
- ই-মেইল করতে পারবেন – ৫০ টাকা
- কম্পিউটার কম্পোজ – ২০ টাকা
- ছবি ওঠানো – ৩ কপি ২০ টাকা
- স্ক্যানিং এবং প্রিন্ট – ১০+২০ টাকা
- ফটোকপি – ২ টাকা
আপনার ইউনিয়ন পরিষদ এ বর্তমানে কোনো নতুন সেবা চালু করেছে কিনা এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ সম্পর্কে আলাদা করে জানার জন্য সরকার জাতীয় তথ্য বাতায়ন নামের ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। ওয়েবসাইটে আপনার ইউনিয়য়ন সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পারবেন। বর্তমানে কোন প্রকল্প চলছে, কোন চাকরি আছে কি না ইউনিয়ন পরিষদে জানতে পারবেন তথ্য বাতায়ন থেকে।
ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিয়ে শেষ কথা
আপনার আমার সকলের দ্রুত সেবা প্রদাণের লক্ষ্যেই প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কে সর্বোচ্চ ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের না জানার কারণে ঘরের কাছে সেবা রেখে শহরে-নগরে, উপজেলা-জেলা পরিষদে ঘুরে বেড়াই। তাই নিজে ইউনিয়ন পরিষদ এর সেবা ও সার্ভিস সম্পর্কে জানুন এবং আপনার পাশের জনকে জানান।