আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা

বর্তমান বিশ্বে আপেল সিডার ভিনেগার (Apple cider vinegar) একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পানীয়ের নাম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এটিকে রান্নাবান্নায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহার করে আসছে। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম মানলে ক্রমবর্ধমান ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা’র গুণাবলীর কথা আমরা অনেকেই জানি।

কিন্তু আধুনিক গবেষণার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যাপারে ঠিক কি বলছেন, সে বিষয়েই জেনে নেবে আমাদের apple cider vinegar বিষয়ক আজকের আর্টিকেলটিতে।

একনজরে সম্পূর্ণ আর্টিকেল

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

অন্যান্য ভিনেগারের মতই আপেল সাইডার ভিনেগারও এক প্রকার ভিনেগার, যা আপেল থেকে প্রস্তুত করা হয়।

আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আপেল সিডারের ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার ফলে যে ভিনেগার বা অম্ল-জাতীয় তরল পদার্থ উৎপন্ন হয়, সেটিই অ্যাপল সিডার ভিনেগার। অন্যান্য ভিনেগারের মত এতেও রয়েছে ৫ শতাংশ অ্যাসিডিটি।

আপেল সিডার ভিনেগারের প্রকারভেদ

প্রস্তুত প্রণালী এবং উপকরণের ভিন্নতা অনুযায়ী আপেল সিডার ভিনেগারের প্রকারভেদও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন:

১। আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার

অন্যান্য আপেল সিডার ভিনেগারের চেয়ে মাদারসহ এই ভিনেগারটি বর্তমান বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃতও বটে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে মাদার জিনিসটা কি?

তাদের জন্য বলছি, যখন apple cider vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়। এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে মাদার বলা হয়।

যারা নিয়মিত apple cider vinegar গ্রহণে অভ্যস্ত, তারা হয়ত বোতলে বেশকিছু অস্বচ্ছ উপাদানের উপস্থিতি খেয়াল করবেন। এটিই মাদার। সাধারণত আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।

মাদার সাধারণত প্রোবায়োটিক জাতীয় বেশকিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং এনজাইমের সমষ্টি, যা আমাদের খাদ্যকণাকে ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে মেটাবলিজমের হার বেড়ে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

২। ফিল্টার করা আপেল সিডার ভিনেগার

প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া এবং এনজাইম সমৃদ্ধ আপেল সিডার ভিনেগারকে ছেঁকে পরিশোধিত করে একদম স্বচ্ছ তরলে পরিণত করা হয়।

এই স্বচ্ছ ভিনেগারের রঙ বেশ পরিষ্কার এবং তুলনামূলকভাবে পাতলা হয়ে থাকে। একে ছেঁকে পরিশোধিত করা হয় বলে এতে পুষ্টিকর এনজাইমের পরিমাণ নেই বললেই চলে, এবং দামেও তু্লনামূলক সস্তা।

৩। পাস্তুরাইজেশন ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার

পাস্তুরাইজেশনের ফলে যে আপেল সিডার তৈরি হয়, তাতে উচ্চ তাপ প্রয়োগের কারণে বেশকিছু উপকারী এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। এর ফলে সেই apple cider vinegar’টি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

অপরদিকে পাস্তুরাইজেশন ছাড়া আপেল সাইডার ভিনেগারে এর মাদার এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো থাকার ফলে এর গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে। তাই সকল বয়সের মানুষের কাছে এই প্রক্রিয়ায় তৈরি ভিনেগারটি খুব ভালো অপশন।

৪। অরগ্যানিক আপেল সিডার ভিনেগার

এই ধরণের ভিনেগারে কোন রাসায়নিক উপাদান এবং অজৈব পদার্থের উপস্থিতি না থাকায় এটি বেশ গ্রহণযোগ্য।

আরো পড়ুন:  ডায়াবেটিস কত প্রকার ও কি কি | ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

এছাড়াও আনফিল্টারড এবং র’ (unfiltered and raw) আপেল সিডার ভিনেগারও বাজারে বেশ উল্লেখযোগ্য। বলে রাখা ভালো, আপেল সিডার ভিনেগার তরল হিসেবে বোতলজাত করা ছাড়াও ক্যাপসুল এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট আকারেও পাওয়া যায়।

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কোন apple cider vinegar’টি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অরগ্যানিক এবং পাস্তুরাইজেশন ছাড়া তৈরিকৃত যেসব আপেল সিডার ভিনেগারে মাদার অক্ষুন্ন থাকে, সেগুলো ব্যবহার করাই উত্তম।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ক্ষেত্রবিশেষে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং ব্যবহার বিধিরও ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে সাধারণ সুস্থতা নিশ্চিতকরণের জন্য এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে ১-২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

তাছাড়াও যারা ওবেসিটিতে ভুগছেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চান কিংবা ডায়েটের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে চান, তারা তাদের দৈনন্দিন ডায়েট চার্টে থাকা খাবারে apple cider vinegar যোগ করতে পারেন, হতে পারে সেটি সালাদ ড্রেসিং কিংবা কোন স্বাস্থ্যকর পানীয়।

আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু পানীয়ের রেসিপি

  • ৩৫৫ মিলি উষ্ণ পানিতে একে একে ২ টেবিল চামচ apple cider vinegar
  • ১ চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো (আস্ত দারচিনিও টুকরো করে ব্যবহার করা যাবে)
  • ১ টেবিল চামচ মধু এবং ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে

এ পানীয়টি যে কেউই তাদের ডায়েট চার্টে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন। (তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ডটকম)

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা

আপেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত। তেমনি, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবেনা।

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় এটি ক্ষতস্থান নিরাময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন আয়ূর্বেদীয় টোটকায় ব্যবহৃত হত।

তবে বর্তমানে ওজন হ্রাস, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হৃদযন্ত্রের সুস্থতা ছাড়াও চুল এবং ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয় এই apple cider vinegar.

১। উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণাগুণ সমৃদ্ধ পানীয়

দুইটি ধাপে আপেল সিডার ভিনেগার প্রস্তুত হয়। এই দুই ধাপে প্রস্তুত হবার ফলে এই বিশেষ ধরণের ভিনেগারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ও এনজাইম উৎপন্ন হয়।

প্রথম ধাপে উৎপন্ন হওয়া অ্যালকোহলটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ফার্মেন্টেড হয়ে এসিটিক এসিডে পরিণত হয়—যা এই ভিনেগারের অন্যতম সক্রিয় উপাদান।

উল্লেখ্য, এসিটিক এসিড রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের নিরাময় করে।

২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

অনেকেই হয়ত জানেন না, আপেল সিডার ভিনেগার নামক এই জাদুকরী পানীয়টি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা সকলেই জানি, টাইপ টু ডায়াবেটিসে দেহে ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদনের হার ব্যাহত হয় এবং রক্তে শর্করার হার বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের দৃঢ় বিশ্বাস, রক্তে শর্করার ক্রমবর্ধমান হার বার্ধক্যসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণ।

ডায়েটিশিয়ানদের মতে, বিভিন্ন রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার (সাদা চাল, সাদা আটার রুটি, চিনি ইত্যাদি) পরিহারের পাশাপাশি একইসাথে রুটিনমাফিক আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহারের মাধ্যমেও রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কিছু বিজ্ঞানলুব্ধ গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, apple cider vinegar দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং খাবারের পর রক্তের শর্করার হার কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও ডায়াবেটিস আক্রান্ত কিছু রোগীর উপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে, ঘুমানোর আগে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার সুনির্দিষ্ট মাত্রার পানির সাথে মিশিয়ে খেলে তা ৪% পর্যন্ত শর্করার হার কমায়।

তবে যেকোন শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধের পাশাপাশি যেকোন ধরণের ভিনেগার গ্রহণের আগে রোগীর অবশ্যই উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

৩। ক্রমবর্ধমান ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসে সহায়ক

আপেল সিডার ভিনেগারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এটি মেটাবলিজম বুস্ট করে। এর ফলে দীর্ঘসময় পর্যন্ত আমাদের পেট ভরা থাকে। ফলশ্রুতিতে আমরা দৈনিক মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হই এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চমাত্রার শর্করাজাতীয় খাবারের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে দৈহিক পরিপূর্ণতা নিশ্চিত হয়। ফলে আমরা দৈনিক ২০০-২৭৫ ক্যালরি পর্যন্ত কম খাবার গ্রহণ করি।

আরো পড়ুন:  কিডনি ভালো রাখার উপায় | কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

এছাড়াও, ওবেসিটি (obesity) সম্বলিত ১৭৫ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর ৩ মাস ধরে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে, দৈনিক ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার (১২ মিলি) গ্রহণের মাধ্যমে তারা প্রত্যেকেই পেটের মেদ ঝরিয়ে ১.২ কেজি (২.৬ পাউন্ড) ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

তাই বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই তাদের ডায়েটের অংশ হিসেবে apple cider vinegarকে বেছে নেন। তবে এর পাশাপাশি শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং দৈনিক অনুশীলনেরও প্রয়োজন।

৪। হরমোনের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে

তিন মাসের একটি সমীক্ষায় পিসিওএস আক্রান্ত কিছু নারীকে রাতের খাবার গ্রহণের পর ১০০ মিলি উষ্ণ পানির সাথে ১৫ মিলি আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে বলা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেহের হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ঠিক হয়ে যায় এবং পিরিয়ডও নিয়মিত হয়।

যদিও এ বিষয়ে আরো গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান চিকিৎসকেরা, কিন্তু তবুও রোগীদেরকে তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় apple cider vinegar সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৫। হৃদযন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করে

খাবারের আগমুহূর্তে apple cider vinegar মিশ্রিত পানি পানের ফলে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায় এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এতে করে হৃৎপিণ্ড সচল থাকে এবং হৃদরোগ কম হয়।

৬। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের দেহাভ্যন্তরে কিডনি রেনিন (renin) নামক একটি হরমোন উৎপাদন করে, যা মাঝেমাঝেই আমাদের রক্তনালীগুলোকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিমাত্রায় সঙ্কীর্ণ এবং প্রসারিত করে ফেলে।

apple cider vinegar এই রেনিনকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের রক্তনালীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

বেশিরভাগ মানুষই ভারী খাবারদাবার গ্রহণের পর আপেল সিডার মিশ্রিত পানি পান করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপেল সিডার ভিনেগার পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

এতে পেপসিন নামক এনজাইম তৈরির মাত্রা বেড়ে যায় যা প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিপাকে সাহায্য করে।

৮। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক

বিভিন্ন টেস্ট টিউব স্টাডির মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেকোন ধরণের ভিনেগারই ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম।

এছাড়াও বিভিন্ন গবেষক খাদ্যনালীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে apple cider vinegar এর কার্যকরী ক্ষমতার কথা ব্যক্ত করেছেন। যদিও এটি নিয়ে আরো বেশকিছু শক্তিশালী গবেষণা প্রয়োজন।

৯। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে

প্রাচীনকাল থেকেই ঐতিহ্যগতভাবে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভিনেগার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যেকোন সময়ই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হয়। এসবের বিরুদ্ধে apple cider vinegar খুব ভালো একটি নিরাময়ের নাম।

গবেষণায় জানা যায়, আপেল সিডার ভিনেগার E. coli এর মত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে খাদ্যদ্রব্যে সংক্রমণে বাধা দেয়। তাই দীর্ঘসময় পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকে।

তাই বিশেষজ্ঞরা apple cider vinegar এর সাহায্যে বিশেষ কিছু খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

১০। ঠান্ডা-কাশি এবং গলা ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী

যেহেতু ভিনেগার যেকোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ, তাই যেকোন সিজনাল ঠান্ডাজনিত রোগ, হাঁচি-কাশি কিংবা গলা ব্যথা দুর করতে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগারের কোন জুড়ি নেই।

এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানির সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণে apple cider vinegar মিশিয়ে গার্গল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

১১। ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করে

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই জানা যাবে, আধুনিক ঔষধবিদ্যার জনক হিপোক্রেটস প্রায় ২০০০ বছর আগে ত্বকের ক্ষতস্থান নিরাময়ের জন্য ভিনেগার ব্যবহার করতেন।

আধুনিক সময়ে ত্বকের শুষ্কতা, একজিমা, ব্রণ বা অ্যাকনের মত সমস্যা সমাধানে apple cider vinegar একটি ভরসার নাম। আপেল সিডারে বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল (antimicrobial) উপাদানগুলো ত্বকের pH এর মান স্বাভাবিক রাখে, আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং সুরক্ষামূলক ত্বক নিশ্চিত করে। তাই গোসলের পানিতে অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকেন।

আধুনিক রূপচর্চায় ত্বকের ব্রণ বা অ্যাকনে দূর করতেও আপেল সিডার ভিনেগারের বেশ চল আছে। অনেকেই তাদের ফেসওয়াশ, টোনার বা ক্লিনজারে পাতলা apple cider vinegar ব্যবহার করে থাকেন। তবে তা কতখানি বিজ্ঞানসম্মত তা নিয়েও জোরদার গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরো পড়ুন:  ওজন কমানোর সহজ ও ঘরোয়া উপায় : 25 Weight loss tips

তবে হ্যাঁ, ত্বকে সরাসরি ব্যবহারের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে, সাবধানতার সাথে এই ভিনেগার ব্যবহার করাই উত্তম, কেননা এতে করে ত্বক জ্বলে যাওয়া বা সাময়িক প্রদাহ হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

১২। চুলের যত্নে

ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, আপেল সিডার ভিনেগার মাথার ত্বকে Malassezia  নামক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রোধ করে, যা খুশকির উপদ্রব বাড়ায়। এছাড়াও সুন্দর, সুগঠিত এবং ঝলমলে চুল সুনিশ্চিত করতে পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে apple cider vinegar ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই।

তবে যারা অতিরিক্ত সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী, তাদের ক্ষেত্রে সাবধানতা বাঞ্ছনীয়।

১৩। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে

অনেক সময়ই বাণিজ্যিক মাউথওয়াশের বিকল্প হিসেবে অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকেন, এর মাঝে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে।

এর জন্য এক কাপ (২৪০ মিলি) পানিতে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে মাড়ির সুস্থতা বজায় থাকে, দাঁত ঝকঝকে হয় এবং একই সাথে মুখের দুর্গন্ধ দুর হয়।

তবে যেকোনো ভিনেগারে বিদ্যমান এসিটিক এসিড কিন্তু দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

১৪। গৃহস্থালি কাজসমূহে

রান্নাবান্নায়: অনেক স্বাস্থ্যসচেতন গৃহিণীই আজকাল তাদের রান্নাবান্নায় apple cider vinegar ব্যবহার করে থাকেন। যেকোন সস, স্যুপ, সালাদ তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে এই ভিনেগারের ব্যবহার যেমন রান্নার স্বাদ বাড়ায়, তেমনি এর পুষ্টিমান অটুট রাখে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়: অনেকেই কাঁচা শাকসবজি এবং ফলমূলে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদান, কীটনাশক এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপারে বেশ সংবেদনশীল। তারা কিন্তু পানিতে প্রয়োজনমত apple cider vinegar মিশিয়ে কাঁচা শাকসবজি ধুয়ে নিতে পারেন।

এছাড়াও ফলে বিদ্যমান ফরমালিন দুর করতে apple cider vinegar মিশ্রিত পানিতে স্বল্প সময়ের জন্য ফলমূল ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, apple cider vinegar সহ যেকোন ভিনেগারই E. coli  এবং Salmonella এর মত বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সক্ষম।

এছাড়াও থালাবাসনসহ কাপড়ের দাগ এবং পুরাতন টুথব্রাশ পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ডিশওয়াশিং লিকুইড/ডিটারজেন্ট/পানির সাথে প্রয়োজনমত আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে এক কাপ পানির সাথে আধা কাপ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি “অল পারপাজ ক্লিনার” তৈরি করা যাবে।

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির উপাদানসমূহ

প্রস্তুত প্রণালী থেকেই মোটামুটিভাবে আন্দাজ করা যায় যে, অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে এসিটিক এসিড, সাইট্রিক এসিড (citric acid) ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি, মিনারেল এবং ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ। তবে ব্র্যান্ড এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে কিছু আপেল সিডার ভিনেগারের উপাদানসমূহ নির্ধারণ করা বেশ অনিশ্চিত।

যে সমস্ত খনিজ উপাদান আপেল সিডার ভিনেগারের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে একে উপাদেয় করে তোলে সেগুলো নিম্নরূপ:

  • ম্যাগন্যাসিয়াম
  • পটাসিয়াম
  • আয়রন
  • ফসফরাস
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • অ্যামাইনো এসিড
  • ম্যালিক এসিড
  • প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট

এতসব গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের সমাহার মাত্র একটি পানীয়তে থাকার ফলে আপেল সিডারকে পুষ্টির পাওয়ার হাউজ বলে ধারণা করাও অযৌক্তিক কিছু নয়।

আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির পদ্ধতি

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া নিয়ম

প্রথম ধাপে বেশকিছু তাজা এবং সতেজ আপেলকে টুকরো করে পিষে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এগুলোকে ইস্টের সংস্পর্শে আনা হয়। এর ফলে ফার্মেন্টেশন (fermentation) প্রক্রিয়ায় আপেলের জুসে বিদ্যমান চিনি অ্যালকোহলে পরিণত হয়।

ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিছু ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যালকোহলকে এসিটিক এসিডে (acetic acid) পরিণত করে। এই এসিটিক এসিডই apple cider vinegar এর ঝাঁঝালো গন্ধ এবং অম্লত্বের কারণ।

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

দীর্ঘমেয়াদিভাবে apple cider vinegar ব্যবহারের ফলে দেহে পটাসিয়ামের ঘাটতি, হাড়ের ক্ষয়ের মাধ্যমে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি, দাঁতের এনামেলের ক্ষয়সহ অভ্যন্তরীণ অনেক ক্ষতিই হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এটি ব্যবহার কখনই উচিত নয়।

এটি সত্য যে apple cider vinegar হজমশক্তি উন্নত করে। তবে যাদের আলসার কিংবা এসিডিটির সমস্যা আছে, তারা এই পানীয়টি পরিহার করাই উচিত।

এক্ষেত্রে একটি কথা বলে নেওয়া ভাল; অনেকেরই ধারণা যে শুধুমাত্র apple cider vinegar পানের মাধ্যমেই ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

হ্যাঁ, আপেল সিডার ভিনেগার হয়ত আপনার দেহের মেদ ঝরিয়ে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করবে, তবে এর সাথে আপনাকে পর্যাপ্ত শারীরিক অনুশীলন (হাঁটা, জগিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ইত্যাদি) এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।

এছাড়াও ত্বকের সংক্রমণ রোধে অনেকেই এই ভিনেগার ব্যবহার করেন, এক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে ত্বকে জ্বালাপোড়া না করে।

আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে শেষ কথা

দৈনন্দিন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সিডার ভিনেগারের বহুমুখী গুণাবলির কথা বলে শেষ করা যাবেনা। বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯ প্রকোপ কমাতেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি apple cider vinegar সেবন করছেন, যা সত্যিকার অর্থেই দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে আশা করি ভালো ধারণা পেয়েছেন। তবে, ভবিষ্যতে আপেল সিডার ভিনেগারের পক্ষে আর কি কি করার সম্ভব সেবিষয়ে আরো বেশকিছু গবেষণা করার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন চিকিৎসকেরা।

2 thoughts on “আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা”

  1. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ক্ষেত্রবিশেষে অ্যাসিডিটি এবং বদহজম দূর করে, কিন্তু এর পেছনে জোরালো কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত বা গবেষণা এখনো তৈরি হয়নি। কেননা অ্যাপল সাইডার ভিনেগার নিজেও একটি জৈব এসিডধর্মী তরল পদার্থ। তাই অনেকেই সাধারণত অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এভোয়েড করে থাকেন।

    তবে বদহজম এবকং এসিডিটির জন্য সবচেয়ে এফেক্টিভ উপাদান হচ্ছে মৌরি এবং আদা। পরিমাণমতো পানিতে দুই টুকরো আদা একটু ছেচে সেটি ফুটিয়ে পান করলে অনেকক্ষেত্রে উপকার মেলে। এই পানীয়টির সাথে লেবু বা মধু মেশানো যেতে পারে।

    এছাড়াও পানিতে ১০-১২ দানা আধভাঙ্গা মৌরি পানিতে ফুটিয়ে সেটিও পান করলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন আশা করি।
    ধন্যবাদ

  2. মোঃ সবুজ আলি

    আমিতো আপেল সিডার ভিনেগার খেতে চাচ্ছি প্রচুর বদহজম ও গ্যসটিকের সমস্যার জন্যে কোন গ্যাসের ঔষধে কাজ করছেনা
    তো আপনারা কি বলেন এরকম সমস্যার মধ্যে খাওয়া যাবেকি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top